Image of  মোঃ শামীম হাওলাদার

নাম: মোঃ শামীম হাওলাদার

জন্ম তারিখ: ৮ জানুয়ারি, ১৯৮৬

শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: বরিশাল

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ইলেকট্রিক মিস্ত্রি, শাহাদাতের স্থান :সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, ঢাকা

শহীদের জীবনী

শহীদ শামীম হাওলাদার ১৯৮৬ সালে ভোলা জেলার গোপ্তমুন্সি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আব্দুল মান্নান হাওলাদার এবং মা বিউটি বেগম। তিনি তার বাবাকে হারিয়ে বাবার আদর্শকে জীবিত রাখার চেষ্টা করেন প্রতিনিয়ত। বাবার জন্য অনেক কষ্ট হয় তাই মাকে বাবার শ্রদ্ধার জায়গায় স্থান দিয়ে মাতৃস্নেহে সবসময় থাকতে পছন্দ করেন। মাও তা স্নেহের ছেলে শামীমকে অনেক বেশী ভালোবাসেন। শামীম ছোট বেলা থেকেই নম্র ভদ্র এবং একজন আদর্শ মানুষ ছিলেন। পেশায় তিনি একজন ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রিী ছিলেন এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। শহীদ শামীম তাঁর পেশাগত আয় দিয়ে পরিবারের ভাইবোনদের সকলকে আগলে রেখে বড় করেন। তাঁর তিন ছেলে। ছেলেদের নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন ছিল তাঁর। লেখাপড়া শিখিয়ে ছেলেদের মানুষের মত মানুষ করবে। যেন এদেশের একজন সৎ দক্ষ এবং দেশপ্রেমিক নাগরিক হতে পারে। পরিবারের প্রতি তার যেমন আন্তরিকতা ছিলো তেমনি দেশের প্রতি তার ভালোবাসা কোন অংশে ঘাটতি ছিলোনা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সর্বদা ছিলেন সোচ্চার। শহীদ শামীমের শাহাদতের ঘটনা দীর্ঘ ১৫ বছর স্বৈরাচার সরকারের রোষানলে পড়তে হয়েছিলো অনেকবার। অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা দিতে হয়েছিলো তাকে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়েকরা তাদের অধিকার আদায়ে যখন সোচ্চার সরকার তাদের এই আন্দোলনকে খামখেয়ালী মনে করে এবং তিরস্কার করে বলে সব কোটা কি রাজাকারেরা পাবে? তখন আন্দোলনের গতি আরো বেড়ে যায়। চতুর্দিকে ছাত্রদের উপর অমানুষিক নির্যাতন দিনের পর দিন বেড়ে যায়। শামীম হাওলাদার ভোলা থেকে কোরবানির ঈদের পর বাড়ি থেকে ঢাকায় কর্মস্থলে আসেন। তিনি ২০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার জন্য মিছিলের দাওয়াত পেয়ে ২০ তারিখ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। চারিদিকে পুলিশ ও হেলমেট বাহিনী এলোমেলোভাবে ব্যাপক গুলি ছুড়তে থাকে। বেলা ১১ টায় তা তীব্র আকার ধারণ করে। মোহাম্মাদপুর চৌরাস্তার মোডে পুলিশের ব্যাপক গোলগুলি শুরু হয় তখন তিনি গুলিতে আহত হয় কিন্তু এই গুলি তাকে আন্দোলন থেকে পিছপা করতে পারেনি। বিকাল ৫টার দিকে আবার মানুষের অধিকারের আন্দোলন চলাকালে মুখোমুখী অবস্থানে পুলিশ এবং ছাত্র জনতার গোলাগুলিতে পুলিশগুলি করে শামীম হাওলাদারকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আন্দোলনকারী ভাইয়েরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে কর্মরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শহীদ শামীম তার পরিবারের সবার কাছে ভালো, অমায়িক মানুষ ছিলেন। পরিবারের সবার এবং সমাজের মানুষের ভাষ্যমতে শহীদ শামীমের মনে কোন হিংসা ছিলোনা। কোন রাগ ছিলোনা। কিন্তু সে অন্যায়কে কখনো প্রশ্রয় দিতোনা। অবশেষে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে বৈষম্যের অবসান ঘটাতে আন্দোলনে অংশ্রগহণ করে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। জান্নাত কামনায় সর্বস্তরের মানুষ শামীম হাওলাদারের জন্য দোয়া করেন। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়ের অনুভূতি মা বিউটি বেগম: বিয়ার দুই বছর পরে আমার ছেলে হইছে। ছেলে আমারে রাইখা চলে গেছে। ছেলের কামাই খাইলাম না। আমি মরলে আমার কবর জিয়ারত করতো। কিন্তু আগেই ছেলে চলে গেলো। সৎ বোন জরিনা: আমার ভাই, আপন ভাই থেকে বেশি ভালো বাসতো যা হইতো আমাদের এসে বলতো। এখন কে বলবে আমার ভাই কই গেল। ভাতিজা রিপন: সে আমার এক সপ্তাহর বড়। সে আমার সাথে কখনো খারাপ আচারণ করে নাই। এখন শুধু আমার তার কথা মনে পড়ে। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার বিবরণ শহীদের পিতা আব্দুল মান্নান হাওলাদার তার চার মেয়ে দুই ছেলে রেখে আল্লাহর ডাকে সাড়া দেন। এখন পরিবারে আছে শহীদ শামীম হাওলাদার তাঁর মাসহ উনার ভাই বোন ৪ জন সাথে তার স্ত্রীসহ ৩ ছেলে। মোট ৯ সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের বোঝা নিয়ে শামীম হাওলাদার উক্ত পরিবারের হাল ধরেন। ঢাকায় ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রীর কাজ করে এতো বড় সংসার শহীদ শামীম হাওলাদার যা আয় করে তা দিয়ে কোনরকম দিনাতিপাত করছেন। শামীম হাওলাদারকে হারিয়ে নিরুপায়, বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে তার মাসহ তার স্ত্রী। শামীম হাওলাদারের শাহাদাতের পরপরই তাদের সংসারের জীবন থেমে যায়। একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানকে হারিয়ে যেন সব হারিয়েছে পরিবারটি। বর্তমানে ছোট ভাই আবদুল গণি ঔষধ কোম্পানির চাকুরি করে যা পান তা দিয়ে এখন মা সহ অন্যরা খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করেন। শহীদ শামীম হাওলাদারের পিতার মৃত্যুর পর তার মাসহ পরিবারের সদস্যরা গ্রামের যে টিনের ঘরে থাকে সেখানে কোনভাবে বসবাস করাও কঠিন। শহিদ শামীম হাওলাদার এর বাবা ১০ বছর আগে মারা যান। পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি উনিই ছিলেন। শামীম হাওলাদার মারা যাওয়ার পর ৩টি সন্তান সহ পরিবারটির একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। প্রস্তাবনা-১: নিয়মিত মাসিক অনুদান। একনজরে শহীদ মোঃ শামীম হাওলাদার পূর্ণ নাম : মোঃ শামীম হাওলাদার জন্ম তারিখ : ৮-০১-১৯৮৬ জন্মস্থান : গোপ্তমুন্সি, ভোলা সদর, ভোলা পেশা : ইলেকট্রিক মিস্ত্রি বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: গোপ্তমুন্সি, ইউনিয়ন: ইলিশা, থানা: ভোলা সদর, জেলা: ভোলা স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: গোপ্তমুন্সি, ইউনিয়ন: ইলিশা, থানা: ভোলা সদর, জেলা: ভোলা পরিবার: পিতার নাম : মৃত: আব্দুল মান্নান হাওলাদার মাতার নাম : বিউটি বেগম (৫৫) গৃহিণী স্ত্রী : গৃহিণী ৩ ছেলে : ১. সালমান (৮) প্রথম শ্রেণি : ২. ইমাম মাহাদি(৫) শিশু শ্রেণি : ৩. আলী আহমেদ (৩) আঘাতকারী : আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী পুলিশ আহত হওয়ায় ও স্থান সময় : মোহাম্মদপুর চৌরাস্তা মোড়, ঢাকা ২০-০৭-২০২৪ বিকেল ৫:০০টায় মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ২০-০৭-২০২৪, বিকেল ৭টায়, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, ঢাকা জানাজা : ২১-০৭-২০২৪ সকাল ১০টায় কবরস্থান : নিজে গ্রামের পারিবারিক কবরস্থান

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of  মোঃ শামীম হাওলাদার
Image of  মোঃ শামীম হাওলাদার

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: মিজানুর রহমান

মো: ওমর ফারুক

মো: কামাল হোসেন

মো: আতিকুর রহমান

মো: এমদাদুল হক

মো: বাবলু মৃধা

মো: মিলন

মো: রাব্বি মাতব্বর (গোলাম রাব্বি)

মো: জিহাদ হোসেন

মেহেদী হাসান

আশিকুর রহমান হৃদয়

মো: রফিকুল ইসলাম

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo