জন্ম তারিখ: ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০০২
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: খুলনা
পেশা : ছাত্র, সরকারি এমএম কলেজ যশোর। শাহাদাতের স্থান : চিত্রার মোড় জাবির হোটেল।
"আমি যদি মারা যাই তাহলে আমি শহীদ হব। বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হবে।" শহীদ রোকনুজ্জামান রোকন ২০০২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি যশোর জেলার বালিয়া ভেকুটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা জনাব জাহাঙ্গীর আলম পেশায় একজন রংমিস্ত্রি। তার মা মোসা: রোজিনা বেগম একজন গৃহিণী। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৪ জন। তার ছোট ভাই নাজমুল হাসান দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। পিতার আয়েই সংসার চলত। শহীদ রোকনুজ্জামান বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে স্বৈরাচারের নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার। ৫ আগস্ট ২০২৪ আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যশোরের চিত্রার মোড়ের জাবের হোটেলে অগ্নিকাণ্ড ঘটায়। কৌশলে সাধারণ মানুষদের ভিতরে প্রবেশ করিয়ে হত্যা করে। সেখানে আটকা পড়েন রোকনুজ্জামান। আগুনে দগ্ধ হয়ে শহীদ হন রোকনুজ্জামান। বিস্তারিত ঘটনা ৫ আগস্ট ২০২৪ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক সোনালি দিন। এদিন রচিত হয় এক নতুন ইতিহাস। আর এ ইতিহাসের রুপকার সাধারণ ছাত্র-জনতা। রক্ত দিয়ে তারা এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। এদিন দেশ ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্ত হয়। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার এই দেশের মানুষকে সব ধরনের মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখে। সেই ক্ষোভ তিলে তিলে জমা হতে থাকে জনগনের মনে। তারই প্রেক্ষিতে জুলাই মাসজুড়ে চলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একপর্যায়ে রুপ নেয় সরকার পতনের আন্দোলনে। এই আন্দোলনের সফলতার আসে ৫ আগস্ট ২০২৪। এই সফলতার পিছনে আছে অসংখ্য মানুষের আত্মত্যাগ, অসহায় মানুষের আর্তনাদ, স্বজন হারানোর বেদনা। জীবন দিয়েছেন কতশত মানুষ। হাত পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন আরও সহস্রাধিক। তেমনি যশোর এমএম কলেজের ছাত্র রোকনুজ্জামান রাকিবও আন্দোলনের শুরু থেকেই সোচ্চার ছিলেন। লাগাতার আন্দোলনে রাজপথে থেকে লড়াই করেছেন বৈষম্যের বিরুদ্ধে। ৫ই আগস্ট আন্দোলনের জন্য বের হওয়ার পূর্বে তার মা তাকে কারফিউ এর কারনে বের হতে বাঁধা প্রদান করেন। তিনি তখন তার মাকে বলেন, "দেখো মা এতদিন ধরে আমাদের ছাত্র ভাইয়েরা সবাই একসাথে আন্দোলন করছে। আজকে কোনো একটা সমাধান হবেই ইনশাআল্লাহ। আমরা না গেলে তো হবে না।" ৫ আগস্ট দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের সংবাদ শুনে শহীদ রোকনুজ্জামান বিজয় মিছিলে যোগ দিতে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। মিছিল নিয়ে চিত্রার মোড় জাবির হোটেল অতিক্রম করার সময় সেখানে অগ্নিকাণ্ড দেখতে পায়। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সেখানে আগুন ধরিয়ে দেয়। অনেকে ভিতরে আটকা পড়ে। রোকনের কয়েকজন বন্ধুও সেখানে আটকা পড়ে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্যদের সাথে রোকন তার বন্ধুদের উদ্ধার করতে যায়। বন্ধুদের নিয়ে নিচে নামার সময় রোকনুজ্জামানও শিড়িতে আটকা পড়ে। অক্সিজেনের অভাবে দম বন্ধ হয়ে সেখানেই মৃত্যু ঘটে রোকনুজ্জামানের। বিকেল ৫:৩০ টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে উদ্ধার কাজ শুরু করে। আনুমানিক ১০ টার দিকে রোকনুজ্জামানের পরিবারের কাছে তার লাশ হস্তান্তর করা হয়। সন্তানকে হারিয়ে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন শহীদের মা রোজিনা বেগম। দাফন ৬ আগস্ট তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে মাদগোপাড়া, বালিয়া ভেকুটিয়ায় স্থানীয় কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়দের অনুভূতি শহীদের বাবা বলেন তার ছেলে বারবার বলত, "আমি যদি মারা যাই তাহলে আমি শহীদ হব। আমি শহীদ হলে, বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হবে।" সহপাঠী সিফাতুল ইসলাম বলেন, "রাকিব প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো, সামাজিক কাজে যুক্ত থাকত।" শহীদ হওয়ার কিছুদিন আগে মসজিদের ইমাম সাহেবের সাথে রোকনুজ্জামানের কথোপকথন শাহাদাতের কিছুদিন আগে জুম'আর নামাজে শহীদ রোকনুজ্জামান ইমাম সাহেবকে ছাত্রদের জন্য দোআ করার অনুরোধ করেন। ইমাম সাহেব তাকে বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে কি আমি পারব ছাত্রদের জন্য প্রকাশ্যে দোআ করতে?’ তখন রাকিব বলে, "আপনি সরাসরি না পারলেও কৌশলে হলেও ছাত্র ভাইদের জন্য একটু দোআ করে দেন।" ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : শহীদ রোকনুজ্জামান রাকিব পেশা : ছাত্র, সরকারি এমএম কলেজ যশোর বয়স : ২২ বছর জন্ম তারিখ : ২০/০২/২০০২ জন্ম স্থান : বালিয়া , ভেটকুটিয়া, যশোর পিতা : জনাব মো: জাহাঙ্গীর আলম মাতা : মোসা: রোজিনা বেগম আহত হওয়ার তারিখ : ৫ আগস্ট ২০২৪, আগুনে দগ্ধ হন শাহাদাতের তারিখ : ৫ আগস্ট ২০২৪ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: বালিয়া, ভেটকুটিয়া, ইউনিয়ন: আরবপুর থানা: সদর থানা জেলা: যশোর বর্তমান ঠিকানা : ঐ পরামর্শ ১। শহীদ পরিবারের জন্য নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করা। ২। ছোট ভাইয়ের পড়াশোনা শেষে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া।