জন্ম তারিখ: ১৭ মার্চ, ২০০০
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: খুলনা
পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : প্রতাপনগর বাজার, সাতক্ষীরা
হাফেজ আনাজ বিল্লাহর মৃত্যুতে দেশ ও জাতি হারিয়েছে এক প্রতিশ্রুতিশীল নাগরিক বাগানের শ্রেষ্ঠ গোলাপটিকে। হাফেজ আনাজ বিল্লাহ ২০০০ সালে সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি থানার কুড়ি কাহুনিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন একটি সভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। তাঁর পিতা আরজ আলী এলাকার একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। মাতার মোসা: আনোয়ারা খাতুনের শখ আনাজকে কোরানের হাফেজ বানাবেন। মায়ের ইচ্ছা আনাজ পূরণ করেছে। পিতা মাতার আদর যত্ন এবং ভাই দের মায়া মমতায় শিশুটি গড়ে উঠে সুন্দর সুঠাম ও আকর্ষণীয় চরিত্রের। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে তার মাঝে সৃষ্টি হয় মহান আল্লাহর একনিষ্ঠতা এবং খোদাভীরুতা ও বলিষ্ঠ সাহসীকতার। কোরআন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের অগ্রসৈনিক কোরঅনের আলোকেই যাতে গড়ে উঠতে পারে সে জন্য পিতা তাকে ভর্তি করান হাফেজিয়া মাদ্রাসায়। পুরো কোরআন শরীফ আত্মস্থ করে কোরআন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্যে ভর্তি হয় প্রতাপনগর ফাজিল মাদরাসায়। মূল ঘটনার বিবরণ হাফেজ আনাজ বিল্লাহর অনুপম চরিত্র চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে সর্বস্তরের মানুষদের। আল্লাহ তার মনোনীত বান্দাদের এভাবেই ব্যতিক্রম গুণাবলী দিয়ে গুণান্বিত করেন যা মানুষ কখনো ভুলতে পারে না। হাফেজ আনাজ বিল্লাহ সবাইকে সালাম দিতেন, কেউ কিছু বললে তিনি শুধু হাসতেন।শহীদ হাফেজ আনাজ বিল্লাহ নিয়মিত সকলপ্রকার সামাজিক ও দাওয়াতী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতেন। সমাজের মানবের যে য কোনো বিপদে তিনি সবার আগে ছুটে যেতেন। সকলের কাছে তিনি পরোপকারী হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি সব সময় স্থানীয় সকল ভালো উদ্যোগের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকতেন। আন্দোলনের শুরু থেকেই তিনি নিয়মিত মিছিলে অংশগ্রহণ করতেন। তিনি বড় ভাই ও বন্ধুদের কাছে সব সময় বলতেন-আমি যেন শহীদ হতে পারি। শহীদি তামান্না বুকে ধারন করে তিনি সর্বদা ইসলামের দাওয়াতী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতেন। কোটা সংস্কারের দাবিতে চলা স্বৈরাচার বিরোধী বিক্ষোভ মিছিলে শহীদ হাফেজ আনাজ বিল্লাহ শুরু থেকেই অংশ গ্রহণ করতেন। গত ০৫.০৮.২০২৪ তারিখে সারা দেশের মতো সাতক্ষীরা জেলাতেও আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়ে। উত্তাল হয়ে উঠে শহীদের রক্তে ভেজা এই জনপদের প্রতিটি প্রান্তর। দুপুরের পর থেকেই স্বৈরশাসকের পলায়নের খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বিকাল ৩টায় হাজার হাজার জনতার অংশগ্রহণে ছাত্র জনতার বিক্ষোভ মিছিলটি স্বৈরাচার পতনের বিজয় মিছিলে পরিণত হয়। প্রতাপনগর বাজার থেকে বিজয় মিছিলটি সামান্য অগ্রসর হলে বিকাল ৪ টায় প্রতাপনগর উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা শেখ জাকির হোসেনের নেতত্বে সশস্ত্র যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা মিছিলের উপর হামলা চালায় ও গুলি করে। এক পর্যায়ে শেখ জাকিরের পিস্তল ও শটগানের গুলিতে ঘটনাস্থলে অনেক মানুষ হতাহত হয়। শহীদ হাফেজ আনাজ বিল্লাহ মিছিলের সমনের সারিতে থেকে অংশগ্রহণ করেন। সে জেনেছে স্বৈরাচার সরকার পতন হয়েছে তারপরেও আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে গুলি চালানোর সাহস কিভাবে হয়! সে ভেবেছিল হয়তো সন্ত্রাসীরা আর গুলি চালাতে পারবে না। কিন্তু কে জানে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা হাফেজ আনাজসহ সাধারণ ছাত্র জনতার উপর এভাবেগুলি করবে! এসব আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের উপরের চেহারা দেখে তো আর বোঝার উপায় নেই যে তারা মানুষ নয় তারা হিংস্র জানোয়ারের চাইতেও বেশি কিছু। শেখ হাসিনা এমনভাবে এদেরকে তৈরি করেছে যেন বিন্দু পরিমাণ এদের অন্তরে মায়া মহব্বত নেই। যারা গুলি করেছে তারাও তো মুসলিম নামধারী, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যদি তারা মুসলমানের সন্তান হতো তাহলে যে বুকের মধ্যে আল্লাহর কোরআন লিপিবদ্ধ সেই বুকে গুলি চালাতে পারতো না। যাই হোক অবশেষে হাফেজ আনাজের সমস্ত ভাবনাকে দূর করে দিয়ে তার দিকে ধেয়ে আসে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বুলেট। সাথে সাথে অশান্তিতে ভরা, নৈরাজ্যপূর্ণ পৃথিবীর এই মায়া মহব্বত ত্যাগ কর শান্তিময় জান্নাতের দিকে চলে যান হাফেজ আনাজ। মিছিলকারী ছাত্র-জনতা তাকে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন। যে কোনো মিছিলে তিনি সম্মম্মুখ সারিতে থাকতেন। গত ০৫.০৮.২০২৪ তারিখের মিছিলে যাওয়ার পূর্বে তিনি সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে দোয়া করতে বলেছিলেন, যেন আজই তিনি শহীদ হতে পারেন। মহান আল্লাহ তাকে কবুল করেছেন। হাফেজ আনাজ বিল্লাহ সম্পর্কে তার বড় ভাইয়ের অনুভূতি দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মত বড় আলেম হবে এ আশায় হেফজ শেষ করে ফাজিল মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছিলে। ভাইদের মধ্যে হাফেজ আনাজ ছিলো ব্যতিক্রমী। তার মেধা অত্যন্ত প্রখর ছিল। গ্রামের সকলেই ভাবতো আনাজ বড় হয়ে অনেক বড় মাওলানা হবে। তার কন্ঠ অনেক সুন্দর ছিল। সে কোরআন তেলোয়াত করলে মানুষ শত ব্যস্ততা ভুলে যেয়ে তার তেলাওয়াত শুনতো। হাফেজ আনাজ বিল্লাহ সম্পর্কে তার এক বন্ধুর অনুভূতি শহীদ হাফেজ আনাজ বিল্লাহ তার বড় ভাই ও বন্ধুদের বলতেন, ‘তোমরা দোয়া করো আল্লাহ যেন আমাকে শহীদ হিসাবে করল করেন।’ হাফেজ আনাজ বিল্লাহ মানুষদের বলতো-ভাই ও বোনেরা শোনো! অন্যায়, অত্যাচার জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলো। খোদার জমিনে খোদার দেয়া জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্যে সংগ্রামে অবতীর্ণ হও। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার বিবরণ শহীদের অন্য ৩ ভাই সকলেই বর্তমানে লেখা পড়া করেন। পিতা একটি ছোট মুদি দোকান চালান। বড় ভাইও বর্তমানে বেকার অবস্থায় আছেন। কোনো চাকুরী নাই তাই মাঝে মাঝে অন্যের খেতে দিন মজুরীর কাজ করে পরিবারকে সাপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করেন। পিতার অসুস্থ্যতার কারনে সপ্তাহে দুই-এক দিন দোকান বন্ধ রাখতে হয়। একনজরে শহীদের পরিচয় শহীদের পূর্ণ নাম : মো: হাফেজ আনাজ বিল্লাহ জন্ম তারিখ : ১৭.০৩.২০০০ জন্মস্থান : নিজ জেলা, সাতক্ষীরা শিক্ষাগত যোগ্যতা : দশম শ্রেণী, প্রতাপনগর মদীনাতুল উলুম ফাজিল মাদরাসা বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: কুড়ি কাহুনিয়া, ইউনিয়ন: প্রতাপনগর, থানা: আশাশুনি, জেলা: সাতক্ষীরা স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: কুড়ি কাহুনিয়া, ইউনিয়ন: প্রতাপনগর, থানা: আশাশুনি, জেলা: সাতক্ষীরা পিতা, পেশা ও বয়স : আরজ আলী, মুদি দোকান, ৬৫ বছর মাতা : মোসা: আনোয়ারা খাতুন মায়ের পেশা ও বয়স : গৃহিনী, ৫৫ বছর, ব্যাবসা ভাইদের বিবরন : ১. মো: আরিফ বিল্লাহ (২৩) : ২. মো: আহসান উল্লাহ (৩) আঘাতকারীর : আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ আহত হওয়ায় ও স্থান সময় : প্রতাপনগর বাজার, আশাশুনি, ৫ আগস্ট, ২০২৪, বিকাল ৪টা মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ৫ আগস্ট, ২০২৪, বিকাল ৪টা শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : পারিবারিক কবরস্থান, প্রতাপনগর, আশাশুনি, সাতক্ষীরা পরামর্শ ১। শহীদ পরিবারের জন্য নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করা ২। শহীদের তিনটি ভাইয়ের জন্য পড়ালেখার ব্যবস্থা করে দেওয়া এবং তাদের সমুদয় ব্যয় নির্বাহ করা ৩। একটি স্থায়ী আয়ের উৎস তৈরি করে দেওয়া