জন্ম তারিখ: ২৩ আগস্ট, ১৯৯৭
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২৩ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: খুলনা
পেশা : চাকুরি (প্রকৌশলী), শাহাদাতের স্থান : নিউরো সাইন্স হাসপাতাল ঢাকা
শহীদ মো: শাহারিয়া চাকুরিজীবী ছিলেন। তাঁর ঘরে আট মাসের একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান রয়েছে। রাজধানীর মিরপুর-১ এলাকায় স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে ভাড়া বাসায় সংসার পেতেছিলেন তিনি। বৈবাহিক জীবনে পদার্পণ করেন ২০১৮ সালে। মহান আল্লাহ শহীদকে একটি পুত্র সন্তান দান করেছেন। যার সাথে সবসময় খুনসুটিতে মেতে থাকতেন তিনি। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট: বাবা মায়ের চার সন্তানের মাঝে শাহরিয়া ছিলেন তৃতীয়। তিনি পেশায় ছিলেন একজন প্রকৌশলী। ঢাকায় একটি কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনা থেকে আওয়াজ শুরু হয়েছিল জুলাই বিপ্লবের। ডাক এসেছিল কোটা বিরোধী আন্দোলনের। তারপর বিপ্লবের আওয়াজ ছড়িয়ে পড়েছিলো সারাদেশে। আওয়াজ থামিয়ে দিতে চেয়েছিল আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। লেলিয়ে দিয়েছিল যুবলীগ, ছাত্রলীগের হায়েনাদের। এই রুদ্ধপ্রচেষ্টা রুখে দিয়েছিলো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। আন্দোলন রূপান্তরিত হয় কোটা থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে। এই বিপ্লব ছিল শ্রমিকের, দিনমজুরের। আন্দোলন ছিল সাহসী কবি সাংবাদিকের, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার ও রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসী ভাইবোনদেরও। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রাস্তায় নেমে এসেছিলেন দেশ ও জাতির মুক্তির স্লোগান তুলে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ। ইতিহাসে উল্লেখ আছে ফতেহ মক্কার কথা, এই বৃহৎ ভূখণ্ডের ইতিহাসে আছে ফতেহ বাঙ্গালার। এই পথ পরিক্রমায় আমরা পেলাম ফতেহ গণভবন-যেদিন গণভবন সত্যিই গণের ভবনে পরিণত হয়েছিল। ৫ আগস্ট অর্জিত হয় এই ফতেহ বা বিজয়। এর জ্বালানী ছিল বিডিআর বিদ্রোহ, আয়নাঘর। এই ধারাবাহিকতায় নাম আসে শাপলা থেকে শুরু করে মোদী বিরোধী আন্দোলন, শেয়ারবাজারে নি:স্ব মজলুম পরিবার, সাংবাদিক সাগর-রুনির সন্তান মেঘ, ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন ছিল জুলাই ইনকেলাবের জ্বালানি। আমাদের আহত,নিহত যোদ্ধারা ছিলেন সীমাহীন উজ্জ্বল অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। ৫ আগস্ট আসতে আসতেই ঘটে গিয়েছে জুলাইয়ের প্রাণদানের ইতিহাস। হাসিনা সরকার নির্বিচারে হত্যা করে হাজার হাজার মানুষকে। শহীদ হয় আন্দেলনের সাহসী কর্মী, রুটি রুজির তাগিদে বের হওয়া শ্রমিক, বাসায় খেলারত নিষ্পাপ শিশু। ২৪ এর বীর যোদ্ধা শহীদ শাহরিয়ার। ১৯ জুলাই ২০২৪, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশ উত্তপ্ত। শাহরিয়ার নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণে বাজারে গিয়েছিলেন। নির্ধারিত সময়ে বাসায় ফিরতে দেরী হওয়ায় তাঁর স্ত্রী বারবার মোবাইলে কল দেয়। সাড়া না পেয়ে শহীদের ভাইকে জানান বিষয়টি। পরে জানতে পারেন শাহরিয়ার গুলিবিদ্ধ হয়েছে। মিরপুর-২ তখন পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আন্দোলনকারীদের উপর চড়াও হয়। নির্বিচারে গুলি চালায়। শাহরিয়ার আনুমানিক বিকাল ৫ টায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়েছিল। পথচারীরা শহীদকে নিয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে যায়। সেখন থেকে পাঠানো হয় আগারগাঁও নিউরো সাইন্স হাসপাতালে। আইসিইউতে রাখা হয়। ২৩ জুলাই সন্ধ্যা ৭ টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানেই তিনি শাহাদত বরণ করেন। পরবর্তীতে গ্রামের বাড়িতে জানাজা শেষে তাকে স্থানীয় শংকরচন্দ্র কবরস্থানে দাফন করা হয়। পারিবারিক অবস্থা বাবা মায়ের চার সন্তানের মাঝে শহীদ মো: শাহরিয়ার ছিলেন তৃতীয়। নিতান্তই দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান তিনি। তাঁর মৃত্যুতে বাধ্য হয়ে রাজধানী শহর ঢাকা ছাড়তে হয়েছে শহীদ স্ত্রীকে। শিশু পুত্রকে সাথে নিয়ে বর্তমানে শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সাথেই তিনি দিনাতিপাত করছেন। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তির হঠাৎ চির প্রস্থানে পরিবারটি এখন চরম বিপাকে পড়েছে। অর্থ সংকটে অনাদর বুভুক্ষ জীবন পার করছেন শহীদ পত্নী। আত্মীয়দের অনুভূতি শহীদের চাচাত ভাই হাফিজুর রহমান বলেন- ‘আমার ভাই শাহরিয়ার খুব ভালো মানুষ ছিলেন। সবসময় মানুষের বিপদে সাড়া দিতেন। কারও কোন সমস্যা হলে সমাধানের চেষ্টা করতেন। কারও সাথে কোন ফ্যাসাদে জড়াতেন না। নম্রভদ্র ও মিশুক স্বভাবের মানুষ ছিলেন তিনি। সামাজিক নানা কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। গত রমজানে নিজ এলাকায় বিরাট ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন।’ শহীদ পিতা বলেন- ‘শাহরিয়ার খুব ভালো ছেলে ছিল। কোন রকমের অহংকার ছিল না তার। কারও সাথে কোন রকম রেষারেষি পছন্দ করতো না। প্রস্তাবনা আট মাস বয়সী একটি সন্তান আছে শহীদ শাহরিয়ারের। সন্তান ও স্ত্রীর ভরণপোষণের জন্য পর্যাপ্ত মাসিক ভাতার প্রয়োজন। এককালীন অনুদানও দেয়া যেতে পারে। স্ত্রীকে চাকুরি দিলে তাঁর ভবিষ্যতের পথ সুগম হবে। সন্তান প্রাপ্ত বয়স্ক হলে তাঁর লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয়া যেতে পারে। শহীদ বাবা-মা’কে সহায়তা করা যেতে পারে। এক নজরে শহীদের প্রোফাইল নাম : মো: শাহারিয়া, পেশা: চাকুরি (প্রকৌশলী), কোম্পানি: কোহিনুর লিফট লিমিটেড জন্ম তারিখ : ২৩ আগস্ট ১৯৯৭ পিতা : আবু সাঈদ, বয়স: ৬০, পেশা: কৃষক মাতা : চম্পা খাতুন, বয়স: ৪৮, পেশা: গৃহিণী স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: শংকরচন্দ্র, ইউনিয়ন: ১০ নং শংকরচন্দ্র, থানা: চুয়াডাঙ্গা সদর, জেলা: চুয়াডাঙ্গা আহত : ১৯ জুলাই ২০২৪ সন্ধ্যা ৬.০০ টা, মিরপুর-০২, আঘাতকারী: পুলিশ শাহাদত বরণ : ২৩ জুলাই ২০২৪ সন্ধ্যা ৭.০০ টা, নিউরো সাইন্স হাসপাতাল ঢাকা কবর : শংকরচন্দ্র কবরস্থান পরিবারের বিবরণ (স্ত্রী ও সন্তান) মোসা: রাজিয়া সুলতানা, বয়স: ২৪, পেশা: গৃহিণী, সম্পর্ক: স্ত্রী, শিক্ষাগত যোগ্যতা: সিভিল ইঞ্জিনিয়ার (ডিপ্লোমা) মো: মোস্তাফিজ, বয়স: আট মাস, সম্পর্ক: ছেলে