জন্ম তারিখ: ১ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা: ছাত্র, শ্রেণি: নবম, প্রতিষ্ঠান: দেশ পলিটেকনিক স্কুল এন্ড কলেজ ঢাকা শাহাদাতের স্থান : ডা. আজমল হাসপাতাল, মিরপুর, ঢাকা
"স্বৈরাচারের কবল থেকে রক্ষা পেল না ১৫ বছরের কিশোর আলভী" শহীদ পরিচিতি দরিদ্র পিতা মাতার একমাত্র ছেলে সন্তান শহীদ শাহরিয়ার হাসান আলভীর জন্ম ২০০৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাট জেলায়। শাহাদাতের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর। ছোট বেলা থেকেই সে ছিল অত্যন্ত মেধাবী। ঢাকার মিরপুরের কালশীর দেশ পলিটেকনিক স্কুল এন্ড কলেজে নবম শ্রেণিতে আলভী পড়াশোনা করত। সে পড়াশোনায় যেমন মনোযোগী ছিল তেমনি সামাজিক কাজ কর্মেও নিজেকে নিয়োজিত রাখত। সহপাঠীদের সাথে সবসময় ভালো ব্যবহার করত। তার বাবা জনাব মো: আবুল হাসান একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং মা মোসা: সালমা বেগম একজন গৃহিণী, যিনি ঘরে বসে সেলাইয়ের কাজ করেন। তার ছোট একটি বোনও রয়েছে, যার বয়স মাত্র ৮ বছর। তাদের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ উপজেলায়। পিতা-মাতার স্বপ্ন ছিল আলভী বড় হয়ে পরিবারের হাল ধরবে। কিন্তু তা আর হল না। মা একটু আসছি বলে সেই যে গেল, আর ঘরে ফিরল না শহীদ আলভী। ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্তরে পুলিশ বাহিনীর গুলিতে আহত হয়ে শাহাদাত বরণ করে ছোট্ট শিশু শহীদ শাহরিয়ার হাসান আলভী। তার মায়ের স্বপ্ন ছিল ছেলে বড় হয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হবে। তাও আর পূরণ হল না। ছেলের শখের কম্পিউটার, বই-খাতা, সব পড়ে আছে, নেই কেবল ছেলেটা। শাহাদাতের হৃদয় বিদারক ঘটনা দিনটি ছিল ৪ আগস্ট ২০২৪ রবিবার। শহীদ শাহরিয়ার হাসান আলভী সকালে ঘুম থেকে উঠে তার মাকে বলে, “মা, আমি একটু আসছি।” এরপর দুপুরে বাসায় ফিরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়, তারপর আবার বেরিয়ে যায়। মা তাকে বারবার বলে, “বাবা তুমি যেও না, আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না।” কিন্তু আলভী আর ফিরে আসেনি। ৪ আগস্ট ২০২৪ ছাত্রজনতা তাদের নায্য দাবী আদায়ের জন্য মিছিল নিয়ে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে প্রবেশ করলে পুলিশ এবং আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী ছাত্রজনতাকে লক্ষ করে গুলি চালায়। তাদের গুলির হাত থেকে ১৫ বছরের কিশোর আলভীও রক্ষা পায়নি। গুলি বিদ্ধ হয়ে শহীদ আলভী মাটিতে শুয়ে পড়ে। আলভীর আর্তনাদ আর চিৎকার শুনে তার বন্ধুরা এগিয়ে আসে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে ডা. আজমল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। মায়ের বুক খালি করে আলভী চিরতরে না ফেরার দেশে চলে যায়। ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে মা পাগলপ্রায় হয়ে ছেলের কাছে ছুটে যায়। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয় ও সহপাঠীদের বক্তব্য শহীদের মায়ের বক্তব্য: “আমি আমার ছেলেকে আর কখনও ফিরতে দেখব না। আজ এক মাস হয়ে গেল, আমি বেঁচে আছি কিন্তু কিভাবে বেঁচে আছি সেটা বলতে পারব না। মনে হয় জীবিত লাশ হয়ে বেঁচে আছি।” মায়ের এই কণ্ঠে ব্যথা আর গভীরতা স্পষ্ট। সন্তান হারানোর বেদনা একমাত্র মা’ই বুঝে। ছেলে হত্যার বিচার দাবী করে তিনি বলেন, “যারা বাবার (ছেলের) জীবন নিল, আল্লাহ তাদের বিচার করবেন।” শহীদের বাবার বক্তব্য: “কী অপরাধ ছিল আমার ১৫ বছরের ছেলের? কেন তাকে গুলি করা হলো? যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে, তাদের বিচার আল্লাহ করবেন।” তিনি আরও বলেন,“ আমার ছেলে স্বাধীনতার পক্ষে ছিল। এতটুকুই তার অপরাধ। যারা আমার পরিবারকে নিঃস্ব করেছে আমি তাদের বিচার চাই।” শহীদের পারিবারিক অবস্থা শহীদ শাহরিয়ার হাসান আলভী তার পরিবারের একমাত্র ছেলে সন্তান। তার আরও একটি ছোট বোন রয়েছে। তার বোনের বয়স মাত্র ৮ বছর , ৩য় শ্রেণিতে পড়ে। তার বাবা জনাব আবুল হাসান একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। গ্রামের জায়গা জমি বিক্রয় করে মিরপুরের পল্লবীতে একটি ফার্মেসী দিয়েছিলেন। কিন্তু অল্প দিনেই ব্যবসায়ে লোকসান করে ব্যবসা বাদ দিয়ে দেন। তিনি এখন বেকার। তার মা মোসা: সালমা খাতুন একজন গৃহিণী। বাসায় বসে টুকটাক সেলাইয়ের কাজ করেন। শহীদ শাহরিয়ার আলভীর দাদা-দাদী যদিও গ্রামে থাকেন কিন্তু তাদের খোঁজ-খবরও তার বাবাকেই নিতে হয়। গ্রামে অল্প কিছু জায়গা জমি আছে আর আলভীর বাবা সামান্য কিছু টাকা পাঠাত তা দিয়েই সংসার চলত। কিন্তু এখন আলভীর বাবার অবস্থাই শোচনীয়। ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : শাহরিয়ার হাসান আলভী, পেশা: ছাত্র জন্ম তারিখ : ০১/০২/২০০৯ পিতা : জনাব মো: আবুল হাসান মাতা : মোসা: সালমা খাতুন শাহাদাতের তারিখ : ৪ আগস্ট ২০২৪ গুলি বিদ্ধ হওয়ার স্থান : মিরপুর ১০ গোলচত্বর শাহাদাতের স্থান : ডা. আজমল হাসপাতাল স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: পশ্চিম বহরবুনিয়া, ইউনিয়ন: ১১ নং বহরবুনিয়া, থানা: মোড়েলগঞ্জ, জেলা: বাগেরহাট বর্তমান ঠিকানা : পল্লবী, মিরপুর ১০, ঢাকা