Image of মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন

নাম: মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন

জন্ম তারিখ: ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৮৯

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৪ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: বরিশাল

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ফার্নিচার দোকান, শাহাদাতের স্থান :হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়,মিরপুর

শহীদের জীবনী

মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন ছিলেন একজন সাহসী ও কঠোর পরিশ্রমী মানুষ। তিনি ১৯৮৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভোলা জেলার সদর উপজেলার শাহামাদার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মোহাম্মদ সুলতান মাল ও মাতা জিন্নাতুন নিসা। গ্রামীণ পরিবেশে অর্থনৈতিক ভঙ্গুর অবস্থায় যাচ্ছিল তাদের জীবন। এরইমধ্যে তার বাবা আবার দ্বিতীয় বিয়ে করে ঘরে নিয়ে আসেন সৎ মা। শুরু হয় সংসারের টানাপোড়েন। এমতাবস্থায় দেলোয়ারের জন্য উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্নটা ছিল যেন এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন। এইভাবে অভাবের সংসারে বড় হতে থাকে দেলোয়ার। নিজের ভাগ্যের চাকা বদলের জন্য গ্রাম ছেড়ে পাড়ি জমান রাজধানীতে। শুরু করেন নিজের সংসার। তিন সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে তার মধ্যবিত্ত পরিবার ছিলো যেন এক টুকরো সুখের নীড়। জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসাবে তার নিজের একটি ফার্নিচারের দোকান ছিল। তার দুচোখ জুড়ে খেলা করতো সন্তানগুলোকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন। পারিবারিক অবস্থা অভাগা যেদিকে যায় সাগর ও শুকিয়ে যায়। কথাটি যেন মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনর জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কেননা শৈশব থেকে হাজারো দুঃখ কষ্টে বেড়ে উঠা দেলোয়ার যখনই সুখের মুখ দেখা শুরু করেন তখনই দুঃখ যেন বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে। যখন তিনি আন্দোলনে আহত হন, তার চিকিৎসার খরচ বহন করতে গিয়ে একমাত্র সম্বল ফার্নিচারের দোকানটি বিক্রি করে দেন তার পরিবার। কিন্ত ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস শেষ রক্ষা আর হলো না, তিন সন্তান ও স্ত্রীকে রেখে পরপারে পাড়ি জমান দেলোয়ার। পরিবারে সকল খরচই দেলোয়ার হোসেনের আয়ের উপর নির্ভরশীল ছিলো। তার অকাল প্রয়াণে স্ত্রী ও সন্তানেরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। তাদের নিজের বলতে এখন আর কোন সম্পদই অবশিষ্ট নেই। বর্তমানে তারা অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত। এখন তারা চিন্তিত, কিভাবে চলবেন এবং কিভাবে সংসারের খরচ চালাবেন। পরিবার প্রধানের অভাব তাদের জীবনকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। এই দুরাবস্থার মধ্যে, তারা আশা করে সমাজ সহায়তা করবে, যাতে তাদের জীবনে কিছুটা আলো ফিরিয়ে আনা যায়। ঘটনার বিবরণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলছিল জুলাই, ‘২৪ জুড়ে। ছাত্ররা মূলত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা, এবং সেমিনারের মাধ্যমে তাদের দাবি তুলে ধরেছে। তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আন্দোলনটি সংঘাতপূর্ণ হয়ে উঠতে দেখা যায়, যেখানে নিরাপত্তা বাহিনী ও ছাত্রদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। কারণ স্বৈরাচার সরকার ছাত্রদের নায্য দাবী না মেনে চালাচ্ছিলো অত্যাচারের স্টীমরোলার। সারাদেশ জুড়ে গুলি, রাবার বুলেট,সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছোঁড়া হচ্ছিলো ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে। খালি হয়ে যাচ্ছিলো হাজারো মায়ের বুক,পিতাহারা হয়ে পড়ছিলো হাজারো শিশু, আর হাতের মেহেদীর রঙ শুকাবার আগেই অনেকেই হয়েছিলো বিধবা। এসব দেখে দেশের সাধারণ মানুষও চুপ করে বসে থাকতে পারেনি। তাদের মধ্যে একজন হলেন দেলোয়ার হোসেন। যিনি মজলুম ছাত্র-জনতার মুখে নিজের সন্তানদের ছাপ দেখতে পেতেন। তাই বিবেকের কাছে হার মেনে প্রতিদিনই শামিল হতেন আন্দোলনে। সে সময় চরম প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতার পাশে থেকে সাহায্য করার চেষ্টা করতেন। এক পর্যায়ে এই আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে রুপ নেয়। সারাদেশে ঢল নামে ছাত্র-জনতার। মুখে মুখে আন্দোলিত হতে থাকে হাসিনার পতনধ্বনি। এই ঘটনার পরিক্রমায় ১৯ জুলাই ২০২৪, জুমাবার বিকেলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে মিরপুরের মিছিলে যোগদান করেন তিনি। সেখানে দিনভর ছিল গোলাগুলি। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও খুনী আওয়ামী লীগের বিতর্কিত সংস্থা রাস্তায় ছিল তৎপর। ছাত্ররা তারপরেও রাস্তায় অবস্থান ধরে রেখেছিল। সরকারী দলের তাণ্ডবে রাজপথ রক্তাক্ত হচ্ছিল। হাসপাতাল গুলো আহত ও লাশে ভরছিল। সন্ধ্যা ৬ টার দিকে পুলিশের গুলিতে আহত হন দেলোয়ার হোসেন। যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে দেলোয়ার হোসেন, অবশেষে ছাত্ররা ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায় তাকে। হাসপাতালের বক্ষব্যাধি বিভাগে ২ দিন চিকিৎসারত অবস্থায় ২১ জুলাই ২০২৪ তারিখ, রাত ৯ টায় মৃত্যুবরণ করেন। এভাবে শহীদি কাফেলায় সংযুক্ত হয় আরেকটি নাম শহীদ দেলোয়ার হোসেন। সর্বোপরি, ৪ আগস্ট থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন ছাত্র-জনতা, সেদিন বিকেলেই ঘোষণা আসে "লং মার্চ টু ঢাকা" হবে পরের দিন। এরই মধ্যে দিয়ে দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়। কিন্তু সেই মুক্ত দেশে মুক্তির আনন্দ উপভোগ করতে পারেননি শহীদ দেলোয়ার হোসেন। তারই জন্য কবি হয়তো লিখেছিল- “উদয়ের পথে শুনি কার বাণী ভয় নাই ওরে ভয় নাই নিঃশেষে প্রান যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।” শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয় ও বন্ধুদের অনুভূতি কথায় আছে, “অ সধহ ফড়বং হড়ঃ ষরাব রহ ুবধৎং নঁঃ রহ ফববফং” এটিই যথার্থ দেলোয়ার হোসেনের বেলায়। তার প্রতিবেশি বলেন, “দেলোয়ার হোসেন ছেলে হিসেবে খুবই ভালো। সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলতো। কারো সাথে কোন ব্যক্তিগত শত্রুতা ছিলো না। তাছাড়া এলাকার সকল মানুষ একই কথা বলেছেন তার সম্পর্কে।” দেলোয়ার হোসেন স্ত্রী বলেন, “আমার স্বামী খুব ভালো মানুষ ছিলো কখনো কারো সাথে ঝগড়া বিবাদ করে নাই। গ্রামের সবার সাথে ভালো সম্পর্ক ছিলো তার। এমনকি সে টাকা পয়সা জমা করে নাই সব সময় বলতো আল্লাহ আমাদের খাওয়াবে চিন্তা করবা না।” শহীদ পরিবারকে সাহায্যের প্রস্তাবনা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে মারা যাওয়ায় তার পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎসটি বন্ধ হয়ে গেছে। মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী তিন পুত্র সন্তান নিয়ে অসহায় অবস্থায় দিনযাপন করছে, যাদের বুক জুড়ে রয়েছে শুধু হাহাকার। ১.স্ত্রীকে শিক্ষকতার চাকুরির ব্যবস্থা করে দেয়া। ২.সন্তানদের শিক্ষার খরচের ব্যবস্থা করা। ৩. স্ত্রী সন্তানদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করা। একনজরে শহীদ পরিচিতি পুরো নাম : মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন জন্ম তারিখ : ১৭ ডিসেম্বর ১৯৮৯ পেশা : ফার্নিচার দোকানী পিতা : মৃত মোহাম্মদ সুলতান মাল মাতা : জিন্নাতুন নেসা স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: শাহামাদার, ইউনিয়ন: কাচিয়া ১২ নং ওয়ার্ড, থানা: ভোলা সদর, জেলা: ভোলা বর্তমান ঠিকানা : মিরপুর, ঢাকা পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৪ জন : ১. স্ত্রী: মোসা. লিজা, বয়স, ২৭ : ২. ছেলে: রাব্বি হাসান (বয়স ১৩, শ্রেণি ষষ্ঠ) : ৩. ছেলে: হাসানুর (বয়স ৬, শ্রেণি শিশু) : ৪. ছেলে: হুসাইন (বয়স ২) আহত হওয়ার স্থান ও তারিখ : মিরপুর, ১৯ জুলাই, সন্ধ্যা ৬টা আক্রমণকারী : স্বৈরাচারী হাসিনার ঘাতক পুলিশ নিহত হওয়ার তারিখ ও স্থান : হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়, ১৪/০৭/২০২৪ সমাধি : শাহামাদার, ভোলা সদর, ভোলা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন
Image of মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন
Image of মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মোঃ আসিফ

মো: হাবিবুর রহমান

 মোঃ ফজলু

মেহেদী হাসান

মো: জিহাদ হোসেন

মো: জাকির হোসেন

মো: ওমর ফারুক

মো: শিহাব উদ্দিন

মো: সাগর হাওলাদার

মো: মিজানুর রহমান

শহীদ মিরাজ

মো: শাহিন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo