Image of মো: আতিকুল ইসলাম

নাম: মো: আতিকুল ইসলাম

জন্ম তারিখ: ১ সেপ্টেম্বর, ১৯৯১

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: বরিশাল

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : মার্চেনডাইজার , শাহাদাতের স্থান : সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে

শহীদের জীবনী

পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের রূপনগর এলাকার বাসিন্দা শাহ আলম মাস্টারের চার ছেলের মধ্যে সবার ছোট শহীদ মোঃ আতিকুল ইসলাম রুবেল। তাঁর ডাক নাম রুবেল। রুবেল জন্মগ্রহণ করেন ১৯৯১ সালে। ২০০৭ সালে গলাচিপা সরকারি টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট থেকে গোল্ডেন এ+ নিয়ে এসএসসি শেষ করে, বরিশাল সরকারি টেক্সটাইল কলেজ থেকে ২০১১ সালে টেক্সাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন। পরে ঢাকা সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে ২০১৪ সালে একই বিষয়ে বিএসসি সম্পন্ন করে ঢাকার বারিধারা এলাকায় জাস্টেক্স বায়িং হাউজে চাকরিতে যোগদান করেন। সর্বশেষ সিনিয়র মার্চেন্ডাইজার পদে কর্মরত ছিলেন। ২০১৭ সালের ২৯ জুন পাশের রাঙ্গাবালী উপজেলার জসিম উদ্দিনের মেয়ে মোসা: তামান্না (২৬) এর সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় রুবেলের। তাদের ঘরে আলিসবা ইসলাম ফারিস্তা নামের ১৭ মাস বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। পারিবারিক অবস্থা বাবা শাহ আলম মাস্টার জানান, তখনকার সময় ৫০০ টাকা বেতনে রেজিস্ট্রি স্কুলে চাকরি করতাম। অল্প বেতনে ছয় সদস্যের সংসার চালানো খুবই কষ্ট ছিল। তখন গ্রামে থাকতাম। আমার ছেলে রুবেল মেধাবী হওয়ায় আমার বোন খাইরুন নাহার লিপি তাকে গলাচিপা এনে লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয়। তার কাছে থেকেই এসএসসি শেষ করে রুবেল। পাশাপাশি লিপির ভাই শামীমও সহযোগিতা করেছে। আমার ছেলে খুবই ভালো ছিল। কোনো রাজনীতিও করতো না। সমাজিক কাজে জড়িত ছিল। পরিবারের চার ভাইয়ের মধ্যে রুবেল ছিল বেশি স্বাবলম্বী। সব ভাইকে সহযোগিতা করত। তাঁর আয় দিয়ে তার পরিবার চলত। ভাই বোনদের পরিবারও তাঁর থেকে উপকৃত হতো। আতিকুলের একজন ভাই রয়েছে বাক প্রতিবন্ধি। তার ১৮ মাস বয়সী ১ জন কন্যা সন্তান রয়েছে। তার স্ত্রী তামান্না (২৭) একজন সাধারন গৃহিণী । শহীদের স্ত্রী ও সন্তানের জীবন পরিচালনার জন্য আর কোন আয়ের উৎস নেই। শহীদ হওয়ার ঘটনা ২০২৪ সালের জুলাই মাস জুড়ে চলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আন্দোলন শুরুতে শান্তিপূণ্র্ থাকলেও পরবর্তিতে সহিংস রূপ লাভ করে। আন্দোলন দমনে সরকার অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে। সারাদেশে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। পুলিশের গুলিতে নিহত হয় শতাধিক এবং আহত হয় হাজার হাজার মানুষ। ১৯ জুলাই, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে বাধা দেওয়ার প্রয়াসে, জনসমাবেশ ও মিছিল অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করে। বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, সরকারের ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশে, ঢাকা এবং দেশের বাকি অংশের মধ্যে ট্রেন পরিসেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। যাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ভ্রমণ বা সমাবেশের জন্য ট্রেন ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখা হয় । ১৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ এবং দেশব্যাপী শাটডাউন, ১৯ জুলাই পর্যন্ত অব্যাহত রাখা হয়। সারাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ডাক ব্যাপকভাবে সারা ফেলে। এদিন সকাল ১০টার দিকে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মুখে কালো কাপড় পরে প্রতিবাদ জানান। আনুমানিক ১২:৪৫ টায়, কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানায় বিক্ষোভকারীরা থানা ঘেরাও করার পর, পুলিশ স্টেশনের ভিতর থেকে জনতার উপর গুলি চালায়, এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। এদিন রাজধানী ঢাকা শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ঢাকার প্রত্যেকটি পয়েন্টে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব,আনসার ও বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ভারী অস্ত্র-সস্ত্র, সাজোয়াজান, পিস্তল, রাইফেল, টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, গ্রেনেড ও বোমা নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। এ সময় পুলিশের গুলিতে শতাধিক নিহত ও হাজারের অধিক মানুষ আহত হয়। শত শত পরিবারের স্বপ্ন বিলীন হয়ে যায় সরকারের পেটোয়া বাহিনীর গুলিতে। তাদেরই একজন ছিলেন শহীদ আতিকুল ইসলাম রুবেল। ১৯ জুলাই শুক্রবার বেলা ৩টায় অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলেন রুবেল। এসময় তিনি পুলিশের গুলির মুখে পড়েন। তিনি যখন মিরপুর-১০ গোলচত্বর এলাকায় প্রবেশ করেন তখন ছাত্র-জনতার সাথে পুলিশের সংঘর্ষ চলছিল। পুলিশের ছুড়া টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, গ্রেনেড আর ছররা গুলিতে পুরো এলাকা মৃত্যুপুরিতে পরিণত হয়ে যায়। এলোপাতাড়ি গুলি রুবেলের মাথায় এসে লাগে। সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন শহীদ রুবেল। রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। স্থানীয়রা প্রথমে আল-হেলাল স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে দ্রুত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠানো হয়। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শেষ হয়ে গেল রুবেলের স্বপ্ন। মৃত্যুর খবর শোনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর পরিবার। দাফন-কাফন পরদিন শনিবার রুবেলের লাশ গলাচিপায় নিয়ে আনা হয়। পরে গলাচিপা জৈনপুরী খানকায় প্রথম ও তার গ্রামের বাড়ি উপজেলার পানপট্টি ইউনিয়নের গ্রামমর্দ্দন এলাকায় দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়দের বক্তব্য বাবা শাহ আলম মাস্টার জানান, তখনকার সময় ৫০০ টাকা বেতনে রেজিস্ট্রি স্কুলে চাকরি করতাম। অল্প বেতনে ছয় সদস্যের সংসার চালানো খুবই কষ্ট ছিল। তখন গ্রামে থাকতাম। আমার ছেলে রুবেল মেধাবী হওয়ায় আমার বোন খাইরুন নাহার লিপি তাকে গলাচিপা এনে লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয়। তার কাছেই থেকেই এসএসসি শেষ করে রুবেল। পাশাপাশি লিপির ভাই শামীম ও সহযোগিতা করেছে। আমার ছেলে খুবই ভালো ছিল। কোনো রাজনীতিও করত না। সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। পরিবারের চার ভাইয়ের মধ্যে রুবেল ছিল বেশি স্বাবলম্বী। সব ভাইকে সহযোগিতা করত। আমাদেরকে এখন কে ডাক্তার দেখাবে ও খোঁজ নেবে। রুবেলের মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান,আমার বাবা ছিল আমার চাঁদ, আমার বাবা আমাদেরকে অন্ধকারের মধ্যে রাইখা চলে গেছে।’এ সময় তার ছেলে রুবেলের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। আগের দিন বৃহস্পতিবার রাতে বাবা-মায়ের সাথে শেষ কথা হয় রুবেলের। এ সময় রুবেলকে সাবধানে থাকতে বলেন তারা। রুবেলের স্ত্রী তামান্না জানান, ঘটনার দিন দুপুর ১২টায় রুবেল আমাকে ফোন দিয়ে গণ্ডগোলের মধ্যে বাইরে যেতে নিষেধ করে। সেটিই ছিল তার সাথে আমার শেষ কথা। বেলা ৩টা ৫২ মিনিটের সময় জানতে পারি রুবেলের গায়ে গুলি লেগেছে। তাৎক্ষণিক সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ছুটে যাই; কিন্তু ততক্ষণে আমার স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, আমার স্বামী তো কোনো দোষী না। তাহলে সে কেন মরল। এর দায় কে নেবে? তার ছোট একটা মেয়ে আছে। তাকে হারিয়ে অসহায় হয়ে গেলাম। নিহতের ফুপু মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খাইরুন নাহার লিপি জানান, রুবেলের লেখাপড়ায় বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করেছি। ঘটনা শুনে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ছুটে যাই; কিন্তু ততক্ষণে রুবেল আর বেঁচে নেই। শহীদের চাচী তাহমিনা বেগম বলেন, আমি শহীদ আতিকুল ইসলামের চাচী। সে খুব ভালো ও সুদর্শন ছিলো। ও আমাদের সকল পরিবারকে কম বেশী আর্থিক সহযোগিতা করতো। সবার প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসা ছিলো। তার ১৮ মাসের মেয়েটির জন্য সাহায্য দরকার। আল্লাহ তাকে জান্নাত বাসী করুন। আমীন। এক নজরে শহীদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নাম : মো: আতিকুল ইসলাম জন্ম : ১২-০৯-১৯৯১ জন্ম স্থান : পটুয়াখালী পেশা : মার্চেনডাইজার পিতা : মো: শাহ আলম হাওলাদার মাতা : মোছা: মমতাজ বেগম আহত হওয়ার তারিখ ও স্থান : ১৯ জুন ২০২৪, বিকাল ৪টা, মিরপুর ১০ শাহাদাতের তারিখ ও স্থান : ১৯ জুন ২০২৪, সন্ধায়, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: গ্রামার্দন, ইউনিয়ন: পানপট্টি, থানা: গলাচিপা, জেলা: পটুয়াখালী প্রস্তাবনা ১. শহীদ পরিবারকে এককালীন আর্থিক অনুদান ও নিয়মিত মাসিক ভাতা প্রদান ২. সন্তানের সমস্ত দায়িত্ব গ্রহণ করা যেতে পারে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: আতিকুল ইসলাম
Image of মো: আতিকুল ইসলাম
Image of মো: আতিকুল ইসলাম
Image of মো: আতিকুল ইসলাম
Image of মো: আতিকুল ইসলাম
Image of মো: আতিকুল ইসলাম

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: জাকির হোসেন

মো: সজিব

মো: রাকিব হোসাইন

 মোঃ শামীম হাওলাদার

মো: মহিউদ্দিন

মো: মিজানুর রহমান

মো: শাহ জামাল ভূঁইয়া (জামাল)

মো: জামাল হোসেন

মো: দুলাল সরদার

 মোসা: লিজা

মো: সেলিম তালুকদার

এম. ডি. ইলিয়াস হোসাইন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo