Image of মো: বাবলু মৃধা

নাম: মো: বাবলু মৃধা

জন্ম তারিখ: ২০ মার্চ, ১৯৭৭

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বিভাগ: বরিশাল

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : দিনমজুর, নির্মাণ শ্রমিক, শাহাদাতের স্থান :সিএমএইচ হসপিটালে ভর্তিরত অবস্থায় শাহাদাত বরন করেন

শহীদের জীবনী

শহীদ বাবলু মৃধার জন্ম ১৯৭৭ সালে পটুয়াখালীর এক দরিদ্র পরিবারে। তাঁর পিতা জনাব মফেজ আলী মৃধা (৭৫) পেশায় একজন দর্জি। তাঁর মায়ের নাম মোছা: হনুফা বেগম। শহীদ বাবলু মৃধা পেশায় একজন দিনমজুর। নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। শহীদ বাবলু মৃধা ২ সন্তানের জনক। জুলাই বিপ্লবে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে শাহাদাত বরন করেন। পারিবারিক অবস্থা শহীদ বাবলুর পারিবারিক আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। দিন আনে দিন খায়। তাঁর পিতা মাতা দুজনেই বয়স্ক। পিতা জনাব মফেজ আলী মৃধা দর্জির কাজ করেন। শহীদ বাবলু মৃধা তাঁর দুই সন্তান নিয়ে আলাদা থাকেন। তিনিই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁর আয়েই সংসার চলে। তাঁর বড় ছেলে আবু তালেব সজীব দনিয়া সরকারি কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে অধ্যয়নরত আর ছোট ছেলে মোঃ মাহিমের বয়স মাত্র ২ বছর ৬ মাস। বাবার মৃত্যুতে বড় ছেলে অত্যন্ত ভেঙে পড়েছে। তাদের দেখাশোনা করার জন্য আর কেউ নেই। দুই সন্তানকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী খুব বিপাকে পড়েছেন। বড় ছেলের পড়াশো, ছোট ছেলের খাবারের জোগান এবং চিকিৎসার যোগান দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। শহীদ হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনা জুলাইয়ের শুরু থেকেই কোট্ সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ এবং সরকারের পেটুয়া বাহিনী হামলা করে। সারাদেশে পুলিশের গুলিতে শতাধিক আহত হয় এবং নিহত হয় আরও অনেকে। শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ১৯ জুলাই ২০২৪ শিক্ষার্থীদের 'কমপ্লিট শাটডাউন' বা সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি ঘিরে রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, গুলি, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ঢাকার যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, রামপুরা-বাড্ডা, সায়েন্সল্যাব, মিরপুর ১ ও ১০, মহাখালী, মোহাম্মদপুর, সাভার ছিল আন্দোলনের মূল হটস্পট। দেশের বিভিনন্ন জেলাতেও ব্যাপক বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ও সহিংসতা হয়। ১৯ জুলাই রাজধানীর শনির আখরাতে পুলিশের গুলিতে আহত হন শহীদ বাবুল মৃধা। সেখানেই পড়ে থাকেন শহীদ বাবুল মৃধা। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় স্থানীয় দুই জন লোক এসে তাঁকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যান। সেখানে ডাক্তাররা তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করেন। কর্তব্যরত চিকৎসকরা জানান দ্রুত তাঁর অপারেশন করতে হবে। কিন্তু তাঁর স্বজনরা কেউ না থাকায় অপারেশন শুরু করতে দেরি করেন ডাক্তাররা। রাত ৩ টায় খবর পেয়ে শহীদ বাবুল মৃধার স্ত্রী এবং তার স্বজনরা দ্রুত হসপিটালে আসেন। তাঁর চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। আত্মীয়-স্বজনদের কাছে ধার-দেনা করে দেড় লক্ষ টাকা ম্যানেজ করেন তাঁর স্ত্রী। তাঁর অপারেশন শুরু হয়। অপারেশন করে ডাক্তাররা গুলি বের করে আনেন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকায় তাঁর শরীরর থেকে প্রচণ্ড পরিমাণ রক্ত ক্ষরণ হয়। তাকে ১৯ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়। তাঁর পেটে বড় আাঁকারের ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল। রক্ত দেওয়ার পর তাঁর শরীরে রক্ত থাকত না। রক্ত পড়ে শেষ হয়ে যেত। অপারেশন শেষ করে তাঁকে আইসিইউ তে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি ১৯ দিন ভর্তি ছিলেন। এ সময় কোন খাবার খেতে পারেননি। ১৯ দিন পর তাঁকে আইসিইউ থেকে বের করে বেডে দেওয়া হয়। তিনি কিছুটা সুস্থতা বোধ করেন। এরপর আবার অসুস্থ হয়ে যান। সেখানে তাঁর চিকিৎসার কিছুটা গাফিলতি হয়। ঠিকমত ড্রেসিং না করায় তাঁর ক্ষততে ইনফেকশন হয়ে শরীরে পচঁন ধরে। রক্ত মাংস গলে গলে পড়তে শুরু করে। অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। এরপর অন্তবর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল থেকে তাঁকে ডিজি হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিন দিন রাখা হয়। অবস্থার কোন উন্নতি না হওয়ায় তাঁকে সিএমএইচ হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর আরও তিনটি অপারেশন করা হয়। কিন্তু অবস্থার কোন উন্নতি হয়না। পেটে ব্যথা, রক্ত ক্ষরণ কোনভাবেই থামে না। ইনফেকশনের কারনে পেটের সবকিছু পঁচে যায়। খাবার পানি খেলেও তা ধরে রাখতে পারত না। অবস্থা বেগতিক হলে ডাক্তাররা আবারও অপারেশ করার সিদ্ধান্ত নেন। সেসময় ডাক্তাররা বলেন, এবার অপারেশ করলে আর নাও বাঁচতে পারেন। বৃহস্পতিবার তাঁর অপারেশ করা হয়। তিন দিন অজ্ঞান অবস্থায় থেকে সোমবার ৯ সেপ্টেম্বর তিনি শাহাদাতের অমীয় শুধা পান করেন। লাশবাহী গাড়িতে করে শহীদ বাবুল মৃধার লাশ তাঁর নিজ গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁর দাফন-কাফন সম্পন্ন হয়। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়ের অনুভূতি শহীদের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামী একজন নিরপরাধ মানুষ। কিন্তু পুলিশ তাকেও ছাড়ল না। এখন কি করমু আমি। ছেলে দুইডারে নিয়ে কোথায় যামু। ওর বাপের ইচ্ছে ছিল ছেলেটাকে পড়াশোনা করিয়ে মানুষের মত মানুষ বানাবে। এজন্য ছেলেকে ঢাকা নিয়ে কলেজে ভর্তি করিয়ে দেন। কিন্তু তা আর হল না। এখন ছেলেকে মানুষ করবে কে। ছোট ছেলেটার খাওন খরচ কিভাবে যোগাড় করমু। ছোট ছেলেটা ওর বাপের মুখটাও মনে রাখতে পারবে না। ওর বাবা যে কে ছিল এই কথাটাও বলতে পারবে না। শহীদ বাবুল মৃধার বাল্য বন্ধু কাওসার আলম (সহকারী শিক্ষক) বলেন, মোঃ বাবলু মৃধা তার পিতা মফেজ মৃধা আমি তাকে চিনি ও জানি। সে ছোট বেলা হতে খুব ভাল মানুষ ছিল। তাঁর ব্যবহার অত্যান্ত চমৎকার ও বিনয়ী। সমবয়সী হওয়ায় আমরা এক সাথে খেলাধুলা করতাম। তার এমন মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। শহীদ পরিবারের আকুতি শহীদের স্ত্রী মিনতি করেছনে তাদের পরিবারের পাশে দাড়ানোর জন্য। তার ছোট ছেলেটার দেখাশোনার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। আর তাঁর বড় ছেলের যেন একটি চাকরি হয় সেজন্য অনুরোধ করেছেন। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য নাম : শহীদ বাবলু মৃধার পেশা : দিনমজুর, নির্মাণ শ্রমিক জন্মতারিখ : ২০/০৩/১৯৭৭ বয়স : ৪৭ বছর পিতা : মফেজ আলী মৃধা, বয়স: ৭৫ বছর মাতা : মোছাঃ হনুফা বেগম আহত হওয়ার স্থান ও তারিখ : ১৯ জুলাই ২০২৪, শনির আখরা, ঢাকা শাহাদাতের তারিখ : ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ শাহাদাতের স্থান : সিএমএইচ হসপিটালে ভর্তিরত অবস্থায় শাহাদাত বরন করেন স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: খারিজা বেতাগী, ৩নং বেতাগী সান, দশমিনা, পটুয়াখালী

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: বাবলু মৃধা
Image of মো: বাবলু মৃধা
Image of মো: বাবলু মৃধা
Image of মো: বাবলু মৃধা

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: আবুল বাশার

মো: সিফাত হোসেন

মো: সাগর গাজী

মো: আল আমিন হোসেন আগমন

মো: কামাল হোসেন

মেহেদী হাসান

মো: ইমরান হোসেন

মো: আখতারুজ্জামান নাঈম

মো: সেলিম তালুকদার

মো: জসিম

মো: এমদাদুল হক

মো: দুলাল সরদার

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo