Image of মো: শিহাব উদ্দিন

নাম: মো: শিহাব উদ্দিন

জন্ম তারিখ: ৪ জানুয়ারি, ১৯৮৮

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: বরিশাল

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : শিক্ষক, শাহাদাতের স্থান : যাত্রাবাড়ী

শহীদের জীবনী

১৯৮৮ সালের ৪ জানুয়ারি ভোলার লালমোহন উপজেলায় জন্মগ্রহণ করে শহীদ শিহাব উদ্দিন। পিতা ইব্রাহিম খলিল (৬৬) এবং মাতা ইয়ানুর বেগমের ১ম সন্তান শহীদ শিহাব উদ্দিন। এছাড়াও তাদের সংসারে আছে আরো দুই ছেলে লিটন আর আবুল বাশার। শহীদ শিহাব উদ্দিন পেশায় একজন শিক্ষক। শিক্ষকতা করতেন কওমি মাদ্রাসায়। তার বাকি দুই ভাই কৃষিকাজ করেন। শহীদের পিতা ইব্রাহিম খলিল তিনি ছিলেন একজন কৃষক। কৃষিকাজ করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট পরিবার নিয়ে তিনি কোনরকম জীবন যাপন করতেন। এরই মাঝে এক ভাই প্রতিবন্ধি। আশার দিক ছিলো পুরো পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন শহীদ শিহাব উদ্দীন। যেমন ছিলো শহীদ শিহাব উদ্দিনের জীবন শিহাব উদ্দিন ছোট বেলা থেকেই নম্র, ভদ্র এবং একজন আদর্শ মানুষ ছিলেন। তিনি হাটহাজারী দারুল উলুম মাদরাসা থেকে ইফতা বিভাগ পড়াশুনা করে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। তার পিতা ইব্রাহিম খলির একজন কৃষক ছিলেন মা ইয়ানুর বেগম মারা যায় অনেক আগেই। পেশাগতভাবে শহীদ শিহাব শিক্ষক ছিলেন এবং বেফাক বোর্ডে চাকুরী করতেন। শহীদ শিহাব তাঁর পেশাগত আয় দিয়ে পরিবারের ভাইবোনদের সকলকে আগলে রেখে বড় করেন। পরিবারের প্রতি তার যেমন আন্তরিকতা ছিলো তেমনি দেশপ্রেম তাকে অন্যায়ের সাথে মাথানত করতে দেয়নি। শাহাদাতের ঘটনা কোটা সংস্কারের উদ্দেশ্যে শুরু হওয়া ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলন জুলাইয়ের মাঝাঝাঝি থেকে রূপ নিতে থাকে সহিংসতায়। চারিদিকে আনদোলনকারীদের উপর আসতে থাকে নৃশংস আক্রমণ। সরকারের পোষ্য ছাত্রলীগ নামের গুণ্ডাবাহিনী দেশের নানা প্রান্তে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী জনতার উপর অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরে। এই গুণ্ডাবাহিনীকে সর্বাত্মক নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছিলো দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যেখানেই ছাত্ররা শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলনে নেমেছে সেখানেই এই সন্ত্রাসীরা রণক্ষেত্রে পরিণত করছিলো। যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া এলাকা এসময়ে ভয়াবহ রূপ নেয়। দিন যত যাচ্ছিলো এখানে আন্দোলনকারীদের নিহত হওয়ার সংখ্যাটা ততই বাড়ছিলো। আর গুরুতর আহত হওয়ার সংখ্যাটার কোনো হিসাব ছিলো না। ১৯ জুলাই ২০২৪ বৃহস্পতিবার ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ চলাবস্থায় শহীদ শিহাব বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। সারা ঢাকা জুড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে সবাই আন্দোলনে বের হয়। একদিকে ছাত্র জনতার সাথে কওমী ছাত্ররা অন্যদিকে পুলিশ, বিজিবি, ছাত্রলীগের সাথে পুলিশের গোলাগুলি আরো বেড়ে যায়। চারিদিকে পুলিশ ও হেলমেট বাহিনী এলোমেলোভাবে ব্যাপক গুলি ছুড়তে থাকে। বেলা ১১ টায় তা তীব্র আকার ধারণ করে। ছাত্রদের সাথে শহীদ শিহাবও আন্দোলনে যোগ দেয় এবং মাদরাসার ছাঁদে অবস্থান করে। হঠাৎ পুলিশের গুলি শিহাবের মাথায় বিদ্ধ হয়। সাথে সাথে শিক্ষক শিহাব উদ্দিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। শহীদ শিহাব তার পরিবারের সবার কাছে ভালো, অমায়িক মানুষ ছিলেন। পরিবারের সবার এবং সমাজের মানুষের ভাষ্যমতে শহীদ শিহাবের মনে কোন হিংসা ছিলোনা। কোন রাগ ছিলোনা। কিন্তু সে অন্যায়কে কখনো প্রশ্রয় দিতোনা। অবশেষে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে বৈষম্যের অবসান ঘটাতে আন্দোলনে অংশ্রগহণ করে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করে। শহীদ সম্পর্কে নিকটজনদের কথা শিহাব একজন মেধাবি ছাত্র ছিল। নম্র ও ভদ্র। তাকে তার ১ম স্ত্রী তালাক দিয়ে চলে গেছে। সে একজন আলেম ও দ্বীনি দায়িত্বশীল। -মোঃ মোজাম্মেল (চাচাতো ভাই ) সে দিন পুলিশের গুলিতে আমার ছেলে শহীদ হইছে শুনে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। এরপর রাত ১ টার দিকে আমার ছেলের লাশ নিয়ে আমার বাড়ীতে এসেছে। ছেলেকে হারিয়ে এখনও আমি প্রায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। আমরা নিরুপায়। আল্লাহর কাছে এর বিচার চাই। -বাবা ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ (৬৬) আমার ভাই একজন ভালো মানুষ ছিলো। মৃত্যুর খবর শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। প্রতি মাসে ভাই আমার জন্য ২/৩ হাজার করে টাকা দিত। এখন আমরা আমাদের একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে নিরুপায়। -ছোট ভাই মোঃ লিটন (২২) পরিবারের বর্তমান অবস্থা একদিকে শহীদ শিহাবের শিক্ষকতার সামান্য উপার্জন অন্যদিকে পরিবারে প্রতিবন্ধি ভাইসহ অন্যান্য সদস্যদের ভালোভাবে তিনবেলা খাবার যোগান দিতে কষ্টকর হয়ে যেত। মাস শেষে সবাই শহীদ শিহাবের দিকে তাকিয়ে থাকতো কখন টাকা পাঠাবে, ঘরের বাজার করবে এই নিয়ে অপেক্ষায় থাকতো। এইভাবে একটি নি:স্ব পরিবারে ১০ লক্ষ টাকা ঋণ হয়ে যায়। শহীদ শিহাব(৩৮) এই বয়সে ভঙ্গুর পরিবারের হাল ধরতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েছে। যা আজ পরিবারের কাছে স্মৃতিতে অম্লান। সহযোগিতা প্রস্তাবনা প্রস্তাবনা-১: নির্মানাধীন ঘরের বাকি কাজ করার প্রয়োজন। প্রস্তাবনা-২: অটো গাড়ি বা দোকান ব্যবসার ব্যবস্থা করে দিলে ভালো হয়। প্রস্তাবনা-৩: কিছু জমি কিনে দিলে নিয়মিত আয় হবে। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যসমূহ নাম : শিহাব উদ্দিন পেশা : শিক্ষক জন্ম তারিখ : ৪ জানুয়ারি, ১৯৮৮ স্থায়ী ঠিকানা : থানা/উপজেলা: লালমোহন জেলা: ভোলা পিতা : ইবরাহীম খলিল মাতা : ইয়ানুর বেগম ভাইবোনের বিবরণ : ৩ জন আক্রমণকারী : স্বৈরাচারী হাসিনার ঘাতক পুলিশ শাহাদাতের দিনক্ষণ : ১৯ জুলাই ২০২৪, শুক্রবার, বেলা ১১ টা শাহাদাত বরণের স্থান : যাত্রাবাড়ী দাফন করা হয় : নিজ বাড়ি

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: শিহাব উদ্দিন
Image of মো: শিহাব উদ্দিন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: ইমরান হোসেন

মো: সজিব

মো: ইফতি আব্দুল্লাহ

মো: শাওন শিকদার

মো: রাকিব হোসাইন

মো: রফিকুল ইসলাম

মো: আবু রায়হান

মো: মহিউদ্দিন

মো: এমদাদুল হক

মো: বাবলু মৃধা

মো: লিটন

মো: শাকিল

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo