Image of মো: সজিব

নাম: মো: সজিব

জন্ম তারিখ: ১৫ জানুয়ারি, ২০০৬

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৮ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: বরিশাল

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : গার্মেন্টস কর্মী, শাহাদাতের স্থান : যাত্রাবাড়ি চিটাগাং রোড

শহীদের জীবনী

শহীদ মো: সজিব ২০০৬ সালে দুলারহাটের ভোলা জেলায় বড় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শহীদের পিতা নুরুল ইসলাম (৭০) এর ছিল ২ সংসার। ১ম সংসারের ৪ ছেলে ১ মেয়ের মধ্যে একজন ছেলে মারা যায়। ২য় সংসারে ৩ বোন এবং সজিব একমাত্র ভাই। এতো বড় সংসারে বৃদ্ধ বাবার কোন কাজকর্ম নেই, অনেক কষ্ট করে তাদের পরিবার কোনরকম দিনাতিপাত করছেন। এমন দুরাবস্থায় পরিবারকে সহযোগিতা করার জন্য এবং বাবা মায়ের আশা পূরন করতে যাত্রাবাড়ী, চিটাগাংরোডের একটি গার্মেন্টস চাকুরী নেন তিনি। একমাত্র সজিবের আয়ের মাধ্যমে ২য় সংসার পরিচালনা হতো। কিন্তু সে আশা আর পূরণ হলোনা। পরিবারের প্রতি শহীদ সজিবের যেমন আন্তরিকতা ছিলো তেমনি দেশের প্রতি তার ভালোবাসার কোন অংশে ঘাটতি ছিলোনা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সর্বদা ছিলেন সোচ্চার। আন্দোলনে যোগদান ১৮ জুলাই ২০২৪ বৃহস্পতিবার ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ চলাবস্থায় সজিব বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তিনি ছাত্রদের সাথে যাত্রবাড়ি, চিটাগাংরোডের আন্দোলনে প্রতিদিন অংশ নেয়ার চেষ্টা করেন। প্রতিদিন সকাল ১১ টা থেকে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পেটুয়া পুলিশ বাহিনী সাধারণ ছাত্রদের শান্তিপ্রিয় আন্দোলনে টিয়ারশেল ও গুলি ছুঁড়তে থাকে। পুলিশ বাহিনীর সাথে যুক্ত হয় যুবলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী। নৃশংসভাবে অসংখ্য শিশু,কিশোর,নারী পুরুষকে হত্যা করেই যাচ্ছে নরখেকোর দল। শাহাদাত বরণ সর্বশেষ ৫ আগষ্ট সরকার পতনের দিন শহীদ সজিব, বোন সালেকার (৩৪) বাসা থেকে তার ভাগনি সনিয়াকে বলে যায় আমি মিছিলে যাই। কিন্তু দু:খের বিষয় মিছিল থেকে সজিব আর ফিরে আসেনি। যাত্রাবাড়ির চিটাগাংরোডে ঘাতক পুলিশ লাশ নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে নিরীহ-নিরস্ত্র মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার উপর। হায়েনার দল শুধু নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়েই ক্ষান্ত ছিলো না; মেতে উঠে লাশ গুমের পৈশাচিকতায়। আন্দোলনেরে এক পর্যায়ে ঘাতক পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে বিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে যায় সজিব। মুহুর্তেই তার দুনিয়ায় আঁধার নেমে আসে। প্রচণ্ড মরণ যন্ত্রণায় রাজপথে কাতরাতে থাকে সজিব। রণক্ষেত্রে পরিণত হওয়া ঘটনাস্থল থেকে কোনভাবেই তাকে উদ্ধার করার উপায় ছিলো না। ফলশ্রুতিতে রাজপথেই শাহাদাতের সুধা পান করে বিপ্লবী সজিব। নিখোঁজ শহীদ সজিব শহীদ সজিবের খোঁজে বৃদ্ধ বাবা মা গ্রাম থেকে ঢাকায় আসে এবং অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাদের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে সজিবকে পায়নি। এখন পর্যন্ত শহীদ সজিব নিঁখোজ। পুলিশের কাছে সজিবের বৃদ্ধ বাবা মা অনেক অনুনয় বিনয় করেও লাশ পায়নি। এর জবাব কার কাছে পাওয়া যাবে? আদৌ কি আর পাওয়া যাবে? প্রিয় সন্তানের বিয়োগান্ত এ-অধ্যায় কিভাবে ভুলবে পরিবারটি! শহীদ সজিব তার পরিবারের সবার কাছে ভালো,অমায়িক মানুষ ছিলেন। পরিবারের সবার ভাষ্যমতে তার মনে কোন হিংসা ছিলোনা। কোন রাগ ছিলোনা। কিন্তু সে অন্যায়কে কখনো প্রশ্রয় দিতোনা। অবশেষে দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে বৈষম্যের বিনাশ ঘটাতে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে স্বৈরাচারী খুনি হাসিনার লেলিয়ে দেয়া ঘাতক পুলিশের গুলিতে তিনি শহীদ হন। পারিবারিক অবস্থা শহীদের পিতা নুরুল ইসলাম (৭০) এর ছিল দুই সংসার। প্রথম সংসারের চার ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে একজন ছেলে মারা যায়। এতো বড় সংসারে বৃদ্ধ বাবার কোন কাজকর্ম নেই, অনেক কষ্ট করে তাদের পরিবার কোনরকম দিনাতিপাত করছেন। তাই শহীদ সজিব পরিবারকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য যাত্রাবাড়ী, চিটাগাংরোডের একটি গার্মেন্টস চাকুরী নেন। ২য় সংসার একমাত্র সজিবের আয়ের মাধ্যমে পরিচালনা হতো। একদিকে সামান্য উপার্জন অন্যদিকে পরিবারে বাড়তি সদস্য সংখ্যা, যার ফলে সন্তানদের মুখে ভালোভাবে তিনবেলা খাবার যোগান দিতে পারেন না শহীদের পিতা নুরুল ইসলাম। শহীদ সজিব(১৮) এই বয়সে ভঙ্গুর পরিবারের হাল ধরতে প্রথম চাকরী নেয় একটি গার্মেন্টসে। শহীদ সজিব গার্মেন্টসে কাজ করে যা পান তা দিয়ে পরিবার কোনরকম দিন গুজরান করছেন। তার অকাল মৃত্যুতে সবকিছুই এখন পরিবারের কাছে স্মৃতিতে অম্লান। বর্তমানে সজিবকে হারিয়ে নিরুপায় হয়ে পড়ে তার বাবা নুরুল ইসলাম। সজিবের শাহাদাতের পরপরই তাদের সংসারের জীবন থেমে যায়, তার বৃদ্ধ বাবা মা হয়ে যায় বাকরুদ্ধ। একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানকে হারিয়ে যেন সর্বস্ব হারিয়েছে পরিবারটি। শহীদ সজিবের বৃদ্ধ পিতা মাতা তাদের ২য় সংসার নিয়ে গ্রামের যে বাড়িতে থাকে সেখানে কোনভাবে বসবাস করাও কঠিন। জীর্ণশীর্ণ বাড়ী থেকে বৃষ্টি হওয়া মাত্র পানি নির্গত হয় অবিরত। স্বজনদের অনুভূতি প্রিয় ছেলেকে অকালে হারিয়ে শোকাচ্ছন্ন বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলের আশা আমি ছেড়ে দিচ্ছি অনেক খোঁজাখুঁজি করছি। এই হাসপাতাল থেকে ঐ হাসপাতাল কোথাও বাকি রাখি নাই। আমি আসা ছেড়ে দিচ্ছি বাকিটা আল্লাহ জানে । সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা রানু বিবি বলেন, বিয়ার দুই বছর পরে আমার ছেলে হইছে। ছেলে আমারে রাইখা চলে গেছে; ছেলের কামাই খাইলাম না। আমি মরলে আমার কবর জিয়ারত করতো । কিন্তু আগেই ছেলে চলে গেলো। প্রিয় ভাই সম্পর্কে কান্নাজড়িত কণ্ঠে সৎ বোন জরিনা বলেন, আমারা ভাইটাকে আপন ভাই থেকে বেশি ভালোবাসতাম। যখন যা হইতো ঘরে ফিরে এসে আমাদের বলতো। এখন কে বলবে? আমার ভাই কই গেল? ভাতিজা রিপন বলেন, সে আমার এক সপ্তাহর বড়। সজিব আমার সাথে কখনো খারাপ আচারণ করে নাই। এখন শুধু তার কথা মনে পড়ে। প্রস্তাবনা: বৃদ্ধ বাবা-মাকে মাসিক ও এককালীন ভাতার ব্যবস্থা করা। একনজরে শহীদ মো: সজিব পূর্ণ নাম : মো: সজিব জন্ম : ১৫-০১-২০০৬ জন্মস্থান : ভোলা দুলার হাট পেশা : গার্মেন্টস কর্মী বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: ফরিদাবাদ, ইউনিয়ন: নুরাবাদ, থানা: চর ফ্যাশন, জেলা: ভোলা পিতার নাম : মো: নুরুল ইসলাম মায়ের নাম : রানু বিবি পরিবারের বর্তমান সদস্য সংখ্যা : ৭ জন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগদান : ১৮ জুলাই ২০২৪ ঘটনার তারিখ ও স্থান : ১৮ জুলাই ২০২৪, যাত্রাবাড়ি চিটাগাং রোড আহত হওয়ার সময় : ৫ আগস্ট ২০২৪ আক্রমণকারী/আঘাতকারী : স্বৈরাচারী সরকারের ঘাতক পুলিশ বাহিনী শহীদ হওয়ার তারিখ, সময়, স্থান : ৫ আগস্ট ২০২৪, যাত্রাবাড়ি চিটাগাং রোড শহীদ সজিবের মরদেহ নিখোঁজ

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: সজিব
Image of মো: সজিব

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: জামাল হোসেন

মো: ইফতি আব্দুল্লাহ

 মোসা: লিজা

মো: সাইফুল ইসলাম

মামুন খন্দকার

মো: মিজানুর রহমান

মো: সিয়াম

মো: বাচ্চু

মো: জসিম

মো: টিটু

রাকিব হাওলাদার

মো: আখতারুজ্জামান নাঈম

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo