জন্ম তারিখ: ৫ জুলাই, ২০০৬
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২১ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: বরিশাল
পেশা : রাজমিস্ত্রী, শাহাদাতের স্থান :শেখেরচর মাজার বাসস্ট্যান্ড
শহীদ মো: ইয়াসিন ৫ জুলাই ২০০৬ সালে ভোলা জেলার অন্তর্গত বোরহান উদ্দিন উপজেলার দেউলা বড়পাতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা লাল মিয়া একজন কৃষক এবং মাতা লিলুফা একজন গৃহিণী। মো: ইয়াসিনের বড় একটি পরিবার। বড় ৪ ভাই বিবাহিত দিন মজুর রাজমিস্ত্রীর কাজ করে সংসার চালান। অন্য দিকে ২ বোন বিবাহিত কিন্তু আর্থিকভাবে অসচ্ছল থাকায় শহীদ ইয়াসিনের মাঝে মাঝে বোনদের কিছু দায়িত্ব নিয়ে খরচ বহন করতে হত। বড় ভায়েরা থাকলেও তারা কোন সহযোগীতা করতো না। মা-বাবা ছোট একটি টিনের ঘরে বসবাস করেন। কিন্তু তারা বয়স্ক হওয়ায় চলাফেরা করা খুবই কষ্টকর।শহীদ মোঃ ইয়াসিন ছোট থেকেই পিতামাতার চক্ষু শীতলকারী সন্তান ছিলেন। ছোট থেকে লেখাপড়ায় খুবই মনোযোগী ছিলেন। কিন্তু পরিবার অসচ্ছল হওয়ায় পড়াশোনা বেশি আগাতে পারেন নি। পরে বাধ্য পরিবারের জন্য ঢাকায় এসে রাজমিস্ত্রীর কাজ শুরু করেন। পারিবারিক অবস্থা শহীদ ইয়াসিনের আয়ের অর্থ দিয়ে মোটামুটি ভালোই চলছিলো তার পরিবার ও ছোট দুইবোনের জীবন। ছোট দুইটা বোন কে বিয়ে দিয়েছিলো কিন্তু বোনের শ্বশুর বাড়ীর চাহিদা ছিলো অনেক যা ইয়াসিন কিছু কিছু চাহিদা অর্থ দিয়ে সম্পূর্ণ করতেন। বোনের বিয়ের পরে আরো বড় চাহিদা ছিলো শ্বশুর বাড়ীর পক্ষ থেকে যার কারণে বোনের শ্বশুর বাড়ীর লোকেরা বোন মিষ্টি কে ঘরে তুলে নেয়নি। আন্দোলনের প্রেক্ষাপট দীর্ঘ ১৫ বছরে আওয়ামী দুঃশাসন, ভোটচুরি, দুর্নীতিন, খুন, অন্যায়, অত্যাচার জনমনে ফেলেছিল বিরূপ প্রতিক্রিয়া। কোটা প্রথা পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আবার ষড়যন্ত্র শুরু করে আওয়ামী সরকার। ২০১৮ সালে ছাত্রছাত্রীদের প্রবল আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সকল দাবী মেনে নিলেও তার অন্তরে ছিল হিংসার অগ্নিগিরি। তাই ২০২৪ তালে একটি বিরোধী দলহীন নির্বাচনে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর আবার কোটা ফিরিয়ে আনতে চাইল হাসিনা সরকার। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে টানা আন্দোলন শুরু হয়েছিল গত ১ জুলাই থেকে। অহিংস এই আন্দোলন ১৫ জুলাই থেকে সহিংস হয় । আন্দলোনে নিরস্ত্র ছাত্র জনতার ওপর সশস্ত্র ঘাতক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও পুলিশ, জঅই সদস্যরা হামলা চালাতে থাকে। রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের শাহাদাতের পর থেকেই আন্দোলন গণমানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্রমেই জনসাধারণের আন্দোলনে রূপ নেয়। এটি বৈষম্যবিরধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন হিসেবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে সাধারণ ছাত্রদের অহিংস আন্দোলন ধীরে ধীরে ফ্যাসীস্ট সরকার বিরোধী অভ্যুত্থানের দিকে ধাবিত হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে এ আন্দোলন শুধু ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; হয়ে উঠে দেশের আপামর জনতার এক বিশাল গণঅভ্যুত্থান। জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এ অভ্যুত্থানে একাত্মতা প্রকাশ করে রাজপথে বেরিয়ে আসে। ক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে স্বৈরাচার সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু পদত্যাগের পূর্বে তিনি রেখে যান তার ঘৃণ্য ও বিকৃত মস্তিষ্কের অজস্র কুকীর্তি। এরই অংশ হিসেবে আন্দোলনকারী সহ অনেক নিরীহ জনতার উপর লেলিয়ে দেয়া হয় সশস্ত্র বাহিনী। তাদের গুলিতে শহীদ হয় নিরস্ত্র নিপীড়িত জনতা। যেভাবে শহীদ হন ইয়াসিন বলেছিলো আমি টাকা দিয়ে তাদের দাবি আদায় করে আমার বোন কে আমি সম্মানের সহিত শ্বশুর বাড়ি পাঠাবো। এই দিকে বিপ্লবী ইয়াসিনকে ঘাতক অবৈধ সরকারের সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শহীদ করে পুড়িয়ে হত্যা করে ঢাকার যাত্রাবাড়ী সাইনবোর্ড এলাকায় রাস্তার উপর ফেলে চলে যায়। তার স্বপ্ন গুলো শেষ হয়ে চির বিদায় নিয়ে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে পরপারে চলে যান। সেই দিন টা ছিলো অবৈধ সরকারের মরণ কামড়ের একটা দিন। সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের কর্মসূচী শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হয়ে যায়। এক দিকে আন্দোলন অন্য দিকে ঘাতক পুলিশ ও আওয়ামী হায়েনারা ছাত্র সহ সাধারণ মানুষের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে শত শত মানুষ কে হত্যা করছে। এমন কি তাদের পৈশাচিকতায় মায়ের কোলের শিশু পর্যন্ত নিরাপদ থাকতে পারেননি সেদিন। ১৯ জুলাই ২০২৪ শুক্রবার যেন ইয়াসিনের উপর এক কিয়ামত শুরু হয়ে যায়। বিকাল ৪ টায় ইয়াসিন শাহাদাতের সুধা পান করে মা-বাবা ভাই বোনদের রেখে গোটা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান আর রেখে যান বিপ্লবী স্বর্ণাজ্জ্ব্যোল ইতিহাস। আল্লাহ তাকে জান্নাত নসীব করুন। আমিন। স্বজনদের অনুভূতি শহীদের বাবা বলেন, আমার এই ছেলেই আমার সংসার চালাইতো। আমি এখন কিভাবে পরিবারের খরচ চালাবো। আল্লাহর কাছে আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই। বোন মিষ্টি বলেন, ইয়াসিন আমাদের ছোট ভাই। আমাদের সকল ভাইদের সংসার রয়েছে। তারা নিজেদের ফ্যামিলি দেখেন। ইয়াসিন ভাই আমাদের ফ্যামিলি ও দেখতেন ছোট ভাইকেও দেখতেন। প্রিয় ভাই মারা যাওয়ায় আমরা খুব কষ্টে আছি। আমাকে আমার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা ৫টা জিনিস দিতে বলে ছিলো কিন্তু আমার পরিবার দিতে পারে না। তাই আমাকে তারা শ্বশুর বাড়িতে উঠায়ে নেয় না। আমার ভাই জীবিত থাকতে বলেছেন ৫টা জিনিস দিয়েই উঠায়ে দিবেন। এখন আমার ভাই মারা গেলো আমারে কে উঠায়ে দিবে। আল্লাহ ভাইকে জান্নাত দান করুন। মা লিলুফা বেগম বলেন, আমার ৫ টা ছেলে ২জন মেয়ে। আমার কলিজা ছিঁড়ে যায় ছেলের জন্য। ছেলে আমার সংসার দেখতো। সারা দিন রাত ছেলের জন্য কান্দি। আমার পুতেরে কারা বোম মারলো, কিভাবে আমার পুতেরে পুড়িয়ে মারলো আমি এর বিচার চাই । ইয়াসিনের প্রতিবেশি আবু বকর সিদ্দিক ভাই বলেন, আমার এখানে ইয়াসিন আমার বাড়ির পাশে থাকতো। সে খুব ভালো ভালো মানুষ ছিলো। প্রস্তাবনা বাবা মা থাকার জন্য পাকা ঘর করে দেয়া। পরিবারকে বার্ষিক কিছু অনুদান এবং নিয়মিত মাসিক ভাতা প্রদান করা। বড় বোনকে শ্বশুর বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা। একনজরে শহীদ মো: ইয়াসিন পূর্ণ নাম : মো: ইয়াসিন জন্ম : ০৫/০৭/২০০৬ জন্মস্থান : বোরহান উদ্দিন দেউলা বড়পাতা পেশা : রাজমিস্ত্রী বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম- বড়পাতা, ইউনিয়ন- দেউলা ৫ নং ওয়ার্ড, থানা- বোরহান উদ্দিন, জেলা- ভোলা পিতার নাম : লাল মিয়া মায়ের নাম : লিলুফা পরিবারের বর্তমান সদস্য সংখ্যা : ৬ জন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগদান : ১৭ জুলাই ২০২৪ ঘটনার তারিখ ও স্থান : ২১ জুলাই ২০২৪, শেখেরচর মাজার বাসস্ট্যান্ড আহত হওয়ার সময় : ১৯/০৭/২০২৪, বিকাল ৪টা আক্রমণকারী/আঘাতকারী : স্বৈরাচারি সরকারের বিজিবি বাহিনী শহীদ হওয়ার তারিখ, সময়, স্থান : ১৯/০৭/২০২৪, ১২.৪০মি, যাত্রাবাড়ি, সাইনবোর্ড শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : বাড়ির পাশে সামাজিক কবরস্থান