জন্ম তারিখ: ১৭ নভেম্বর, ১৯৮৪
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৫
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা : ব্যবসা, শাহাদাতের স্থান : যাত্রাবাড়ী, ঢাকা
‘আমার স্বামীকে ওরা ইচ্ছে করে হত্যা করেছে। আমি তাদের ফাঁসি চাই। ’ ১৯৮৪ সালের ১৭ নভেম্বর কুমিল্লার মুরাদনগরে জন্মগ্রহণ করেন আল মামুন আমানত। অল্প বয়সেই বাবা-মা’কে হারান। নিজের ভবিষ্যৎ গড়তে পাড়ি জমান কল-কারখানার শহর নারায়ণগঞ্জে। সরকারি কলেজ থেকে লেখাপড়া শেষ করে শুরু করেন কাপড়ের ব্যবসা। বিয়ে করেন হাসিনা মমতাজকে। তাদের কোলজুড়ে আসে দুই কন্যাসন্তান। শহীদ আমানত নারায়ণগঞ্জ কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। “পার্থিব জগতে আমার ভাইয়ের শূন্যস্থান পূরণের মত সামর্থ্য আমাদের কারো নেই।’’ যেভাবে শহীদ হলেন শেখ হাসিনার পদত্যাগের দিন ৫ আগস্ট বিকালে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ ছিলেন নারায়ণগঞ্জের জলকুড়ি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আমানত (৪০)। বের হওয়ার সময় স্ত্রী হাসিনা মমতাজকে বলেছিলেন রাতেই ফিরে আসবো। এরপর থেকে আমানতের কোনো সন্ধান পাচ্ছিলেন না স্বজনরা। অবশেষে ৯ দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে সনাক্ত করা হয় তার লাশ। তাকে এমনভাবে গুলি করা হয়েছে যে পুরো মুখমণ্ডল ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গিয়েছিল। এ কারণেই তার স্ত্রী আরও একাধিকবার দেখেও স্বামীর লাশ চিনতে পারেনি। আমানতের খোঁজ পেতে ছাপানো হয় পোস্টার। অবশেষে ১৪ আগস্ট নিহতের খালা ঢাকা মেডিকেল মর্গে গিয়ে আমানতকে সনাক্ত করেন। বৃহস্পতিবার ১৫ আগস্ট ২০২৪ রাত ৯ টায় চাষাড়া শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে শহীদ আমানতের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিহতের স্ত্রী হাসিনা মমতাজ বলেন, “গত ৫ তারিখ গুলিবিদ্ধ হন আমানত। তার শরীরে আরো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে, ওইদিনই মৃত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল।” জানাজায় অংশ নিয়ে আমানতকে স্মরণ করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, “পার্থিব জগতে আমার ভাইয়ের শূন্যস্থান পূরণের মত সামর্থ্য আমাদের কারো নেই। সৃষ্টিকর্তা যেন তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করেন।” ‘গ্রামে আবাদি জমি থাকলেও তাঁর বসতি বাড়ী নেই’ নিঃস্ব শহীদ পরিবার শহীদ আমানত পরিণত বয়সে বিয়ে করেন ডা: হাসিনা মমতাজকে। তাঁদের ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় আরোহী (৮) ও আয়রা (১) নামের দুইটি ফুটফুটে ফুল। গ্রামে আবাদি জমি থাকলেও তাঁর বসতি বাড়ী নেই। যে কারণে ব্যবসার শহর নারায়ণগঞ্জে পরিবারকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন মহাবীর শহীদ আমানত। শহীদ স্ত্রী ডাক্তারি বিদ্যা চর্চা বন্ধ রেখেছেন। যে কারণে পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী হিসেবে আমানতই ছিলেন প্রধান কর্তা। বাবাকে হারিয়ে এতিম হয়েছে দুটি সন্তান। থমকে গিয়েছে তাঁদের অনাবিল জীবন। বর্তমানে শহীদ পরিবারে আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। শহীদের স্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দুই সন্তান। এখন আমরা কি করব বলেন? কোথায় গিয়ে দাঁড়াব? সব তো শেষ হয়ে গেল।’ শহীদ পত্নীর স্মৃতি চারণ শহীদ আমানতের স্ত্রী ডা. হাসিনা মমতাজ বলেন- ‘আমার স্বামী ৫ আগস্ট বাসা থেকে বের হয়। সারাদিন চলে গেলেও সেদিন আর বাসায় ফেরেনি! তখন থেকেই আমরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁকে খুঁজতে থাকি। কোথাও সন্ধান না পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে খোঁজ নেই। আমানতকে ঘাতক পুলিশ ও সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ বাহিনী এমন ভাবে গুলি করেছে, এবং পিটিয়ে জখম করেছে যে তাঁর চেহারা সম্পূর্ণ রূপে বিকৃত হয়ে যায়। যে কারণে আমি একাধিক বার লাশ দেখেও চিহ্নিত করতে পারিনি। পরবর্তীতে শহীদের খালা আমানতের লাশ চিহ্নিত করে। কারণ বাবা-মা মারা যাওয়ার পর আমানতকে ওর খালা-ই বড় করেছেন। আমাদের দুই সন্তান। এখন আমরা কি করব বলেন? কোথায় গিয়ে দাঁড়াব? সব তো শেষ হয়ে গেল। আমাদের ছোট ছোট সন্তানেরাও অল্প বয়সে এতিম হয়ে গেল! ওদেরকে এখন কিভাবে পিতার স্নেহ ভালবাসা দিয়ে আগলে রাখব! আমি আমানত হত্যার বিচার চাই। আমার স্বামীকে ওরা ইচ্ছে করে হত্যা করেছে। আমি তাদের ফাসি চাই। আমার স্বামীকে ছাড়া কিভাবে আমি বাকি জীবন কাটাব জানিনা! সহযোগিতার প্রস্তাবনা সমূহ প্রস্তাবনা : ১ শহীদের এতিম সন্তানকে লালন পালনের দায়িত্ব নেয়া প্রস্তাবনা : ২ শহীদের পরিবারকে মাসিক অথবা এককালীন সাহায্য করা যেতে পারে প্রস্তাবনা : ৩ শহীদের স্থায়ী বাসস্থান না থাকায় তাঁর পরিবারকে স্থায়ী নিবাস করে দেয়া যেতে পারে প্রস্তাবনা : ৪ শহীদ স্ত্রী যেহেতু চিকিৎসক তাঁকে যে কোন হাসপাতালে প্রাক্টিস করার পরিবেশ তৈরিতে সহযোগিতা করা যেতে পারে এক নজরে শহীদ আল মামুন আমানত নাম : মো: আল মামুন আমানত পেশা : কাপড় ব্যবসায়ী জন্ম তারিখ ও বয়স : ১৭/১১/১৯৮৪, ৪০বছর আহত ও শহীদ হওয়ার তারিখ : ০৫ আগস্ট ২০২৪, সোমবার , আনুমানিক বিকেল ৪ টা শাহাদাত বরণের স্থান : যাত্রাবাড়ী, ঢাকা দাফন করা হয় : পারিবারিক কবরস্থান কবরের জিপিএস লোকেশন : ২৩৩৫'০৪.৩"ঘ ৯০৫৫'৪৪.৭"ঊ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: মুরাদনগর থানা/উপজেলা: মুরাদনগর, জেলা: কুমিল্লা পিতা : মো: আব্দুল লতিফ (মৃত) মাতা : রাবেয়া বেগম (মৃত) স্ত্রী : ডা: হাসিনা মমতাজ ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : গ্রামে অল্প জমি আছে সন্তানের বিবরণ : দুই মেয়ে, আরোহী (৮), আয়রা (১)