Image of মো: লিটন

নাম: মো: লিটন

জন্ম তারিখ: ১০ ডিসেম্বর, ১৯৮৮

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৮ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: বরিশাল

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা :টাইলস্ মিস্ত্রি, শাহাদাতের স্থান :কুর্মিটোলা হাসপাতাল, ঢাকা।

শহীদের জীবনী

কীর্তিমানদের কখনো মৃত্যু হয় না। কী জাগ্রত কী নিশীথে কীর্তিমানরা চিরঞ্জীব হয়ে থাকেন প্রতিটি মুহূর্তে মানুষের হৃদয়ে। ঠিক তেমনি রয়ে যাবে বরগুনা জেলার সোনার বাংলা গ্রামের সোনার ছেলে মো: লিটন মাতুব্বর। তিনি একজন সংগ্রামী ও সাহসী যুবক ছিলেন। লিটন ১৯৮৮ সালের ১০ ডিসেম্বর বরগুনা জেলার বেতাগি থানার অন্তর্ভুক্ত সোনার বাংলা গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মো: তৈয়াব আলী এবং মাতা মোসা: মনোয়ারা বেগম। চার ভাইবোনের মধ্যে লিটন ছিলেন সবার বড়। পরিবার প্রধান বাবা অসুস্থ থাকায় ভাইবোনসহ পুরো পরিবারের দায়িত্বও নিয়েছিলেন নিজের কাঁধে। অভাবের সংসারে বড় হওয়া লিটন বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারেননি। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পরে দারিদ্রতার কষাঘাতে এবং পরিবারের দায়িত্ব নিতে ছুটে চলেন রাজধানীর উদ্দেশ্যে। গত ২০ বছর ধরে শহীদ লিটন মাতুব্বর রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় বসবাস করে টাইলস মিস্ত্রীর কাজ করে আসছিলেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই সংগ্রাম করতে শিখেছিলেন। কঠোর পরিশ্রম আর পরিবারের প্রতি গভীর ভালোবাসা লিটনকে তৈরি করেছিল বাস্তবিক জীবন সংগ্রামের একটি মূর্ত প্রতীক। শহীদ লিটনের অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিলেন লিটন। তার সেই আয়েই এত দিন চলছিল প্রতিবন্ধী বাবার চিকিৎসা। লিটনকে হারিয়ে এখন তার চিকিৎসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন পরিবারের অন্য সদস্যরা। বাবার অসুস্থতার কারণে লিটন মাতুব্বরের বিয়ে করাও হয়ে ওঠেনি। ৩৫ বছর বয়স হলেও একমাত্র বাবার চিকিৎসার কথা চিন্তা করে তিনি বিয়ে করেননি। অর্থের অভাব থাকলেও তার মনে ছিল না কোনো ক্লান্তি, বরং এক ধরনের শান্তি খুঁজে পেতেন পরিবারের হাসিমুখ দেখে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মমতা তার শান্ত জীবনের সবকিছুকে এক মুহূর্তে এলোমেলো করে দিল। একদিন অপ্রত্যাশিতভাবে শহীদ হয়ে যান লিটন। তার মৃত্যুতে পরিবারের মধ্যে নেমে আসে শোকের ছায়া। এখন তারা চিন্তিত, কীভাবে চলবেন এবং কীভাবে সংসারের খরচ চালাবেন ? লিটনের অভাব তাদের জীবনকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়দের অনুভূতি শহীদ মো: লিটন মাতুব্বর শৈশবকাল থেকেই ছিলেন সচেতন ও প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। তিনি অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ এবং সদালাপী মানুষ ছিলেন। ছোট-বড় সকলের সঙ্গে মিলেমিশে চলতেন। তিনি পিতামাতার বাধ্যগত সন্তান ছিলেন। সব সময় তিনি তার পিতাকে নিয়ে ভাবতেন, কীভাবে তার বাবাকে সুস্থ করা যায়। তিনি তার ভাইবোনকেও অনেক স্নেহ করতেন। লিটনের বাবা তৈয়ব আলী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘মোরে এখন কে ওষুধ কিনে দেবে? মোরে না কইয়া মোর পোলাডা এই রকম মরবে, তা কোনো সময়ই ভাবি নাই।’তাছাড়া লিটনের বড় ভাই মো: বশির মাতুব্বর বলেন, ‘কিছুতেই আমি আমার ভাইকে ভুলতে পারছি না। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তিকে হারিয়ে আমি এখন অকূল সাগরে এবং চারদিকে অন্ধকার দেখছি।’ তিনি আরও জানান, পরদিন পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করলে বাড়ি নিয়ে এসে পারিবারিক কবরস্থানে লিটনকে দাফন করা হয়। ঘটনার প্রেক্ষাপট মূলত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলছিলো জুলাই, ২০২৪ জুড়ে। ছাত্ররা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা এবং সেমিনারের মাধ্যমে তাদের দাবি তুলে ধরেছে। তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আন্দোলনটি সংঘাতপূর্ণ হয়ে উঠতে দেখা যায়, যেখানে নিরাপত্তা বাহিনী ও ছাত্রদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। কারণ স্বৈরাচার সরকার ছাত্রদের ন্যায্য দাবি না মেনে চালাচ্ছিলো অত্যাচারের স্টিমরোলার। সারাদেশ জুড়ে গুলি, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছোড়া হচ্ছিল ছাত্রজনতাকে লক্ষ্য করে। ছাত্রদের ঘোষণা অনুসারে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি শুরু হয়। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৮ জুলাই শিক্ষার্থীদের 'কমপ্লিট শাটডাউন' বা সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি ঘিরে রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, গুলি, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। সারাদেশের প্রায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিলে হানাদার আওয়ামী পুলিশ বাহিনী হামলা করে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পাশাপাশি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও এদিন আন্দোলনের মূল হাল ধরে। সেদিন মুগ্ধসহ মোট ৪০ জন শহীদ হন। এদিন সংঘর্ষ বেশি হয় রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায়। পুলিশের পাশাপাশি সারাদেশে বিজিবি মোতায়েন করে স্বৈরাচার সরকার। একপর্যায়ে দুপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলছিল। এ সময় লিটন কাজের উদ্দেশ্যে বাড্ডা এলাকায় সড়ক পার হয়ে একটি বাসায় যাচ্ছিলেন। সেখানেই গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হওয়ার পর লিটনকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরে পুলিশ তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। তার এমন মৃত্যুতে তার পরিবার বাকরুদ্ধ। তাইতো কবির ভাষায়, ‘দুঃখরা কেন এভাবে মিছিল করে আসে খেটে খাওয়া মানুষগুলোর জীবনের স্পন্দন থামিয়ে দিয়ে? দুঃখরা কেন বারবার ওদেরকেই ভালোবাসে ওদের হাসি-কান্নায় ভরপুর জীবনকে স্তব্ধতায় ঢেকে দিয়ে?’ এক নজরে নাম : মো: লিটন জন্ম তারিখ : ১০-১২-১৯৮৮ জন্মস্থান : সোনার বাংলা, বেতাগী, বরগুনা পেশা : টাইলস্ মিস্ত্রি স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: সোনার বাংলা, থানা: বেতাগী, জেলা: বরগুনা পিতা : মো: তৈয়াব আলী মাতা : মোসা: মনোয়ারা বেগম আঘাতকারীর : আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী পুলিশ আহত হওয়ার তারিখ ও স্থান : ১৮-০৭-২০২৪, বাড্ডা, ঢাকা মৃত্যুর তারিখ ও স্থান : ১৮-০৭-২০২৪, কুর্মিটোলা হাসপাতাল, ঢাকা কবরস্থান : নিজ গ্রাম প্রস্তাবনা ১. বাবার চিকিৎসার খরচ বহন করলে উপকার হবে ২. মানসম্মত বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে ৩. মাসিক বা এককালিন সহযোগিতা করা দরকার

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: লিটন
Image of মো: লিটন
Image of মো: লিটন
Image of মো: লিটন
Image of মো: লিটন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মোঃ আসিফ

মো: জিহাদ হোসেন

মো: জামাল হোসেন

মো: আবুল বাশার

মামুন খন্দকার

মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন

মো: সুজন

মো: দুলাল সরদার

মো: সিফাত হোসেন

আবদুল্লাহ আল আবীর

রুবেল হোসেন

মো: ওমর ফারুক

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo