জন্ম তারিখ: ১৫ মে, ১৯৮৮
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা: ফেরীওয়ালা শাহাদাতের স্থান : মিরপুর ১০, ঢাকা
শহীদ পরিচিতি মো: সেলিম আলী শেখ ১৫ মে ১৯৮৮ সালে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার করুয়া ইউনিয়নের আশ্রমপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পেশায় ছিলেন একজন সাধারণ ফেরিওয়ালা। ঢাকায় ১৪ বছর ধরে বসবাস করে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় পণ্য বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। আর মনের ভেতর লালন করছিলেন দেশমাতৃকার স্বপ্ন। তাইতো তিনি বসে থাকলেন না। বৈষম্য ও স্বৈরাচারমুক্ত দেশ গড়ার স্বপ্ন বুকে নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে। ১৯ জুলাই, ২০২৪ তারিখ সন্ধ্যা ৬ টায় ঘাতক পুলিশের গুলিতে মিরপুর আলোক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। ঘটনার বিবরণ ১৯ জুলাই বিকাল ৪ টায় সেলিম আলী শেখ বাসা থেকে বেরিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দেন। মিরপুর ১০ এর ২২ নং রোড তখন বিক্ষোভে উত্তাল। এই ক্ষোভ ছিল সকল প্রকার বৈষম্যের বিরুদ্ধে। সেখানে উপস্থিত ছাত্র-জনতা রাষ্ট্রীয় এবং প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছিল প্রতিবাদমুখর। সেলিমের বুকে সকল জুলুম ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভের আগুন জ্বলছিল। তিনি মনে করতেন, সমাজের প্রতিটি স্তরে সমান সুযোগ ও ন্যায় নিশ্চিত করতে হবে। সকল ভয় উপেক্ষা করে তিনি যোগ দিয়েছিলেন মিছিলে। বিকাল ৫ টার দিকে আন্দোলন আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠলে তৎকালীন সরকারের পেটুয়া বাহিনী পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালায়। সেই গুলি এসে লাগে সেলিমের ডান বাহুতে। শরীর এফোড়-ওফোড় হয়ে বেড়িয়ে যায় গুলিটি। তার সহযোদ্ধারা তাকে দ্রুত আলোক হাসপাতালে নিয়ে যান, কিন্তু বিকাল ৬টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শহীদ সেলিমের পেশাগত জীবন ছিল কষ্টের। তবুও বুকের পাঁজরে আগলে রেখেছিলেন জীবিকার চাকাটি। সেলিমের মৃত্যুতে তার পরিবারে এক অন্ধকার অধ্যায়ের সূচনা হয়। কেননা, তিনি একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য হিসেবে আমৃত্যু পরিবারকে সুখী করার সংগ্রামে নিয়োজিত ছিলেন। শহীদ সেলিম তার আয় রোজগার দিয়ে নিজের পরিবার ও গ্রামে থাকা বৃদ্ধ বাবা-মায়ের দেখাশোনা করতেন। তার আকস্মিক মৃত্যুতে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে। সেলিমের মৃত্যুর পর তার পরিবার শোকে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। তার স্ত্রী আসমা শোকে পাথর প্রায়। সন্তান কুলসুম, শাওন ও ৩ বছরের ছোট আরিয়ান পিতাকে হারানোর শোক সইতে পারছেন না। অবুঝ আরিয়ান প্রতি মুহুর্তে বাবাকে খুঁজে ফিরছে। সেলিমের মৃতদেহ তিন ঘণ্টা পরে পরিবারের হাতে হস্তান্তর করা হয়। প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায়। ২০ জুলাই সকালে দ্বিতীয় জানাজার পর তাকে দাফন করা হয় তার জন্মভূমি ময়মনসিংহে। সেলিমের মৃত্যু কেবল তার পরিবারের জন্য নয়, বরং পুরো জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি নিজের জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গিয়েছেন যে, তিনি শুধু পরিবারের দায়িত্ব পালন করতেন না, বরং ন্যায়বিচারের পক্ষে দেশের তরুণ প্রজন্মের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত ছিলেন। সেলিম আলী সেকের জীবন ও মৃত্যু আমাদের সবাইকে মনে করিয়ে দেয় যে, লড়াই ছাড়া অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় না। আরও মনে করিয়ে দেয় ন্যায়ের পক্ষে কিভাবে অকাতরে প্রাণ দিতে হয়। তার অসীম সাহস ও ত্যাগ আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা যোগাবে। শহীদ সেলিম আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার আদর্শ ও সংগ্রামের চেতনা চিরকাল জাতির হৃদয়ে অমলিন হয়ে থাকবে। স্বজনদের বক্তব্য শহীদ সেলিমের ভাই বলেন, “আমার ভাইরে যারা মারছে, আমি তাদের বিচার চাই।” শহীদের সন্তান গার্মেন্টসকর্মী ছেলে শাওন বলল, “আমার আব্বু খুব ভালো লোক ছিলেন। আমার একটা বোন ও ছোট ভাই আছে। আমাদের সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হয়।” চাচি নার্গিস বেগম বলেন, “সেলিম খুবই ভালো মানুষ ছিল। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। তার জন্য এলাকার মানুষ অনেক কান্নাকাটি করেছে।” প্রস্তাবনা সেলিম আলী শেখের মৃত্যুতে নিদারুণ অভাবে পড়েছে তার পরিবার। ঢাকার ভাড়া বাড়িতে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছে তার স্ত্রী-সন্তান। যেকোনো সময় ভাড়া বাসা ছেড়ে দিতে হতে পারে। কিন্তু গ্রামে মাথা গোঁজার কোনো ঠাই তাদের নেই। বাড়ি করার মত উল্লেখযোগ্য জমিও নেই। তার পরিবারের জন্য গ্রামে এক টুকরো জমিসহ বাসস্থানের ব্যবস্থা করলে মাথাগোঁজার ঠাঁই পাবে পরিবারটি। এছাড়া এককালীন আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি সরকার ছোট ছেলেটির পড়াশোনার দায়িত্ব নিলে উপকৃত হবে পরিবারটি। এক নজরে শহীদ মো: সেলিম আলী শেখ শহীদের পূর্ণ নাম : মো: সেলিম আলী শেখ জন্ম তারিখ : ১৫-০৫-১৯৮৮ জন্মস্থান : ময়মনসিংহ নিজ জেলা : ময়মনসিংহ পেশা : ফেরীওয়ালা স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: আশ্রম পাড়া, ইউনিয়ন: করুয়া পাড়া থানা : হালুয়াঘাট, জেলা: ময়মনসিংহ। বর্তমান ঠিকানা বাসা-৭, সি ব্লক, লেন-১৮ মিরপুর ১০, থানা: কাফরুল, জেলা: ঢাকা পরিবার সংক্রান্ত তথ্য পিতার নাম : কলিম উদ্দিন, বয়স: ৮২ বছর মায়ের নাম : মোসা: সকিনা বেগম, বয়স: ৭৫ বছর মাসিক আয় : ১৫০০০, আয়ের উৎস: ফেরি করত শহীদের সাথে সম্পর্ক : ছেলে পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৮ পরিবার সংক্রান্ত বিশেষ তথ্য স্ত্রী : আছমা খাতুন সন্তানদের নাম : ১. কুলসুম, বয়স: ২০ (বিবাহিতা), ২. শাওন, বয়স: ১৮ (গার্মেন্টস কর্মী) ৩. আরিয়ান, বয়স: মাত্র ৩ বছর ঘটনার স্থান/পয়েন্ট/এলাকা : মিরপুর ১০, ২২ নং রোডে আক্রমণকারী : কাফরুল থানার পুলিশ বাহিনী, আওয়ামী সন্ত্রাসী ও হেলমেট বাহিনী (ছাত্রলীগ) আহত হওয়ার সময়কাল : ১৯ জুলাই বিকাল ৫ টায় মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ১৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬ টায় মিরপুর ১০ আলোক হসপিটাল শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : ময়মনসিংহ