Image of শেখ ফাহমিন জাফর

নাম: শেখ ফাহমিন জাফর

জন্ম তারিখ: ১০ জুলাই, ২০০৬

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৮ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা_সিটি

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র, প্রতিষ্ঠান: টঙ্গী সরকারি কলেজ, শ্রেণি: দ্বাদশ, বিভাগ: বিজ্ঞান শাহাদাতের স্থান : আজমপুর, উত্তরা, ঢাকা

শহীদের জীবনী

“আমি মারা গেলে আমার লাশটা রাজপথে রেখে দিও” শহীদ পরিচিতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক বীর সৈনিক ছিলেন শহীদ শেখ ফাহমিন জাফর। ২০০৬ সালের ১০ জুলাই রাজশাহীতে তার জন্ম। গ্রামের বাড়ি নওগাঁ জেলার শাহাগোলা থানাধীন রঘুরামপুর ইউনিয়নের তারাটিয়া গ্রামে। ফাহমিন রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে ২০২৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি টঙ্গী সরকারি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। বাবা মা ডাক্তার হওয়ার পরামর্শ দিলেও ছোটবেলা থেকে তার স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। ছেলের পড়াশোনার জন্যই রাজশাহী ছেড়ে ঢাকায় এসেছিলেন ফাহমিনের মা কাজী লুলুল মাখমিন। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকতেন ফাহমিন। ঘরে সাজানো ম্যাথ অলিম্পিয়াড আর বিজ্ঞান মেলার বেশ কিছু পুরষ্কার রয়েছে। টঙ্গি কলেজের বিজ্ঞান ক্লাবটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল তার পরিচালনায়। বহুমুখী প্রতিভাবান দেশপ্রেমিক ছেলেটি দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিয়মিত কবিতাও লিখতেন। যেভাবে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিলেন ১৮ জুলাই ২০২৪। বৃহস্পতিবার। দুপুরের খাবার রান্না করে বসে আছেন মিসেস লুলুল মাখমিন। দুই ছেলেকে নিয়ে ঢাকার আব্দুল্লাহপুরের কাছে দক্ষিণখানে গাওয়াইর মাদ্রাসা রোডে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। স্বামী আবু জাফর চাকুরির কারণে ছোট ছেলে ফারদিনকে নিয়ে রাজশাহীতে থাকেন। ফারদিন সেখানে গজক কলেজে একাদশ শ্রেণীতে পড়ে। বড় ছেলে ফারহান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস এন্ড টেকনোলজির বিবিএ আর মেজ ছেলে ফাহমিন টঙ্গী সরকারি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়তেন। ফাহমিনের প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয় ১১ জুলাই। ১৮ জুলাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের 'কমপ্লিট শাটডাউন' চলাকালে উত্তরার আজমপুরে আন্দলোনরত অকুতোভয় ছাত্রসমাজের একজন ছিলেন ফাহমিন। সকাল ১১ টা থেকে স্বৈরাচারের লালিত পুলিশ বাহিনী ছাত্রদের শান্তিপ্রিয় আন্দোলনে টিয়ারশেল ও গুলি ছুড়তে থাকে। পুলিশের সাথে যুক্ত হয় যুবলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী। আজমপুর মূল সড়ক থেকে ছাত্রদের সরাতে উভয় হিংস্র বাহিনী গুলি ছুড়তে থাকে। ১৮ জুলাই সকাল সাড়ে দশটার দিকের ঘটনা। আন্দোলনের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয় ফাহমিন। যাওয়ার আগে মায়ের কাছে দোয়া চায় সে যেন এই আন্দোলনে সফল হয়ে ঘরে ফিরতে পারে। বুকের ভেতরটা কী এক অজানা আতঙ্কে কেঁপে উঠে মিসেস জাফরের। তারপরও আন্দোলনে যেতে ছেলেকে নিরুৎসাহিত করেননি তিনি। ছেলে ন্যায়ের পথে সংগ্রাম করতে চাইছে। তাই অনুমতি দেন। না দিলে হয়তো অপরাধবোধে ভুগতেন তিনি। বের হওয়ার সময় দুই ছেলেকেই বলে দেন যেন তারা দুপুরে সময়মত এসে খাবার খেয়ে নেয়। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায়। কিন্তু কোনো ছেলেই ফিরে আসে না। জানা যায়, পুলিশ যখন বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার জন্য এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে তখন উপুর্যুপরি গুলিতে টিকতে না পেরে দিগি¦দিক ছুটতে থাকে ছাত্রছাত্রীরা। ডান হাতের পিছনে পিঠের কাছে ছররা গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে রাজউক মার্কেটের সিঁড়িতে লুটিয়ে পড়ে ফাহমিন। সহযোদ্ধারা তাকে উদ্ধার করে উত্তরা রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। এদিকে ফাহমিনের বাসায় তখন মায়ের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। বারবার বলে দেওয়ার পরও তার ছেলেরা দুপুরে বাসায় খেতে আসেনি। ঘড়ির কাঁটা তখন বিকাল তিনটা ছুঁই ছুঁই। খবর এলো ফাহমিন হাসপাতালে ভর্তি। মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো মিসেস জাফরের। সংবাদবাহকের সাথে ছুটে চললেন তিনি। উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে গিয়ে দেখেন ফাহমিনের রক্তাক্ত লাশ। গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত লাশ দেখেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন লুলুল মাখমিন। ততক্ষণে কর্তব্যরত ডাক্তাররাও ফাহমিনকে মৃত ঘোষণা করেন। ফাহমিনের শাহাদাতের সাথে সাথে প্রিয় মাতৃভূমিতে স্বৈরাচারের গড়া বৈষম্যের ইমারতকে কবর দেওয়ার সংগ্রামে শেষ হয়ে যায় ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার আরো একটি স্বপ্ন। জ্ঞান ফিরলে ছেলের লাশ নিয়ে নওগাঁর আত্রাইয়ের দিকে রওনা হন লুলুল মাখমিন। সেখানে জানাজা শেষে তারাটিয়া গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে শহীদের লাশ দাফন করা হয়। লুলুল মাখমিনের অশ্রুভেজা চোখে আজ তার কোলঘেঁষা সন্তানের স্মৃতি। কানে শুধু বাজে ফাহমিনের শেষ কথাগুলো-“আমি মারা গেলে আমার লাশ রাজপথে রেখে দিও। দাবি আদায় হওয়ার পর দেশ শান্ত হলে আমার লাশ রাজপথ থেকে এনে দাফন করো। আমার মতো অনেকের মৃত্যু হলে সবার লাশ রাজপথে পড়ে থাকবে। অনেক মা-ই তোমাকে সহযোগিতা করবে, চিন্তা করো না।” শাহাদাত ১৮ জুলাই ২০২৪ রোজ বৃহস্পতিবার দুপুর ২ টার দিকে উত্তরার আজমপুরে আন্দলোনরত অবস্থায় পুলিশ-যুবলীগের গুলিতে আহত হয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে শাহাদাত বরণ করেন শহীদ ফাহমিন। নওগাঁ জেলার তারাটিয়া গ্রামে তাকে দাফন করা হয়। পারিবারিক অবস্থা শহীদ ফাহমিন জাফরের পরিবারের একমাত্র উপার্জক্ষম ব্যক্তি তার বাবা শেখ আবু জাফর। তিনি রাজশাহীতে একটি বীমা কোম্পানীতে কর্মরত আছেন। তার মাসিক আয় ৩০ হাজার টাকা। সন্তানদের ভালোভাবে লেখাপড়া করাতে তার স্ত্রী বড় দুই সন্তানকে নিয়ে গত দুই বছর ধরে ঢাকায় একটি ভাড়া বাসায় অবস্থান করছেন। সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা ১. শহীদের মা'কে মাসিক বা বাৎসরিক সহযোগিতা প্রদান করা যেতে পারে। ২. শহীদের পিতাকে কর্মসংস্থানের জন্য কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা মূলধন দিয়ে সহযোগিতা করা যেতে পারে। ৩. শহীদ ফাহমিনের দুই সহোদর- ফারহান ও ফারদিনের উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করতে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া যেতে পারে। ব্যক্তিগত প্রোফাইল শহীদের পূর্ণনাম : শেখ ফাহমিন জাফর জন্ম : ১০ জুলাই, ২০০৬, রাজশাহী শহীদের পেশা : ছাত্র, টঙ্গী সরকারি কলেজ, শ্রেণি: দ্বাদশ, বিভাগ: বিজ্ঞান পিতা : শেখ আবু জাফর, বয়স : ৬২, বেসরকারি চাকরিজীবী মাতা : কাজী লুলুল মাখমিন, বয়স : ৪৭, গৃহিণী ভাইবোন সংখ্যা : ৩ ভাই পরিবারের অন্যান্য সদস্য : ২ ভাই বড় ভাই : শেখ ফারহান জাফর, বয়স: ২২, পেশা: ছাত্র, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি) ডিপার্টমেন্ট: বিবিএ ছোট ভাই : শেখ ফারদিন জাফর, বয়স: ১৭, পেশা: ছাত্র, রাজশাহী এমআরকে কলেজ, শ্রেণি: একাদশ ভাই-বোনদের মধ্যে অবস্থান : ২য় স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: তারাটিয়া, ইউনিয়ন: রঘুরামপুর, থানা: শাহাগোলা আত্রাই, জেলা: নওগাঁ বর্তমান ঠিকানা : ৪৫, জামাল মঞ্জিল, গাওয়াইর মাদ্রাসা রোড, দক্ষিণখান, উত্তরা, ঢাকা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of শেখ ফাহমিন জাফর
Image of শেখ ফাহমিন জাফর
Image of শেখ ফাহমিন জাফর
Image of শেখ ফাহমিন জাফর
Image of শেখ ফাহমিন জাফর
Image of শেখ ফাহমিন জাফর
Image of শেখ ফাহমিন জাফর
Image of শেখ ফাহমিন জাফর

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: জাহাঙ্গীর মৃধা

অজ্ঞাত

রাসেল মিয়া

মোঃ মাহমুদুল হাসান জয়

মো: মাহাদী হাসান প্রান্ত

মো: সোহেল রানা

গঙ্গা চরন রাজবংশী

অজ্ঞাত

হাফিজুল শিকদার

আলী হোসেন

সাইদুল ইসলাম ইয়াসিন

মেহেরুন্নেসা তানহা

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo