Image of মো: আল-আমীন

নাম: মো: আল-আমীন

জন্ম তারিখ: ১০ জানুয়ারি, ১৯৮৯

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: খুলনা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: হকার, শাহাদাতের স্থান: এনাম মেডিকেলে কলেজ হাসপাতাল,সাভার,ঢাকা

শহীদের জীবনী

শহীদ মোহাম্মদ আল-আমিন ১৯৮৯ সালের ১০ জানুয়ারী মাগুরা জেলার ছবি মতো সুন্দর গ্রাম বারুনাতৈলে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামটি মাগুরা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। তাঁর পিতার নাম মোঃ আবু তালেব বিশ্বাস ও মাতার নাম মোছাঃ সূর্য বেগম। দরিদ্র সিএনজি চালক পিতার ঘরে জন্ম তাঁর। তাই ছোট থেকেই দরিদ্রতার সাথে লড়াই করে জীবনধারণ তাঁদের। তাঁর একমাত্র সহোদর ভাইয়ের নাম মোঃ রুহুল আমিন। তাঁর সাথেই আনন্দঘন পরিবেশে কেটেছে তার শৈশব। শাহাদাতের সেই মহাক্ষণ শহীদ আল আমীন খুব বেশী লেখাপড়া করার সুযোগ পাননি। তাই তিনি রাস্তাঘাটে হকারী করে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করতেন। হকারী করে অল্প যা আয় হতো, তা দিয়ে অতি কষ্টে পরিবারের ব্যয়ভার বহন করতে হতো তাকে। সবার কাছে তিনি পরোপকারী হিসাবে পরিচিত ছিলেন। কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র জনতার আন্দোলন শুরু হলে শহীদ আল আমিন হকারীর পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে মিছিলে অংশগ্রহণ করতেন। অল্পদিনের মধ্যেই কোটা সংস্কার আন্দোলন সারা দেশের মানুষের গণ আন্দোলনে পরিণত হয় এবং সারা দেশে তা দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্র জনতার স্বৈরাচার বিরোধী বিক্ষোভ মিছিলেও শহীদ আল আমিন নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন। হকারীর মাঝেই তিনি নিয়ম করে মিছিলে যোগ দিতেন। দিনটি ৫ আগস্ট, ২০২৪। সেদিন সারা দেশের মতো সাভারের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার লংমার্চ কর্মসূচির সাথে একাত্ম হয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। শহীদ আল আমীন সাভার থানার পাশে অনুষ্ঠিত ছাত্র জনতার স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনের মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। সাভারের আশে পাশের সকল মানুষ একত্রিত হয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন এবং সমগ্র সাভার বাজার এবং অলি গলি সকল জায়গা লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। মিছিলে মিছিলে বজ্রকণ্ঠে প্রতিবাদী স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে সাভার বাজার, থানা রোড এলাকাসহ সমগ্র অঞ্চল। বেলা ১ টার দিকে স্বৈরাচারী সরকারের ঘাতক পুলিশ ও র‌্যাব হঠাৎ করে মিছিলে টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলিবর্ষণ শুরু করে। শহীদ আল আমিনসহ শত-শত লোক মুহুর্তেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয় ছাত্র-জনতার সহায়তায় মারাত্মক আহত অবস্থায় গুরুতর আল আমিনকে সাভারের স্থানীয় এনাম মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। বার বার চেষ্টা করেও তাঁর পালস পাওয়া যাচ্ছিল না। ডক্তাররা কয়েক বার বুকে চাপ দিয়ে চেষ্টা করেছেন কিন্তু শহীদ আল আমিনের আর জ্ঞান ফেরেনি। বিকাল ৩ টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। দুঃসহ বেদনার কণ্টক পথ বেয়ে শোষণের নাগপাশ ছিঁড়লে যাঁরা, আমরা তোমাদের ভুলবো না, আমরা তোমাদের ভুলবো না। জানাজা ও দাফন স্ত্রী ও পরিবারের কিছু নিকটাত্মীয় ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় হাসপাতালের মর্গ থেকে তাঁর মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ি মাগুরার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পরদিন ৬ আগস্ট সকালে শহীদের জানাজার নামাজ নিজ গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সকল শ্রেণী পেশার মানুষ শহীদের জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে শহীদ আল আমিনকে দাফন করা হয়। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয় ও মায়ের অনুভূতি শহীদ আল আমিনের প্রতিবেশীরা বলেন, "তিনি সদালাপী ও বন্ধুবাৎসল ছিলেন। নিজের অল্প আয় রোজাগার নিয়ে তার কোনো অভিযোগ বা আক্ষেপ ছিল না।" শহীদের মা বলেন, "আমার ছেলে খুব সততার সাথে জীবন যাপন করতো এবং নিয়মিত আমার জন্য টাকা পাঠাতো। যখনই বাড়িতে আসতো আমার জন্য কত ফলফলাদি নিয়ে আসতো! এখন আমার পরিবারে দুরবস্থা। কে আমাদের দেখবে?" শহীদের পরিবারের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা শহীদ আল আমীনের অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন ভালো না। তিনি সাভার এলাকায় হকারী ও দিনমজুরী করে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করতেন। বর্তমানে দৈনন্দিন আয়ের কোনো ব্যবস্থা নাই। পরিবারে অন্য কোনো উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় এখন তাদের অনাহার-অর্ধহারে দিন কাটাতে হয়।শহীদ আলা আমিনের পরিবারের অন্য সদস্যরা অর্থাৎ তাঁর মা-বাবা গ্রামের বাড়ি মাগুরাতে থাকেন। শহীদ আল আমিনের ষাটোর্ধ্ব বাবা এখনও সিএনজি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন, তাই শহীদ আল-আমীনকে নিয়মিত গ্রামের বাড়িতেও আর্থিক সহযোগিতা করতে হতো। শহীদের স্ত্রী সুমি বেগম বর্তমানে অন্যের বাসা বাড়িতে কাজ করেন। দুই মেয়েকে নিয়ে তিনি অতি কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। বড় মেয়েটি প্রতিবন্ধী হওয়ায় তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। ছোট মেয়ে নিয়মিত স্কুলে যায় কিন্তু টাকার অভাবে তার স্কুলে পড়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। শহীদ আল আমিনের পরিবারে অন্য কোনো উপর্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় এবং পরিবারের প্রধান ব্যক্তি শহীদ হওয়ায় পরিবারটি শোকে স্তব্ধ হয়ে আছে। একনজরে শহীদের পরিচয় শহীদের পূর্ণনাম : মো: আল-আমীন জন্ম তারিখ : ১০ জানুয়ারী, ১৯৮৯ পেশা : হকারী পিতার নাম : মো: আবু তালেব বিশ্বাস পিতার পেশা ও বয়স : সিএনজি চালক, ৬৫ বছর মাতার নাম : মোসা: সালেহা বেগম মাতার পেশা ও বয়স : গৃহিণী, ৫৫ বছর স্ত্রীর নাম : সুমী বেগম স্ত্রীর পেশা ও বয়স : গৃহিনী, ২৮ বছর পরিবারের মাসিক আয় : ৫০০০ টাকা পরিবারের বর্তমান সদস্য সংখ্যা : ৫ জন সন্তানদের নাম, বয়স, পেশা-প্রতিষ্ঠান ও সম্পর্ক : ১. মোসা: সাথী খাতুন অন্তরা (১৬), (প্রতিবন্ধী তাই পড়াশোনা বন্ধ), শহীদের মেয়ে : ২. মোসা: যুথী খাতুন (১১), সাভার প্রাইমারি স্কুল, ২য় শ্রেণি, শহীদের মেয়ে আহত হওয়ার স্থান : ঢাকা-মাগুরা মহাসড়ক নিহত হওয়ার স্থান : মাগুরা সদর হাসপাতাল আহত হওয়ার সময়কাল : ৫ আগস্ট, ২০২৪ নিহত হওয়ার সময়কাল : ৫ আগস্ট, ২০২৪, দুপুর ১.৩০টা শহীদের কবরের অবস্থান : বারুনাতৈল পারিবারিক কবরস্থান বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: বারুনাতৈল, উপজেলা: মাগুরা সদর, পৌরসভা: মাগুরা পৌরসভা ওয়ার্ড নম্বর: ০১, জেলা: মাগুরা প্রস্তাবনা ১। শহীদের পরিবারের এতিম দুই শিশু ও তাঁর স্ত্রীর জন্য আয়ের কোনো ব্যবস্থা করে দেয়া ২। শহীদের এক মেয়ে প্রতিবন্ধী, তার জন্য বিশেষ সহযোগিতার ব্যবস্থা করা ৩। গ্রামে থাকা শহীদের সিএনজি চালক পিতা ও অসহায় মায়ের জন্য আর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: আল-আমীন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: মাহিম হোসেন

সাকিবুল হাসান সাকিব

আলম সরদার

মো: সেলিম  মন্ডল

সৈয়দ মিথুন মোর্শেদ

আলিফ আহমেদ সিয়াম

মো: হামিদ শেখ

মো: রাকিবুল হোসেন

 মো: ইউসুফ শেখ

মো: মাসুদ রানা মুকুল

মো: সাকিবুল হাসান মাহি

মো: মেহেদী হাসান রাব্বি

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo