Image of মো: টিটু

নাম: মো: টিটু

জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ১৯৯১

শহীদ হওয়ার তারিখ: ২৭ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: বরিশাল

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা :অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার, শাহাদাতের স্থান :গ্রীন লাইন হাসপাতাল, ধানমন্ডি ঢাকা।

শহীদের জীবনী

বরগুনার বেতাগী থানার দক্ষিণ হাসনাবাদে ১৯৯১ সালের প্রথম দিন জন্মগ্রহণ করেন টিটু হাওলাদার। পিতা আব্দুর রহিম হাওলাদার মাতা রাশেদা বেগমের সন্তানদের মধ্যে টিটু হাওলাদার ছিলেন দ্বিতীয়। দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে শিক্ষাজীবনের ইতি টানেন। তারপর তিনি মাইক্রো বাসের ড্রাইভার হওয়ার জন্য ড্রাইভারের প্রশিক্ষণ নেন। মৃত্যু কালীন সময়ে তিনি অ্যাম্বুলেন্স চালাতেন। তার পরিবারে স্ত্রী সহ তিন সন্তান আছে। স্ত্রীসহ তিন সন্তান গ্রামের বাড়িতেই থাকতেন এবং টিটু হাওলাদার ঢাকাতে এক ডাক্তারের অ্যাম্বুলেন্স চালাতেন। কিছুদিন আগে ঋণ করে তিনি একটি অ্যাম্বুলেন্স ক্রয় করেছিলেন। এই অ্যাম্বুলেন্সটা তার নিজ এলাকায় ভাড়া দেওয়া আছে। বসত বাড়ি ছাড়া তার ফসলি কোন জমি বা সম্পত্তি নেই। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ভালোভাবেই ইসলাম চর্চা করতেন। ইসলামের জন্য তার হৃদয়টা ছিল অনেক বড়। ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার অপরাধে ১৯ জুলাই ২০২৪ তারিখে পুলিশের গুলিতে তাকে মৃত্যুবরণ করতে হয়। শাহাদাতের ঘটনা হাওলাদার যেদিন শাহাদাত বরণ করেন সেদিন জুম্মার নামাজ পড়ে তিনি পরিবারের সাথে কথা বলেছিলেন। তার স্ত্রী তাকে বললেন "তুমি কিন্তু আন্দোলনে যাবে না। আমরা গরীব মানুষ আমাদের আন্দোলনে যেয়ে কোন ক্ষতি হয়ে গেলে কেউ দেখবে না। হাওলাদার জবাবে বললেন, আমার যদি মৃত্যু লেখা থাকে আন্দোলনে গেলেও হবে না গেলেও হবে। আমি আন্দোলনে যাবো আমাকে অবশ্যই সত্যের পথে থাকতে হবে। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমি যদি আন্দোলনে শরিক না হই তাহলে আল্লাহর কাছে কি জবাব দেব। তার স্ত্রী বললেন, যে কোন ক্ষতি হয়ে গেলে আমাদের পরিবারকে কে দেখবে। আমরা কিভাবে বাঁচবো? শহীদ হাওলাদার বললেন, যে আল্লাহ সারা পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীকে রিযিক দিচ্ছেন, আমি যদি শহীদ হই আমার পরিবারের রিজিকও তিনি ব্যবস্থা করে দেবেন। টিটুর এক বন্ধু তাকে বলেছিলেন যে, তোমার আন্দোলনে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। ঢাকাতে দেখার তোমার কেউ নেই। তাই তুমি অ্যাম্বুলেন্স চালাচ্ছো ভালো কথা কিন্তু সরকারের বিরুদ্ধে কিছু করতে যেও না। হাওলাদার কারো কথায় কান না দিয়ে সত্য প্রতিষ্ঠায় তিনি দৃঢ় মনোবল নিয়ে আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছিলেন। ১৯ জুলাই ২০২৪ জুম্মার নামাজ আদায় করার পর বাসা থেকে খাওয়া-দাওয়া করে তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিতে ধানমন্ডি ৬ নম্বর রোডে উপস্থিত হন। এখানে পুলিশ এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। পুলিশ নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের উপরে বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে থাকে। তারা যেভাবে মানুষের উপরে গুলি করছে মনে হচ্ছে যেন ফিলিস্তিন এবং ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। মনে হচ্ছে এক দেশ আরেক দেশের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। অথচ এই পুলিশ বাহিনী এদেশেরই সন্তান এদেশের মানুষ। তাহলে এদেশের সন্তান হয়ে কিভাবে তারা আরেক ভাইয়ের বুকে গুলি করছে অবাক করার বিষয়। এক পর্যায়ে টিটু হাওলাদার দৌড়ে-দৌড়ে আন্দোলনকারীদের সাহস যোগানোর জন্য বিভিন্ন উৎসাহমূলক কথা বলতে ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ সামনে থেকে পুলিশের একটি বুলেট এসে তার মাথায় বৃদ্ধ হয়। যে কপাল দিয়ে তিনি নিয়মিত আল্লাহকে সিজদা করতেন সেই কপালেই পুলিশ গুলি করে শহীদ করলেন। বাবাকে হারানো শিশুদের কান্না দেখে আশে-পাশে মানুষগুলোও চোখের পানি ধরে রাখতে পারে না। সন্তান হারিয়ে পাগল প্রায় বাবা আব্দুর রহিম হাওলাদার। স্ত্রী আয়েশা বেগম তিন শিশু সন্তান নিয়ে চরম অসহায় হয়ে পড়েছেন। বাবা স্ত্রী ও তিন শিশু সন্তানকে বাড়িতে রেখে টিটু হাওলাদার একা কর্মস্থলে থাকতেন। টিটু হাওলাদারের স্ত্রী আয়েশা বেগম জানান, টিটু গত ১১ জুলাই বাড়ি থেকে কর্মস্থল ঢাকায় যান। গত শুক্রবার বিকেলে ফোন করে তাদের এক নিকট আত্মীয় জানান, তোমার স্বামীর গায়ে গুলি লেগেছে। বিনা অপরাধে তাকে জীবন দিতে হলো। আমি অবুঝ সন্তানদের কী বুঝ দেবো? গত রোববার (২১ জুলাই) রাতে টিটু হাওলাদারের ফুফাতো ভাই মো: রাকিব লাশ নিয়ে তার গ্রামের বাড়িতে আসেন। ঐ দিন রাতেই জানাজা শেষে স্থানীয়ভাবে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এক সহকর্মীর বক্তব্য টিটু হাওলাদার সব সময় ন্যায়ের পক্ষে কথা বলতেন। আমরা তাকে বৈষম বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে নিষেধ করলেও সে বলতো আমি শাহাদাত বরণ করব, কিন্তু আন্দোলনকারীদের পক্ষে থেকে দূরে থাকতে পারবো না। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা এদেশের ছাত্রদের যেভাবে বৈষম্যের ভিতরে আটকিয়ে রেখেছে আমি সেটার মুক্তি চাই। তোমরা আমাকে নিষেধ করোনা পারলে তোমরাও অংশগ্রহণ করো। শহীদের মেয়ে হিরা মনির বক্তব্য আমার বাবাকে কেন মারা হলো? আমার বাবার দোষ কি ছিল? আমার বাবা কি কাউকে হত্যা করেছে যে আমার বাবাকে তারা হত্যা করল? এই দুনিয়ায় সত্যের পথে থাকাও কি দোষ সত্য কথা বললেই তাকে মরতে হবে? তাহলে তো কেউ সত্য কথা বলবে না কেউ ভালো কথা বলবে না সবাই মিথ্যা কথা বলবে এবং অন্যায়ের পক্ষ নিবে।আমার বাবাকে তোমরা ফিরিয়ে দাও। আমি আমার বাবাকে চাই। পারিবারিক অবস্থা মো. টিটু হাওলাদারের অটো চালক বাবা আব্দুর রহিম হাওলাদার এখন বয়সের ভারে ন্যুজ। আর টিটুর চার ভাই বোনের মধ্যে মো. ইমরান হোসেনও অটোরিকশা চালিয়ে চলে। বলতে গেলে এখন মানুষের দানে চলে টিটুর পরিবারের জীবিকা। বিবাহিত বড় বোন রুমেনা বেগম (৩৫) থাকেন স্বামীর সংসারে আর ছোট বোন ফাতিমা আক্তার (১৮) প্রতিবন্ধী হওয়ায় বসবাস করেন একই সংসারে।বড় মেয়ে তানজিলা বাড়ির কাছে আনোর জলিশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে ও ছেলে সাইমুন স্থানীয় বয়াতি বাড়ি কওমি মাদরাসার প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও তিন বছরের আরেকটি সন্তান নিয়ে শহীদ টিটো হাওলাদারের স্ত্রী আয়েশা বেগম এখন অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। এক নজরে শহীদ মো: টিটু নাম : মো: টিটু জন্ম তারিখ : ০১-০১-১৯৯১ জন্মস্থান : দক্ষিণ হসনাবাদ, বেতাগী, বরগুনা পেশা : অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: দক্ষিণ হোসনাবাদ, ইউনিয়ন: ৩ নং হোসনাবাদ, থানা: বেতাগী, জেলা: বরগুনা স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: দক্ষিণ হোসনাবাদ, ইউনিয়ন: ৩ নং হোসনাবাদ, থানা: বেতাগী, জেলা: বরগুনা পিতা : মো: রহিম হাওলাদার মাতা : মৃত রাশেদা বেগম স্ত্রী : আয়েশা বেগম (৩০), গৃহিনী ছেলে মেয়ে : ১. হিরা মনি (১২), আনোয়ার জলিশা প্রাথমিক বিদ্যালয়, চতুর্থ শ্রেণি ২. সায়মুন (৭), নূরানী মাদ্রাসা, প্রথম শ্রেণি ৩. তামান্না আক্তার (৩) আঘাতকারীর : আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী পুলিশ আহত হওয়ায় ও স্থান সময় : ধানমন্ডি, ৬ নম্বর রোড, ১৯-৭-২০২৪, বিকেল ৪:০০টায় মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ২০-০৭-২০২৪, দুপুর ১২:০০টায়, গ্রীন লাইন হাসপাতাল, ধানমন্ডি ঢাকা জানাজা : ২১-০৭-২০২৪, রাত ১০:০০ টায় কবরস্থান : নিজে গ্রামের পারিবারিক কবরস্থান প্রস্তাবনা ১. নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করা যেতে পারে ২. সন্তানদের লেখা-পড়ার দায়িত্ব নেয়া দরকার

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: টিটু
Image of মো: টিটু
Image of মো: টিটু
Image of মো: টিটু
Image of মো: টিটু
Image of মো: টিটু
Image of মো: টিটু
Image of মো: টিটু

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

 মো: আরিফুর রহমান রাসেল

জসিম উদ্দিন

শহীদ মিরাজ

মো: সুজন

মো: সাগর গাজী

মো: দুলাল সরদার

মো: ফয়সাল আহমেদ (শান্ত)

মো: জামাল হোসেন

মোঃ আসিফ

মো: মহিউদ্দিন

মো: রফিকুল ইসলাম

 সাইদুর রহমান ইমরান

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo