Image of মো: আখতারুজ্জামান নাঈম

নাম: মো: আখতারুজ্জামান নাঈম

জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ১৯৮১

শহীদ হওয়ার তারিখ: ২৭ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: বরিশাল

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : চাকরিজীবি, শাহাদাতের স্থান : মিরপুর-১

শহীদের জীবনী

জুলাই বিপ্লবের একজন গর্বিত শহীদ মো: আখতারুজ্জামান নাঈম এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তিনি ১৯৮১ সালের ০১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মস্থান নিজ জেলা পটুয়াখালীতে। তার পিতার নাম মরহুম আব্দুর রব মিয়া এবং মাতার নাম মোছা: নাজনিন নাহার। শহীদ মো: আখতারুজ্জামান নাঈম ছিলেন পরিবারের একমাত্র ভরসা। তিনি এসি আই ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে এরিয়া ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করতেন। পরিবারের বর্তমান অবস্থা পটুয়াখালীর বাউফলের জামালকাটী গ্রামের মৃত আব্দুল রব মাস্টারের ছেলে আখতারুজ্জামান নাঈম। চাকরির সুবাদে মিরপুর শাহ আলীর ‘এ’ ব্লক গরিবে নেওয়াজ এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। তার ৬ বছর বয়সী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। বাবা না থাকায় সংসারের সকল দায়-দায়িত্ব তার উপরেই ছিল। একার উপার্জনেই পুরো সংসার চালাতেন। তাদের নিজস্ব কোন জায়গা জমি নেই বললেই চলে। তাঁর মা মিনারা বেগম বার্ধক্যজনিত কারণে প্রায় সবসময় অসুস্থ থাকেন। সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকত সবসময়। জুলাই বিপ্লবের দিনগুলি কোটা সংস্কার আন্দোলনে কোটা প্রথা সংস্কারের দাবিতে দেশের সকল ছাত্র-জনতা এক হয়ে আন্দোলনে নামে। কিন্তু সরকার এতে বাঁধা প্রদান করে। এরপর থেকে আন্দোলন দানা বেঁধে উঠে। প্রয়োজন বোধ হয় একটি একক প্লাট ফর্মের। যার মাধ্যমে আন্দোলনকে বেগবান করা যাবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্র-জনতা বৈষর্ম বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে একটি একক প্লাটফর্ম তৈরি করে। যা ২০২৪ সালের ১ জুলাই সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের লক্ষ্যে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে চার দফা দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা লাগাতার কর্মসূচি দেয়। ২ থেকে ৬ জুলাই দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ, মানববন্ধন, মহাসড়ক অবরোধ ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করে। ৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকায় গণপরিবহন বন্ধ এবং রাস্তা অবরোধ কর্মসূচি চালায় এবং পরবর্তীতে সারাদেশে অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হয় যা "বাংলা ব্লকেড" কর্মসূচি নামে পরিচিত। বাংলা ব্লকেড চলাকালীন রাজধানীতে শুধু মেট্রো রেল চালু ছিল। পরবর্তী দিনগুলিতেও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একই কর্মসূচি পালিত হয়। এইসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ ও পুলিশি হামলার শিকার হয়। ১৪ জুলাই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঢাকায় গণপদযাত্রা করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে।এদিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এক বক্তব্যে কোটা আন্দোলনকারীদের “রাজাকারের নাতি-পুতি” হিসেবে অভিহিত করেন, প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ব্যঙ্গ করে “তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার; কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার, স্বৈরাচার” এবং “চাইতে গেলাম অধিকার; হয়ে গেলাম রাজাকার” স্লোগান দেয়। এর পরেরদিন ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগ ও তৎকালীন সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তা, মন্ত্রী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ নষ্ট করার অভিযোগ আনেন।১৫ জুলাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “গত রাতে বিক্ষোভ করে আমরা সোমবার ১২টার প্রধানমন্ত্রীকে তার বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলাম। প্রত্যাহার না হওয়ায় আমরা রাস্তায় নেমেছি”। ১৫ তারিখ ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। যা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাত্রিকেও হার মানায়। লাঠি, হকিস্টিক, লোহার রড, চাপাতি, রামদা ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। এর আগেরদিন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবাইদুল কাদের ছাত্রলীগকে হামলা করতে উস্কিয়ে দেয়। তার উস্কানি পেয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ইনান সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলার সর্বাত্ম প্রস্তুতি গ্রহণ করে। রাতে ট্রাকে করে অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি শয়ন ও সেক্রেটারি তানভীর হাসান সৈকত, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি ইব্রাহীম ফরায়েজী এবং সেক্রেটারি এস এম আক্তার হোসেন এই হামলার পরিকল্পনার অন্যতম মূল হোতা। তাদের সাথে ঢাকার আশেপাশের ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের ক্যাডাররা যুক্ত হয়। সাথে সহযোগিতা করেছে যুবলীগের সদস্যরা। হামলার লোমহর্ষক ঘটনা দেখে শিহরিত হয়ে যায় পুরো দেশের মানুষ। আহত রক্তাক্ত হয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে ভর্তি হলে ছাত্রলীগ সেখানে গিয়েও হামলা চালায়। ঢাকা মেডিকেল হসপিটাল সেদিন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এই দৃশ্য সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। সাধারণ ছাত্রদের উপর হামলাকারী ছাত্রলীগের ক্যাডারদের উদ্ধ্যতপূর্ণ আচরণ জাতিকে হতাশ করেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি ইব্রাহীম ফরায়েজীর অনুসারী নাট্যকলা বিভাগের ১৫ তম ব্যাচের রাসেল আহমেদ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করতে গিয়ে নিজেই আহত হন। এসময় তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেন, “১১ জনকে পিটিয়েছি সুস্থ হয়ে ১২ তম জনকে পিটাব।” তার মত আরও অনেকে এমন উদ্ধ্যতপূর্ণ আচরণ করে। সাধারণদের হামলা করতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরও অনেকে যুক্ত হয়। এদের মধ্যে কয়েকজনের নাম পরিচয় জানা গেছে তারা হল, সাধারণ সম্পাদক এস এম আক্তার হোসেনের সহচর ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ১১তম ব্যাচের মেরাজ, ইব্রাহীম সানিম, শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের ১২ তম ব্যাচের সাইদুল ইসলাম সাইদ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ১২ তম ব্যাচের আকাশ, ১২ তম ব্যাচের মোঃ ইউনুস, ১৩ তম ব্যাচের হাবিব, সমাজকর্ম বিভাগের ১৪ তম ব্যাচের নজরুল ইসলাম সাগর, সাজেদুল ইসলাম সৈকত, আইন অনুষদের ১৪ তম ব্যাচের আব্দুর রহমান, ওবায়দুল্লাহ হাসিব, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী, ইসলামিক স্টাডিজ ১৫ তম ব্যাচের সাজবুল ইসলাম সহ আরও অনেকে সম্মুখ সারিতে থেকে সাধারণদের উপর হামলার নেতৃত্ব প্রদান করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীরুল ইসলাম সৈকতের নেতৃত্বে বিভিন্ন হল কমিটির ক্যাডাররা এ হামলায় নেতৃত্ব প্রদান করে। পরবর্তী দিনগুলিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন চলে। এরপর আন্দোলন দমাতে বিশ্ববিদ্যালয় হল প্রশাসন শিক্ষার্থীদেরকে জরুরী নোটিশে হল ছেড়ে যেতে বলে। হল প্রশাসন শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে বল প্রয়োগ করে। ১৭ জুলাই রাতে তারা সমন্বয়করা ১৮ জুলাইয়ের জন্য ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির ঘোষণা করে। ১৯ জুলাইতেও সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অবরোধ চলে। এদিন মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে আটক করা হয়। যেসময়ে নাহিদ ইসলামকে আটক করা তার কাছাকাছি সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিনজন প্রতিনিধির সাথে সরকারের তিনজন প্রতিনিধির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় যেখানে তারা সরকারের কাছে 'আট দফা দাবি' জানান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সহ-সমন্বয়ক তানভীর আহমেদ। ২০ জুলাই সরকারের তিনজন মন্ত্রীর যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় সেই বৈঠক ও বৈঠকে উত্থাপিত দাবি নিয়ে নেতৃত্বের মধ্যে মতবিরোধ দেখা যায়। আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল অভিযোগ করে বলেন, “তারা গতকাল রাতে মন্ত্রীদের সাথে বৈঠক করা তিন প্রতিনিধি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটা পোর্শনও [অংশ] না। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথেই নাই। তারা যদি এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে প্রচার করেন, তবে তারা মিথ্যাচার করছেন।” অন্য আরেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের বলেন, “কয়েকজন সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়ককে দিয়ে জোরপূর্বক গণমাধ্যমে ভুল সংবাদ প্রচারের চেষ্টা করা হচ্ছে।” ২১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি পক্ষ ‘৯ দফা’ দাবি জানিয়ে শাটডাউন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। ২২ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম চার দফা দাবি জানিয়ে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত করেন, তিনি জানান “আমাদের চার দফার মধ্যে রয়েছে - ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ইন্টারনেট চালু, ক্যাম্পাসগুলো থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রত্যাহার করে ক্যাম্পাস চালু, সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা প্রদান এবং কারফিউ প্রত্যাহার করা। যারা নয় দফা দাবি ও শাটডাউন অব্যাহত রেখেছে তাদের সাথে আমাদের নীতিগত কোন বিরোধ নেই। নিজেদের মধ্যে কোন যোগাযোগ না থাকায় আমরা তাদের সাথে কথা বলতে পারছি না”। ১৯ জুলাই থেকে নিখোঁজ থাকার পর ২৪ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদের খোঁজ পাওয়া যায়। ২৫ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আটটি বার্তা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে হতাহতদের তালিকা তৈরি, হত্যা ও হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করা, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল খুলে দেওয়ার চাপ তৈরি করা। ২৬ জুলাই নাহিদ ইসলামসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে যায় সাদাপোশাকের এক দল ব্যক্তি। তাঁরা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়েছেন বলে সেখানে উপস্থিত এক সমন্বয়কের স্বজন ও হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান। ২৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠনের আরও দুই সমন্বয়ককে হেফাজতে নেয় গোয়েন্দা শাখা। তারা হলেন সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ।পরে এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে ২৮ তারিখের (রোববারের) মধ্যে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামসহ, আসিফ মাহমুদসহ আটক সকল শিক্ষার্থীদের মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার ও শিক্ষার্থী গণহত্যার সাথে জড়িত মন্ত্রী পর্যায় থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত সকল দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আল্টিমেটাম দেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। একই সাথে রোববার সারা দেশের দেয়ালগুলোতে গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়। ২৮ জুলাই রাত ১০টার দিকে পুলিশি হেফাজতে থাকা ৬ সমন্বয়ক আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। কিন্তু পুলিশে আটক হওয়া অবস্থায় পুলিশের অফিসে বসেই বাকি সমন্বয়কারীদের সাথে যোগাযোগ না করে এমন ঘোষণা দেয়ায় এই ঘোষণাকে সরকার ও পুলিশের চাপে দেয়া হয়েছে বলে আখ্যায়িত করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় বাকিরা। ৩১ জুলাই হত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা, মামলা ও গুমের প্রতিবাদে ৩১ জুলাই বুধবার সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ (ন্যায়বিচারের জন্য পদযাত্রা) কর্মসূচি পালন করে।১ আগস্ট গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে বেলা দেড়টার একটু পরেই ছেড়ে দেওয়া হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ২ আগস্ট শুক্রবার ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি ঘোষণা করে।২ আগস্ট গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজত থেকে ছাড়া পাওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন যে, আন্দোলন প্রত্যাহার করে ডিবি অফিস থেকে প্রচারিত ছয় সমন্বয়ককের ভিডিও বিবৃতিটি তারা স্বেচ্ছায় দেননি। তাদেরকে জোর পূর্বক অস্ত্র ঠেকিয়ে এই বিবৃতি প্রদানে বাধ্য করা হয়েছে। পরবর্তীতে আবার নতুন করে কর্মসিূচি প্রদান করে। সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। শহীদ আখতারুজ্জামান নাঈম যেভাবে শহীদ হলেন শহীদ আখতারুজ্জামান নাঈম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন অকুতোভয় সৈনিক। আন্দোলনের শুরু থেকেই তিনি সক্রিয় ভুমিকা পালন করেছেন। ২৭ জুলাই ২০২৪ তিনি সাধারণ ছাত্রদের সাথে মিরপুর ১ এ অবস্থান নিয়েছিলেন। সেখানে তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশের টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় পুরো এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়। এর মধ্যেই সাধারণদের টার্গেট করে গুলি নিক্ষেপ করতে শুরু করে। এদিক ওদিক কিচ্ছু বোঝা যাচ্ছিল না। আখতারুজ্জামান নাঈম এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যান। তার সামনেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অনেকে। পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব একত্রি হয়ে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলে। হঠাৎ একটি গুলি এসে নাঈমের মাথায় বিদ্ধ হয়। মাথার পিছন দিক থেকে লেগে সামনের দিক থেকে বেরিয়ে যায়। মুহুর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে নাঈম। রক্তক্ষরণ হয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। এভাবেই শহীদের খাতায় নাম লেখান শহীদ আখতারুজ্জামান নাঈম। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়ের অনুভূতি শহীদের প্রতিবেশী জনাব সোগির, নাঈমের শহীদ হওয়ার ঘটনায় অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছেন। তিনি তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন। শহীদের বন্ধু মোঃ আসাদুল ইসলাম বলেছেন, আমার বন্ধু জনাব আখতারুজ্জামান নাঈম একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। পরিবারের জন্য তিনি ছিলেন বটবৃক্ষ। সকলকে আগলে রাখতে রাখতেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী এবং একটি ছেলে সন্তান রেখে গেছেন। সকলেই তাঁর জন্য দোআ করবেন। আল্লাহ তায়ালা যেন তাঁকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করেন এবং তার পরিবারকে শোক সহ্য করার তৌফিক দান করেন। আমিন। এক নজরে শহীদ মো: আখতারুজ্জামান নাঈম নাম : শহীদ মো: আখতারুজ্জামান নাঈম পেশা : চাকরিজীবি প্রতিষ্ঠান : এসি আই ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি জন্ম তারিখ : ০১-০১-১৯৮১ বয়স : ৪০ বছর পিতা : মরহুম আব্দুর রব মিয়া মাতা : মোছা: নাজনিন নাহার স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: জামালকাটি, ইউনিয়ন: ৩ নং ধনুয়া, থানা: বাউফল, জেলা: পটুয়াখালী আক্রমণকারী : স্বৈরাচারী হাসিনার ঘাতক বাহিনীর সম্মিলিত গুলিবর্ষণ শাহাদাতের তারিখ : ২৭/০৭/২০২৪, বিকাল ৩টা শাহাদাতের স্থান : মিরপুর-১ শহীদ পরিবারের জন্য প্রস্তাবনা ১. তার পরিবারের আর্থিক সহযোগিতা দরকার ২. শহীদের ছেলের দায়িত্ব নেওয়া প্রয়োজন

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: আখতারুজ্জামান নাঈম
Image of মো: আখতারুজ্জামান নাঈম
Image of মো: আখতারুজ্জামান নাঈম
Image of মো: আখতারুজ্জামান নাঈম
Image of মো: আখতারুজ্জামান নাঈম
Image of মো: আখতারুজ্জামান নাঈম
Image of মো: আখতারুজ্জামান নাঈম
Image of মো: আখতারুজ্জামান নাঈম
Image of মো: আখতারুজ্জামান নাঈম

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

শাকিল

মো: রাব্বি

মো: আবু রায়হান

মো: সরোয়ার হোসেন শাওন

মো: জামাল হোসেন

মো: রাব্বি মাতব্বর (গোলাম রাব্বি)

মো: শিহাব উদ্দিন

মো: বাহাদুর হোসেন মনির

মো: নবীন তালুকদার

মো: সাগর হাওলাদার

মেহেদী হাসান

মো: আবু জাফর হাওলাদার

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo