জন্ম তারিখ: ১ মে, ২০০৪
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: বরিশাল
পেশা : রাজমিস্ত্রি, শাহাদাতের স্থান :বদ্দারহাট, চট্টগ্রাম
শহীদ মো: রাব্বি (২০) ছোট থেকেই পিতামাতার চক্ষু শীতলকারী সন্তান ছিলেন। ছোট থেকে লেখাপড়ায় খুবই মনোযোগী ছিলেন। কিন্তু পরিবার অসচ্ছল হওয়ায় পড়াশোনা বেশি আগাতে পারেননি। তিনি অনেক কষ্ট করে মাদ্রাসায় ৮ম শ্রেনি পর্যন্ত পড়ালেখা চালান। পরে বাধ্য হয়ে পরিবারের জন্য অভাবের তাড়নায় চট্টগ্রাম বহদ্দারহাট এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ শুরু করেন। পারিবারিক জীবন শহীদ রাব্বি অনেক স্বপ্ন নিয়ে চট্টগ্রাম এসেছিলেন। নতুন বিয়ে করেছেন মাত্র ৫ মাস হয়েছে। তার স্ত্রী কে সেভাবে সময় দিতে পারেনি তিনি। ভালো থাকার জন্য টাকা পয়সা আয় করে তার পরিবার ও মা বাবা কে ভালো রাখবে ও তাদের সকল খরচ চালাবে কিন্তু স্বপ্ন গুলো যেন অধরাই রয়ে গেলো। ঘাতকের একটা গুলিতে তার জীবনের সকল চাহিদা আর চাওয়া পাওয়া গুলো নিমিষেই ধ্বংস হয়ে যায়। আন্দোলনের প্রেক্ষাপট স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গড়ে ওঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আহ্বানে সরকার পতনের তীব্র আন্দোলন। হাজার হাজার মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সমন্বয়কদের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে জুলাই মাসের ১৭ তারিখ শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু হয়। তারপর ১৮ তারিখে দেশের বিভিন্ন জেলায় আন্দোলন দমন করতে ঘাতক পুলিশ ও সন্ত্রাসী আওয়ামীলীগ হাতে অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে ছাত্রদের উপর গুলি চালায় কিন্তু তাতেও তারা থেমে থাকেনি সেই দিন রাত থেকে ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ করে দিয়ে মিথ্যা ছলনা করে। বৈষম্যের বিরুদ্ধে গড়ে উঠা ছাত্র আন্দোলন ক্রমেই মুক্তিকামী জনতার গণ আন্দোলনে রূপ নেয়। প্রায় ৫ দিন নেটওয়ার্ক বন্ধ রেখে সরকারি পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সাধারণ মানুষের উপর চালায় ইতিহাসের নৃশংস বর্বরোচিত হামলা। বীভৎস গণহত্যা চালিয়ে লাশ গুম করা হয়। সর্বশেষ ছাত্রদের দাবি মেনে না নিয়ে আরো বেশি আঘাত হানার চেষ্টা কর অবৈধ হাসিনা সরকার। ছাত্ররা রাজপথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকার চেষ্টা করে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয় এবং ৫ তারিখ ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। আন্দোলনে যোগদান ও শাহাদাত বরণ অকুতোভয় সৈনিক মোঃ রাব্বি ৪ তারিখ সন্ধায় চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে মুক্তিকামী জনতার সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে শরীক হয়। সকল ভয় দূরে সরিয়ে সক্রিয়ভাবে মিছিলের সম্মুখভাগে স্লোগান দিতে দিতে অগ্রসর হতে থাকে। এক পর্যায়ে ঘাতক পুলিশ ও শুরু থেকে ওঁত পেতে থাকা সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের যৌথ হামলায় মাথায় ও গলায়সহ সারা শরীরে নির্মমভাবে গুলিবিদ্ধ হয়। মুহুর্তেই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। কঠিন পরিস্থিতে রাস্তায় পড়ে থাকা তার রক্তাক্ত নিথর দেহ কোনোভাবেই উদ্ধার করা যাচ্ছিলো না। কোনোভাবে মিছিলে আসা তার পাশের লোকেরা রাব্বিকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করেন। চরম মরণ যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকা মোঃ রাব্বি সন্ধ্যা ৭ টার সকল মায়া ত্যাগ করে এই দুনিয়া ছেড়ে জান্নাতের পাখি হয়ে উড়ে যান। রেখে যান তরুণ প্রজন্মের জন্য বিপ্লবী অনুকরণীয় অনুস্মরণীয় গৌরবময় স্মৃতি গাঁথা। স্বজনদের অব্যক্ত অনুভূতি সুমাইয়া বেগম (স্ত্রী) বলেনঃ আমার স্বামী ফজলে রাব্বি। সে চট্টগ্রামে বহদ্দারহাটে ঘাতক পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়। আমার তার সাথে ৫ মাস আগে বিয়ে হয়েছে। মৃত্যুর একদিন আগে আমার সাথে কথা হয়। জীবিত থাকতে আমার জন্য প্রত্যেক মাসে ২/৩ হাজার করে টাকা পাঠাতো। সেই দিন আমি মাগরিবের নামাজ পড়তে ছিলাম। হঠাৎ শুনি আমার স্বামীকে গুলি করে মেরে ফেলেছে। এই খবর শুনে আমার চারপাশ অন্ধকার করে আসে। মুহুর্তেই সবকিছু কেমন যেন ঝাপসা হতে লাগে। এত তাড়াতাড়ি আমাকে এভাবে একা করে দিয়ে চলে যাবে স্বপ্নেও ভাবিনি। আমার স্বামী হত্যার বিচারের জোর দাবি জানাচ্ছি। জয়তুন নেসা (মা)বলেনঃ আমার ছেলে ফজলে রাব্বি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করার পর চট্রগ্রামে রাজমিস্ত্রী কাজ করতো। বড়ো ভাই রাসেলের সাথে থাকতো। রাসেল বিদেশে ৭ লক্ষ টাকা খরচ করে যাওয়ার পর এখনো ৪ লক্ষ টাকা দেনা। বিভিন্ন সমিতির ৫টি কিস্তি চালায় সে। আমার ছেলে সবসময় কল দিয়ে সান্ত্বনা দিত। সে নিয়মিত নামাজ পড়তো। আমার ছেলে গুলি খাইছে এ কথা শুনে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। বিবি সুরমা (মেঝো বোন) বলেনঃ আমার ভাই কে গুলি করে হত্যার পর আমরা নিস্তব্দ। পেটের টানে অভাবের সংসারের অভাব পুরণের জন্য চটগ্রামে যায় সে। বৈষম্যবিরেধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকায় অংশগ্রহণ করে। সেই দিন ভাই মৃত্যুর পর থেকে আমাদের সংসারে টাকা পাঠানোর মত কেউ নেই। আমার বাবা প্যারালাইসিস রোগী। খুনি হাসিনাকে যাতে দেশে এনে বিচার করা হয় আমি সেই দাবি জানাই। প্রস্তাবনা শহীদের স্ত্রীর ৫ লক্ষ টাকা ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করার কথা জানান। থাকার ঘরটি পাকা করার অনুরোধ করেন। একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকলে নিয়মিত আয় দিয়ে সংসার চালাইতে পারতাম। স্ত্রী হিসেবে আমি আবার পড়ালেখা করে যাতে একটা চাকুরি পেতে পারি সেই আশা করি। ছোট দুই বোনের লেখাপড়ার খরচ চালানোর ব্যবস্থা করা। প্যারালাইসিস বাবার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। শহীদের ব্যক্তিগত প্রোফাইল পূর্ণ নাম : মোঃ রাব্বি জন্ম : ০১-০৫-২০০৪ জন্মস্থান : ভোলা পেশা : রাজমিস্ত্রি বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: ওয়ার্ড নং-৯, ইউনিয়ন: জাহানপুর , থানা: চরফ্যাশন, জেলা: ভোলা পিতার নাম : মো. সেলিম, পেশা ও বয়স: জেলে-৪৯ মায়ের নাম : জয়তুন নেসা, পেশা ও বয়স: গৃহিণী-৪৬ পরিবারের বর্তমান সদস্য সংখ্যা : ৪ জন ঘটনার তারিখ ও স্থান : ০৪/০৮/২০২৪, বদ্দারহাট, চট্টগ্রাম আহত হওয়ার সময় : ০৪/০৮/২০২৪, সময় : সন্ধ্যা-৭টা আক্রমণকারী/আঘাতকারী : স্বৈরাচারি সরকারের ঘাতক পুলিশ ও সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ শহীদ হওয়ার তারিখ, সময়, স্থান : ০৪/০৮/২০২৪, বদ্দারহাট, চট্টগ্রাম শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : জাহানপুর, চরফ্যাশন, ভোলা