জন্ম তারিখ: ২২ মার্চ, ১৯৯৭
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: বরিশাল
পেশা : ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, শাহাদাতের স্থান :নারায়নগঞ্জ
''ছেলের ছবিটা আর দেখা হল না শহীদ মো: শাহ জামাল ভূঁইয়া (জামাল) ১৯৯৭ সালে পটুয়াখালী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মরহুম মো: হারুল এবং মাতার নাম মোছা: মেহেরজান বিবি। জামাল পেশায় একজন মুরগী ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁর ছোট একটি মুরগীর দোকান ছিল। মুরগীর ব্যাবসা করেই পরিবার চালাতেন। ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন চলাকালে স্বৈরাচার সরকারের পুলিশ বাহিনীর গুলিতে তিনি শাহাদাত বরন করেন।পারিবারিক অবস্থা শহীদ জামালের যৌথ পরিবার। আর্থিক অভাব অনটনের কারণে তার বড় ভাই ঢাকার নারায়নগঞ্জে আসেন। কিছুদিন পর মেঝো ভাই ইমরান ও জামাল নারায়নগঞ্জে আসেন এবং তারা একটি মুরগির দোকান দেন যা তিন ভাই মিলে পরিচালনা করতেন। হঠাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে তার বাবা মারা যান। তার মা পটুয়খালী রাঙাবালির গ্রামের বাড়িতে থাকেন। তিন বোনের বিবাহ হয়েছে। মো: জামালের বড় ভাইয়ের (৩৪) এক ছেলে ও এক মেয়ে এবং মেঝো ভাই ইমরানের(৩০) দুই মেয়ে এবং মো: জামালের ৭ মাস বয়সী এক ছেলে রয়েছে। মুরগির দোকানের মাধ্যমে পুরো পরিবারের খরচ বহন করা হয়। জামালেরা তিন ভাই মিলে গ্রামে একটি আধাপাকা টিনের ঘর তৈরি করেন। বসত ভিটা ছাড়া তাদের আর কোন জমিজমা বা সম্পদ নেই। তিনি মারা যাওয়ায় ছেলে আব্দুল্লাহ ও বিধবা স্ত্রী অসহায় হয়ে পড়েছে। অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর মত কেউ নেই। শহীদ হওয়ার ঘটনা ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের উপর অন্যায়ভাবে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও ছাত্রলীগ মিলে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। একইভাবে নারায়নগঞ্জ চাষাড়ায় ন্যাক্কারজনকভাবে গুলি করে ছাত্র-জনতা ও সাধারণ মানুষদের হত্যা করে। ঘটনার কিছুদিন আগে জামাল স্ত্রীকে সাথে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যান বেড়াতে। স্ত্রীকে রেখে জীবিকার টানে আবারও ঢাকায় চলে আসেন। ১৯ জুলাই বিকাল ৪টার দিকে মুরগীর দোকানে আসেন। মুরগির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে স্ত্রীর সাথে মোবাইলে কথা বলছিলেন। তখন তার স্ত্রীকে বলে তার ছেলেকে দেখতে মন চায়, একটা ছবি পাঠানোর জন্য। কথা শেষ না হতেই স্ত্রী মোবাইলে জামালের চিৎকার শুনতে পায়। স্ত্রী অনেক চেষ্টা করলেও জামালের সাথে আর কথা বলতে পারেননি। স্ত্রী সাথে সাথে জামালের বড় ভাই আলমাসকে (৩৪) এ ঘটনা জানান। মোঃ জামালের কোমরের নীচে গুলি লেগে ছিদ্র হয়ে অন্য পাশ হয়ে বের হয়ে যায়। চিৎকার দিয়ে মাটিতে পড়ে যান জামাল। মুহুর্তেই রক্তে ভেসে যায় দোকানের সামনের অংশটা। মো: জামালের বড় ভাই ও এলাকার লোকজন মিলে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসেন। হাসপাতালেও সেদিন প্রচণ্ড ভিড়। পুলিশের ছোড়া গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালের বারান্দায় কাতরাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। কোথাও জায়গা নেই। অবশেষে খুব কষ্টে তাঁকে ডাক্তার দেখানোর সুযোগ হয়। সন্ধ্যা ৭.৩০ টার দিকে হাসপাতাল থেকে তাঁকে মৃত ঘোষণা করে। লাশের ময়না তদন্ত শেষে ২০ জুলাই বিকাল ৫টায় হাসপাতাল কতৃপক্ষ পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়। পরের দিন অর্থাৎ ২১ তারিখ দুপুরের পর বাড়িতে জানাজা শেষে দাফন করা হয়। স্বামীর এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে তাঁর স্ত্রী কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছোট ছেলেটা আর কোনদিন বাবা বলে ডাকতে পারবে না। বাবা ডাক ফুটার আগেই চিরতরে বাবাকে হারিয়ে ফেলল। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীদের অনুভূতি জামালের মেঝো ভাই ইমরান (৩০) বলেন, আমরা তিন ভাই একই সাথে ব্যাবসা করি। কখনও কোন বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়নি। ও আমাদের আদরের ছোট ভাই ছিলো। শাহজামানের বাড়ির পাশের চাচা বলেন, ওরা তিন ভাই খুবই ভালো। কারও সাথে কখনও কোন ঝামেলা বা লেনদেনে সমস্যা হয়নি। ওদের বাবা মারা যাওয়ার পরও একত্রেই থাকে। আল্লাহ জামালকে জান্নাত নিসিব করুক। আমি এই হত্যার বিচার চাই। এক নজরে শহীদ মো: শাহ জামাল ভূঁইয়া (জামাল) নাম : শহীদ মো: শাহ জামাল ভূঁইয়া (জামাল) জন্ম : ২২-০৩-১৯৯৭ জন্ম স্থান : পটুয়াখালী পেশা : ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পিতা : জনাব মো: হারুল মাতা : মোছা: মেহেরজান বিবি আহত হওয়ার তারিখ ও স্থান : ১৯ জুলাই বিকাল ৪টা শাহাদাতের তারিখ ও স্থান : ১৯ জুলাই সন্ধ্যা ৭.৩০টা কবরের স্থান জিপিএস লোকেশন : যঃঃঢ়ং://সধঢ়ং.ধঢ়ঢ়.মড়ড়.মষ/ঋীধঐঘঅযংণঔউঈঁঁবশ৯ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: খাসমহল, ইউনিয়ন: মৌডুবী, থানা: রাঙ্গাবালী, জেলা: পটুয়াখালী বর্তমান ঠিকানা : জালকুঁড়ি, জালকুঁড়ি, চাষাড়া, নারায়নগঞ্জ প্রস্তাবনা শহীদ পরিবারকে এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান শহীদের সন্তানের সমস্ত খরচ বহন করা