Image of মো: সেলিম  মন্ডল

নাম: মো: সেলিম মন্ডল

জন্ম তারিখ: ৫ এপ্রিল, ১৯৯৫

শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: খুলনা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : কাঠমিস্ত্রী, শাহাদাতের স্থান : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে হাবিবুল্লাহ কাচপুরী মার্কেটের ১০ তলা ভবনের ৩য় তলায় ডাচ্ বাংলা ব্যাংক

শহীদের জীবনী

মো: সেলিম মন্ডল ১৯৯৫ সালের ৫ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম জনাব মো: ওহাব মন্ডল এবং মা জনাবা মোসা: রেজিয়া খাতুন। বাবা ছিলেন চায়ের দোকানদার। সেলিম মন্ডল নিজে ছিলেন একজন কাঠমিস্ত্রী। কুষ্টিয়া জেলার চর জগন্নাথপুর থানার কুমারখালি গ্রামে তিনি বসবাস করতেন তাঁর পরিবারের সাথে। শহীদের পরিবারে ছিল স্ত্রী মোসা: শোভা খাতুন এবং তাঁর ৩ বছর বয়সী কন্যা হুমায়রা জান্নাত। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট দেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন তখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। ঢাকা সহ সমগ্র দেশ তখন উত্তাল। দেশে দেড় যুগ ধরে অবৈধ ভাবে ক্ষমতার মসনদে বসে থাকা আওয়ামী স্বৈরাচার সরকার আন্দোলনরত ছাত্রদের উপরে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। কোটা সংস্কারের যৌক্তিক আন্দোলনের বিপরীতে তারা কোনো প্রকার সমাধান না করে সেটি দমন করার জন্য নিষ্ঠুর নীতি অবলম্বন করে। সরকারের পেটোয়া বাহিনী তথা ছাত্রলীগ আর পুলিশের মাধ্যমে রাবার বুলেট, ছড়া গুলি, লাঠিচার্চ আর সবচয়ে মারাত্মক বিষয়টা হলো ছাত্রদের বুক ঝাঁঝরা করতে থাকে তাজা বুলেট। ১৯ জুলাইয়ের আন্দোলন যখন একেবারেই স্বৈরাচারের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছিলো তখন তারা সারাদেশে কারফিউ ঘোষনা করে। কিন্তু বিক্ষুব্ধ জনতা রাজপথ ছাড়তে নারাজ। তাই কারফিউ ঘোষনা হলেও কিছু যায়গায় তখনো চলছিল আন্দোলন। ২০ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে পুলিশ ও ছাত্রজনতার মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। পুলিশ এক পর্যায়ে শিমরাইল মোড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে হাবিবুল্লাহ কাচপুরী মার্কেটের ১০ তলা ভবনের ৭ম তলায় শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশের কার্যালয়ে আশ্রয় নেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কিছু সংখ্যক লোক ভবনটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। একই ভবনের ৩য় তলায় ডাচ্ বাংলা ব্যাংকে ফার্নিচার মিস্ত্রি আবদুস সালাম সহ আরও কিছু শ্রমিক ডেকোরেশনের কাজ করছিলেন। অনেকেই বের হলেও তিনি সহ কয়েকজন বের হতে পারেননি। সেই আগুনে দগ্ধ হয় তাঁর লালিত স্বপ্নগুলো। স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে হাসিখুশিতে চলতে থাকা ফুলের মত জীবনটি শেষ হয়ে যায় সেখানেই। পুড়ে মারা যান।তিনি। ছোট্ট হুমায়রা বাবা ডাকটিও সেই লেলিহান আগুনের শিখায় পুড়ে যায়। তিন দিন পরে ফায়ার সার্ভিস লাশ উদ্ধার করে। পরিবারের লোকজন কুষ্টিয়ায় তার গ্রামের বাড়িতে দাফনের ব্যবস্থা করেন। শহীদ সম্পর্কে মন্তব্য অত্যন্ত নম্র-ভদ্র একজন মানুষ ছিলেন শহীদ সেলিম মণ্ডল। বড়দের সম্মান আর ছোটোদের স্নেহ করাই ছিল তার চরিত্র। নিজের কাজ আর পরিবার নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন তিনি। শহীদের চাচা শ্বশুর শরিফুল ইসলাম বলেন, “আমার বাড়ী তার বাড়ী খুব বেশি দূরে না। ছোটবেলা থেকেই তাকে আমি চিনি। সে মানুষের দিকে মুখ তুলে কখনো কথা বলতেন না। সবসময় নিচু স্বরে কথা বলতেন। অনেক নম্র ভদ্র ছিল। তার এ বিষয়গুলোর জন্য সবার মনে সে স্থান করে নিয়েছিল। এলাকার সবাই তাকে খুব ভালোবাসত।” শহীদ পরিবারের বর্তমান অবস্থা একমাত্র উপার্জনক্ষম মো: সেলিম মন্ডলের মৃত্যুতে শহীদের স্ত্রী মোসা: শোভা খাতুন বর্তমানে নিঃস্ব জীবন যাপন করছেন। মেয়ে ও নিজের ভবিষ্যত নিয়ে শংকায় দিন পার করছেন তিনি। বর্তমানে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে বসবাস করছেন। এক নজরে শহীদ পরিচিতি নাম : মো: সেলিম মন্ডল জন্ম : ১৯৯৫ সালের ৫ এপ্রিল, কুষ্টিয়া পিতার নাম : জনাব মো: ওহাব মন্ডল মাতার নাম : মোসা: রেজিয়া খাতুন পেশা : কাঠমিস্ত্রী শহীদ হওয়ার তারিখ : ২০ জুলাই, ২০২৪ ঠিকানা : গ্রাম: কুমারখালি, উপজেলা: চর জগন্নাথপুর, জেলা: কুষ্টিয়া পরামর্শ ১। পরিবারকে এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান ও নিয়মিত মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা ২। ছোট কন্যা সন্তানের ভবিষ্যতের ভরণপোষণ নিশ্চিত করা ৩। শহীদের বাবার স্থায়ী ব্যবসা করার ব্যবস্থা করা

শহীদ সম্পকির্ত কুরআনের আয়াত

তারা তাদের রবের কাছে যা দিয়েছেন তাতে খুশি, এবং যারা তাদের পিছনে আসবে তাদের জন্যও তারা আনন্দিত। (সুরা আলে ইমরান ৩:১৭০)

শহীদ সম্পকির্ত হাদিস

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “শহীদদের জন্য জান্নাতে বিশেষ মর্যাদা রয়েছে।” (সহীহ বুখারী ২৮০০)

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo