জন্ম তারিখ: ১ মার্চ, ১৯৯০
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: বরিশাল
পেশা : দর্জি, শাহাদাতের স্থান :শনির আখড়া রায়েরবাগ ওভার ব্রিজ এলাকায় রাস্তায়
শহীদ মো: জাকির হোসেন দশমিনা উপজেলার বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের মাছুয়াখালী গ্রামের আ: মন্নান হাং ও আম্বিয়া বেগম দম্পতির ছেলে। প্রায় ১৫ বছর আগে বাবাকে হারান তিনি। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে জাকির ছিলেন তৃতীয়। উপজেলা সদরের উত্তর লক্ষ্মীপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার নতুন বাড়িতে স্ত্রী, সন্তান ও মাকে রেখে রাজধানীর কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ থানায় একটি বোরকা কারখানায় কাজ করতেন। শহীদ মোঃ জাকির হোসেন ১৯৯০ সালে পটুয়াখালী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পর থেকেই দরিদ্রতার সাথে লড়াই করতে হয়েছে তাঁকে। দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় পড়াশোনা করার তেমন সুযোগ পাননি। অল্প বয়সেই বাবাকে হারিয়ে অভিভাবকহীন হয়ে যান তিনি। সংসারের হাল ধরতে দর্জির কাজ শিখেন। নিজে পড়াশোনা না করতে পারলেও সন্তানের পড়াশোনার ব্যাপারে তিনি ছিলেন যত্নশীল। স্বপ্ন দেখতেন মেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে উচ্চ শিক্ষিত বানাবেন। কিন্তু সে স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। জালিমের গুলিতে আহত হয়ে মুহুর্তেই বিলীন হয়ে গেল সকল স্বপ্ন। ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন তিনি এবং ২৪ জুলাই শাহাদাত বরন করেন। পারিবারিক অবস্থা শহীদ জাকির হোসেনের পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁর আয়েই সংসার চলত। মেয়ের লেখা-পড়া, মায়ের ঔষধের খরচ, পরিবারের ভরণপোষণ সবই চলত তাঁর একক আয়ে। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারে শোকের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। পরিবারে অচল অবস্থা। তাদের তেমন কোন জায়গা জমি নেই যা দিয়ে সংসার চলতে পারে। এই পরিবারটিকে সহযোগিতা করার মত তেমন কেউ নেই। শহীদ হওয়ার ঘটনা মো. জাকিরে হোসেনের পারিবার বলেন, ১৯ জুলাই (শুক্রবার) বেলা সাড়ে ৩টার দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষ চলাকালে শনির আখড়া রায়েরবাগ ওভার ব্রিজ এলাকায় রাস্তায় পেটে গুলিবিদ্ধ হন জাকির। খবর পেয়ে জাকিরের ভগ্নিপতি তৌহিদুল ইসলাম গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ জুলাই (বুধবার) রাত ১২টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। জাকিরকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ পরিবারের সদস্যরা। স্বামীর ছবি বুকে চেপে অনবরত কাঁদছেন স্ত্রী। বাবার জন্য আর্তনাদ ১৩ বছরের শিশু জিদনী জেবিনের। ছেলে হারানোর শোকে পাগলপ্রায় মা। ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে ২৫ জুলাই বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে জাকিরের মরদেহ বাড়িতে নেওয়া হয়। এ সময় স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধুরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ওই রাতেই উত্তর লক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা হয়। পরে তাঁকে উপজেলার বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের মাছুয়াখালী গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। শহীদ সম্পর্কে আত্মীয় স্বজনদের অনুভূতি পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার যুবক জাকির হোসেন (৩৫) গত ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে রাজধানীর শনির আখড়ায় গুলিবিদ্ধ হন। পাঁচ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যান তিনি। জাকিরের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, মা আম্বিয়া বেগম ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায়। স্বামীর ছবি বুকে জড়িয়ে কেঁদে কেঁদে অবিরত বিলাপ করছেন স্ত্রী সালমা বেগম। বাবাকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছে একমাত্র মেয়ে জিদনী জেবিন। তাঁর মৃত্যুতে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে পরিবারটির। জাকিরের স্ত্রী সালমা বেগম বলেন, আমার স্বামী ঢাকায় একটি বোরকা কারখানায় কাজ করত। একমাত্র তার উপার্জনেই চলত আমাদের সংসার। মায়ের ওষুধ ও সন্তানের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে অভাব অনটনের মধ্যে কোনো রকমে দিন চলত। এখন আমাদের কী হবে, একমাত্র সন্তানের লেখাপড়ার খরচ কীভাবে চালাব, বুঝতেছি না। আমার স্বামীর জন্য দোয়া করবেন। শহীদ মো. জাকির হোসেনের একমাত্র মেয়ে দশমিনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী জিদনী জেবিন বলে, আমার বাবা অনেক ভালো ছিল। আমি যা চাইতাম তাই দিত। এখন আমার লেখাপড়ার খরচ কে চালাবে? আমার বাবার হত্যাকারীদের বিচার চাই। সে আরো বলে, বাবা কয়েক দিনের ছুটিতে বাড়িতে এসে গত ১৫ জুলাই সোমবার সন্ধ্যায় কর্মস্থল ঢাকার কালীগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেন। যাওয়ার সময় আমাকে বলেন, পরের বার তোমার জন্য সুন্দর থ্রী-পিস ও স্কুলব্যাগ নিয়ে আসব। শহীদ জাকিরের মা, আম্বিয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আপনারা কী শুনতে আসছেন। আপনারা আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন। আমার ছেলেকে যারা গুলি করে মেরেছে, আমি তাদের বিচার চাই। একনজরে শহীদ মো: জাকির হোসেন নাম : শহীদ মো: জাকির হোসেন জন্ম : ০১/০৩/১৯৯০ জন্ম স্থান : পটুয়াখালী পেশা: দর্জি পিতা : মরহুম আ: মন্নান হাং মাতা : মোছা: আম্বিয়া বেগম আহত হওয়ার তারিখ : ১৯ জুলাই ২০২৪, বিকাল ৩টা শাহাদাতের তারিখ : ১৯ জুলাই ২০২৪ রাত ১২টা স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: পশ্চিম লক্ষীপুর : ইউনিয়ন: সদর : থানা: দশমিনা, জেলা: পটুয়াখালী প্রস্তাবনা ১. শহীদের পরিবারকে মাসিক ও এককালীন আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা যেতে পারে ২. শহীদের কন্যার লেখাপড়ার দায়িত্ব নেওয়া যেতে পারে ৩. শহীদের মায়ের চিকিৎসার খরচ বহন করা যেতে পারে