Image of মো: শাহিন

নাম: মো: শাহিন

জন্ম তারিখ: ১২ মে, ১৯৮৮

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: বরিশাল

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : পিকআপ চালক, শাহাদাতের স্থান :যাত্রাবাড়ী

শহীদের জীবনী

শহীদ মো: শাহিন ১৯৮৮ সালের ১২ মে ভোলা জেলার দৌলত থানার অন্তর্গত দক্ষিণ জয়নগর নুরুমিয়ার হাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মোহাম্মদ সাজেদ ও মা রিনা বেগমের বড় সন্তান ছিলেন। শহীদ মো: শাহিন ছোটবেলা থেকেই ছিলেন দায়িত্বশীল ও ন্যায়ের পক্ষে। তাই পরিবারের বড় হিসেবে নিজের দায়িত্বের ব্যাপারে ছিলেন সচেতন। ছোট দুই ভাই ও এক বোনের দেখাশুনা করতেন তিনি। পারিবারিক আর্থিক অবস্থা শহীদ মোঃ শাহিন এর বাবা ছিলেন ভ্যানচালক আর মা রিনা বেগম গৃহিণী। দরিদ্র এই সংসারের টানাপোড়েন যেন লেগেই থাকে। তাই নিজেও লেগে যান কাজে। পিকআপ ভ্যানের ড্রাইভার হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরই মধ্যে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন তিনি। দুই সন্তানের জনক শহীদ মো:শাহিন থাকতেন ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে। চন্দনকোঠা বিদ্যুৎ ভিলার একটি মাত্র রুমের ছোট বাসা নিয়েছিলেন আশ্রয় হিসেবে। এত অভাবেও ভুলে যাননি বাবা-মার প্রতি দায়িত্ব। বাবাকে নিজের বাসায় রাখতে না পারলেও প্রতিদিনের খাবার খাওয়াতেন একই সাথে। তার মা অন্যদের আশ্রয়ে ছোট ভাই ও বোনকে নিয়ে থাকতেন গ্রামে। সেখানেও নেই তাদের কোন নিজস্ব জমি-জমা কিংবা বাড়ি। এভাবেই দারিদ্রের সাথে যুদ্ধ করে চলছিল তাদের জীবন। ঘটনার বিবরণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকেই নিজের স্ত্রীর সাথে সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন শহীদ মো: শাহিন। প্রতিদিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে মিছিল বা সমাবেশে যোগ দিতেন তিনি। বাসায় এসে সারাদিনের খবর জানাতেন স্ত্রীকে। সার্বিক পরিস্থিতি শুনে তার স্ত্রী কিছুটা শঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাকে আন্দোলনে অংশ নিতে মানা করেন। কিন্তু শাহীন তার সন্তানদের কথা চিন্তা করেন। কিছুদিন পরেই তো তার ছেলে মেয়েরা স্কুলে যাবে। আর তিনি তো চান না তারা বৈষম্যের শিকার হোক। সে কথাই তুলে ধরেন স্বপ্নার কাছে। অগত্যা তার স্ত্রী তাকে আর বাধা দিতে পারেননি। তাছাড়া শাহিন ছিলেন বিএনপির একজন একনিষ্ঠ কর্মী। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিকভাবে নানা বৈষম্য ও জুলুমের শিকার হয়ে আসছিলেন। তাই মনে প্রাণে স্বৈরাচার হাসিনাকে হটিয়ে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার চিন্তায় ছিলেন। ৪ আগস্ট সকাল থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত আন্দোলনের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন তিনি। ৫ আগস্ট সকালবেলায় পরিবারের জন্য নাস্তা কিনে আনেন ও দুপুরের খাবারের জন্য বাজার করে দিয়ে যান। স্বৈরাচার পতনের খবর পেয়ে উল্লসিত জনতা বিজয় মিছিলে অংশ নেয়। শাহিনেরাও ছিলেন সেই মিছিলে। কিন্তু যাত্রাবাড়ী থানার সামনে যেতেই পুলিশী আক্রমণের সম্মুখীন তারা। তখনও পুলিশ বাহিনী স্বৈরাচারের পক্ষ হয়ে বর্বর আক্রমণ চালায়। তাদের গুলির আঘাতে অনেক মানুষ আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকে। পরবর্তীতে কিছু মানুষ তাদের হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করে। শহীদ শাহিনের ছোট দুই ভাইও তখন আহতদের রিকশায় তুলছিলেন হাসপাতালে নেয়ার জন্য। শহীদ শাহিনের সারা শরীর রক্তে রঞ্জিত থাকায় তৎক্ষণাৎ নিজের ভাইকেও চিনতে পারেননি তারা। রিকশা অনেকটা দূরে চলে যাওয়ার পর তাদের খেয়াল হলো তাদের ভাইকে তো তারা রিকশায় উঠিয়ে দিলেন। কিন্তু ততক্ষণে রিকশা চোখের আড়াল হয়ে গেছে। দুই ভাই সাত-পাঁচ না ভেবে ঢাকা মেডিকেলে চলে যান। সেখানে গিয়ে এ বেড থেকে ওই বেডে নিজের ভাইকে খুঁজে ফিরছিলেন তারা। কিন্তু কোথাও খুঁজে পেলেন না নিজের ভাইকে। পরে খোঁজ নিতে মর্গের সামনে যেতেই দেখতে পান তাদের ভাইয়ের নিথর দেহ পড়ে আছে সেখানে। ডুকরে কেঁদে ওঠেন তারা। এ দৃশ্য দেখে কেউ কাউকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। অবশেষে একটি এম্বুলেন্স ভাড়া করে নিজ গ্রামে নিয়ে আসেন। শাহিনের পরিবার এতটাই দরিদ্র ছিল যে তাকে কবর দেওয়ার মতো জায়গাটুকু ছিল না তাদের। তাই গ্রামের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়ের অনুভূতি স্ত্রীর অনুভূতি: আমি আমার স্বামীকে অনেক ভালোবাসি। সেও আমাকে অনেক ভালোবাসত। ছোট থেকে আমার অনেক কষ্ট কিন্তু উনাকে পেয়ে আমি সব কষ্ট ভুলে গেছি। সে কখনো আমাকে বাহিরে বের হতে দিত না। সব সময় আমাকে আগলে রাখার চেষ্টা করতো। এখন আর আগলে রাখবে কে। কে আমাকে ভালোবাসবে। উনি ছাড়া আমার জীবন অন্ধকার। দোয়া করি উনি ওপারে ভালো থাকুক। আল্লাহ উনাকে জান্নাত দান করুন। নিকটাত্মীয় চাচা মো: সাদেকের অনুভূতি: আমার ভাইয়ের ছেলে অত্যন্ত মিশুক ছিলো। তারে আল্লাহ ফুটফুটে দুইটা বাচ্চা দিয়েছেন। আল্লাহ এত অল্প বয়সে নিয়ে যাবে কল্পনা করা যায়না। ওর প্রতি আমাদের অনেক টান আছে। আমরা মরণের আগ পর্যন্ত ওর সন্তানদের দেখে যাবো। আমার ছেলে বউ ওদের খুব আদর করে। তারা এদের সকল খরচ বহন করবে ইনশাআল্লাহ। তবে যারা আমার নাতি নাতিনদের ক্ষতি করেছে আল্লাহ তাদের বিচার করুক। আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে জান্নাত দান করেন। শহীদ পরিবারকে সাহায্যের প্রস্তাবনা প্রস্তাবনা-১: ছোট ২টি বাচ্চার দেখাশুনার ভার নেয়া প্রস্তাবনা-২: পরিবারকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা একনজরে শহীদ পরিচিতি নাম : মো: শাহিন, পেশা: পিকআপ চালক জন্ম তারিখ : ১২-০৫-১৯৮৮ পিতা : মো: সাজেদ, পেশা: ভ্যান ড্রাইভার মাতা : রিনা বেগম, পেশা: গৃহিণী পরিবারের সদস্য : ১. স্ত্রী: স্বপ্না বেগম, পেশা: গৃহিণী : ২. ছেলে: জোনায়েদ আব্দুল্লাহ, বয়স: ৬ মাস : ৭. মেয়ে: জান্নাতুল ফেরদৌস, বয়স: ৪ বছর স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: দক্ষিণ জয়নগর নুরুমিয়ার হাট, থানা: দৌলতখান, জেলা: ভোলা বর্তমান ঠিকানা : এলাকা: চন্দনকোটা বিদ্যুৎ ভিলা, থানা: যাত্রাবাড়ী, জেলা: ঢাকা আহত হওয়ার স্থান ও তারিখ : যাত্রাবাড়ী, ৫ আগস্ট, ২০২৪ আক্রমণকারী : স্বৈরাচারী হাসিনার ঘাতক পুলিশ নিহত হওয়ার স্থান ও তারিখ : যাত্রাবাড়ী, ৫ আগস্ট ২০২৪

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: শাহিন
Image of মো: শাহিন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: নয়ন

হাফেজ মো: জসিম উদ্দিন

মো: রাসেল

মো: ইমরান হোসেন

মো: রাকিব হোসাইন

রাকিব হাওলাদার

মো: সাগর হাওলাদার

মো: ইয়াসিন

মো: আতিকুল ইসলাম

মো: আবুল বাশার

মো: আরিফ

মো: জসিম

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo