Image of মো: আবু রায়হান

নাম: মো: আবু রায়হান

জন্ম তারিখ: ১ এপ্রিল, ২০০৬

শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: বরিশাল

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা :ডেলিভারি ম্যান, শাহাদাতের স্থান : ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল, ঢাকা।

শহীদের জীবনী

মো: কামাল এবং রেহেনা বেগমের ঘরে ১ এপ্রিল ২০০৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন শহীদ মো: আবু রায়হান। রায়হানের জন্ম পটুয়াখালী জেলার সদর থানার চালিতাপুর্নিয়া গ্রামে। দুই ভাই বোনের মধ্যে শহীদ রায়হান আকন ছিলেন বড়। বড় হওয়ার কারণে সংসারের অর্থনৈতিক সমস্যায় হাল ধরতে হয় অল্প বয়সেই। কওমি মাদ্রাসায় পঞ্চম জামাত পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর পরিবারের অর্থনৈতিক সমস্যায় লেখাপড়া ছেড়ে দিতে হয়। শাহাদতের তিন মাস আগে তিনি ঢাকার সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস বাড্ডা এলাকায় দশ হাজার টাকা বেতনের চুক্তিতে ডেলিভারি ম্যান এর চাকরি নেন। শহীদ মো. রায়হানের পিতা পেশায় একজন দিনমজুর। সম্পদ হিসেবে ৩০ শতাংশ আবাদি জমি ও ১৫ শতাংশ জমিতে বসতবাড়ি রয়েছে তাদের। মা মোসা. রেহেনা গৃহিনী (৪০) ও হার্টের রোগী। বাবার স্পাইনল কর্ডের সমস্যা আছে এবং ছোট বোন জান্নাত (১১) ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ালেখা করে। ঘটনা সংক্রান্ত বিবরণ শহীদ রায়হান যখন ছোট তখন শাপলা চত্বরে গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার আলেম-ওলামাদের যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড করেছিল তা সে টিভিতে দেখেছিল। তখন থেকেই সে আওয়ামীলীগকে জানে। আস্তে আস্তে যখন বড় হয় তখন আওয়ামী লীগের আরো দুর্নীতি অপরাজনীতি এবং বিভিন্ন সময় সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতন দেখেছে। রায়হান মনে করতো হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান আমরা সবাই এ দেশের গর্বিত নাগরিক। আমরা সবাইকে নিয়ে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাই। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে কোনো দারির্দ্য থাকবে না, ক্ষুধামুক্ত, ভয়ভীতিহীন ও স্বনির্ভর বাংলাদেশ দেখতে চাই। এ জন্য আমাদের সবাইকে একতাবদ্ধ থেকে এই আওয়ামী লীগ অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে শহীদ মো: রায়হান আকন কোটা বৈষম্য আন্দোলনের একজন সক্রিয়কর্মী ছিলেন। ছোটকালে মাদ্রাসায় পড়েছেন তাই সত্য মিথ্যার পার্থক্য ভালই করতে জানেন। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকার যে সাধারণ ছাত্রদের উপর অত্যাচার করছে তা দেখে সে সহ্য করতে পারেন না। মাঝে মাঝে মনে করতেন চাকরি ছেড়ে দিয়ে ২৪ ঘন্টায় ছাত্রদের সাথে আন্দোলন করি । কিন্তু পারিবারিক সমস্যায় চাকরি ছাড়া সম্ভব না তাই চাকুরির ফাঁকে সুযোগ পেলে তিনি ছুটে যেতেন আন্দোলনে। রাজপথে সাহসীকতার সাথে ভূমিকা রেখেছেন। অদম্য সাহসী এই যুবকের সামনে অসংখ্য তাজা প্রাণ ঝরে যায় তবুও তিনি ভয়ে কাতর হয়ে আন্দোলন থেকে সরে যাননি। স্বৈরচার পতনের শেষদিন ৫ আগস্ট ২০২৪ দেশ ছেড়ে পালায় রক্ত পিপাসু স্বৈরসরকার প্রধান খুনি হাসিনা। এ সংবাদ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। স্বৈরাচার পলিয়েছে খবর শুনে টগবগে যুবক রায়হান ছুটে যায় ঢাকার বাড্ডা এলাকার রাজপথে। অতি উৎসহসী হায়েনা পুলিশগণ নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর চড়াও হয়। ধাওয়া দেয় সাধারণ মানুষদের। তখনি পুলিশের হাতে ধরা পরে রায়হান। পুলিশ নির্মমভাবে রায়হানকে প্রহার করে। এক পর্যায়ে পুলিশ বুটজুতা পায়ে তাকে এক পা দিয়ে চেপে ধরে অন্য পা মোচড়িয়ে ভেঙ্গে দেয়। রায়হানের পা ভেঙ্গে ক্ষান্ত হয়নি পুলিশ। তাকে পা দিয়ে ধরে কোমরে পরপর দুটি গুলি করে ফেলে রাখে বাড্ডা সড়কে। গুলি একপাশ ভেদ করে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। রায়হানের রক্তে রাজপথ ভিজে যায়। বিকাল ৩ ঘটিকায় রায়হানকে উদ্ধার করে সাধারণ লোকজন নিয়ে যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে। তখনো রায়হান জীবিত, কর্তব্যরত ডাক্তার দ্রুত রক্ত ব্যবস্থা করতে বলেন, দু ব্যাগ রক্ত ব্যবস্থা করে পুশ করা হয় রায়হানের শরীরে কিন্তু তাতে বড্ড দেরি হয়ে যায়। ঠিক ঘড়ির কাটায় বিকাল যখন ৪ টা রায়হান তখন মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে। খবর শুনে রায়হানের আপন ফুফাতো ভাই মো. কাওছার এবং সাদ্দাম হোসেন ঢাকা মেডিকেলের মর্গে ছুটে এসে লাশ গ্রহণ করে। এভাবে জীবন দিয়ে নতুন বাংলাদেশের অধ্যায় সূচনা করে শহীদ রায়হান। বিশেষ তথ্য ৫ আগস্ট ২০২৪, সোমবার। শহীদ রায়াহান মানুষের মাঝে এত প্রিয় ছিলেন যে তাকে হারিয়ে এলাকার সবাই ব্যথিত। বিশেষ করে আপন বড় চাচা মো. নুরুল ইসলাম আকন (৫০) নিজের ছেলের মত করে দেখতেন। তাই রায়হানের শাহাদাতের সংবাদ শুনে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন । একমাত্র ভাতিজার মৃত্যু সহ্যকরতে পারেননি। অতপর তিনি ৯ আগস্ট ২০২৪ স্ট্রোক করে মারা যায়। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয় ও বন্ধুর অনুভূতি শহীদের নানা মো. দিলু খান বলেন, আমার নাতি রায়হান সকলের চেয়ে আলাদা ছিলো ও আনেক ভালো ছেলে। তার বাবা ও খুব ভালো মানুষ। মাদ্রাসার পড়া-লোখা ছেড়ে সে পরিবারের হাল ধরার জন্য ঢাকায় চাকুরি করতো। শহীদের বাবা মো. কামাল আকন বলেন, রায়হান আমাকে বিকাল ৩টায় ফোন দিয়ে বলে আব্বা আমাকে পুলিশ দুটি গুলি করেছে। আমার পা ভেঙ্গে দিছে আমি আর বাঁচব না, আমাকে মাফ করে দিয়েন আব্বা। রায়হানের বাবা আরো বলে, একথা গুলো আমার কানের কাছে এখনও বেজে ওঠে। সাথে থাকা লোকের সাথে রায়হানের ফোনে বাবা যোগাযোগ রক্ষা করে। বিকাল ৪ টায় লোকটি রায়হানের বাবাকে ফোন দিয়ে বলেন, আপনার ছেলে চলে গেছে। তখন বাবা জিঙ্গাসা করে আমার রায়হান কোথায় গেছে? লোকটি বলে, দুনিয়ার মায়া ছেড়ে। অর্থনৈতিক অবস্থা অর্থের অভাবে লেখাপড়া ছেড়ে সংসারের হাল ধরেন রায়হান। ঢাকাতে তিন মাস হল কুরিয়ার সার্ভিসের ডেলিভারি ম্যান হিসেবে চাকরি নিয়েছেন। ঘরবাড়ি ছিল না। শহীদ মো. রায়হানের পরিবার থাকার জন্য গত তিন বছর আগে একটি টিনশেড মাটির ঘর র্নিমাণ করেন। শহীদ মো. রায়হানের পিতা পেশায় একজন দিনমজুর। সম্পদ হিসেবে ৩০ শতাংশ আবাদি জমি ও ১৫ শতাংশ জমিতে বসতবাড়ি রয়েছে। মা মোসা. রেহেনা গৃহিণী। তিনি হার্টের রোগী। বাবার স্পাইনল কর্ডের সমস্যা আছে। ছোট বোন জান্নাত) ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ালেখা করে। রায়হানের টাকায় সংসার চলত কিন্তু এখন তার পরিবার কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।শহীদের জীবনী এক নজরে শহীদ মো: আবু রায়হান নাম : মো: আবু রায়হান জন্ম তারিখ : ০১-০৪-২০০৬ জন্মস্থান : চালিতাবুনিয়া পটুয়াখালী সদর, পটুয়াখালী পেশা : ডেলিভারি ম্যান, সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস ,বাড্ডা, ঢাকা বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: চালিতাবুনিয়া, ইউনিয়ন: মাদারবুনিয়া, থানা: পটুয়াখালী সদর, জেলা : পটুয়াখালী স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: চালিতাবুনিয়া, ইউনিয়ন: মাদারবুনিয়া, থানা: পটুয়াখালী সদর, জেলা : পটুয়াখালী পিতার নাম : মো: কামাল (৪৬), দিনমজুর মাতার নাম : মোছা: রেহেনা বেগম (৪০), গৃহিণী ছোট বোন : মোছাম্মৎ জান্নাত (১২), ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী আঘাতকারী : আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী পুলিশ আহত হওয়ায় ও স্থান সময় : ঢাকা বাড্ডার মেইন রোড ০৫-০৮-২০২৪ বিকেল ২:৩০টায় মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ২০-০৭-২০২৪, দুপুর ৪:০০টায়, ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল, ঢাকা জানাজা : ০৬-০৮-২০২৪ সকাল ১০:০০টায় কবরস্থান : নিজে গ্রামের পারিবারিক কবরস্থান প্রস্তাবনা ১. একটি পাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়া দরকার ২. নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করে দেয়া যায়

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: আবু রায়হান
Image of মো: আবু রায়হান
Image of মো: আবু রায়হান
Image of মো: আবু রায়হান

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: মহিউদ্দিন

মো: সরোয়ার হোসেন শাওন

মো: আল আমিন হোসেন আগমন

মো: আতিকুল ইসলাম

মো: সুজন

মো: সিয়াম

মো: আরিফ

মো: ইফতি আব্দুল্লাহ

 মোঃ শামীম হাওলাদার

রুবেল হোসেন

মো: জিহাদ হোসেন

মো: লিটন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo