জন্ম তারিখ: ২ মে, ১৯৯০
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: বরিশাল
পেশা : দিনমজুর, রিকশা চালক, শাহাদাতের স্থান : যাত্রাবাড়ি এলাকার শনির আখড়ায়
শহীদ মো: আরিফ। তিনি পটুয়াখালী জেলার গোবিন্দপুর এলাকায় ২ মে ১৯৯০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম প্রয়াত সবুজ আলী। মাতা সূর্য বানুু। মূলত আরিফ এই বাবা মায়ের পালিত ছেলে। আরিফ দিনমজুরি ও রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তার আয়েই তাদের সংসার চলত। স্ত্রী ও ৩৪ দিনের একটি কন্যা সন্তান নিয়েই তার পরিবার। ২০ জুলাই ২০২৪, বেলা ১২.৩০ মিনিটে যাত্রাবাড়ি এলাকার শনির আখড়ায় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। জুলাই ২০২৪ এর আন্দোলন ছিল ইতিহাস তৈরির আন্দোলন। ফ্যাসিবাদের জুলুমের বিরুদ্ধে জ্বলে ওঠার আন্দোলন। যৌক্তিক দাবীর প্রেক্ষিতে মেধার স্বীকৃতি আদায়ের আন্দোলন। তরুল শিক্ষার্থীদের একটাই চাওয়া কোটা নয় মেধা। কিন্তু জালিম ফ্যাসিবাদী হাসিনা তরুণদের যৌক্তিক চাওয়াকে তুচ্ছ জ্ঞান করে জাতির সাথে করেছে উপহাস। স্বৈরশাসক হাসিনা শত হাজার তরুণ শিশু বৃদ্ধকে রক্তের বন্যায় ভাসিয়ে ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে সোচ্ছার ভূমিকায় ছিল অবতীর্ণ। তার গঠিত সর্বোচ্চ আইনের অপব্যবহার করে তিনি মানুষকে করেছে পদদলিত। ক্ষমতার লিপ্সায় অন্ধ হাসিনা ভুলে গেছে ক্ষমতার দৌঁড় যত দীর্ঘই হোক না কেন তার একদিন বিনাশ হবেই। আল্লাহ তাআলা তরুণদের মাধ্যমে দেখিয়েছেন ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। মাত্র একটি কোটা আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসকে পাল্টে দিয়েছে। অধিকারের লড়াইয়ে যুক্ত হয় অগণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভ। কোটা থেকে এক দফায় জ্বলে ওঠে বাংলাদেশের তরুণ সমাজের পাশপাশি সুশীল সমাজও। দেশকে দ্বিতীয়বার স্বাধীন করার দৃঢ় প্রত্যয়ে মানুষ মাঠে নামে। বাঁচলে গাজী মরলে শহীদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুনদের সাথে একাত্ম হয়ে মাঠে নেমে আসে হাজারো স্কুল কলেজ মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে খেটে খাওয়া মানুষ। জড়িয়ে পড়েছিলেন অভিভাবকেরাও। নারী অভিভাবকেরা তাদের শিশু সন্তানকে সাথে নিয়েও যুক্ত হয়েছিলেন অধিকার আদায়ের এ সংগ্রামে। দেশকে বাঁচাতে হাজারো মানুষের রক্তে বদলে যায় বাংলাদেশ। ফ্যাসিবাদী শাসক শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। ঘটনা সংক্রান্ত বিবরণ জীবনের কঠিন বাস্তবতায় নিষ্পেষিত বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ। ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের নির্মম নিষ্ঠুরতার স্বীকার হাজারো শহীদ। যাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আজকের এই দ্বিতীয় স্বাধীনতা ২০২৪। এই আন্দোলন চলাকালীন স্বৈরশাসক হাসিরা সরকারের নির্দেশে পুলিশ ও র্যাব বাহিনী মানুষের উপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। রাজপথে নিরস্ত্র জনগণের উপর টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতেও যখন আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করতে ব্যর্থ তখন হাসিনা তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে চরম বর্বর আচরণ প্রকাশ করে। তার নির্দেশে হেলিকপ্টার থেকে পুলিশ ও র্যাব বাহিনী নিরস্ত্র ছাত্র জনতা ও সাধারণ জনগণের উপর গুলি বর্ষন করে। মুহুর্তে ঢাকার রাজপথে রক্তের বন্যা বয়ে যায়। ওই সময়ে আরিফ যাত্রাবাড়ি এলাকার শনির আখরায় রিকশা চালিয়ে যাচ্ছিল। তখন হেলিকপ্টার থেকে পুলিশ ক্রমাগত গুলিবর্ষণ চলছিল। পুলিশের মুহুর্মুহু গুলিতে ছাত্রজনতা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। রায়েরবাগ এলাকায় রিকশা চালানো অবস্থায় বেলা ১২ টার দিকে হেলিকপ্টার থেকে গুলিবিদ্ধ হয় আরিফ। সেখানেই তিনি আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আশেপাশের পরিচিত রিকশাওয়ালারা তাকে বাসায় নিয়ে আসে। বাসায় আনার অল্প কিছুক্ষণ পরই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পোস্টমর্টেমের জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে দুদিন পর তাকে মাতুয়াইল কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়র বক্তব্য পালিত বাব-মায়ের কাছে বড় হন আরিফ। কিন্তু তিনি তাদেরকেই বাব মা হিসেবে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। বাবার মৃত্যুর পর তিনি মাকে নিজের কাছেই রাখতেন। তার একার উপার্জনে সংসার চলত। মানুষ হিসেবে অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ ছিলেন। তাকে হারিয়ে তার পরিবার এখন দিশেহারা। আর্থিক সহযোগিতার বিষয় শহীদ আরিফ ছিলেন এতিম। তিনিই তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বর্তমানে তার পালক মা, স্ত্রী ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে। তাদের ভরণপাষণের ব্যবস্থা করে শহীদ পরিবারকে মাসিক আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন। যেন তার পালক মা যতদিন বেঁচে থাকে তার থাকা থাওয়ার কষ্ট না হয়। পাশপাশি তার স্ত্রী যেন তার মেয়েকে পড়াশুনা করিয়ে মানুষ করতে পারে। এক নজরে শহীদ মো: আরিফ নাম : মো: আরিফ পেশা : দিনমজুর, রিকশা চালক পিতা : মৃত সবুজ আলী মাতা : সূর্য বানু, পেশা: গৃহিনী, বয়স: ৬০ বছর জন্ম তারিখ ও বয়স : ০২-০৫-১৯৯০, বয়স: ৩৪ বছর স্থায়ী ঠিকানা : পটুয়াখালী জেলার গোবিন্দপুর এলাকা আহত হওয়ার সময় : আনুমানিক দুপুর ১২টা মৃত্যুর তারিখ ও সময় : ২০ জুলাই ২০২৪, সময়: আনুমানিক বেলা ১২.৩০মি. শহীদের কবরের অবস্থান : মাতুয়াইল কবরস্থান পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ২ জন, স্ত্রী ও একটি মেয়ে মেয়ের নাম ও বয়স : আব্দুল্লাহ স্বাধীন, বয়স: ৩৪ দিন আর্থিক সমস্যা নিরসনে প্রস্তাবনা ১. শহীদের স্ত্রীর জন্য কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা ২. নিয়মিত মাসিক ভাতার মাধ্যমে পরিবারটিকে সহায়তা করা ৩. এতিম মেয়েটির ভরণ-পোষণ ও পড়াশোনার দায়িত্বভার গ্রহণ করা