Image of মো: রাসেল

নাম: মো: রাসেল

জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ১৯৯৫

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: বরিশাল

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : মাছ ব্যবসায়ী, শাহাদাতের স্থান : শনির আখড়া, কাজলা, যাত্রাবাড়ী

শহীদের জীবনী

দেশমাতার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে ইতিহাস গড়েছেন শহীদ রাসেল। স্বৈরাচারের কাল হাত ভেঙ্গে দিতে সদা সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন এই মুক্তিকামী মহাবীর। ১৯৯৫ সালের প্রথম প্রভাতে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তেজস্বী রাসেল। শহীদ পিতা মৃত আবু কালাম ও মাতা সফুরা বেগমের ছয় সন্তানদের মধ্যে রাসেল ছিলেন অনন্য। সমাজে অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিপক্ষে সবসময় সরব ছেলেন তিনি। অল্প বয়সে জনয়িতার আদর থেকে বঞ্চিত হয় শাহাদতের অমিয় পানকারী রাসেল। একপর্যায়ে আর্থিক সংকুলান না থাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থামে তাঁর শিক্ষা জীবন। সহোদরদের দায়িত্ব এসে বর্তায় শহীদের উপর। কিছুদিন পর নিরুপায় হয়ে সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়তে নিজেকে অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবব্ধ করেন শহীদ জননী সফুরা বেগম। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পূর্বে উপার্জনের পথ খুঁজতে হয় রাসেলকে। বাধ্য হয়ে সামান্য অর্থ পুঁজি করে গ্রাহকদের ক্রয় করা মাছ কাটা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। পরিশ্রম এবং নিষ্ঠতার ছোঁয়ায় ধীরে ধীরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি। কিছুদিন পর স্বল্প পরিসরে নিজেই মৎস ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসা প্রস্ফুটিত হতে থাকে। নিজের কষ্ট হলেও একোদরদের দায়িত্ব পালনে কোন কমতি রাখতেন না শহীদ রাসেল। শাহাদত বরণের বছর তিনেক পূর্বে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবব্ধ হয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী ময়না আক্তার বর্ষা (২০) চিরাচরিত একজন বাঙ্গালী বধূ। সংসারের দায়দায়িত্ব পালনে আর্থিক অসঙ্গতি থাকার পরও নিজ স্ত্রীকে দেখে বেঁচে থাকার স্বপ্ন সুবিশাল করতেন রাসেল। সদা হাস্যোজ্বল শহীদ পত্নী সংসারকে তাঁর নিজ গুনে গুণান্বিত করতে পছন্দ করেন। যে কারণে বুভুক্ষিত জীবনও প্রাণবন্ত করে রাখতেন তিনি। ২০২৩ সালের মে মাসে এই দম্পতির ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় একমাত্র পুত্র সন্তান জুনাইদ। যাকে কেন্দ্র করে সকল সাজসজ্জা, সৌন্দর্যতা এবং আনন্দঘন মুহূর্ত গড়ে ওঠে শহীদ দম্পতির। হঠাৎ একদিন এই সুখ চরম বিয়োগান্ত অধ্যায়ে রূপ নেয়। রাসেলের বর্ণীল জীবনকে তমসায় আচ্ছাদিত করে বুনো উল্লাসে ফেটে পড়ে খুনি হাসিনা ও তাঁর দোসররা। ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ ও দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভ ২০২৪ সালের ০৫ জুন যখন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালের সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিল করে দেয়, তখন কারও ধারণাই ছিলো না যে পরের দুই মাসের মধ্যে সেটিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটবে। শেষ পর্যন্ত এটি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসন অবসানের দিকে নিয়ে যায়। সেদিন হাইকোর্টের সেই আদেশটি অনেক পত্রিকায় তেমন গুরুত্বও পায়নি। কিন্তু পরবর্তী পাঁচ সপ্তাহের মাথায় সেই বিক্ষোভের জেরে একটানা ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনাকে গোপনে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে হয়। আন্দোলনটি শুরুতে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল। পরবর্তীতে এর সাথে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার, নানা বয়সের অসংখ্য মানুষ অংশ নিতে শুরু করে। অনেকের মতে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাস গণবিদ্রোহ'র মাস। দীর্ঘদিন ধরে মানুষের মধ্যে নানা কারণে ক্ষোভ তৈরি হয়। সেই ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলার জন্য দেশের ছাত্র-জনতা একটা সুযোগ খুঁজছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলন সেই সুযোগ এনে দেয়। আন্দোলনকে ঘিরে নিজেদের ক্ষোভ, জমে রাখা চাপা বেদনা জনতাকে রাজপথে নেমে আসতে বাধ্য করে। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে স্ব-পরিবারে হত্যার পর বিতর্কিত দল আওয়ামীলীগ যে বিপর্যয়কর অবস্থায় পড়েছিল, প্রায় ৫০ বছরের মাথায় আবারও দলটি সে অবস্থায় পতিত হয়েছে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশ আসনে জিতে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করে। এরপর থেকে আর সন্ত্রাসী দলটি ক্ষমতা থেকে বের হতে চায়নি। একতরফা বা জালিয়াতির নির্বাচন, বিরোধীদের ও বিরুদ্ধ মত দমন, অনিয়ম আর দুর্নীতি, আমলা আর প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে দলটির টিকে থাকা, মতপ্রকাশের অধিকার ও মানবাধিকার হরণ পতনের পেছনে মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়। শাহাদতের প্রেক্ষাপট ৫ আগস্ট ২০২৪, হিংস্রতার সর্বশেষ স্তরে পৌঁছায় খুনি হাসিনার পালিত ঘাতক পুলিশ বাহিনী। একদিকে চলে বিজয় মিছিল অন্যদিকে রক্তের স্রোতে ভেসে যায় যাত্রাবাড়ী ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তর। সে মিছিলে যোগদান করতে সকাল দশটার দিকে বাসা থেকে বের হন রাসেল। যাওয়ার সময় স্ত্রী’কে বলে যায়- ‘শোন, আমি বাইরে যাচ্ছি। অতঃপর যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া ও কাজলা প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন তিনি। স্লোগানে ফেটে পড়ে ছাত্র জনতা। তাঁদেরকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে পুলিশ। হটাৎ কয়েকটি গুলি রাসেলের শরীরে এসে বিদ্ধ হয়। মাটিতে লুটিয়ে ছটফট করতে থাকেন তিনি। উপস্থিত ছাত্র-জনতা দ্রুত অনাবিল হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসকেরা অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। ঢামেকের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানায় মো: রাসেল আহমেদ আর নেই। তিনি ইতিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। দুপুর ১২:৩০ এর সময় শহীদের লাশ পরিবারের মাঝে হস্তান্তর করা হয়। পরম প্রিয় স্বামীকে আঁকড়ে ধরে কাঁদতে থাকেন শহীদ পত্নী বর্ষা। প্রতিবেশীদের সহায়তায় লাশ বাড়ীতে এসে পৌছায়। শেষবারের মত বাবাকে ছুঁয়ে দেখে মাসুম শিশু জুনাইদ। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী রাসেল আহমেদের মৃত্যুতে বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তাঁর স্ত্রী। পরবর্তীতে ঘাতক পুলিশের জোরাজুরিতে শহীদের লাশ গ্রামে পোঁছাতে না পেরে বাধ্য হয়ে দুপুর ৩.০০ টার দিকে জানাজা শেষে করে শহীদের মাতুয়াইল কবরস্থানে সমাধিস্থ করা হয়। পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা শহীদের নিজস্ব কোন বাড়ি নেই। সামান্য কিছু আবাদি জমি রয়েছে। যার ভাগাভাগি এখনও হয়নি। এমতাবস্থায় একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে শহীদ পরিবারটি ভীষণ কষ্টে দিনাতিপাত করছে। শহীদের সতের মাস বয়সী সন্তান জুনাইদ জগতের নিয়মকানুন বুঝে ওঠার আগেই ঘাতক স্বৈরাচারী হাসিনা তাঁর পিতাকে চিরদিনের জন্য ছিনিয়ে নিয়েছে। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : রাসেল, জন্ম : ০১-০১-১৯৯৫, বয়স : ২৯, পেশা: মাছ ব্যবসায়ী পিতা : মৃত মো: আবু কালাম মাতা : সফুরা বেগম, বয়স: ৫৫ বছর, পেশা: গৃহিণী (অন্যত্র বিয়ে করেছেন) স্থায়ী ঠিকানা : আলিপুর, দশমিনা, পটুয়াখালী বর্তমান ঠিকানা : শনির আখরা, আনন্দবাজার, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : সকাল ১০:৩০টা, ০৫ আগস্ট ২০২৪, শনির আখড়া, কাজলা, যাত্রাবাড়ী যাদের আঘাতে শহীদ : পুলিশের গুলি শহীদের কবরস্থান : মাতুয়াইল কবরস্থান সম্পদের পরিমাণ : স্থায়ী বাসস্থান নেই, সামান্য আবাদি জমি রয়েছে পরিবার : ১. স্ত্রী: মোসা: ময়না আক্তার বর্ষা, বয়স: ২০, পেশা: গৃহিণী, শিক্ষাগত যোগ্যতা: ৫ম শ্রেণি : ২. ছেলে: মো: জুনাইদ, বয়স: ১৭ মাস প্রস্তাবনা ১. শহীদ পরিবারে মাসিক সহায়তা করা যেতে পারে ২. শহীদ স্ত্রীকে কর্মসংস্থান করে দেয়া যেতে পারে ৩. শহীদের সদ্য এতিম হওয়া সতের মাস বয়সী সন্তানকে এতিম প্রতিপানের আওতাধীন করা যেতে পারে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: রাসেল
Image of মো: রাসেল
Image of মো: রাসেল
Image of মো: রাসেল

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: আল আমিন হোসেন আগমন

মো: রাকিব বেপারী

জসিম উদ্দিন

মো. মনির

 মোসা: লিজা

মো: সাগর গাজী

মো: জাকির হোসেন

মোহাম্মদ রনি

শহীদ মিরাজ

এম. ডি. ইলিয়াস হোসাইন

মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন

মো: ফয়সাল আহমেদ (শান্ত)

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo