Image of মো: আমিনুল ইসলাম আমিন

নাম: মো: আমিনুল ইসলাম আমিন

জন্ম তারিখ: ২ আগস্ট, ২০০৯

শহীদ হওয়ার তারিখ: ২১ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: বরিশাল

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা :কারখানা শ্রমিক, শাহাদাতের স্থান :ধনিয়া, যাত্রাবাড়ী।

শহীদের জীবনী

শহীদ মো: আমিনুল ইসলাম আমিন পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানার কেশবপুর ইউনিয়নের ভরী পাশা গ্রামে ২ আগস্ট ২০০৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। শহীদের পিতা জনাব মোঃ ওবায়দুল ইসলাম (৫২) পেশায় একজন রিকশা চালক এবং তার মা সেলিনা বেগম (৪৫) একজন গৃহিণী। দরিদ্র পরিবারের একমাত্র ছেলে আমিন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে পরিবারের দারিদ্রের কবলে পড়ে তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে ঢাকার একটা বৈদ্যুতিক সুইচ তৈরীর কারখানায় কাজ নেন। পিতা-মাতা এবং তার একমাত্র ছেলে আমিনকে নিয়ে ঢাকার কদমতলী এলাকার দক্ষিণ দনিয়ায় একটি টিনশেডের বাসায় ভাড়া থাকতেন। তার অসুস্থ দাদী গ্রামের বাড়িতেই থাকেন। শহীদ আমিন এবং তার রিকশাচালক বাবার যে সামান্য আয় হতো তা দিয়েই তার দাদি এবং পরিবারের ভরণপোষণ করতেন। আমিন ফুটবলার হতে চেয়েছিল। কারখানায় কাজ করার পর যে সময় পেত, স্থানীয় ক্যাপ্টেন মাঠে গিয়ে ফুটবল খেলত। তিন-চার মাস আগে এলাকায় ফুটবল খেলে একটি ক্রেস্ট পেয়েছিল। মাকে বলেছিল, এটি তার জীবনের প্রথম পুরস্কার। গুলিবিদ্ধ কিশোরকে দেখে রিকশাচালক, 'এতো আমার ছেলে! শহীদের পিতা ওবায়দুল ইসলাম জীবিকার তাকিদে ঢাকা শহরে অটোরিকশা চালিয়ে তার সংসার পরিচালনা করতেন। একা আয় করে তার সংসার চালানো দিন দিন কষ্টকর হয়ে পড়ে। শহীদ আমিনের অসুস্থ দাদির চিকিৎসা সেবা দেওয়া এবং সন্তান আমিনের পড়ালেখার খরচসহ সংসার চালানো একার পক্ষে কষ্টকর হয়ে পড়ে। ২০২০ সালের করোনাকালীন সময়ে সংসার চালানো আরো কঠিন হয়ে পড়ে। তার একমাত্র সন্তান আমিনের পড়ালেখার স্বপ্ন ভেংগে যায়। পরিবারের হাল ধরতে শহীদ আমিনকেও ঢাকায় পাড়ি জমাতে হয়। শহীদ আমিন পিতামাতার সাথে ঢাকার কদমতলী এলাকার দক্ষিণ দনিয়ায় একটা টিনশেডের বাসায় ভাড়া থাকতেন। খুব ভোরে উঠেই জীবিকার তাগিদে পিতা অটোরিকশা নিয়ে এবং ছেলে কারখানায় চলে যেতেন। ২০১৮ সালে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য ছাত্র অধিকার পরিষদ গঠিত হয়। ছাত্রদের ন্যায্য আন্দোলনের চাপে পড়ে সরকার কোটা পদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করে। পরবর্তীতে ২০২৪ সালে হাইকোর্ট কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল রেখে রায় দিলে ছাত্ররা তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। স্বৈরাচারী সরকার প্রতিটি ন্যায্য দাবির আন্দোলন কে দমন করার জন্য তার স্বৈরাচারী পুলিশ বাহিনী এবং তার দোসরদের ব্যবহার করতেন। সরকার প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে তার নিজের মতো করে পরিচালনা করতেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকেও স্বৈরাচারী সরকার একই কায়দায় দমন করতে চেয়েছিলেন। ১৫ জুলাই পরবর্তী ছাত্রদের উপর স্বৈরাচারী সরকারের ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ একযোগে ঢাকা শহর এবং বাহির থেকে গুণ্ডাবাহিনী ভাড়া করে দেশি-বিদেশি আগ্নেয় অস্ত্র হাতে নিয়ে ছাত্রদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। সেদিন গুণ্ডাবাহিনীর হাতে শতাধিক ছাত্র- ছাত্রী আহত হয়। ছাত্রীদের উপর যেভাবে আঘাত করা হয় যার দৃশ্য আজও চোখে ভেসে উঠলে শরীর শিউরে উঠে। যুদ্ধক্ষেত্রে যেখানে নারী শিশুদের উপর হাত তোলা আইন পরিপন্থী সেখানে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কিভাবে ন্যায্য আন্দোলনে নিরীহ নারীদের উপর অমানবিক নির্যাতন করা হয় তা সারা বিশ্ববাসী দেখেছে। দীর্ঘদিনের জুলুম নির্যাতনের শিকার হওয়া প্রতিটি মানুষ ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। ছাত্র আন্দোলন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রূপ নেয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ। ২১ জুলাই বিকেল ৫ টার দিকে আমিন ঘুম থেকে উঠে দোকান থেকে রান্না করার জন্য চাল এনে দেয়। মায়ের কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে বাসা থেকে বের হয়। সেই ২০ টাকা তার পকেটেই ছিলো। বাসার সামনে থাকা একটি দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলন দেখছিল আমিন। ফ্যাসিস্ট সরকারের পুলিশ বাহিনী এবং যুবলীগ দেশীয় অস্ত্র হাতে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার উপর উপুর্যুপরি আক্রমণ চালায়। এলোপাতাড়ি রাবার বুলেট, ছররা গুলি এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে থাকে। হঠাৎ একটি গুলি এসে আমিনের বুকের বাম দিক দিয়ে ঢুকে হৃৎপিণ্ড ছেদ করে পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আমিন বাসার দিকে ছুটে আসতে চাইলে কিছুটা দৌড়ে এসে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে। তখন স্থানীয় দুই যুবক তাকে অনাবিল হাসপাতালে নিয়ে যান। জীবিকার তাগিদে প্রতিদিনের মতো গত ২১ জুলাই ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা নিয়ে বের হন আমিনের পিতা ওবায়দুল ইসলাম। ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার অনাবিল হাসপাতালের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ এক কিশোরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাকে অনুরোধ জানান দুই পথচারী। তিনি রাজি হলেন। গুলিবিদ্ধ সেই কিশোরকে অটোরিকশায় তুলে হাসপাতালে গিয়ে কোলে করে নামাবার সময় মুখ দেখে চমকে ওঠেন ওবায়দুল। সেই কিশোরকে জড়িয়ে ধরে বুকফাটা চিৎকার করে ওবায়দুল বলেন, 'এ তো আমার কলিজার টুকরা ছেলে'। এ সময় তার আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতালের পুরো এলাকা। ভিড় করেন শত শত মানুষ। একমাত্র সন্তান আমিনুল ইসলাম আমিনকে (১৬) রিকশা থেকে কোলে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে নেওয়ার আগেই আমিনের জীবন প্রদীপ নিভে গেছে। নিহতের দাদি লাভলী বেগম বলেন, 'আমার অনেক শখের নাতি, এই নাতি আমি কোম্মে পামু! আমি নাতির ছবি দেখতে পারি না, দেখলে আমার মাথা ঠিক থাকেনা। রাতেই অ্যাম্বুলেন্সে করে আমিনের লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। পরদিন সকালে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। শহীদ সম্পর্কে পরিবার ও নিকটাত্মীয়র অনুভূতি ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার অনাবিল হাসপাতালের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ এক কিশোরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্যে আমাকে অনুরোধ জানান দুই পথচারী। আমি রাজি হলে তারা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় অটোরিকশায় তুলে। হাসপাতালে গিয়ে কোলে করে নামাবার সময় মুখ দেখে চমকে ওঠি আমি। 'এ তো আমার কলিজার টুকরা ছেলে', ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বুকফাটা চিৎকার করি। -শহীদের বাবা, মো: ওবাইদুল ইসলাম শহীদ আমিন তার বাবা মায়ের সাথে ঢাকায় থাকতেন। দুই ঈদে গ্রামের বাড়িতে আসতেন। সকল আত্মীয়-স্বজনদের সাথে মিশতেন। তার আচরণ অত্যন্ত ভালো ছিল। সবাই তার আচরণে খুশি ছিলেন। -শহীদের চাচা মো: মুজিবর রহমান (৪০) সহোযোগিতার সংক্রান্ত প্রস্তাবনা প্রস্তাবনা-১: বাসস্থান প্রয়োজন। প্রস্তাবনা-২: বাবার জন্য কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দিলে উপকার হবে। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : মো: আমিনুল ইসলাম আমিন পেশা : কারখানা শ্রমিক পিতা : মো: ওবাইদুল ইসলাম, পেশা: অটোরিকশা চালক মাতা : সেলিনা বেগম, পেশা: গৃহিণী স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: ভরী পাশা, ইউনিয়ন: কেশবপুর থানা: বাউফল, জেলা: পটুয়াখালী বর্তমান ঠিকানা : দক্ষিণ দনিয়া, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা আহত হওয়ার তারিখ ও স্থান : ২১ জুলাই ২০২৪, ধনিয়া, যাত্রাবাড়ী শহীদ হওয়ার তারিখ ও স্থান: ২১ জুলাই, ২০২৪, ধনিয়া, যাত্রাবাড়ী পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: আমিনুল ইসলাম আমিন
Image of মো: আমিনুল ইসলাম আমিন
Image of মো: আমিনুল ইসলাম আমিন
Image of মো: আমিনুল ইসলাম আমিন
Image of মো: আমিনুল ইসলাম আমিন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: নয়ন

মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন

মো: শাহ জামাল ভূঁইয়া (জামাল)

শহীদ মিরাজ

মো: আবু রায়হান

মো: টিটু

 সাইদুর রহমান ইমরান

মামুন খন্দকার

মো: রফিকুল ইসলাম

মো: আল-আমিন

মো: আতিকুল ইসলাম

মো: সিফাত হোসেন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo