Image of মো: উসামা

নাম: মো: উসামা

জন্ম তারিখ: ৩ মার্চ, ২০০৮

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: খুলনা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : কুষ্টিয়া সদর থানার সামনে, কুষ্টিয়া

শহীদের জীবনী

উজ্জীবিত একজন তরুণ যুবক। যার স্বপ্নই ছিল ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার বাংলাদেশ থেকে বিদায় করে ইসলামের সোনালী সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। নিজের জীবন আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করে সে সেটা প্রমাণ করে গেছেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সে একজন অগ্রগামী সৈনিক। তিনি ৩রা মার্চ ২০০৮ সালে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জেলা কুষ্টিয়া সদর থানাধীন দহকুলা গ্রামে এক ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চার ভাই বোনের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন। বড় বোন সুমাইয়া খাতুন এর বিয়ে হয়ে গেছে। বড় ভাই মাহমুদুল হাসান একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। আর ছোট ভাই খালিদ মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। বাবা স্থানীয় মসজিদের ইমাম হওয়ায় তৃতীয় সন্তান জন্ম নিলে অনেকটা শখ করে নাম রাখেন উসামা। তার ধারণা ছিল আমার এ সন্তান একদিন সাহসী বীর পুরুষ হবে। ছোটবেলা থেকে সে অত্যন্ত সৎ, দ্বীনদার ও পরোপকারী ছিলেন। লেখা পড়ায়ও ছিল খুবই মেধাবী। সবেমাত্র দাখিল পাস করে কোয়াতুল উলূম কামিল মাদ্রাসায় আলিম শ্রেণিতে ভর্তি হন। লেখাপড়া জীবনের প্রতিটি স্তরে তিনি মেধার স্বাক্ষর রাখেন। এলাকার সামাজিক কাজ গুলি নিজে দায়িত্ব নিয়ে করতেন। কোনো দরিদ্র পরিবারের সন্তান টাকার অভাবে বিয়ে দিতে সমস্যা কথা জানালে তিনি টাকা উঠানোর ব্যবস্থা করে দিতেন। তিনি কুষ্টিয়ার একটি ব্লাড ব্যাংকের সদস্য ছিলেন। এলাকায় কারো ব্লাডের প্রয়োজন হলে তিনি ব্যবস্থা করে দিতেন। পারিবারিক কাজেও তিনি বাবা মাকে সহযোগিতা করতেন। তার মা অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি প্রায় দুই থেকে তিন মাস নিজে রান্না করে পরিবারের সদস্যদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি সর্বদা শহীদি তামান্না পোষণ করতেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি সমাজের এ নিদারুণ খারাপ অবস্থা তাকে সব সময় ব্যথিত করত। অন্যায়, অপরাধ, গুন্ডামি, মাস্তানি, ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচারী সমাজের এ চিত্র পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখতেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন তার সামনে আশার আলো হয়ে হাজির হলো। এলাকার ছাত্র সমাজকে সাথে নিয়ে তিনি এ আন্দোলনের সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। পরিবারের অকুণ্ঠ সমর্থন থাকায় এ আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি সাহসী বীরের ভূমিকা রাখতে পেরেছেন। বিজয় দার প্রান্তে এসে ০৫/০৮/ ২০২৪ তারিখে আওয়ামী পুলিশ ও ছাত্রলীগের গুন্ডাবাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণ ও মুহু মুহু গুলিতে বুক ঝাজরা হয়ে যায়। উসামা শহীদ হওয়ার সাথে সাথে উদয়মান একটি সোনালী গোলাপ পৃথিবীর বুক থেকে ঝরে পড়ল। যেভাবে শহীদ হলেন দেশব্যাপী অন্যায় আর বৈষম্য ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাস শিক্ষাঙ্গনসহ সকল জায়গা আষ্টে পিষ্টে বেঁধে ফেলে। পৃথিবীর কোনো ছাত্রসংগঠন এত ভয়ংকার, কুখ্যাত, নিকৃষ্ট হতে পারে সেটা কারো জানা ছিল না। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের যাবতীয় অপকর্মের পক্ষে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে এ ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে। ডাইনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোটা দেশকে বৈষম্য ও সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত করে। ফলে এ সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজ প্রতিবাদ মুখর হয়ে ওঠে। গড়ে তোলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পরবর্তীতে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ যোগদান করেন। শহীদ উসামা প্রথম থেকেই এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। স্বৈরাচারী সরকারের পতনের দিন ০৫/০৮/ ২০২৪ ইং তারিখ উসামা বাসা থেকে বারোটার দিকে বের হন। কুষ্টিয়া শহরে সাদ্দাম বাজারে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেন। ওখান থেকে ছাত্র জনতার মিছিল এন, এস রোডে পৌঁছালে পুলিশ ও সন্ত্রাসী আওয়ামলীগ আর খুনি ছাত্রলীগের নেতারা ছাত্র জনতার উপরে নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করতে থাকে। দুঃসাহসী বীর উসামা গুলির ভয় উপেক্ষা করে মুজিব চত্বরে পৌঁছালে আওয়ামী পুলিশের টার্গেটকৃত গুলি উসামার পিঠে লাগে। গুলি পিঠের উপরে অংশে লেগে গলার ডান পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। মুহূর্তে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। শহীদের সাথী ছাত্র জনতা তাকে উদ্ধার করে মোটরসাইকেল যোগেআদ দ্বীন হাসাপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু কর্তব্যরত ডাক্তার উসামাকে মৃত ঘোষণা করেন। এভাবে ঝরে পড়ে একটি তাজা প্রাণ। উসামার নামের সাথে যুক্ত হয় শহীদ শব্দটি। বৈষম্যর বিরুদ্ধে অকাতরে জীবন উৎসর্গকারী উসামা কোটি মানুষের হৃদয়ে আলোকজ্জ্বোল হয়ে থাকবে। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয় ও প্রতিবেশীর বক্তব্য শহীদ মো: উসামা পরিবারের সকল সদস্য, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশী সকলের নিকট অতি প্রিয় ছিলেন। বাবা অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, আমার প্রিয় উসামা আমার সন্তানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সৎ ও দ্বীনদার ছিলেন। প্রত্যেকদিন সে আন্দোলনে যেত। আমি তাকে কোনো দিন নিষেধ করিনি বরং মিছিলের অগ্রভাগে থাকতে উৎসাহিত করতাম। ০৫ তারিখ সে শহীদ হয়ে আমার বাসায় ফিরে এসেছে। উসামা শহীদ হয়েছে এতে আমি দুঃখিত নই বরং আমি শহীদের পিতা হতে পেরে গর্বিত। স্বৈরাচার হাসিনাকে হঠাতে ছেলেকে আন্দোলনে পাঠিয়েছিলাম। আল্লাহ যেন তার শাহাদাত কবুল করেন। বন্ধু মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা একজন সৎ, সাহসী, আল্লাহভীরু বন্ধুকে হারিয়ে ফেললাম। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা আল্লাহর রহমতে বাবা-মা চার ভাই বোন ৬ সদস্যের পরিবার মোটামুটি সচ্ছলতার সাথে চলছিল। বাবা মসজিদে ইমামতি, বড় ভাইয়ের একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরি ও জমি জমা থেকে আয়ের একটি অংশ দিয়ে পরিবারের ব্যয় মেটাতেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে উসামা শহীদ হওয়ায় পরিবারের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। মায়ের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। তারা দোয়া চেয়েছেন, বাবার কাঁধে সন্তানের লাশের ভার যেন আল্লাহ বহন করার তাওফিক দেন। এক নজরে শহীদ পরিচিতি নাম : মো: উসামা জন্ম : ০৩/০৪/২০০৮ পিতা : জয়নাল আবেদীন মাতা : রাবিয়া খাতুন স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: দহকুলা: ইউনিয়ন: আলমপুর, থানা: কুষ্টিয়া সদর, জেলা জেলা: কুষ্টিয়া পেশা : ছাত্র ভাইবোন : তিন ভাই এক বোন ঘটনার স্থান : কুষ্টিয়া সদর থানার সামনে, কুষ্টিয়া আহত হওয়ার সময়কাল : ০৫/০৮/২০২৪, আনুমানিক দুপুর ২.০০ থেকে ২.৩০ মিনিট শাহাদাতের সময়কাল : ০৫/০৮/২০২৪, ৩.০০ ঘটিকায় আঘাতের ধরণ : পিঠে গুলি লাগে আক্রমণকারী : পুলিশ ও ছাত্রলীগ শহীদের কবরের অবস্থান : দহকুলা দারুস সালাম কবরস্থান পরামর্শ ১। শহীদের বৃদ্ধ বাবা-মাসহ পরিবারের খোঁজখবর নেয়া

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: উসামা
Image of মো: উসামা
Image of মো: উসামা
Image of মো: উসামা
Image of মো: উসামা

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: রুহান ইসলাম

আব্দুস সালাম

এম এম তৌহিদুর রহমান

মো: ফজল মাহাদী

 মো: সাওয়ান্ত মেহতাব

আব্দুল আজিজ (চাঁন মিয়া)

মো: জামাল উদ্দীন শেখ

 ফয়সাল হোসেন

সোহান শাহ

মো: হাফেজ আনাজ বিল্লাহ

সৈয়দ মিথুন মোর্শেদ

মো: আলমগীর সেখ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo