Image of জসিম উদ্দিন

নাম: জসিম উদ্দিন

জন্ম তারিখ: ১০ অক্টোবর, ১৯৮৫

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: বরিশাল

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা :ড্রাইভার, শাহাদাতের স্থান :সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল।

শহীদের জীবনী

আমাদের ছোটো গাঁয়ে ছোটো ছোটো ঘর থাকি সেথা সবে মিলে কেহ নাহি পর। পাড়ার সকল ছেলে মোরা ভাই ভাই একসাথে খেলি আর পাঠশালে যাই। হিংসা ও মারামারি কভু নাহি করি, পিতা-মাতা গুরুজনে সদা মোরা ডরি। - বন্দে আলী মিঞা ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় আমাদের এই গ্রাম বাংলা। ৬৮ হাজার গ্রাম নিয়ে গড়ে ওঠেছেন অপরুপ নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এই বাংলাদেশ। হাজার ও গ্রামের ভিতর পটুয়াখালির দুমকি থানার পাঙ্গাশিয়া তেমনি একটি গ্রাম। শত শত বছর ধরে গ্রামের সহজ সরল মানুষেরা সেখানে মিলেমিশে বসাবস করে যাচ্ছে। এই গ্রামের তেমনি একটি পরিবার হলো হাওলাদার পরিবার, যার কর্ণধার মো: সোবহান হাওলাদার। এই পরিবারের মুখ আলোকিত করে ১৯৮৫ সালের ১০ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন একজন নবজাতক। মাতা পিতা ভালোবেসে নাম রাখেন মো: জসিম উদ্দিন। তিন সন্তানদের নিয়ে সুখে শান্তিতে চলছিল মো: সোবহান হাওলাদার এবং তার স্ত্রী রাবেয়া বেগমের সংসার। প্রবাহমান জীবনের শৈশব, কৈশোর কাটিয়ে তাগড়া যুবক জসীম উদ্দিন অবশেষে সরলা নারী রুমা বেগমকে বিয়ে করেন। ইতিমধ্যে জসীম উন্নত জীবনের আশায় শহরে পাড়ি জমান। তাদের সংসার আলোকিত করতে জন্ম নেয় দুই মেয়ে এবং এক সন্তান। জীবন ও জীবিকার তাগিদে তিনি রাজধানীর আদাবর থানার অন্তর্গত সেথেরটেক, শ্যামলী হাউজিং সোসাইটিতে বসবাস করতেন। তিন সন্তান ও স্ত্রী সহ তার মধ্যবিত্ত পরিবার ছিলো যেন এক টুকরো সুখের নীড়। তার দুচোখ জুড়ে খেলা করতো সন্তানগুলোকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন। সেজন্য তিনি দিনরাত এক করে ড্রাইভিং পেশাকে বেছে নিয়ে হাল ধরেছিল পরিবারের। পারিবারিক অবস্থা মূলত মো. জসিম উদ্দিন পরিবার নিয়ে ঢাকায় এবং তার বৃদ্ধ মা-বাবা গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। পরিবার ও মা-বাবার সকল খরচ জসিম উদ্দিনের আয়ের উপর নির্ভরশীল ছিলো। বাড়িতে বসতভিটা ছাড়া বাহিরে কোন জমি বা সম্পদ ছিল না। এদিকে হঠাৎ করে একদিন তার পূর্বের বাড়ি ও জমি ভেঙে পায়রা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এমতাবস্থায়, তার বাবার দেওয়া কিছু অর্থ এবং নিজের জমানো কিছু টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করে একটি বসতভিটা তৈরি করেন। সেখানে তার মা-বাবা বসবাস করতেন তবে সেটার অবস্থাও জীর্ণ শীর্ণ। এই করুণ অবস্থার ভিতর দিয়ে দিনাতিপাত করছিল জসিম উদ্দিনের মাতা-পিতা। অন্যদিকে ড্রাইভিং করে নুন আনতে পানতা ফুরানোর মতো করে চলছিল জসীম উদ্দিনের শহরের সংসার। সামান্য রোজগার দিয়ে তিনি না পারতেন স্ত্রী,সন্তানদের চাহিদা মেটাতে বা গ্রামে বসাবসরত পিতামাতার। ঘটনার বিবরণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলছিল জুলাই ‘২৪ জুড়ে। ছাত্ররা মূলত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা, এবং সেমিনারের মাধ্যমে তাদের দাবি তুলে ধরেছে। তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আন্দোলনটি সংঘাতপূর্ণ হয়ে উঠতে দেখা যায়, যেখানে নিরাপত্তা বাহিনী ও ছাত্রদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। কারণ স্বৈরাচার সরকার ছাত্রদের নায্য দাবী না মেনে চালাচ্ছিলো অত্যাচারের স্টীমরোলার। সারাদেশ জুড়ে গুলি, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছোঁড়া হচ্ছিলো ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে। খালি হয়ে যাচ্ছিলো হাজারো মায়ের বুক, পিতাহারা হয়ে পড়ছিলো হাজারো শিশু আর হাতের মেহেদীর রঙ শুকাবার আগে অনেকেই হয়েছিলো বিধবা। এসব দেখে দেশের সাধারণ মানুষও চুপ করে বসে থাকতে পারেনি। তাদের মধ্যে একজন হলেন ড্রাইভার জসীম উদ্দিন, যিনি মজলুম ছাত্র-জনতার মুখে নিজের সন্তানদের ছাপ দেখতে পেতেন। তাই বিবেকের কাছে হার মেনে ড্রাইভিং বাদ দিয়ে প্রতিদিনই শামিল হতেন আন্দোলনে। সে সময় চরম প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতার পাশে থেকে সাহায্য করার চেষ্টা করতেন। এক পর্যায়ে এই আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। সারাদেশে ঢল নামে ছাত্র-জনতার। মুখে মুখে আন্দোলিত হতে থাকে হাসিনার পতনধ্বনি। এই ঘটনার পরিক্রমায় ১৯ জুলাই ২০২৪, জুমাবার বিকেলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড যান জসীম উদ্দিন। সেখানে দিনভর ছিল গোলাগুলি। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও খুনী আওয়ামী লীগের বিতর্কিত সংস্থা রাস্তায় ছিল তৎপর। ছাত্ররা তারপরেও রাস্তায় অবস্থান ধরে রেখেছিল। সরকারী দলের তাণ্ডবে রাজপথ রক্তাক্ত হচ্ছিল। হাসপাতাল গুলো আহত ও লাশে ভরছিল। সন্ধা ৬ টার সময় পুলিশের গুলিতে আল্লাহ করিম মসজিদের সামনে আহত হন জসীম উদ্দিন । একটি গুলি ফুসফুসে এবং আঙ্গুলে লেগে সেখান থেকে দুইটি আঙ্গুল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে জসীম উদ্দিন, অবশেষে ছাত্ররা ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায় তাকে। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বক্ষব্যাধি বিভাগে ৯ দিন চিকিৎসারত অবস্থায় ২৯ জুলাই ২০২৪, রাত ৯ টায় মৃত্যুবরণ করেন। এভাবে শহীদি কাফেলায় একটি নাম সংযুক্ত হয় শহীদ মো. জসীম উদ্দীন। সর্বোপরি, ৪ আগস্ট থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন ছাত্র-জনতা, সেদিন বিকেলেই ঘোষণা আসে "লং মার্চ টু ঢাকা" হবে পরের দিন। এরই মধ্যে দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়। কিন্তু সেই মুক্ত দেশের মুক্তির আনন্দ উপভোগ করতে পারেননি শহীদ মোঃ জসীম উদ্দিন। তারই জন্য কবি হয়তো লিখেছিল- শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয় ও বন্ধুদের অনুভূতি কথায় আছে, “অ সধহ ফড়বং হড়ঃ ষরাব রহ ুবধৎং নঁঃ রহ ফববফং” এটিই যথার্থ জসীম উদ্দিনের বেলায়। জসিম উদ্দিনের প্রতিবেশি মিজানুর রহমান বলেন, জসিম উদ্দিন ছেলে হিসেবে খুবই ভালো। সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলতো। কারো সাথে কোন ব্যক্তিগত শত্রুতা ছিলো না। তাছাড়া এলাকার সকল মানুষ একই কথা বলেছে জসীম উদ্দিন সম্পর্কে । জসিম উদ্দিনের স্ত্রী মোসা. রুমা বেগম বলেন, আমার স্বামী খুব ভালো মানুষ ছিলো। কখনো কারো সাথে ঝগড়া বিবাদ করে নাই। গ্রামের সবার সাথে ভালো সম্পর্ক ছিলো তার। এমনকি সে টাকা পয়সা জমা করে নাই সব সময় বলতো আল্লাহ আমাদের খাওয়াবে চিন্তা করবা না। এক নজরে শহীদ পরিচিতি নাম : জসিম উদ্দিন, জন্ম: ১০-১০-১৯৮৫ পেশা : ড্রাইভার পিতা : মো: সোবহান হাওলাদার মাতা : রাবেয়া বেগম ঠিকানা : গ্রাম: পাঙ্গাশিয়া, ইউনিয়ন: পাঙ্গাশিয়া, থানা: দুমকি, জেলা: পটুয়াখালী বর্তমান ঠিকানা : মহল্লা: সেথেরটেক, শ্যামলী হাউজিং সোসাইটি, থানা: আদাবর, জেলা: ঢাকা পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৪ জন ১. স্ত্রী: মোসা. রুমা বেগম ২. মেয়ে: মোসা. লামিয়া (বয়স: ১৭, একাদশ) ৩. মেয়ে: রিয়ামণি (বয়স- ১১, হিফজ) ৪. ছেলে: জুবায়ের ইসলাম তানজিম (বয়স-৮ মাস) আহত হওয়ার স্থান ও তারিখ : মোহাম্মদপুর আল্লাহ করিম মসজিদ, ২৯ জুন রাত ৯ টা আক্রমণকারী : স্বৈরাচারী হাসিনার ঘাতক পুলিশ নিহত হওয়ার তারিখ ও স্থান : হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়, ১৯/০৭/২০২৪ সমাধি : পাঙ্গাশিয়া, দুমড়ি,পটুয়াখালী শহীদ পরিবারকে সাহায্যের প্রস্তাবনা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে মারা যাওয়ায় তার পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎসটি বন্ধ হয়ে গেছে। মো. জসিমের স্ত্রী দুকন্যা ও আট মাসের একমাত্র ছেলে নিয়ে অসহয় অবস্থায় দিনযাপন করছে, যাদের বুক জুড়ে রয়েছে শুধু হাহাকার। ১. স্ত্রীকে শিক্ষকতার চাকুরির ব্যবস্থা করে দেয়া ২. সন্তানদের শিক্ষার খরচের ব্যবস্থা করা ৩. স্ত্রী সন্তানদের জন্য বাসস্থানের ব্যাবস্থা করা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of জসিম উদ্দিন
Image of জসিম উদ্দিন
Image of জসিম উদ্দিন
Image of জসিম উদ্দিন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: আতিকুর রহমান

মো: আবু রায়হান

মো: জিহাদ হোসেন

মো: শাহীন বাড়ি

মো: নয়ন

মো: রফিকুল ইসলাম

মো: রিয়াজুল ইসলাম

মো: শাহ জামাল ভূঁইয়া (জামাল)

মো. মনির

মো: আরিফ

মো: জামাল হোসেন

মেহেদী হাসান

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo