Image of মো: সাগর গাজী

নাম: মো: সাগর গাজী

জন্ম তারিখ: ১০ জানুয়ারি, ২০০৫

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: বরিশাল

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : উত্তরা, জসিম উদ্দিন রোড

শহীদের জীবনী

শহীদ মো: সাগর গাজী এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তিনি ২০০৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্ম স্থান নিজ জেলা পটুয়াখালীতে। তার পিতার নাম সিরাজুল গাজী এবং মাতার নাম মোছা: সাহিদা বেগম। শহীদ মো: সাগর গাজী ছিলেন পরিবারের একমাত্র ভরসা। বাবার বয়স ৬৫ বছর। রাজমিস্ত্রির কাজ করে পরিবার পরিচালনা করতেন। অসুস্থতার জন্য তিনি আর এখন তেমন কাজ করতে পারেননা। শহীদ মো: সাগর গাজী ছিলেন অত্যন্ত নম্র-ভদ্র ও মিশুক একজন ছেলে। এলাকার বন্ধুদের সাথে সবসময় সুসম্পর্ক বজায় রাখতেন। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারনে অল্প বয়সেই পড়াশোনা বাদ দিয়ে কাজে নেমে পড়তে হয়। দারিদ্রতার যাতাকলে পৃষ্ঠ হয়ে কিশোর সাগরের স্বপ্নগুলো মলিন হয়ে যায়। স্বপ্ন গুলো যখন অন্ধকার হতাশার সাগরে ডুবে যায় মৃত্যুই যেন তখন হয়ে উঠে কঠিন সত্য। নির্মম অন্ধকারকে আড়াল করে নিজের বুক চিতিয়ে উদ্ধত চিত্তে সাগর দেখিয়ে দেয় স্বপ্ন দেখার সাহস। ৫ আগস্ট আন্দোলন পরবর্তি বিজয় মিছিলে গিয়ে র‌্যাবের গুলিতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরিবারের বর্তমান অবস্থা পরিবারের অবস্থা ভালো না। বাবা একজন রাজমিস্ত্রি বর্তমান সময়ে এই ধরনের শ্রমিকদের কাজ ও কমে গেছে। তাদের বাড়ির অবস্থা ও বেশি ভালো না। সাগর গাজী ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাকে হারিয়ে পরিবার এখন দিশেহারা। সাগরের স্বপ্ন নিভে গেল মাত্র ২০ বছর বয়সে। গলাচিপা উপজেলার ডাকুয়া ইউনিয়নের পূর্বপাড় ডাকুয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে সাগর। বড় প্রত্যাশা নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। গত ৫ আগস্ট ঢাকার উত্তরায় জসিম উদ্দিন ফ্লাইওভার এলাকায় মাথায় গুলি লাগে সাগরের। নিভে গেল পরিবারের স্বপ্ন। বাবা সিরাজুল ইসলাম জানান, গ্রামে মাত্র ৬০ শতাংশ জমি আছে তাদের। এখন তিনি কীভাবে সংসার চালাবেন?’ শহীদ হওয়ার ঘটনা প্রিয় মাতৃভূমি বিদেশী শক্তি কর্তৃক শোষিত নির্যাতিত হলেও দেশীয়দের দ্বারা কখনো শোষিত হয়নি। আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় এসে অতীতের সকল ইতিহাস মাড়িয়ে এ দেশের মানুষকে শোষণ করা শুরু করে। বাঙালির রক্তে পাওয়া স্বাধীনতা ধূলিস্যাৎ করে দেয় নিমিষেই। তাদের ১৬ বছরের শাসনামলে বৈষম্যের মাত্রা পূর্বের সকল ইতিহাসকে ছাপিয়ে যায়। গুম, খুন,গণহত্যা, ধ্বর্ষণ, ডাকাতি, মাদক চালান,অর্থ পাচার, উন্নতির নামে হরি লুট, চাদাবাজি, দুর্নীতি সহ মানবতাবিরোধী সকল অপরাধের সাথে জড়িয়ে যায় আওয়ামী সরকার। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার কাছে মানুষ খুন করা ছিল ছেলে-খেলা। বিরোধী দলকে দমন করতে গুম-খুন, হত্যা, গ্রেফতার,দমন -নিপীড়ন চালায়। বিরোধী দলের অসংখ্য নেতা কর্মীকে নির্বিচারে হত্যা করে। মানবতাবিরোধী অপরাধ ও মিথ্যে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনে আল্লামা মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাইদীকে দিনের পর দিন কারাগারে আটকে রাখে। ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে জামাতের অসংখ্য নিরপরাধ নেতৃবৃন্দকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে। আয়না ঘরে বন্দী করে রেখে অমানুষিক নির্যাতন চালায় অসংখ্য নিরপরাধ মানুষকে। ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধন করে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। পরপর দুইটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার সকল আয়োজন সম্পন্ন করে। একগুঁয়ে কর্তৃত্বের কড়ার আঘাত থেকে রেহাই পায়নি সাধারণ কর্মচারী, দিনমজুর, সাংবাদিক, গাড়িচলক, কিশোর-কিশোরী। এমনকি ঘাতকের নির্মম আঘাত দেয়নি ১২ বছরের শিশু যোবায়িত হোসেন ইমনকেও। হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়। রিকশায় ঝুলে থাকা গোলাম নাফিজের নিথর দেহের ছবি আজও আমাদের পিড়ন দেয়। বিমর্ষ চিত্তে আমাদের তাকিয়ে থাকতে হয় যখন মিস্টের (গওঝঞ) ছাত্র ইয়ামিনকে সাজোয়া যান থেকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। জীবনকে আঁকড়ে ধরার শেষ চেষ্টায় তাদের প্রকম্পিত দেহ উত্তাল করে দেয় গোটা জাতিকে। চার বছরের শিশু আবদুল আহাদ, হকার মো: শাহজাহান, গাড়ি চালক দুলাল মতিবর, শিক্ষার্থী রাকিব হাসান, নির্মাণ শ্রমিক নুর আলম, নিরাপত্তাকর্মী ইমরান খলিফা, চিকিৎসক সজীব সরকার, মাদ্রাসা ছাত্র আব্দুল্লাহ আল মামুন সহ আরও অনেকে শহীদ হন। সব শ্রেণির, সব পেশার, সব বয়সের মানুষকে দিতে হয়েছে জীবন। নারী, পুরুষ, শিশু কেউই বাদ যায়নি মৃত্যু তালিকা থেকে। ক্ষমতালিপ্সু কর্তৃত্বকে টিকিয়ে রাখতে নির্মম বলির শিকার হতে হয় অসংখ্য পুলিশ সদস্যকেও। চিরুনি অভিযান চালিয়ে ঢাকার বিভিন্ন ছাত্রাবাস থেকে নিরপরাধ ছাত্রদেরকে ধরে এনে অমানবিক নির্যাতন চালায় পুলিশ। এসব দৃশ্য দেখে সাধারণ মানুষের বিবেক কেঁদে উঠে। কেউ ঘরে বসে থাকতে পারে না। সবাই যার যার জায়গা থেকে আন্দোলনে যুক্ত হয়। কেউ পানি দিয়ে, খাবার দিয়ে কেউ আবার আশ্রয় দিয়ে ছাত্রদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে। বৈষম্য চরম আকার ধারণ করলে শুরু হয় আন্দোলন। শুরু হয় ২য় মুক্তিযুদ্ধ। এই আন্দোলনে ঘাতকের আঘাত রেহাই দেয়নি ২০ বছরের কিশোর সাগর গাজী আহমেদকও। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শেষ হওয়ার পর স্বাধীনতা মিছিলে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালালে মাথায় আঘাত পান তিনি। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। গত ৫ আগস্ট বিকাল ৩ টায় ঢাকার উত্তরায় জসিম উদ্দিন ফ্লাইওভার এলাকায় মাথায় গুলি লাগে সাগরের। নিভে গেল পরিবারের স্বপ্ন। নিমিষেই শেষ হয়ে যায় একটি সম্ভাবনাময় দেশের সূর্যসন্তান। যারা নিঃস্বার্থভাবে অকাতরে তাদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। মানুষের স্বাধীনতা অর্জন করার জন্য যারা জীবন দিয়েছেন আমরা তাদের ভুলবনা। জাতি আমাদের এই বীর সৈনিকদের সারাজীবন মনে রাখবে। শহীদ সম্পর্কে অনুভূতি মোহাম্মদ গাজী সাহেব উদ্দিন (চাচা) বলেন, সাগর আমার ভাতিজা পড়াশুনায় খুব ভালো ছিল। সে খুব ভদ্র ছিল, সে খুবই উদ্যমী ছেলে ছিল। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সকলের ভালো সম্পর্ক ছিল তার। এক নজরে শহীদ সাগর গাজী নাম : শহীদ মো: সাগর গাজী পেশা : ছাত্র প্রতিষ্ঠান : উলানিয়া উচ্চবিদ্যালয় এন্ড কলেজ জন্ম তারিখ : ১০-০১-২০০৫ বয়স : ২০ বছর পিতা : মো: সিরাজুল গাজী মাতা : মোসা: সাহিদা বেগম শাহাদাতের তারিখ : ০৫/০৮/২০২৪ বিকেল ৩টা শাহাদাতের স্থান : উত্তরা, জসিম উদ্দিন রোড স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: পূর্ব ডাকুয়া, ইউনিয়ন: ৬নং ডাকুয়া, থানা: গলাচিপা, জেলা: পটুয়াখালী প্রস্তাবনা ১. তার পরিবারের আর্থিক সহযোগিতা দরকার ২. বা ও মায়ের চিকিৎসার খরচ বহন করা দরকার

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: সাগর গাজী
Image of মো: সাগর গাজী
Image of মো: সাগর গাজী
Image of মো: সাগর গাজী

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: শাহীন বাড়ি

 মোঃ ফজলু

আশিকুর রহমান হৃদয়

মোঃ আসিফ

মো: রাসেল

মো: আতিকুর রহমান

হৃদয় চন্দ্র তরুয়া

মো: সজিব

মো: সাগর হাওলাদার

মো: সিয়াম

মো: সেলিম তালুকদার

আবদুল্লাহ আল আবীর

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo