Image of সাইদুল ইসলাম

নাম: সাইদুল ইসলাম

জন্ম তারিখ: ১০ মার্চ, ২০১০

শহীদ হওয়ার তারিখ: ২১ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: বরিশাল

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : রিকশাচালক, শাহাদাতের স্থান : মৌচাক, সানারপাড়, সাইনবোর্ড

শহীদের জীবনী

“নামাজের দিকে এসো কল্যাণের দিকে এসো” মুয়াজ্জিনের আযানের ধ্বনি শুনে তড়িঘড়ি তৈরি হয়ে গেল সাইদুল। জোহরের সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে গিয়ে উপস্থিত। তাও আবার সামনের সারিতে। আর অগ্রগামীরা তো অগ্রগামীই। কোরআনের সেই আয়াতের সত্যতা প্রমাণ করে অগ্রগামীদের কাতারে শামিল হয়ে গেল সাইদুল।শহীদ পরিচিতি শীতের পাতা ঝরা রুক্ষতার অবসান ঘটিয়ে বসন্ত উপহার দেয় ফুলের ডালি। তেমনি সাইদুল যেন স্রষ্টার পক্ষ থেকে তার পরিবারের জন্য ছিল বসন্তের ফুলের ডালি। যে সমাজে কন্যারা নিজেদের অধিকারটুকুই আদায় করতে পারেনা সে সমাজে কি আর মেয়েরা সংসারের হাল ধরতে পারে? তাইতো তিন কন্যার পর সাইদুলকে দেখে দরিদ্র বাবা মার মনের কোনে আশা জেগেছিল, তাদের দুঃখের দিন বুঝি এবার ঘুচবে। ছেলে তাদের সংসারের হাল ধরবে। সেই সংসারের হালে হাত রাখার আগেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিল সাইদুল। শহীদ সাইদুল ২০১০ সালের ১০ মার্চ ভোলা জেলার লালমোহন থানার অন্তর্গত কালনা ইউনিয়নের গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিক আর্থিক অবস্থা সাইদুল ছিলেন খুবই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার বাবা প্রতিবন্ধী। তবুও সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে ঘরে বসে থাকতে পারেন না। দিনমজুরি করে অল্প কিছু অর্থ পান যেটা দিয়ে সংসারের কোন প্রয়োজনই তেমন মিটাতে পারেন না। আর থাকার জন্য তাদের রয়েছে অতিজীর্ণ একটি মাত্র টিনের ঘর। বন্যার কারণে তাও এখন ভগ্নপ্রায়। সাইদুলের চার বোনের মধ্যে একজন প্রতিবন্ধী ও একজন দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। বড় দুই বোনের বিয়ে হলেও সেখানে নেই কোন শান্তির ছায়া। বাধ্য হয়ে তারাও গার্মেন্টসে শ্রমিক হিসেবে কাজ নেয়। অসহায় বাবার সংসারটাকে একটু এগিয়ে নেয়ার বৃথা চেষ্টারত বড় দুই বোন। যেভাবে শহীদ হলেন পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া সাইদুল তার বড় বোনকে দেখতে ঢাকায় যায়। আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল নতুন একজোড়া পোশাক ও কিছু বই কেনার। নতুন দিনের স্বপ্ন ছিল মনে। কিন্তু তার স্বপ্ন ভেঙে গেল ২১ জুলাই ২০২৪। সেদিন দুপুর জোহরের আযান শুনে দ্রুত তৈরি হয়ে গেল সালাতের জন্য। বোনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ল নিকটবর্তী মসজিদের উদ্দেশ্যে। সবার সামনের কাতারে দাঁড়িয়ে ছিল সাইদুল। ফলে ইমাম সাহেবের সাথে তার দেখা হয় মসজিদে। নামাজ শেষে যখন সে বাসায় ফিরছিল তখনই আক্রমণ করে ঘাতক পুলিশ । একটি গুলি সাইদুলের কপাল ভেদ করে ছুটে যায় মাথার পিছনের দিক দিয়ে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। রক্তে ভিজে যায় তার পবিত্র দেহ। কিছুক্ষণ এভাবে রাস্তায় পড়ে থাকেন তিনি। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা সরে গেলে একজন রিকশাওয়ালা দ্রুত তাকে নিজে রিকশায় উঠিয়ে ছুটে যান হাসপাতালে। তখনও টিকটিক শব্দের স্পন্দন শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, কয়েকটা হাসপাতালে ঘুরাঘুরি করেও তাকে ভর্তি করানোর সুযোগ পায়নি সে রিকশাওয়ালা। ততক্ষণে সাইদুলের পবিত্র আত্মা তার রবের সান্নিধ্যে চলে গেছে। রিকশাওয়ালা সাইদুলের পকেটে থাকা মোবাইল থেকে নম্বর নিয়ে তার ছোট খালুকে জানালে তিনি সাইদুলের পরিবারের সাথে কথা বলেন। পরবর্তীতে তার বড় বোন তার শহীদ হওয়ার খবর জানতে পারেন। সাইদুলের লাশ রাখা হয়েছিল মসজিদের সামনে। লাশ দেখে ইমাম সাহেব ও কয়েকজন মুসল্লী হতভম্ব হয়ে যান। কারণ এই কিছুক্ষণ আগেই তো সাইদুল তাদের সাথে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেছেন। তার বড়বোন খবর পেয়ে দিগ্বিদিক ছুটতে থাকেন একমাত্র ভাইয়ের খোঁজে। মসজিদের সামনে এসে যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। একি! এ যে তার সোনার টুকরা ভাই শহীদ হয়েছে। এজন্যই বুঝি একেবারে সেজেগুজে রবের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল। অটোতে করে লাশ বাসার সামনে আনার পর পুলিশ এসে হাজির হয় সেখানে এবং সাইদুলের লাশ বাড়িতে নেয়ার জন্য সুযোগ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তার বোন জোর করতে থাকলে তাকে পুলিশ গুলি করার হুমকি দেয়। হুমকির মুখে তার বোন বলেন, প্রয়োজনে ভাই বোন একসাথে মরবো তবুও ভাইয়ের লাশ রেখে যাব না। আমার মাকে আমি কি দিয়ে সান্ত্বনা দিব? অনেক বাক বিতণ্ডার পর পুলিশ বাধ্য হয় লাশ দিতে। কিন্তু ভোলা পর্যন্ত ভাইয়ের লাশ নেওয়ার খরচ ও যে সে বহন করতে পারবে না। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় এম্বুল্যান্স এ করে একমাত্র ভাইয়ের লাশ নিয়ে যান বাড়িতে। পরের দিন সকালে সাইদুল সমাহিত হন নিজ গ্রামে শহীদ সম্পর্কে বন্ধু/নিকটাত্মীয়ের অনুভূতি মা হাসিনা বেগম বলেন, আমার একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে আমার কলিজা ছটপট করে। আজ এক মাস আমি না খাওয়া। আমার ৪ মেয়েসহ খুব অসহায়ভাবে আছি আমরা। দিন রাত আমার ছেলের জন্য কাঁদি। ঘটনার দিন ফোন করে ছেলেকে বলেছি, বাবা মেইন রোডে যাবা না। কেন গেল? ছেলে জানি না। আমি ঋণগ্রস্থ; ২ লাখ টাকার ঋণের বোঝা মাথায়। আমরা কোথাও বের হইনা। চাচা আবু কালাম বলেন, ওরা ৫-৬ জন গুলি খায়। অটো দিয়া বাসার সামনে আসলে মৃত লাশটি বোন নিতে চাইলে খুনি পুলিশ বাধা দেয়। আমার ভাই প্যারালাইসিস রোগী। কামাই নাই খুব কষ্টে চলছে জীবন। শহীদ পরিবারকে সহযোগিতার প্রস্তাবনা ১.বাবার কর্মসংস্থান করে দেয়া ২.ঘর নির্মাণ করে দেয়া ৩.প্রতিবন্ধী বোনের পুনর্বাসন প্রয়োজন এক নজরে শহীদ পরিচিতি পুরো নাম : সাইদুল ইসলাম জন্মতারিখ : ১০/০৩/২০১০ পিতার নাম : আকবর বয়স : ৫০ পেশা : রিকশাচালক মাতার নাম : হাসিনা বেগম বয়স : ৪৬ পেশা : গৃহিণী ঠিকানা : গ্রাম: ১ নং ওয়ার্ড লেজ ছকিনা, ইউনিয়ন: কালমা, থানা: লালমোহন, জেলা: ভোলা পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৬ জন বোন : ১. রেহানা-২২ বছর-গার্মেন্টস কর্মী : ২. সুমাইয়া -২০ বছর -গার্মেন্টস কর্মী : ৩. সোনিয়া-১৬ বছর-প্রতিবন্ধী : ৪. সাদিয়া-১০ বছর-ছাত্রী আহত হওয়ার স্থান ও তারিখ : মৌচাক,সানারপাড়, সাইনবোর্ড ২১/০৭/২০২৪ আক্রমণকারী : স্বৈরাচারী হাসিনার ঘাতক পুলিশ নিহত হওয়ার স্থান ও তারিখ : মৌচাক, সানারপাড়, সাইনবোর্ড ২১/০৭/২০২৪ সমাধি : নিজ গ্রামে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of সাইদুল ইসলাম
Image of সাইদুল ইসলাম
Image of সাইদুল ইসলাম

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

 মোসা: লিজা

মো: সাইফুল ইসলাম

মো: রাকিব বেপারী

মো: রিয়াজুল ইসলাম

মো: শাকিল

মো. মনির

মো: জসিম

মো: আতিকুল ইসলাম

মো: মিলন

মো: সাগর গাজী

মো: আমিনুল ইসলাম আমিন

এম. ডি. ইলিয়াস হোসাইন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo