জন্ম তারিখ: ২ জুলাই, ২০০২
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: বরিশাল
পেশা : টাইলস মিস্ত্রি, শাহাদাতের স্থান :মাটির টোলা, ঢাকা
স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গড়ে ওঠে সরকার পতনের আন্দোলন। হাজার হাজার মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়। ১৬ জুলাই আবু সাঈদের শাহাদাতের মাধ্যমে আন্দোলনে মৃত্যুর মিছিল শুরু হলে পরদিন ১৭ জুলাই আন্দোলন তুঙ্গে উঠে। তারপর ১৮ তারিখে দেশের বিভিন্ন জেলায় আন্দোলন দমন করতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ হাতে অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে ছাত্রদের উপর গুলি চালায় কিন্তু তাতেও তারা থেমে থাকেনি সেই দিন রাত থেকে ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং দেশব্যাপী কারফিউ জারি করা হয়। ডিজিটাল ক্র্যাকডাউনের মাধ্যমে ৫ দিন নেটওয়ার্ক বন্ধ রেখে সরকারি পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সাধারণ মানুষের উপর হামলা চালায়। অনেক লাশ গুম করা হয়, লাশের স্তুপে আগুন ধরিয়ে লাশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সর্বশেষ ছাত্রদের দাবি মেনে না নিয়ে আরো বেশি আঘাত হানার চেষ্টা করে ততকালীন অবৈধ হাসিনা সরকার। আন্দোলনের প্রধান সমন্ময়কদের গুম করা হয়, ডিবি অফিসে তুলে নিয়ে রাতভর করা হয় আমানুষিক নির্যাতন, অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আন্দোলন শেষ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে ছলনায় পথ ভুলেনা ছাত্রসমাজ। ছাত্ররা রাজপথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকার চেষ্টা করে, অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়। ৯ দফা হয়ে উঠে ১ দফা। বিক্ষুদ্ধ স্লোগানে ফেটে পড়ে দেশ, ‘তোর কোটা তুই নে, আমার ভাই ফিরিয়ে দে লাশের ভিতর জান দে, নইলে গদি ছাইড়া দে এক দফা এক দাবি, হাসিনা তুই কবে যাবি আমার ভাই মরলো কেন, খুনি হাসিনা জবাব চাই’ অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠে দেশ। অবশেষে সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচির ঘোষণা আসে। মো: রনি অফুরন্ত স্বপ্ন নিয়ে গ্রাম থেকে রাজধানী ঢাকায় পাড়ি দেন। অনেকের মত রনিরও স্বপ্ন ছিলো কাজ করে টাকা পয়সা আয় করবেন। পিতামাতার কষ্ট লাঘব করবেন। মো: রনি ঢাকায় টাইলস মিস্ত্রির কাজ করতেন। প্রতিদিনের মত ৪ তারিখ সকালে কাজের জন্য বাসা থেকে বের হয়ে যান। দুপুরের দিকে কাজ শেষ করে খাবার খাওয়ার জন্য বের হয়ে হোটেলের দিকে যাওয়ার পথে হটাৎ করে পুলিশ এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। পুলিশের বন্দুক থেকে ধেয়ে আসা বুলেট রনির কোমড়ের পিছন দিয়ে ঢুকে সামনে দিয়ে বের হয়ে যায়। রনি রক্তাক্ত হয়ে সাথে সাথে রাস্তার উপর পরে যান। পাশে থাকা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্ররা তাকে ধরে ভ্যানগাড়ীতে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে যাওয়ার পথেই রনির জীবনের ইতি ঘটে যায়। তিনি শেষ নিশ্বাষ ত্যাগ করেন। ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের একজন ডাক্তার তার পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে নাম্বার নিয়ে তার বাড়িতে জানান, যে আপনার ছেলের গুলি লেগে মারা গেছে। এই খবর শুনে বাবা বেহুঁশ হয়ে যান। পরদিন ৫ তারিখ সকাল ৮ টার দিকে রনির মরদেহ এম্বুলেন্সে করে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। বাড়িতে লাশ আসার সাথে সাথে এলাকায় কান্নার রোল পরে যায়। রনির পরিবার সহ এলাকাবাসী আর্তনাদে গ্রামের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। হাজার হাজার মুসল্লির উপস্থিতিতে জানাযা শেষে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। শহীদের নিকটাত্মীয়ের বক্তব্য ১. বড় ভাই রাকিবের বক্তব্যঃ আমরা দুই ভাই ছিলাম। এক ভাই শহীদ হয়েছে। আমি তার কাছে ক্ষমা চাইতে পারলে ভালো লাগতো। অনেক কষ্ট লাগে ভাইয়ের জন্য। দোয়া করি, আল্লাহ যেন তাকে জান্নাত দেন। ২. ছোট বোন সুমির অনুভূতিঃ আমার ভায়ের জন্য আমার অনেক কষ্ট লাগে। ভাই আমাদের অনেক খেয়াল রাখতো। ভাই মরে যাওয়াতে অনেক ক্ষত জমে আছে এই ক্ষত কিভাবে দুর করবো? ৩. দাদা হাশেম বলেনঃ নাতিদের থাকার জন্য জমি বিক্রি করে ঘর করে দিয়ে দিছি। নাতি যাওয়ায় এখন এই ঘরে কে থাকবে। নাতি বড় হইছে এখন কর্ম করতেছে, কামাই রুজি শুরু করছে। এখন আল্লাহ নিয়ে গেছে। ৪. মা মাইনুর বেগম বলেনঃ ছেলের কথা মনে পরলেই আমার বুক শুকিয়ে যায়, ছেলের এমন মৃত্যু হবে কল্পনা করতে পারি নাই। আমার ২ ছেলে, ছোট ছেলের বুদ্ধি একটু বেশি। আমার আর কিছু চাওয়া নেই আমার বাবাকে আল্লাহ যেন শহীদি মৃত্যু দান করে। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা মোঃ রনির পরিবারের সদস্য তার বাবা হারুন খান, মা মাইনুর বেগম ও দশম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত ছোট বোন নুপুর (১৭)। ছোট বোনের পড়ালেখার খরচ সহ সংসারের যাবতীয় চাহিদা গুলো তিনি যথাসম্ভব পুরনের চেষ্টা করতেন। মোঃ রনি শহীদ হওয়ার পর সংসার পরিচালনা করার মতো বর্তমানে কেউ না থাকায় পরিবারের এই করুন অবস্থায় বাবা বৃদ্ধ হয়েও অভাবের তাড়নায় কাজে বের হয়েছেন। তার মৃত্যুর পর পরিবারের জন্য অর্থ উপার্জন করা খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে। প্রস্তাবনা ১. ছোট বোনের পড়াশোনার খরচ ও তার বিয়ের যাবতীয় ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ২. পরিবারের ভরণ পোষনের জন্য নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। একনজরে শহীদ রনি নাম : মোহাম্মদ রনি জন্ম তারিখ : ০২-০৭-২০০২ পিতা : মোঃ হারুন খান মাতা : মাইনুর বেগম স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: দক্ষিন বালিয়া, ইউনিয়ন: দক্ষিণ দিঘলদী, থানা: ভোলা সদর, জেলা: ভোলা বৈবাহিক অবস্থা : অবিবাহিত পেশা : টাইলস মিস্ত্রি ঘটনার স্থান : মাটির টোলা, ঢাকা আহত হওয়ার সময়কাল : ০৪/০৮/২০২৪, দুপুর ২টা শাহাদাতের সময়কাল : ০৪/০৮/২০২৪, বিকাল ৫টা আঘাতের ধরন : তলপেটে কোমরের নিচে গুলি আক্রমণকারী : স্বৈরাচারী হাসিনার ঘাতক পুলিশের শহীদের কবরের অবস্থান : গ্রামের বাড়িতে