জন্ম তারিখ: ১৮ জানুয়ারি, ১৯৯৫
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: বরিশাল
পেশা : কৃষক, শাহাদাতের স্থান : যাত্রাবাড়ী থানার সামনে
শহীদ মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ১৯৯৫ সালের ১৮ জানুয়ারি ভোলা জেলার চরফ্যাশন থানার নুরাবাদ ইউনিয়নের ফরিদাবাদ গ্রামে ফরাজি বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। তার বাবা আব্দুর রব ফরাজী এবং মাতা মোসাম্মৎ ফাতেমা। বাবার বয়স ৭০ এবং পেশায় একজন কৃষক এবং মায়ের বয়স ৬০ এবং তিনি একজন গৃহিণী। পরিবারের সার্বিক অবস্থা দরিদ্র পরিবারের জন্ম শহীদ হাবিবুর রহমানের বাবার কৃষি কাজের উপর নির্ভর করেই চলে তাদের ছয় ভাই বোনের সংসার। একটি মাত্র টিনের ঘর ই সকলের আশ্রয়ের স্থান। ছোটবেলা থেকেই দারির্দ্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে বড় হওয়া হাবিবের ভাই বোনদের। পেশায় গার্মেন্টস কর্মী হাবিবুর রহমান ছিলেন বিএনপির একজন একনিষ্ঠ কর্মী। তাকে হারিয়ে তার স্ত্রী ৪ বছরের শিশু সন্তানকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন। ঘটনা সংক্রান্ত বিবরণ দীর্ঘদিন ধরে চলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তখন রূপ নিয়েছিল সরকার পতনের আন্দোলনে। সে আন্দোলনের যোগ দিয়েছিল বাংলা সর্বস্তরের জনগণ। কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর থেকে শুরু করে সমাজের উঁচু স্তরের মানুষও নেমে পড়েছিল রাস্তায়। টানা ১৬ বছরের জুলুম ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তাই বাঁধভাঙ্গা জনতার ঢল নেমেছিল রাজপথে। আপামর ছাত্র জনতার দীর্ঘ বিপ্লবের ফলাফল হিসেবে ৫ আগস্ট ২০২৪ পতন ঘটে জালিম সরকারের। তাই সেদিন বিজয় উল্লাসে মেতে উঠে সারা দেশের মানুষ। সেই বিজয় মিছিলে যোগ দিয়েছিল হাবিবুর রহমান। যাত্রাবাড়ী থানার সামনে যেতে পুলিশ অতর্কিত হামলা চালায় বিজয় মিছিলে। প্রায় তিন শতাধিক মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকে। হাবিবুর রহমান ও সেই সময় গুলিবিদ্ধ হন। একটি গুলি হাবিবুর রহমান এর বুক ভেদ করে পিছন দিয়ে বের হয়ে যায়। সাথে সাথেই তিনি লুটিয়ে পড়েন রাস্তায়। বেশ কিছুক্ষণ পরে তার চাচাতো ভাই নয়ন তাকে খুঁজতে থাকে রাস্তায় পড়ে থাকা লাশগুলোর মধ্যে। হঠাৎ চোখ পড়ে রক্তে রঞ্জিত ভাইয়ের লাশের উপর। শীঘ্রই তিনি অ্যাম্বুলেন্স এ করে তার ভাইয়ের লাশ নিয়ে গ্রামে চলে যান। সেখানেই তার জানাজা ও দাফন কার্য সম্পাদন করা হয়। হাবিবুরদের ত্যাগে দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হলেও মুক্তির স্বাদ উপভোগ করতে পারেননি তারা। আল্লাহ তাদেরকে উত্তম বিনিময় দান করুন। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়ের অনুভূতি বাবা আব্দুর রব ফরাজি বলেন, আমার পুতে আমারে ১১ টার সময় কল দিয়ে আমারে আর তার মারে বলে আজকেও মিছিল আছে দোয়া কইরো মা। ছেলে চলে গেছে। যাওনের কথা আমার আগে। তার ভাইবোনরা আগে। সে তো আমার সংসার চালাইতো। বাকিদের সবার টান আছে, তাদের কোন তৌফিক নাই। আর আমার ছেলেকে আল্লায় নিয়ে গেছে। আল্লাহ আমার পুতেরে জান্নাত দান করুক। মা মোসা: ফাতেমা বলেন, আমার পুতে বলতো মা আল্লাহ ভরসা এই যালিমদের দেখে নিবো। আপনারা যা লাগবো আমারে বইলেন। কখনো উপবাস থাইকেননা, কখনো কষ্ট কইরেন না। বড় ভাই মো. আলি বলেন, আমাদের সবার ছোট ছিলো হাবিব। আমরা সবাই আছি আর ছোট ভাই শুয়ে রইছে কবরে। আমাদের খোজখবর রাখতো কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আল্লাহ আমাদের কাছ থেকে নিয়ে গেল। শহীদের পরিবারকে সহযোগিতার প্রস্তাবনা প্রস্তাবনা-১: ছোট ছেলেকে সহাযতা করা। প্রস্তাবনা-২: শহীদ পরিবারকে এককালীন আর্থিক অনুদান ও নিয়মিত মাসিক অনুদান প্রদান। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যসমূহ পুরো নাম : শহীদ হাবিবুর রহমান, জন্ম: ১৮ জানুয়ারি ১৯৯৫ পিতা : আব্দুর রব ফরাজি, বয়স : ৭০ বছর মাতা : মোসা: ফাতেমা, পেশা: গৃহিণী স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: ফরিদাবাদ, ইউনিয়ন: নুরাবাদ, থানা: চরফ্যাশন, জেলা: ভোলা পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ১. পিতা : ২. মাতা : ৩. স্ত্রী : ৪. ছেলে (সালমান, বয়স: ৪ বছর) : ৫. দুই ভাই, ৩ বোন আহত হওয়ার স্থান ও তারিখ : যাত্রাবাড়ী থানার সামনে, ৫ আগস্ট ২০২৪ আক্রমণকারী : স্বৈরাচারী হাসিনার ঘাতক পুলিশ নিহত হওয়ার স্থান ও তারিখ : যাত্রাবাড়ী থানার সামনে, ৫ আগস্ট ২০২৪ সমাধি : নিজ গ্রামে