Image of মো: মিজানুর রহমান

নাম: মো: মিজানুর রহমান

জন্ম তারিখ: ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯০

শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: বরিশাল

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা :ড্রাইভার, শাহাদাতের স্থান :মুগদা মেডিকেল কলেজ।

শহীদের জীবনী

“কাজে না গেলে না খেয়ে থাকতে হতো পরিবারের; সেই কাজে গিয়েই ফিরলেন লাশ হয়ে” মো: মিজানুর রহমান ছিলেন এক সংগ্রামী জীবনযোদ্ধা, যার প্রত্যেকটি দিন ছিল কঠিন সংগ্রামের। তিনি বরগুনার ছোট্ট গ্রাম কালিরতবকে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। পরিবারের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধের টানে তিনি ঠেলাগাড়ি চালিয়ে দিনমজুরের কাজ করতেন। তার পিতা, মো: জাকির হোসেন দুলাল, একজন ড্রাইভার হলেও বয়সের ভারে কাজ কমিয়ে দিয়েছিলেন। ফলে মিজানুরই হয়ে উঠেছিলেন পরিবারের প্রধান আয়ের উৎস। তার পরিবারের সদস্যরা ছিলেন স্ত্রী জাকিয়া আক্তার শিরিন এবং দুই সন্তান, সামিয়া (৮) ও সাজিদুল (৪)। সন্তানদের মুখে আহার জোগাতে ও সংসারের চাকা সচল রাখতে নিরন্তর পরিশ্রম করেছেন মিজানুর। নিজের স্বপ্নগুলোর পাশে রেখে পরিবারের জন্য ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। যদিও জীবন তাকে কঠিন বাস্তবতার সামনে দাঁড় করিয়েছে, তবুও মিজানুর কখনো ভেঙে পড়েননি, বরং সবসময় চেষ্টা করেছেন পরিবারকে ভালো রাখতে। ২০২৪ সালের ২০ জুলাই, ঢাকার মানিক নগর বিশ্বরোডে বিকাল ৪ টায় এক নির্মম পুলিশি আক্রমণের শিকার হয়ে গুরুতর আহত হন মিজানুর। পরিবারের ভাষ্যমতে তিনি কোন রাজনীতি করতেন না। কিন্তু সেদিনের উত্তপ্ত ও উদ্ভুত পরিস্থিতিতে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে পিঠে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। সেদিন মুগদা মেডিকেল কলেজে বিকাল ৫টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পরিবারের স্বপ্ন ও আশা তার মৃত্যুতে থেমে যায়। তার অবিস্মরণীয় আত্মত্যাগ তাকে শহীদের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। তার জন্মভূমি কালিরতবক, বরগুনার সদর থানায় তাকে সমাহিত করা হয়। যে মাটি তার শৈশবকে আশ্রয় দিয়েছিল, সেই মাটিতেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত হন। মিজানুরের এই আত্মত্যাগ তার পরিবারের কাছে যেমন বেদনার, তেমনি আমাদের কাছে প্রেরণার। শহীদ মো: মিজানুর রহমান আমাদের মনে এক অবিচল ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধের প্রতীক হয়ে থাকবেন। তিনি প্রমাণ করেছেন, একজন মানুষের নৈতিকতা, মানবিকতা, এবং পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতা কখনো ম্লান হয় না। তার মতো মানুষের স্মৃতি আমাদের মননে সদা উজ্জ্বল হয়ে থাকবে, এবং তার জীবনের সংগ্রাম আমাদের কর্মকে অনুপ্রাণিত করবে। ঘটনা সংক্রান্ত বিবরণ ২০ জুলাই, ২০২৪ কোটা সংস্কার ঘিরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের আন্দোলন ঘিরে অগ্নিগর্ভ দেশ। দেশজুড়ে কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েন করে শেষ রক্ষার চেষ্টা ক্ষমতালোভী সরকারের। পরিস্থিতি সামাল দিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে খুনী হাসিনা। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে স্বৈরাচার হাসিনার লেলিয়ে দেওয়া গুণ্ডাবাহিনী, পেটুয়া পুলিশ বাহিনী উপর্যুপরি হামলায় সংঘর্ষ দানা বাঁধে। শিক্ষার্থীদের সাথে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলতে থাকে। নিরস্ত্র আনদোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় হিংস্র পুলিশ। এ দিন সকাল ৮টার দিকে প্রতিদিনের মতো মিজানুর তার স্ত্রী, সন্তান ও বাবাকে বাসায় রেখে কাজের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন। কাজ শেষে বিকেলের দিকে বাসায় ফেরার পথে ঢাকার মানিকনগর বিশ্বরোড এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। নিষ্ঠুর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালালে তার একটি আঘাত হানে মিজানের পিঠে। এ সময় সঙ্গে থাকা কয়েকজন মিলে তাকে ঢাকা মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই বিকেল ৫টায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ডাক্তার তাকে কোনো চিকিৎসা দেয়নি বলে জানান তার স্ত্রী। পরে ওই দিন রাতেই মিজানুরের মরদেহ বরগুনার উদ্দেশ্যে নিয়ে আসেন স্বজনরা। পরদিন সকালে তার গ্রামের বাড়ি নিজ গ্রাম, কালিরতবক, সদর থানা, বরগুনায় তাকে দাফন করা হয়। মিজানুরের মৃত্যুর খবর শোনার পর তার স্ত্রী ও সন্তানদের জীবন যেন এক অনিশ্চয়তার আঁধারে নিমজ্জিত হয়। স্ত্রী জাকিয়া আক্তার শিরিন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, "আমার দুই অবুঝ ছেলেমেয়ে, তাদের জন্য আমি কী করব?" তার কথায় ফুটে ওঠে এক মায়ের হৃদয়বিদারক অবস্থা। শহীদ মিজানুর রহমান যে একাধারে একজন ভালো মানুষ এবং মানবতার সেবক ছিলেন, তার মৃত্যুর পর তার পরিবারের অবস্থান কতটা শোচনীয় তা কল্পনা করতেও কষ্ট হয়। স্বজন ও বন্ধুদের বক্তব্য শহীদের বাবা জাকির হোসেন দুলাল বলেন,আমার ছেলে কোন রাজনীতি করতো না। ছেলের স্মৃতি মনে পড়লে কিছুই ভালো লাগে না। বড় সন্তান ছিলো। বড় হলেও পিতা-মাতার কাছে সন্তান কখনো বড় হয় না। ঢাকায় বাবা-ছেলে একসাথে কাজ করতাম। ওর বাসাতেই খেতাম। আল্লাহর কাছে কই, আর কোন পিতা-,মাতার বুক যেন খালি হয় না। শহীদের চাচা- মো. নজিম শেখ বলেন, মো. মিজানুর রহমান, খুব ভালো ছেলে। সে খুব গরিব পরিবারের থেকে বেড়ে উঠেছে। পরিবারের অসচ্চালতার কারণে ঢাকায় গিয়ে ঠেলা চালিয়ে পরিবার চালাতো। তিনি খুব শান্ত, শিষ্ট ও নম্র ভদ্র ছিলো। আমার স্বামীকে ডাক্তার চিকিৎসা করে নাই, যখন হাসপালে নেওয়া হয়েছে তখন জীবিতো ছিলো। ডাক্তার চিকিৎসা করলে আমার স্বামী মারা যেতোনা। আমার ছেলে মেয়ে এতিম হতো না, এখন আমি কোথায় যাবো কি করবো? এই ছোটো ছোটো ছেলে মেয়ে নিয়া। বিলাপ করতে করতে কথা গুলো বলেন তার সহধর্মীনি। একমাত্র ছেলে বলে, আম্মু, আমার আব্বুকে কিনে নিয়ে আসো। আমি আব্বুকে ছাড়া থাকতে পারবো না। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার বিবরণ শহীদ মিজানুর রহমানের মৃত্যুর পর তার পরিবারের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে পড়েছে। জীবনের প্রতিটি দিনই সংগ্রামের ছিল মিজানের জন্য। তিনি ঠেলাগাড়ি চালিয়ে উপার্জন করে এবং তার পরিবারের দেখভাল করতেন। বর্তমানে মিজানের সন্তানরা ও স্ত্রী সহায়হীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। তার পিতা মোঃ জাকির হোসেন দুলাল, যিনি বয়সের ভারে আগেই কাজ কমিয়ে দিয়েছিলেন। এখন পরিবারের প্রধান অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মিজানের স্ত্রী, জাকিয়া আক্তার শিরিন, স্বামীর অনুপস্থিতিতে ছোট দুই সন্তান নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। স্বামীর মৃত্যুতে ছোট সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন তিনি। এখন জাকিয়া আক্তারের কোনো উপার্জনের উৎস নেই, এমনকি তাদের মাথা গোঁজার জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গাও নেই। শ্বশুরের সাথে গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করলেও তা দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকা সম্ভব নয়। প্রস্তাবনা শহীদ মিজানুর রহমানের মৃত্যুর পর তার ৩ সদস্যের পরিবারটি কঠিন সংকটে পড়েছে। তাদের জীবন এখন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। এজন্য কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হলো: প্রস্তাবনা-১: এই পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তা এখন অত্যন্ত জরুরি। তাদের মৌলিক প্রয়োজনীয়তা—খাবার, পোশাক এবং চিকিৎসার খরচ মেটাতে সমস্যায় পড়ছে। প্রস্তাবনা-২: মিজানুরের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে তাদের পড়াশোনা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার দায়িত্ব নিয়ে তাদের নিরাপদ ভবিষ্যত গড়ার উপায় দরকার। প্রস্তাবনা-৩: শহীদ মিজানের স্ত্রী জাকিয়া আক্তার শিরিনকে পুনর্বাসিত করার জন্য মানসিক ও আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। একটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলে তিনি তার সন্তানদের নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন। প্রস্তাবনা-৪: মিজানুরের পিতাকে একটি কর্মসংস্থান করা জরুরি। কেননা, তিনিও স্বচ্ছল নন। সুতরাং একইসাথে নিজেরও মিজানের পরিবারকে দেখাশোনা করতে পারবেন। একনজরে শহীদের সম্পর্কিত তথ্য শহীদের পূর্ণ নাম : মো: মিজানুর রহমান জন্ম তারিখ : ০১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯০, জন্মস্থান: বরগুনা পেশা : দিনমজুর (ঠেলাগাড়ী চালক) স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: কালিরতবক, ইউনিয়ন: ৮ নং বরগুনা, থানা: সদর, জেলা: বরগুনা পিতার নাম : মো: জাকির হোসেন দুলাল পিতার পেশা ও বয়স : ড্রাইভার, বয়স ৫৪ মা : মোছা: শাহিনুর বেগম মায়ের পেশা ও বয়স : গৃহিণী, বয়স ৪৫ পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৩ জন স্ত্রী : জাকিয়া আক্তার শিরিন ১. মেয়ে : সামিয়া আক্তার, বয়স: ৮ বছর, শ্রেণি: ৩য়, কালিরতবক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ২. ছেলে : সাজিদুল ইসলাম, বয়স: ৪ বছর ঘটনার স্থান : মানিক নগর বিশ্বরোড, ঢাকা আক্রমণকারী : পুলিশ আহত হওয়ার সময়কাল : ২০ জুলাই ২০২৪, বিকাল ৪টা মৃত্যুর তারিখ ও সময় : ২০ জুলাই ২০২৪, বিকাল ৫টা মৃত্যুর স্থান : মুগদা মেডিকেল কলেজ

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: মিজানুর রহমান
Image of মো: মিজানুর রহমান
Image of মো: মিজানুর রহমান
Image of মো: মিজানুর রহমান
Image of মো: মিজানুর রহমান
Image of মো: মিজানুর রহমান
Image of মো: মিজানুর রহমান

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: নাহিদুল ইসলাম

এম. ডি. ইলিয়াস হোসাইন

আবদুল ওয়াদুদ

মো: আতিকুর রহমান

মোঃ আসিফ

মো: নবীন তালুকদার

মো: আখতারুজ্জামান নাঈম

মো: সুজন

সাইদুল ইসলাম

মো: শাওন শিকদার

মো: আবু রায়হান

মো: মহিউদ্দিন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo