Image of জাহিদ হোসেন রাব্বি

নাম: জাহিদ হোসেন রাব্বি

জন্ম তারিখ: ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০০৪

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: চট্টগ্রাম

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ব্যবসা শাহাদাতের স্থান : খিলক্ষেত মোল্লা ফার্মেসির সামনে

শহীদের জীবনী

মো: জাহিদ হোসেন রাব্বি একজন উদ্যমী ও প্রতিভাবান ব্যক্তি, যিনি বর্তমান সময়ের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে একজন উদাহরণস্বরূপ। তিনি এসএসসি পাশ করেছেন আমানুল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে, যা তার শিক্ষাজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি, তিনি গ্রাফিক ডিজাইনিং এ আগ্রহী এবং এই ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেছেন। তার জন্ম তারিখ ১১ আগস্ট ২০০৫। জাহিদ চলে যাওয়ার পর তার বাবা গভীর শোক ও মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছেন। প্রিয় পুত্রের হঠাৎ এবং অকাল প্রস্থান তার জীবনকে চরমভাবে বিপর্যস্ত করেছে। বাবার জন্য, জাহিদকে হারানো শুধু একটি বড় আঘাতই নয় বরং তার দৈনন্দিন জীবনের একটি অমূল্য অংশের চিরতরে চলে যাওয়া। আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে জনগণ নানান অন্যায়, শোষণ, নিপীড়ন ও জুলুমের নির্মম ভুক্তভোগী। এদেশের মুক্তিকামী জনতা সময়ের দাবিতে সাড়া দিয়ে এহেন অত্যাচারের বিরুদ্ধে বারংবার রুখে দাঁড়িয়েছে। সেই সাথে হুংকার দিয়ে সংগ্রামী জনতার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে ছাত্রবৃন্দ। উপরুন্তু গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সাক্ষী, দেশের ক্রান্তিকালে বরাবরই ছাত্রদের মাধ্যমে আন্দোলন সংগ্রামের সূত্রপাত ঘটে। বাংলাদেশ নামক গাড়িটা যখন এমনভাবে ব্রেক ফেইল করলো আর বাংলাদেশী নামক যাত্রীরা যখন আতঙ্কিত; চারদিকে যখন কষ্ট, বেদনা, চিৎকার, আহাজারি আর নিশ্চিত ধ্বংসের সুস্পষ্ট লক্ষণ, তখন রাষ্ট্রযন্ত্রের এমন বর্বরতা তরুণ প্রতিবাদী সমাজ সচেতন আযিযুল মিয়ার দেখে মনে আঁচড় কাটতে পারে। কেননা সবকিছু তো তার সামনেই ঘটছে। তিনি নিজের কানেই শুনছেন মানুষের নিদারুণ আর্তনাদ; ব্যথিত মনের হাহাকার। নিজের চোখে দেখছেন কিভাবে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে শাসক নামধারী শোষক গোষ্ঠী। দীর্ঘ ১৫ বছরে আওয়ামী দুঃশাসন, ভোটচুরি, দুর্নীতিন, খুন, অন্যায়, অত্যাচার জনমনে ফেলেছিল বিরূপ প্রতিক্রিয়া। কোটা প্রথা পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আবার ষড়যন্ত্র শুরু করে আওয়ামী সরকার। ২০১৮ সালে ছাত্রছাত্রীদের প্রবল আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সকল দাবী মেনে নিলেও তার অন্তরে ছিল হিংসার অগ্নিগিরি। তাই ২০২৪ তালে একটি বিরোধী দলহীন নির্বাচনে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর আবার কোটা ফিরিয়ে আনতে চাইল হাসিনা সরকার। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ১ জুলাই থেকে টানা আন্দোলন শুরু হয়েছিল। অহিংস এই আন্দোলন ১৫ জুলাই থেকে সহিংস হয় । আন্দলোনে নিরস্ত্র ছাত্র জনতার ওপর সশস্ত্র ঘাতক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও পুলিশ, জঅই সদস্যরা হামলা চালাতে থাকে। রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের শাহাদাতের পর থেকেই আন্দোলন গণমানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্রমেই জনসাধারণের আন্দোলনে রূপ নেয়। এটি বৈষম্যবিরধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন হিসেবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে সাধারণ ছাত্রদের অহিংস আন্দোলন ধীরে ধীরে ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী অভ্যুত্থানের দিকে ধাবিত হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে এ আন্দোলন শুধু ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; হয়ে উঠে দেশের আপামর জনতার এক বিশাল গণঅভ্যুত্থান। জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এ অভ্যুত্থানে একাত্মতা প্রকাশ করে রাজপথে বেরিয়ে আসে। ক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে স্বৈরাচার সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু পদত্যাগের পূর্বে তিনি রেখে যান তার ঘৃণ্য ও বিকৃত মস্তিষ্কের অজস্র কুকীর্তি। এরই অংশ হিসেবে আন্দোলনকারী সহ অনেক নিরীহ জনতার উপর লেলিয়ে দেয়া হয় সশস্ত্র বাহিনী। তাদের গুলিতে শহীদ হয় নিরস্ত্র নিপীড়িত জনতা। আন্দোলনে যোগদান ২০২৪ সালের জুলাই মাসে শহীদ জাহিদ জানতে পারেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কথা। আরও ৪ বছর আগে ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা শুরু করেছিল কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সে বছর তারা স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের হঠকারিতা ও একগুঁয়েমিতার কারণে সম্পূর্ণ খালি হাতে ঘরে ফিরতে বাধ্য হয়েছিলো। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সেই আন্দোলন ২০২৪ সালে আবার ফিরে এসেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে। সে বছর শহীদ জাহিদ হোসেন রাব্বি আরো ছোট ছিলেন। তাই সেদিনের কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তিনি ছিলেন না। ছোট বলে কেউ কিছু বুঝাতেও আসেনি তাকে। তবে কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন না বুঝলেও ঐ বছর স্কুল কলেজ আর মাদ্রাসার ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের ডাকা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে সহপাঠীদের সাথে শহীদ জাহিদও ছিলেন। সেবছর দীর্ঘদিন তারা রাজপথে থেকে আন্দোলন করেছিলেন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে। যৌক্তিক ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্যও যে এদেশে কত সংগ্রাম আর ত্যাগের প্রয়োজন হয় তা ছোট ছোট শিশুদের সাথে শহীদ জাহিদ অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। তাইতো দূর্নীতিবাজ স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন তার চেনা; এই রাজপথ তার পরিচিত। ২০২৪ সালের জুন মাসে ছাত্ররা দেখলো আবারও তারা বৈষম্যের চেতনাবাদী সরকারের কুটচালের শিকার হচ্ছে। তাই জুলাইয়ের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যখন থেকে রাজপথকেই তাদের দাবি আদায়ের শেষ ঠিকানা হিসেবে নির্ধারিত করলো শহীদ জাহিদ তখন থেকেই পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে নিয়মিত আন্দোলনের খোঁজ নিতে শুরু করলে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চলছে রাজপথে। এর মধ্যে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার অস্ত্র হাতে তুলে নিলেন নিরস্ত্র সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। ১৬ জুলাই আন্দোলনরত নিরীহ-নিরস্ত্র সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর নির্বিচারে গুলি করলো খুনি গোপালীশ পুলিশ। শহীদ হলেন রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৬ জন শিক্ষার্থী। এই ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠলো দেশের প্রতিটি সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। আন্দোলনের সাথে যোগ দিলো অনেক স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী। যোগ দিলেন মো: জাহিদ হোসেন রাব্বিও। যেভাবে শহীদ হলেন জাহিদ তার বাবাকে ফোন করে জানায়, “আব্বু, আমি আজ মিছিলে যাব।” বাবার অনুমতি পেয়ে সে আন্দোলনের মিছিলে অংশগ্রহণ করে। বিকাল চারটার পর একটি ফোন আসে, যেখানে জানানো হয় যে গুলিবিদ্ধ হয়েছে জাহিদ। তার শরীরে পাঁচটি গুলি পাওয়া গেছে, যা তাকে গুরুতর আহত করেছে। মেধাবী জাহিদের এই মর্মান্তিক ঘটনা পরিবার ও এলাকাবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া ফেলেছে। কেমন আছে মো: জাহিদ হোসেন এর পরিবার মো: জাহিদ হোসেন রাব্বির মৃত্যুর পর তার পরিবার গভীর শোক ও দুঃখের মধ্যে রয়েছে। তার অকাল মৃত্যু পরিবারের জন্য একটি অপরিসীম শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। একটি স্বপ্নময় তরুণের অকাল প্রস্থান তার পরিবারকে চরম মানসিক কষ্টের মুখোমুখি করেছে। জাহিদের আত্মত্যাগ ও সাহসিকতা তাদের গর্বের কারণ হলেও, তার অভাব তাদের প্রতিদিনের জীবনে এক দীর্ঘস্থায়ী শূন্যতা ও দুঃখ রেখে গেছে। পরিবারটি তার আত্মার শান্তি ও সান্ত্বনার জন্য প্রার্থনা করছে এবং তার স্মৃতিকে সম্মান জানিয়ে চলতে চেষ্টা করছে, যদিও এই যন্ত্রণাদায়ক অভাব তাদের হৃদয়কে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে। প্রতিবেশী ও বন্ধুর বক্তব্য শহীদ মো: জাহিদ হোসেন রাব্বি ভালো, আদর্শবান এবং সহানুভূতিশীল ব্যক্তি। তার প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রয়েছে।" আবু সাঈদের এই মন্তব্য শহীদ জাহিদ হোসেন রাব্বির প্রতি তার আন্তরিক ভালোবাসা এবং কৃতজ্ঞতার প্রকাশ, যা তার মহত্ত্ব এবং প্রভাবকে আরও স্পষ্ট করে তুলে ধরে। পরিবারের আর্থিক অবস্থা মো: জাহিদ হোসেনের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা একটি সীমিত মধ্যবিত্ত পরিবেশকে প্রতিফলিত করে। তার বাবা একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, যিনি স্থানীয় বাজারে পাঞ্জাবির দোকান পরিচালনা করেন। ব্যবসার আয় যথেষ্ট নয়, তবে এটি পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয়। পরিবারের মোটামুটি স্থিতিশীলতার জন্য ব্যবসার আয় অপর্যাপ্ত হলেও কিছুটা সহায়ক। শহীদ মো: জাহিদ হোসেন রাব্বির পরিবার একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার। তাঁর বাবা একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, যিনি স্থানীয় বাজারে ছোট পরিসরের ব্যবসা পরিচালনা করেন। ব্যবসার আয় সীমিত হওয়ায় পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার চিত্রও সাধারণ। প্রতিদিন ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকেন বাবা, আর তার উপার্জন মূলত পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য ব্যবহৃত হয়। জাহিদ হোসেন রাব্বির মা গৃহিণী, যিনি বাড়ির সকল কাজকর্ম ও পরিবারে অন্যান্য দৈনন্দিন দায়িত্ব পালন করেন। সামান্য আর্থিক চাপ থাকলেও, পারিবারিক ঐক্য ও পরস্পরের সহায়তা তাদের চলমান জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। প্রস্তাবনা-১: বাসস্থান প্রয়োজন। প্রস্তাবনা-২: বাবার জন্য কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দিলে উপকার হবে। প্রস্তাবনা-৩: ছোট ভাই-বোনদের লেখা-পড়ার খরচ যোগানে সহযোগিতা করা যেতে পারে। একনজরে শহীদ মো: জাহিদ হোসেন রাব্বি নাম : মো: জাহিদ হোসেন রাব্বি পেশা : ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জন্ম তারিখ ও বয়স : ১১/০৮/২০০৫ আক্রমণকারী : স্বৈরাচার সরকারের ঘাতক পুলিশ শহীদ হওয়ার তারিখ : ২-৩ শাহাদাত বরণের স্থান : খিলক্ষেত মোল্লা ফার্মেসির সামনে দাফন করা হয় : নিজ এলাকায় কবরের জিপিএস লোকেশন : ২৩ক্ক৩৪'০২.৭"ঘ ৯১ক্ক০২'২৯.৮"ঊ স্থায়ী ঠিকানা : খয়রাবাদ, জাফরগঞ্জ, দেবিদ্বার, কুমিল্লা পিতা : মো: ফজর আশী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ৪৯ মাতা : আয়েশা বেগম, গৃহিণী পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ০৬ জন এমনকি সন্তানদের লেখাপড়াও থেমে যায়। হিফজুল কোরআন অধ্যয়ন করাকালীন সাকিব রায়হানের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। শহীদ ১৮ পারা হিফজ সম্পন্ন করেন। জনাব আজিজুর রহমান নিজ এলাকায় ফিতে যান। একটি মুদির দোকান দিয়ে চেষ্টা করেন পরিবারের খরচ বহনের। নামমাত্র উপার্জন দিয়েই বড় মেয়ের বিবাহ সম্পন্ন করেন। মেজ ছেলে সাব্বির রায়হান বর্তমানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি। শহীদ পিতা গ্রামে ফিরে গেলেও সংসারের হাল ধরতে সাকিব চাকরি শুরু করেছিলেন। প্রথমে রবি সিমকার্ড বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে (এসআর) কাজ শুরু করেন। এরপর বাংলালিংক কোম্পানিতে যুক্ত হন। তবে কিছুদিন পর দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাত প্রাপ্ত হলে তিনদিন অনুপ¯ি’ত থাকায় চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় শহীদ সাকিব রায়হানকে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সংস্থায় সল্পমেয়াদী চুক্তিভিত্তিক কাজের পাশাপাশি নতুন চাকরির সন্ধান করতে থাকেন। কিছুদিন পর অর্থনৈতিক শুমারির মাঠকর্মী হিসেবে যুক্ত হন। ১ আগস্ট ২০২৪ তারিখে নতুন চাকরিতে যোগদানের কথা ছিল শহীদের। মা-বাবা বারবার খুলনায় ফিরে আসতে বলেছিলেন। তিনি বলতেন-‘খুলনায় কিছু করার সুযোগ কম। ঢাকায় চাকরি অথবা ব্যবসা করে তোমাদের মুখে হাসি ফোটাব, এরপর ফিরব ইনশাআল্লাহ্। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট সরকারী বৈষম্যের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে স্বৈরাচারী সরকার পুলিশ ও আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগের গুন্ডা বাহিনী লেলিয়ে দিলে আন্দোলন সহিংস হয়ে উঠে। ১৬ জুলাই সারা দেশে ৬ জন নিহত হয়। দিনে দিনে লাশের সারি বাড়তে থাকে। ১৭ তারিখ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে পুলিশ ও ছাত্রলীগের যৌথ হামলায় শিক্ষার্থীরা হলছাড়া হলে ১৮ তারিখ আন্দোলনের নেত...ত্ব নেয় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। এদিন পুলিশ র‌্যাব হেলিকপ্টার ব্যবহার করে ছাত্রদের উপর গুলি চালায়। ১৯ তারিখ জুমার নামাজে পর আপামর ছাত্রজনতা রাস্তায় বেরিয়ে আসলে ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে গুলি চালায় পুলিশ ও ছাত্রলীগের গুন্ডারা। জুলাইয়ের ১৫ তারিখ থেকেই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যোগ দেন সাকিব রায়হান। ১৭ তারিখ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুলিশ ও শেখ হাসিনার গুন্ডাবাহিনীর হামলায় রক্তাক্ত হলে ছাত্রদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর রক্তাক্ত লোগো প্রোফাইল পিকচার হিসেবে সংযুক্ত করেন সাকিব রায়হান। যা এখনও বিদ্যমান। বন্ধুদের সাথে প্রতিদিনই আন্দোলনে যেতেন তিনি। বাড়ি থেকে বার বার আন্দোলনে যেতে নিষেধ করতো তার পরিবার। অবশেষে ১৯ তারিখ বিকাল তিনটায় মিরপুর ১০ নাম্বারে ছাত্রজনতার মিছিলে পুলিশ হামলা চালালে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে লুটিয়ে পড়েন সাকিব। পুলিশের ছোড়া তপ্ত বুলেট তার বুক ভেদ করে পিঠ ফুড়ে বেরিয়ে যায়। ছাত্ররা তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে গাড়িতে মৃত্যুবরন করেন শহীদ সাকিব রায়হান। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষনা করেন। তাঁর বড় ভাই খবর পেয়ে হাসপাতালে যায়। পুলিশ লাশ ফেরত দিতে নয়-ছয় করে। তারা বলে এটা পুলিশ কেস, মামলা করতে হবে। অনেক সময় লাগবে। পরে এসে লাশ নিয়ে যাবেন। অনেক কান্নাকাটির মাধ্যমে করজোড়ে অনুরোধ করলে পরবর্তীতে মর্গ থেকে লাশ নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয় পুলিশ। জানিয়ে দেয়- ‘কোন মৃত্যুসনদ দেওয়া হবে না।’ পরদিন ২০ জুলাই প্রভাতে বড়ভাই সাব্বির রায়হান অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ নিয়ে নিজ গ্রামে ফিরে যায়। জানাজা শেষে বসুপাড়া কবরস্থানে শহীদ সাকিব রায়হানকে দাফন করা হয়। মৃত্যুর আগে তিনি পাশে থাকা সাথীকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আমার শাহাদাতের মাধ্যমে কি দেশে স্বাধীনতা আসবে?’ তার সাথীরা বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ’। এরপর তিনি পানি পান করেন এবং কালিমা পড়েন। নিকটাত্মীয়ের বক্তব্য সাকিবের মা নুরুন্নাহার বেগম জানায়- ‘বিকেল পাঁচটার দিকে কেউ একজন সাকিবের বাবার মুঠোফোন নম্বরে ফোন করে বলেন, সাকিব গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাঁকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ কথা শুনেই তিনি ভেঙ্গে পড়েন। প্রথম দিকে কোথায় কী করবেন, তা বুঝতে পারছিলেন না। পরে ঢাকায় থাকা বড় ছেলে ও জামাতাকে ফোন করে ঘটনাটি জানান। তাঁরাই সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে খোঁজ করে সাকিবের লাশ বাড়িতে নিয়ে আসেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আমার ছেলে দুই ঘণ্টার মতো বেঁচে ছিল। তাকে দুটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু‘ তারা ভর্তি করেনি। পরে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়ার পথে সাকিব মারা যায়। নিজেকে কী বলে সান্তনা দেব, ভেবে পাচ্ছিনা। জোয়ান ছাওয়ালডারে এইভাবে কবর দিতে হবে, ভাবতেও পারিনি। আমার ছাওয়াল গেছে, আমি বুঝতেছি কী কষ্ট! এখন ছাওয়ালের জন্য দোয়া করা ছাড়া আর কিছু করার নেই।’ ‘গত বুধবারও ফোন করেছিল। কত কথা বলল। এখন আমার সাকিব চলে গেছে, এখন এসব বলে কী হবে? আমাদের কিছু বলার নেই। মরদেহ ফেরত পাইছি, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। কত মা তো তাও পায়নাই।’ শহীদ পিতা জনাব আজিজুর রহমান বলেন, ‘গত শুক্রবার আমরা দু’জন ঢাকায় ছেলেদের কাছে গিয়েছিলাম। আসার সময় বারবার সাকিবকে বললাম, আমাদের সঙ্গে খুলনায় চল।’ আমার ছেলে বলেছিল- ‘১ আগস্ট থেকে নতুন চাকরিতে যোগ দেব। চাকরি করে তোমাদের মুখে হাসি ফোটাব।’ কিন্তু‘ আমাদের সব হাসি যে কেড়ে নিল-এটা কাকে বলবো। কিছু বললেই আমার ছেলে হাসতো। ওর হাসিতে আমার কলিজা ঠান্ডা হয়ে যেত। ‘কারও কাছে বিচার চাই না। বিচার আল্লাহপাক করবে।’ জনয়িতার কথার সত্যতা পাওয়া গেল বায়তুল আকাবা মসজিদের সামনে গিয়ে। জোহরের নামাজ শেষে কথা হচ্ছিলো কয়েকজন মুসল্লিদের সঙ্গে। সবাই একবাক্যেই বললেন, এমন ভদ্র ছেলে এলাকায় কমই ছিল। এলাকার প্রিয় মুখটির লাশ হয়ে ফিরে আসা দেখে সবার মুখে ক্ষোভ ও হতাশা ঝরে। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা সাকিবের বাড়ি খুলনা নগরীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নবপল্লী এলাকায়। সেখানকার বায়তুল আকাবা জামে মসজিদের সামনে টিনের চাল ও বেড়ায় জীর্ণশীর্ণ এক কক্ষের একটি বাড়িতে থাকেন সাকিবের বাবা-মা। বাড়িতে প্রবেশের পথটিও বেশ জীর্ণ। রান্নাঘরটি গোলপাতা দিয়ে ছাওয়া। ওই জায়গাটুকু নুরুন্নাহার তাঁর পৈত্রিকসূত্রে পেয়েছেন। সেখানেই ঘর করে কোনোরকমে থাকছেন। বাবা শেখ মো: আজিজুর রহমানের কাপড়ের ব্যবসা ছিল। করোনার সময় ব্যবসা বন্ধ হওয়ার পর একটি মুদি দোকান দিয়েছেন। মা নুরুন্নাহার বেগম গৃহিণী। তার বড় ছেলে সাব্বির রায়হান ঢাকায় অনলাইনে ছোটখাটো ব্যবসা করেন। তাদের দুই ছেলে এবং এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন সাকিব রায়হান। সাকিব রাজধানীর রূপনগর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। বাসায় মাকে নিয়ে থাকতে চেয়েছিলেন তিনি। নুরুন্নাহার বেগমও ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঘাতকের গুলি সবকিছু মুহূর্তে বিলীন করে দিয়েছে। বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে শহীদ পিতা-মাতাকে। একনজরে শহীদের পরিচয় নাম : সাকিব রায়হান জন্ম তারিখ : ১৪-০৯-২০০৪ পিতা : শেখ আজিজুর রহমান (ভুলন) মাতা : নুরুন্নাহার বেগম স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: নবপল্লী, ইউনিয়ন: আকাবা মসজিদ, থানা: সোনাডাঙ্গা, জেলা: খুলনা পেশা : চাকুরি ঘটনার স্থান : মিরপুর ১০ আহত হওয়ার সময়কাল : ১৯ জুলাই ২০২৪, বিকাল ৩টা শাহাদাতের সময়কাল : ১৯ জুলাই ২০২৪, বিকাল ৫ টায় হাসপাতালে নেয়ার পথে আঘাতের ধরন : বুকে গুলি বিদ্ধ আক্রমণকারী : পুলিশ শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : বসুপাড়া সরকারী কবরস্থান প্রস্তাবনা ১. শহীদের ভাইয়ের জন্য চাকরীর ব্যবস্থা করা যেতে পারে ২. গ্রামের বাড়িতে বাবা মায়ের জন্য একটি স্থায়ী ঘর করে দেওয়া যেতে পারে ৩. শহীদের পিতাকে ব্যবসার জন্য পুজির ব্যবস্থা করে দেওয়া যেতে পারে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of জাহিদ হোসেন রাব্বি
Image of জাহিদ হোসেন রাব্বি
Image of জাহিদ হোসেন রাব্বি
Image of জাহিদ হোসেন রাব্বি

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: রফিকুল ইসলাম

ছাইদুল ইসলাম

মো: আলাউদ্দিন

মো: আমিনুল ইসলাম সাব্বির

মো: জাকির হোসেন (শাকিব)

ইশতিয়াক আহমেদ

হামিদুর রহমান

 সৈয়দ মুনতাসীর রহমান আলিফ

মো: মাহমুদুল হাসান

মো: হাছান হোসেন

মোহাম্মদ ইসমামুল হক

রিফাত হোসেন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo