জন্ম তারিখ: ২২ মে, ২০০৯
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা: পাইপ ফিটিং কর্মচারী, শাহাদাতের স্থান: কুমিল্লা
২০০৯ সালের ১০ মে বাবা হানিফ মিয়া ও মা রিপা আক্তারের কোল আলোকিত করে জন্ম নেয় শহীদ রিফাত হোসেন। সে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলায় সুকিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ও বেড়ে ওঠেন। তারা এক ভাই ও দুই বোন। রিফাতের জন্মের পরপরই বাসচালক বাবাকে হারান এ দুই ভাই-বোন। এরপর খুব কাছ থেকে জীবনের উত্থান-পতন দেখতে দেখতে নানাবাড়িতে বড় হন তাঁরা। একপর্যায়ে তাঁদের মায়ের অন্যত্র বিয়ে হয়। নতুন সংসারে চলে যান মা রিফা আক্তার, সেই ঘরে পাঁচ বছর বয়সী এক কন্যা সন্তানও রয়েছে। ফলে মাতুলালয়েই বড় হতে থাকেন এতিম দুই ভাই বোন। এত সংকটের মধ্যে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন রিফাত। রিফাত একজন কুরআনের হাফেজ ছিলেন। তবে আর্থিক সংকটের কারণে সেটিও বন্ধ করে মুন্সিগঞ্জে কাজ শুরু করেন। গত জুলাই মাস পর্যন্ত সেখানে বেকারিতে কাজ করতেন। পরে কাজটি ছেড়ে বোন হালিমার বাড়িতে থেকে ভগ্নিপতি সাইদুলের কাছে পাইপ সংযোগের কাজ শিখতেন। যেভাবে শহীদ হলেন বড় বোন হালিমার ভাষ্যমতে, গত ৪ আগস্ট সকালে রিফাত কাজে না গিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় তাঁকে আন্দোলনে যেতে একাধিকবার নিষেধ করা হয়। রিফাতকে বলেছিলেন, ‘তোর কিছু হলে আমি কী করে বাঁচব?’ জবাবে রিফাত হাসিমুখে বলেছিলেন, ‘আমার কিছুই হবে না ইনশা-আল্লাহ, দেশ স্বাধীন করে আবার ঘরে ফিরব।’ ওই দিন দুপুরেই খবর আসে রিফাত গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের এক দফা দাবিতে গত ৪ আগস্ট কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার শহীদ নগরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মিছিলে শামিল ছিলেন রিফাত। আন্দোলনরত অবস্থায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা জনতার উওর গুলি ছুড়লে সে কুমিল্লা শহীদ নগর এলাকায় ছাত্রলীগের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে তারা রোগীকে রাখতে অস্বীকার করে। এছাড়া সরকারি কোন অ্যাম্বুলেন্স সহায়তায় এগিয়ে আসেনি। পরে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও কোন চিকিৎসা না দিয়ে তাকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার করা হয়। ঢাকা মেডিকেল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে হাসপাতালে রাখতে অস্বীকার করে এবং বলে রোগীর অবস্থা ভালো ও এখানে রোগীর অনেক চাপ। হাসপাতালে রাখলে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে। ফলে তাঁকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। সেখানে বিনা চিকিৎসায় ৪ আগস্ট রাতে নিজ বাড়িতে রিফাতের মৃত্যু হয়। পরদিন (৫ আগস্ট) সকাল ১০টায় উপজেলার দশপাড়া ঈদগাহ মাঠে জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। রিফাতের হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন হালিমা। ক্ষোভ নিয়ে তিনি বলেন, ‘কী দোষে আমার এমন সুন্দর ভাইকে এভাবে গুলি করে মারল? আমার একমাত্র ভাইকে গুলি করতে তাদের বুক কি একটুও কাঁপেনি? তারা কি মানুষ না? দেশ স্বাধীনতা পেল, অথচ আমার ভাই সেই স্বাধীনতা দেখে যেতে পারল না; আমার ভাই হত্যার বিচার চাই, প্রকৃত খুনিদের ফাঁসি চাই।’ রিফাতের রেখে যাওয়া পোশাক, বালিশ-কম্বল, মুঠোফোন এসব চিরদিন স্মৃতি হিসেবে রাখতে চান হালিমা। তার মুঠোফোনটিতে হাত বুলাতে বুলাতে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে বলতে থাকেন, ‘ভাইয়ের মুঠোফোনটি হাতে নিলে চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারি না। ছোট বেলায় দুই ভাই-বোনকে নানাবাড়িতে একা রেখে মা কাজে যেতেন। ভাই-বোন একসঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটাতাম, একসঙ্গে খেলাধুলা করতাম। এখন এসব কেবলই স্মৃতি।’ শহীদের পরিবারের বর্তমান অবস্থা শহীদ রিফাত তার বোনের আশ্রয় থাকতেন। তার ভগ্নিপতির সাথে পাইপ ফিটিং এর কাজ করে বোনের পরিবারে সাহায্য করতেন। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়ের অনুভুতি শহীদ রিফাত সম্পর্কে তার প্রতিবেশী ও নিকটাত্মীয় বলেন, রিফাত অনেক ভালো ছেলে ছিল। সে নিয়মিত নামাজ আদায় করত। এছাড়া রিফাত একজন কুরআনের হাফেজ এবং কুরআনের ১৭ পারা তার মুখস্থ ছিল। এরপর সে আর পড়াশোনা করতে পারেনি। এক নজরে শহীদ রিফাত হোসেন নাম : রিফাত হোসেন পেশা : পাইপ ফিটিং কর্মচারী জন্ম তারিখ ও বয়স : ১০ মে ২০০৯ (১৫ বছর) স্থায়ী ঠিকানা : সুকিপুর, দশপাড়া, দাউদকান্দি, কুমিল্লা পিতার নাম : মরহুম হানিফ মিয়া মাতার নাম : রিপা আক্তার আহত হওয়ার তারিখ : ৪ আগষ্ট ২০২৪, দুপুর ১টা, কুমিল্লা নিহত হওয়ার তারিখ : ৫ আগষ্ট ২০২৪, রাত ১২টা ৩৫ মিনিট ; নিজ বাসা আঘাতের ধরণ : বুকের বাম পাশে গুলি আক্রমণকারী : ছাত্রলীগ শাহাদাত বরণের স্থান : কুমিল্লা দাফন করা হয় : কুমিল্লা ভাইবোনের বিবরণ : তার কোন ভাই নেই। দুই বোনের এক বোন বিবাহিত। আরেকবোন এখনো ছোট প্রস্তাবনা ১. বোনের পরিবারকে এককালীন সহযোগিতা করা যেতে পারে ২. মা ও তার ছোট বোনকে এককালীন সহযোগিতা করা যেতে পারে