জন্ম তারিখ: ২১ মার্চ, ১৯৮৮
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: খুলনা
পেশা : দিনমুজুর, শাহাদাতের স্থান : প্রতাপনগর বাজার, আশাশুনি
শহীদরা আমাদের গৌরবের প্রতীক এবং তারা এমন নক্ষত্র যারা আমাদের আকাশে তাদের সুগন্ধিময় রক্ত দিয়ে সুগন্ধযুক্ত করে। শহীদদের পবিত্র রক্তের রঙে আমাদের পৃথিবী আলোকিত হয়। জাতীয় ইস্যুতে সারা জীবন উৎসর্গকারী মানুষ বিরল। তাদের কাছে সর্বোপরি নিহিত রয়েছে উচ্চ আদর্শ, তাদের জনগণের স্বাধীনতা। এমনই ছিলেন শহীদ আলম সরদার। জন্ম ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ হিজলা গ্রাম, আশাশুনি থানা, সাতক্ষীরা জেলায়। বাংলাদেশে গরিবের ঘরে জন্ম নিলে লেখাপড়া করার সৌভাগ্য খুব কম লোকেরই হয়, কারণ বাংলাদেশে দীর্ঘদিন স্বাধীনতা অর্জন করলেও এই স্বাধীনতার স্বাদ গরিবের ঘরে এখনো পৌঁছায়নি। আলম সরদারও গরিব ঘরে জন্ম নেওয়ায় লেখাপড়ার তেমন সুযোগ পাননি। পরিবারের অভাব দূর করতে ছোটকাল থেকেই অন্যের খেতে কাজ করতেন। এটা স্পষ্ট যে তিনি অন্যদের থেকে আলাদা, কারণ তিনি সত্য প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করতেন। তিনি ছিলেন শুদ্ধচিত্ত, উদ্যমী, স্নেহশীল, সকলকে দেখে হাসতেন, কিন্তু তিনি অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতেন না, তিনি সর্বদা এর বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। ঘরে স্ত্রীসহ এক ছেলে ও দুই মেয়েকে রেখে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের বন্দুকের গুলিতে ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে তিনি শাহাদাত বরণ করে। শহীদ আলম সরদার ছিলেন প্রতিবাদের অন্যতম নায়ক। ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ৫ই আগস্ট পর্যন্ত চলতে থাকা এই বিক্ষোভগুলিতে, এক মুহুর্তের জন্যও আলাদা হননি, বিপরীতে, তার সহযোগী অংশগ্রহণকারীদের দাবি হিসাবে, তারা অলমের সাহসী কর্ম দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। ছাত্র জনতার কোটা সংস্কারের দাবিতে চলা স্বৈরাচার বিরোধী বিক্ষোভ মিছিলের খবর শহীদ আলম সরদার প্রতিবেশীদের থেকে নিয়মিত পেতেন। তিনি সব সময় বলতেন, ‘আমি যদি সুযোগ পেতাম অবশ্য এই আন্দোলনে যোগ দিতাম।‘ ০৫.০৮.২০২৪ তারিখে সারা দেশের মতো সাতক্ষীরা জেলাতেও আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়ে। উত্তাল হয়ে উঠে শহীদের রক্তে ভেজা এই জনপদের প্রতিটি প্রান্তর। দুপুরের পর থেকেই স্বৈরশাসকের পলায়নের খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বিকাল ৩টায় হাজার হাজার জনতার অংশগ্রহণে ছাত্র জনতার বিক্ষোভ মিছিলটি স্বৈরাচার পতনের বিজয় মিছিলে পরিণত হয়। প্রতাপনগর বাজার থেকে বিজয় মিছিলটি সামান্য অগ্রসর হলে বিকাল ৪টায় প্রতাপনগর উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা শেখ জাকির হোসেনের নেতৃত্বে সশস্ত্র যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা মিছিলের উপর হামলা চালায় ও গুলি করে। এক পর্যায়ে শেখ জাকিরের পিস্তল ও শর্টগানের গুলিতে ঘটনাস্থলে অনেক মানুষ হতাহত হয়। শহীদ আলম সরদার মিছিলের সম্মুখ সারিতে থেকে অংশগ্রহণ করেন এবং গুলিতে মারাত্মক আহত হন। মিছিলকারী ছাত্র-জনতা তাকে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন।শহীদ আলম সরদার নিয়মিত সকলপ্রকার সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতেন। সকলের কাছে তিনি পরোপকারী হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি প্রতিবেশী ও স্ত্রীর কাছে সব সময় বলতেন-দোয়া করো আমি যেন শহীদ হতে পারি। শহীদ সম্পর্কে মন্তব্য শহীদের ছেলের অনুভূতি আশরাফুল ইসলাম শহীদের ছেলে যার বয়স মাত্র ১২ বছর। তার নিভৃত কান্নায় হয়তোবা প্রকৃতিও কেঁদে ওঠে। তার প্রশ্ন ”আমার আব্বুকে কেন হত্যা করলো? আমার আব্বু তো কোনোদিন কারো ক্ষতি করেননি। মানুষের জন্য, ইসলামের জন্য তাঁর হৃদয় কাঁদতো, আর তাই তিনি ইসলামকে জীবনের মিশন মনে করেছিলেন। সত্য বলতে কী, এটাই ছিল আমার আব্বুর অপরাধ। কিন্তু কেন বড় অসময়ে আমার আব্বুকে প্রাণ দিতে হল?’’ কে দেবে এই প্রশ্নের জবাব? শহীদের স্ত্রীর কথা শহীদের স্ত্রী আসমা খাতুন বলেন, ‘নিজেকে সান্ত্বনা দিই এভাবে যে, আমি একজন শহীদের স্ত্রী। আমার স্বামী যে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে যেয়ে জীবন দিল আমি আমার সন্তানদের সে অন্যায়ের প্রতিবাদে চিরদিন সক্রিয় রাখবো। বর্তমান সরকারের কাছে আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই। আমার সন্তানদের নিয়ে যেন আমি সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে পারি , সন্তানদের লেখাপড়া যেন চালিয়ে যেতে পারি সেজন্য সরকারের কাছে আমি সহযোগিতা কামনা করছি। অর্থনৈতিক অবস্থা শহীদ আলম সরদার দিনমজুরী করে সংসার চালাতেন। ছোট তিনটি সন্তান নিয়ে স্ত্রী অন্যের বাড়িতে কাজ করে দিন কাটাচ্ছেন। ছোট একটি ছেলে ও একটি মেয়ে স্থানীয় মাদরাসা ও স্কুলে পড়াশুনা করে। অর্থনৈতিক দৈন্যদশায় ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।শহীদের স্ত্রী শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় তেমন কোনো কাজ করতে পারেন না। শহীদের এক ভাই, তিনিও দিনমজুর হওয়ায় বর্তমানে ভাইয়ের পরিবারকে খুব বেশি সহযোগিতা করতে পারছেন না। একনজরে শহীদের পরিচয় শহীদের পূর্ণ নাম : শহীদ আলম সরদার জন্ম তারিখ : ২১-০৩-১৯৮৮ জন্মস্থান : নিজ জেলা ,সাতক্ষীরা শিক্ষাগত যোগ্যতা : পঞ্চম শ্রেণী বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: হিজলা, ইউনিয়ন: প্রতাপনগর, থানা :আশাশুনি, জেলা : সাতক্ষীরা স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম : হিজলা, ইউনিয়ন: প্রতাপনগর, থানা: আশাশুনি, জেলা: সাতক্ষীরা পিতা, পেশা ও বয়স : রহিম সরদার, দিনমুজুর, ৭০ বছর মাতা, পেশা ও বয়স : মোছা: রাশেদা বেগম, গৃহিনী, ৬৫ বছর আয়ের উৎস : দিনমুজুর স্ত্রী : আসমা খাতুন (৩২) আঘাতকারীর : আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ আহত হওয়ায় ও স্থান সময় : প্রতাপনগর বাজার, আশাশুনি, ৫ আগস্ট, ২০২৪, বিকাল ৪টা মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ৫ আগস্ট, ২০২৪, বিকাল ৪টা শহীদের কবর : পারিবারিক কবরস্থান, হিজলা, প্রতাপনগর ,আশাশুনি, সাতক্ষীরা পরামর্শ ১। শহীদ পরিবারের জন্য নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করা ২। শহীদের তিনটি এতিম সন্তানের জন্য পড়ালেখার ব্যবস্থা করে দেওয়া এবং তাদের সমুদয় ব্যয় নির্বাহ করা ৩। একটি স্থায়ী আয়ের উৎস তৈরি করে দেওয়া