জন্ম তারিখ: ৩ জুলাই, ১৯৭৭
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: বরিশাল
পেশা :দর্জি , শাহাদাতের স্থান :আদাবর থানার সামনে।
মো: বাচ্চু সালে ৩ জুলাই ১৯৭৭ সালে পটুয়াখালী সদরের পশ্চিম শরিকখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আব্দুল মজিদ হাওলাদার এবং মাতা মোসাম্মৎ মানিক বড়ু। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন এবং ১৭ বছর বয়সে উপার্জন তাগিদে ঢাকায় পাড়ি জমান। পিতা মাতার পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড় ছিলেন। মৃত্যুকালীন সময় পর্যন্ত স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে ঢাকা মিরপুর-১ এ বাসা ভাড়া করে থাকতেন। মিম ফ্যাশন টেইলার্স, মোহম্মদপুর লালমাটিয়া ঢাকায়, কর্মরত ছিলেন তিনি। দুই মেয়েকে লেখাপড়া করাতে পারলেও ছেলেকে নিজের কাজের সহযোগিতার জন্য খুব বেশি লেখাপড়া করাতে পারেনি। গ্রামের এলাকায় চাষাবাদের কোন জমি নেই শুধু থাকার মতো একটি বাড়ি আছে তাও আবার দীর্ঘদিন পড়ে থাকার দরুন থাকার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বর্তমান তার পরিবার ঢাকা ছেড়ে গ্রামের দিকে বসবাস করছেন। শহীদ বাচ্চুর শাহাদাতের ঘটনা দীর্ঘ শাসনে সবাইকে খেপিয়ে তুলেছিলেন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা। তাঁর সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও অর্থনীতির মন্দা পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। আর রাজনৈতিক দিক থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের বাইরে অন্য সব দল সরকারবিরোধী অবস্থানে চলে যায়। এর ফলে শেখ হাসিনা রাজনৈতিক দিক থেকেও একা হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনেও সেটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মৃত্যু এক অনিবার্য মহাসত্য। মৃত্যুর হাত থেকে কেউই মুক্তি পায়নি। মানুষের কীর্তিই মানুষকে চিরভাস্বর করে রাখে। মৃত্যুর পরেও হয়ে থাকে অমর। পৃথিবীর বুকে তাকে রাখে চিরস্মরণীয় বরণীয়। তেমনি কীর্তিগাঁথা আল্লাহর রাহে জীবন উৎসর্গকারী এক শহীদ মো:বাচ্চু । ৫ আগস্ট ২০২৪ দুপুর ২ টার দিকে যখন মোঃ বাচ্চু খবর পাই যে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছে তখন তার আনন্দ দেখে কে। স্ত্রীকে বললেন দ্রুত একটু খাবার দাও শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছে বাইরে যেতে হবে আনন্দ করতে হবে। শহীদ বাচ্চু এবং তার ছেলে খুব তাড়াহুড়া করে খাওয়া দাওয়া করলেন। তারপর গোসল করে গণভবনের দিকে রওনা দিলেন। মিরপুর এক নম্বরে তাদের বাসা সেখান থেকে গণভবনে হেঁটে গেলেন যেহেতু সেদিন কোনো গাড়ি চলছিল না। বাচ্চু তার ছেলে এবং বন্ধুবান্ধবদের সাথে গণভবনে ঘোরাঘুরি করে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ি ফেরার পথে ধানমন্ডি লালমাটিয়া থেকে ফোন আসলো তার মালিকের কাছ থেকে যেখানে তিনি কাজ করতেন। ছেলেকে বলল আমার মালিক দোকান থেকে ফোন দিয়েছে আমি একটু দেখা করতে যাব তুমি বাড়িতে চলে যাও। ছেলে এবং বাবা আলাদা হয়ে গেল। একটু পর আদাবর থানার সামনে পুলিশ নিরস্ত্র মানুষের উপর অতর্কিত হামলা শুরু করে। গোলাগুলির বিশাল শব্দে রাস্তার মানুষ দিক বেদিক ছোটাছুটি করতে লাগলো। শহীদ বাচ্চু তার জীবন রক্ষা করার জন্য পালাবার চেষ্টা করল। কিন্তু পুলিশের একটি বুলেট হঠাৎ তার পিঠে এসে বিদ্ধ হয়। কয়েকটা এগিয়েই বাচ্চু মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। রাস্তার মানুষজন তাকে ধরে মোহাম্মদপুর পপুলার হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিন তারা বলেন রোগীর অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে বাচ্চু শাহাদাত বরণ করেন। শেখ হাসিনা পতনের আনন্দ করাই তার জীবনের শেষ আনন্দ হল এবং এই আনন্দই ডেকে আনলো শাহাদাতের মৃত্যু। হয়তো আমাদের কাছে তার মৃত্যুটা কঠিন মনে হচ্ছে কষ্ট মনে হচ্ছে কিন্তু আল্লাহ তালার কাছে তিনি অত্যন্ত ভালোভাবে উপস্থিত হলেন। যে মৃত্যুতে আল্লাহ খুশি হয়, যিনি মৃত্যুবরণ করেন তিনিও খুশি হন। শহীদ বাচ্চুর হৃদয়ের কথা এই দেশ আলেম-ওলামার দেশ। এই দেশে কোনও ভারতীয় এজেন্ডা আমরা বাস্তবায়ন করতে দেবো না। দেশে আলেম-ওলামা বা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যেকোনও চক্রান্ত আমরা একসঙ্গে রুখে দেবো, ইনশাআল্লাহ। আপনাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ, আপনারা হেফাজত, চরমোনাই, জামায়াত সবাই একত্র হয়ে যান। আমরা ছাত্রসমাজের পক্ষে আছি। আমরা চাই, আগামী দিনের বাংলাদেশ আলেম-ওলামার নেতৃত্বে গড়ে উঠবে, ইনশাআল্লাহ। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার বিবরণ শহীদ মো: বাচ্চুর পরিবার তার চাকুরী থেকে উপার্জনকৃত অর্থের মাধ্যমে চলতেন। উপার্জন ও ভালো ছিলো। তারা মিরপুরের লালকুঠিতে ফ্ল্যাট বাসায় ভাড়া থাকতেন। পরিবারে দুই মেয়ে মাছুমা (২২) ও নির্জনা (১৫) এবং এক ছেলে মাহীন (১৮) কে নিয়ে তাদের সংসার চলে যাচ্ছিলো মোটামুটি। মেয়ে দুই জন কলেজ ও হাইস্কুলে পড়াশুনা করে। ছেলেটি বাবার সাথে সেলাইয়ের কাজে সাহায্য করতো। মো: বাচ্চুর মৃত্যুতে বাসা ভাড়া ও ঢাকায় সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালাতে পারবেন না বলে তারা ইতিমধ্যেই গ্রামে চলে গিয়েছেন। ভিটে আছে কিন্তু ঘর নাই তাদের। আপাতত ভাড়া বাসায় উঠেছেন তারা। স্ত্রী লাইলী (৩৮) সেলাইয়ের কাজ জানেন। তার আবার রয়েছে শারীরিক নানা রকম অসুস্থতা যেমন পায়ে ব্যথা, কোমড়ে ব্যথা, লিভারে জটিলতা, হাঁপানী। এই শরীর নিয়ে মিসেস লাইলী যদি সেলাই কাজ করতে পারেন তবে তা থেকে উপার্জিত অর্থই হবে সন্তানদের লেখাপড়া, খাবার খরচ, নিজের চিকিৎসা খরচ ও বাসা ভাড়া দেয়ার একমাত্র অবলম্বন। শহীদ বাচ্চুর স্ত্রীর বক্তব্য আমার স্বামী বাড়ি থেকে যখন বের হয় খুব তাড়াহুড়া করে ভাত খেয়ে গোসল করে ছেলেকে সঙ্গে করে গণভবনের দিকে গেল। যাওয়ার আগে আমি বললাম যাওয়ার দরকার নেই বাইরে অনেক গণ্ডগোল হতে পারে। আমার স্বামী বললেন আজকে স্বাধীনতার দিনে আবার গণ্ডগোল হবে কেন, আজকে তো কোন সমস্যা হওয়ার কথা না। আজকের দিনে সবাই আনন্দ করবে স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করবে। আমি বললাম তা অবশ্য ঠিক , যাও তবে সাবধানে থেকো। এই যাওয়াই আমার স্বামীর শেষ যাওয়া। স্বাধীনতার পরেও মানুষকে এভাবে পুলিশের হাতে মরতে হবে এমন ইতিহাস পৃথিবীর বুকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই। যে অস্ত্র শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য পুলিশের হাতে দেয়া হয়েছে সেই অস্ত্র দিয়ে কেন শান্তি নষ্ট করবে? আমার স্বামীকে যে সব পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে তাদেরকে আমি ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলাতে চাই। এ ধরনের আচরণ পুলিশ যেন আর কোনদিন করতে না পারে সেজন্য তাদেরকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এক নজরে শহীদ মো: বাচ্চু নাম : মো: বাচ্চু জন্ম তারিখ : ০৩-০৭-১৯৭৭ জন্মস্থান : গ্রাম: পশ্চিম শরিকখালী ইউনিয়ন : কালিকাপুর, থানা: পটুয়াখালী সদর, জেলা : পটুয়াখালী, পেশা: অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: পশ্চিম শরিকখালী, ইউনিয়ন: কালিকাপুর, থানা: পটুয়াখালী সদর, জেলা: পটুয়াখালী স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: পশ্চিম শরিকখালী, ইউনিয়ন: কালিকাপুর, থানা: পটুয়াখালী সদর, জেলা : পটুয়াখালী পিতা : মৃত আব্দুল মজিদ হাওলাদার মাতা : মৃত মানিক বড়ু স্ত্রী : লাইলী খাতুন (৩৮), সেলাইয়ের কাজ জানেন ছেলে মেয়ে : মাসুম আক্তার লিজা (২২), দ্বাদশ শ্রেণি : মুন্না ইসলাম মাহিন (১৮), বেকার : নির্জনা আক্তার (১৫), নবম শ্রেণি আঘাতকারী : আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী পুলিশ আহত হওয়ায় ও স্থান সময় : আদাবর থানার সামনে, ০৫-০৮-২০২৪, বিকেল ৪:৩০টায় মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : আদাবর থানার সামনে, ০৫-০৮-২০২৪, বিকেল ৪:৩০টায় জানাজা : ০৫-০৮-২০২৪ সকাল ১০:০০টায় কবরস্থান : নিজে গ্রামের পারিবারিক কবরস্থান প্রস্তাবনা ১. মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা যায় ২. বড় মেয়ের চাকরির ব্যবস্থা করা যায়