Image of মো: সাগর

নাম: মো: সাগর

জন্ম তারিখ: ১০ মার্চ, ২০০৩

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: চট্টগ্রাম

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: সবজি বিক্রেতা, শাহাদাতের স্থান : মিরপুর ১০

শহীদের জীবনী

মো: সাগর, কুমিল্লার দেবিদার গ্রামের ১০ মার্চ ২০০৩ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্র এবং তার সৎ চরিত্র ও সমাজসেবা করার মনোভাবের জন্য পরিচিত। সাগর সবসময় তার সহপাঠী এবং এলাকার মানুষদের সাহায্য করতেন। তার সহজ সরল ব্যবহার এবং সদাচরণে এলাকাবাসীর কাছে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। সাগরের মৃত্যু শুধুমাত্র তার পরিবার নয়, পুরো সমাজের জন্য একটি গভীর শোকের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোরবানির ঈদে শেষ বারের মতো বাড়ি গিয়েছিলেন। তার পিতা মো: হানিফ মোল্লার বয়স ৫১ এবং মাতা বিউটি আক্তারের বয়স ৩৯ বছর। পারিবারিক জীবন সাগরের পরিবারে তার বাবা মো: হানিফ মোল্লা, মা বিউটি আখতার, এবং দুই বোন বৃষ্টি (২২) ও আফরোজা আবন্তিকা মিম (১৪) রয়েছেন। সাগরের মা, বিউটি আখতার, তার মৃত্যু পর গভীর শোক ও কষ্টে ভুগছেন। তিনি বলেন, “আমার ছেলে ছিল আমাদের জীবনের আলো। তার মৃত্যু আমাদের পরিবারে এক গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে। সাগরের অনুপস্থিতি আমাদের জীবনকে অন্ধকারে ডুবিয়ে দিয়েছে।” বাবা মো: হানিফ মোল্লা কিডনি রোগে ভুগছেন এবং তার মৃত্যু পরিবারের জন্য একটি বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, “সাগর ছিল আমাদের একমাত্র পাথেয়। তার মৃত্যুর পর আমাদের জীবনে সবকিছু কঠিন হয়ে পড়েছে। তার অনুপস্থিতি আমাদের মানসিক ও আর্থিকভাবে চরমভাবে প্রভাবিত করেছে। প্রেক্ষাপট দীর্ঘ ১৫ বছরে আওয়ামী দুঃশাসন, ভোটচুরি, দুর্নীতি, খুন, অন্যায়, অত্যাচার জনমনে ফেলেছিল বিরূপ প্রতিক্রিয়া। কোটা প্রথা পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আবার ষড়যন্ত্র শুরু করে আওয়ামী সরকার। ২০১৮ সালে ছাত্রছাত্রীদের প্রবল আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সকল দাবী মেনে নিলেও তার অন্তরে ছিল হিংসার আগ্নেয়গিরি। তাই ২০২৪ সালে একটি বিরোধী দলহীন নির্বাচনে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর আবার কোটা ফিরিয়ে আনতে চাইল হাসিনা সরকার। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে টানা আন্দোলন শুরু হয়েছিল গত ১ জুলাই থেকে। অহিংস এই আন্দোলন ১৫ জুলাই থেকে সহিংস হয় । আন্দোলনে নিরস্ত্র ছাত্র জনতার ওপর সশস্ত্র ঘাতক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও পুলিশ, জঅই সদস্যরা হামলা চালাতে থাকে। রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের শাহাদাতের পর থেকেই আন্দোলন গণমানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্রমেই জনসাধারণের আন্দোলনে রূপ নেয়। এটি বৈষম্যবিরধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন হিসেবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে সাধারণ ছাত্রদের অহিংস আন্দোলন ধীরে ধীরে ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী অভ্যুত্থানের দিকে ধাবিত হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে এ আন্দোলন শুধু ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; হয়ে উঠে দেশের আপামর জনতার এক বিশাল গণঅভ্যুত্থান। জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এ অভ্যুত্থানে একাত্মতা প্রকাশ করে রাজপথে বেরিয়ে আসে। ক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে স্বৈরাচার সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু পদত্যাগের পূর্বে তিনি রেখে যান তার ঘৃণ্য ও বিকৃত মস্তিষ্কের অজস্র কুকীর্তি। এরই অংশ হিসেবে আন্দোলনকারী সহ অনেক নিরীহ জনতার উপর লেলিয়ে দেয়া হয় সশস্ত্র বাহিনী। তাদের গুলিতে শহীদ হয় নিরস্ত্র নিপীড়িত জনতা। যেভাবে শহীদ হলেন ১৯ জুলাই ২০২৪ তারিখ, মিরপুর ১০ এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের সময় একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। সাগর, যিনি ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছিলেন, স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের লেলিয়ে দেয়া ঘাতক পুলিশের সহিংসতার শিকার হন। আন্দোলন শুরু হলে পুলিশ তীব্রভাবে জলকামান, কাঁদানে গ্যাস এবং গুলি ব্যবহার করে, যা পরিস্থিতি দ্রুত উত্তেজনাপূর্ণ করে তোলে। সেদিন ছাত্ররা শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু করে। সাগর তার বাসা থেকে বের হয়ে আন্দোলনে যোগ দেন। বিক্ষোভকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন শুরু করলেও পরিস্থিতি দ্রুত উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে। ঘাতক পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহার করে। জলকামান, কাঁদানে গ্যাস এবং গুলি ছোড়ে, যা ছাত্রদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পুলিশি হামলার ফলে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে, এবং পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন আহত হন। সাগর মাথায় এবং বাহুতে গুলিবিদ্ধ হন। আহত অবস্থায় তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সাগরের লাশ পরবর্তীতে আলোক হাসপাতালে পাওয়া যায়। তার মৃত্যু ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং দুঃখজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়। এই ঘটনাটি শুধু সাগর বা তার পরিবারের জন্যই নয়, পুরো মিরপুর এলাকার জন্য একটি গভীর শোকের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সাগরের মৃত্যু সমাজে বৈষম্যের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা দেয় এবং ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে উঠে। কলঙ্কিত পুলিশের সহিংসতা ও ছাত্রদের প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে সেদিনের ঘটনা এক নতুন সামাজিক সচেতনতার সূচনা করে, যা ভবিষ্যতে আরও অনেক আন্দোলনের প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। অমায়িক সাগর মো: সাগর একজন অত্যন্ত অমায়িক এবং সহানুভূতিশীল ব্যক্তি ছিলেন। তার মৃত্যু কেবল তার পরিবার নয়, পুরো সমাজের জন্য একটি গভীর শোকের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাগরের চরিত্রের সৌন্দর্য এবং তার সমাজসেবার মনোভাব তাকে এলাকার মানুষের কাছে একটি আদর্শ ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তার মৃত্যু পিশাচ পুলিশের সহিংসতার বিরুদ্ধে একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে ওঠে। প্রেরণায় শহীদ সাগর সাগরের সাহস এবং আত্মত্যাগ ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়। তার মৃত্যু শুধু তার পরিবারের জন্যই নয়, পুরো ছাত্র সমাজের জন্য একটি শক্তিশালী প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। সাগরের সাহসিকতা এবং ন্যায়ের জন্য সংগ্রাম করার মনোভাব ভবিষ্যতের আন্দোলনকারীদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। তার আত্মত্যাগ ছাত্র আন্দোলনের শক্তি এবং ন্যায়ের জন্য সংগ্রামের একটি মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়। নিকটাত্মীয় ও স্বজনদের বক্তব্য মা, বিউটি আখতার : "আমার ছেলে ছিল আমাদের জীবনের আলো। তার মৃত্যু আমাদের পরিবারে এক গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে। সাগর আমাদের স্বপ্ন পূরণের আশা ছিল। তার অনুপস্থিতি আমাদের জীবনকে অন্ধকারে ডুবিয়ে দিয়েছে। তার মৃত্যু আমাদেরকে শুধু শোকই নয়, এক কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন করেছে।“ বাবা, মো: হানিফ মোল্লা : "সাগর ছিল আমাদের একমাত্র পাথেয়। আমি দীর্ঘদিন কিডনি রোগে ভুগছি এবং তার মৃত্যুর পর আমাদের জীবনে সবকিছু কঠিন হয়ে পড়েছে। তার চলে যাওয়ার পর আমাদের অর্থনৈতিক এবং মানসিক অবস্থা আরও ভেঙে পড়েছে। প্রতিবেশী,শহিদুল ইসলাম : "সাগর একজন অত্যন্ত সুদর্শন এবং অমায়িক ছেলে ছিল। সে সবসময় এলাকার মানুষের সাহায্য করতো এবং সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখে থাকতো। তার মৃত্যুর পর আমরা সবাই গভীরভাবে শোকাহত। তার অভাব আমাদের সবার খুবই অনুভব হচ্ছে।“ বন্ধু, আনসার সাদিক: সাগরের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের স্মৃতিগুলি অত্যন্ত মধুর। সে সদা হাস্যোজ্জ্বল এবং সাহায্যকারী ছিল। তার মৃত্যু আমাদের সবার জন্য একটি বড় ক্ষতি। আমরা তার সাহসিকতা ও বন্ধুত্ব কখনোই ভুলবো না। শহীদ পরিবারের আর্থিক অবস্থা সাগরের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটপূর্ণ। তার বাবা মো: হানিফ মোল্লা একজন সামান্য সবজি বিক্রেতা এবং দীর্ঘদিন ধরে কিডনি রোগে ভুগছেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য তিনি দিনমজুরি এবং কিছু খুচরা ব্যবসা করে থাকেন, তবে তা যথেষ্ট নয়। তাদের গ্রামের বাড়িতে সামান্য জমি থাকলেও ঢাকায় এসে তাদের জীবনযাত্রা সীমিত আয়ের কারণে কঠিন হয়ে পড়েছে। সাগরের মৃত্যু পরিবারের ওপর আরও একটি বড় অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছে যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলেছে। এক নজরে শহীদ মো: সাগর নাম : মো: সাগর পেশা : সবজি বিক্রেতা জন্ম তারিখ ও বয়স : ১০/০৩/২০০৩ আহত ও শহিদ হওয়ার তারিখ : ১৯/০৭/২০২৪ শাহাদাত বরনের স্থান : মিরপুর ১০ দাফন করা হয় : বাড়াশালঘর ইউনিয়ন স্থানীয় ঠিকানা : মিরপুর ১০ পিতা : মো: হানিফ মোল্লা মাতা : বিউটি আখতার ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : গ্রামে এ অল্প জমি আছে ভাই বোন এর বিবরন : ২ বোন প্রস্তাবনা প্রস্তাবনা-১: বাসস্থান প্রয়োজন প্রস্তাবনা-২: বাবার জন্য কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দিলে উপকার হবে প্রস্তাবনা-৩: ছোট ভাই-বোনদের লেখা-পড়ার খরচ যোগানে সহযোগিতা করা যেতে পারে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: সাগর
Image of মো: সাগর
Image of মো: সাগর

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো:  রিটন উদ্দীন

মো: পারভেজ হোসেন

মো: ফরিদ আহম্মদ ছৈয়াল

আওয়াল মিয়া

মো: সাজ্জাদ হোসাইন ( সাব্বির )

মো: জিহাদ হাসান মাহিম

মো: পারভেজ

মো: হাসান (হাফেজ হাসান)

শাব্বির হোসেন

মাসুম মিয়া

পারভেজ বেপারী

মো: মিজানুর রহমান

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo