Image of নাসির হোসেন

নাম: নাসির হোসেন

জন্ম তারিখ: ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৫

শহীদ হওয়ার তারিখ: ২৩ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা_সিটি

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: দর্জি শাহাদাতের স্থান: মুগদা মেডিকেল হাসপাতাল

শহীদের জীবনী

শহীদ মো: নাসির হোসেন লক্ষ্মীপুর জেলার সন্তান। তিনি জন্মগ্রহণ করেন লক্ষ্মীপুরের এক কৃষক পরিবারে। তার জন্ম তারিখ ০১-০২-১৯৮৫ সাল। তার পিতার নাম মো: রফিকুল ইসলাম। মা নাজমা বেগম। নাসির ভাই বোনদের মধ্যে সবার বড়। তারা তিন ভাই, পাঁচ বোনের বড় সংসার। স্থায়ী ঠিকানা: গ্রাম: শায়েস্তা নগর, ইউনিয়ন: ১০ নং আশ্রাব নগর, থানা: রায়পুর, জেলা: লক্ষ্মীপুর। বর্তমান ঠিকানা: বাসা: মাতুয়াইল, রায়েরবাগ, থানা: যাত্রাবাড়ি, ঢাকা। যেভাবে নাসির হোসেন হেঁটে গেলেন শাহাদাতের পথে শহীদ মো: নাসির হোসেন পেশায় ছিলেন একজন দর্জি। ইতিহাস সাক্ষী, দেশের প্রয়োজনে যখন জনগণ জেগে ওঠে পেশা তখন গৌণ হয়ে যায়। শ্রেণী পেশার ব্যবধান মুছে সবার পরিচয় তখন দেশপ্রেমিক জনতা। আন্দোলনের মাঠে তাদের পরিচয় তারা যোদ্ধা। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সবাই তখন নেমে পড়ে সংগ্রামে। নাসির হোসেন দর্জি। ২৪ এর বিপ্লবে তিনি একজন বিপ্লবী যোদ্ধা। আমরা যখন ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকাই, ইতিহাসের পাতায় ভাসতে থাকে সংগ্রামী সিপাহশালার মুন্সি মেহেরুল্লার নাম। মুন্সি মেহেরুল্লাহ ছিলেন দর্জি। তার সময়ে মিশনারী খ্রিস্টান পাদ্রীরা মুসলমানদের নানাভাবে বিভ্রান্ত করতে থাকে। তিনি বিষয়টি গভীরভাবে উপলব্ধি করলেন। পাদ্রীদের জবাব দিতে নেমে গেলেন মাঠে। যুক্তিপূর্ণ বক্তব্যের মাধ্যমে পাদ্রীদের কথার জবাব দিতে লাগলেন। দর্জি থেকে জাতির প্রয়োজনে হয়ে গেলেন দ্বীনের দায়ী। পাদ্রীরা পরাজিত হতে লাগল তার জ্বালাময়ী বক্তব্যের সামনে। অনলবর্ষী এই বক্তা অনুভব করলেন শুধু বক্তব্য দিলেই হবে না, তাকে কাজ করতে হবে লেখালেখির মাঠেও। বইপত্র লিখতে লাগলেন। একসময় বই প্রকাশের প্রয়োজনীয়তায় তিনি বিক্রি করে দিলেন উপার্জনের সেলাই মেশিনটিও। যুগের প্রয়োজনে এভাবেই রাজপথে নেমে আসে এদেশের মানুষ। এখন যেটি সিএনজি নব্বইয়ে এটি ছিল বেবি। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের নায়ক নুর হোসেন ছিলেন একজন বেবি চালক। আমাদের আন্দোলন, সংগ্রামে প্রান্তিক শ্রেণি পেশার মানুষের অবদান ছড়িয়ে আছে পাতায় পাতায়। তারা জেগে আছে বলেই, আমাদের সাহস থাকে অসীম। তারা দেশ বাঁচানো মুক্তিকামী বীর সন্তান। ২৪ এর বিপ্লবে নাসির হোসেনদের অবদানকে জাতি স্মরণ করবে শ্রদ্ধার সাথে। নাসির হোসেন পেশায় দর্জি হলেও দেশ নিয়ে তিনি ভাবতেন সবসময়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে তিনি মনে করতেন যৌক্তিক একটি আন্দোলন। একটা দেশকে একটা পরিবার নিজের পৈতৃক সম্পত্তি করে নিয়েছে। কেড়ে নিয়েছে মানুষের অধিকার। কেউ অধিকারের কথা বললেই চালানো হয় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। নাসির হোসেন থাকতেন রাজধানীতেই। ছিলেন সচেতন। রাজনৈতিক ঘটনাবলী তার চোখের সামনেই ঘটতে থাকে। একটি যৌক্তিক দাবী দমন করতে সরকারের দমননীতি শান্ত, নিরীহ নাসিরকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। জুলাইয়ের গণহত্যায় শিহরিত হন তিনি। সরকার গুলি করে হত্যা করে ছাত্র জনতাকে। লেলিয়ে দেয় পোষা বাহিনী। ছাত্রদের বুকে গুলি করে পুলিশ। ছাত্রীদের নজিরবিহীন হেনস্তা করে ছাত্রলীগ, যুবলীগ। প্রতিবাদী হয়ে পড়েন নাসির হোসেন। আন্দোলনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন। নিজে মাঠে থাকেন নিয়মিত। বাসা থেকে সরবরাহ করেন আন্দোলনকারীদের জন্য রান্না করা খাবার ও ঠাণ্ডা পানি। ১৯ জুলাই নাসির হোসেন আন্দোলনকারীদের পানি ও রান্না করা খাবার প্রদান করছিলেন। ২০ জুলাই তিনি ছিলেন রাজধানীর যাত্রাবাড়ির রায়েরবাগ পয়েন্টে। শান্তিপূর্ণ মিছিলে হঠাৎ হামলা করে স্বৈরাচারের পুলিশ। আহত হন অনেকেই। নাসির গুলিবিদ্ধ হন, গুলি লাগে তার মাথা ও মুখে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ভর্তি করা হয় মুগদা হাসপাতালে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ২৩ জুলাই মৃত্যু বরণ করেন। আহত হওয়ার পর তার পরিবারকে বিভিন্ন রকম হয়রানীর সম্মুখীন হতে হয়। আওয়ামী গুন্ডারা তার চিকিৎসা কাজে বাঁধা দেয়। পুলিশি হয়রানি, গুন্ডাদের ভয় অতিক্রম করে চিকিৎসা চালিয়ে যান তার পরিবার। মারা যাওয়ার পর জানাজা, দাফনেও তারা ভয়ভীতি দেখায়। কবরস্থান কর্তৃপক্ষও নানারকম জটিলতা তৈরী করে। সব বাঁধা অতিক্রম করে তাকে অবশেষে মাতুয়াইল কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরিবারের অবস্থা তার বাবা দরিদ্র কৃষক। উল্লেখযোগ্য কোনো জমাজমি নাই। সচ্ছল না হলেও ঋণগ্রস্ত না। দিন এনে দিন খেয়ে জীবন যাচ্ছে কোনোরকমে। বিশাল পরিবার। নাসির সবার বড়ো। পরিবারের প্রতি তার দায়িত্বও বেশি। রামগঞ্জের ছেলে কাজ করতেন ঢাকার রায়েরবাগে। তার সাথে কাজ করতেন আরেক ভাই। নাসিরের বাবা এখনও দিনমজুরের কাজ করেন। এক ভাই বেকার। এক বোন স্কুলে ও এক বোন কলেজে পড়ে। নাসির শুধু পরিবারের রুটি রুজির ভরসা না, তিনি ছিলেন ভাই বোনদের গর্ব ও সম্মানের প্রতীক। একজন দায়িত্বশীল অভিভাবক। তার মৃত্যু পরিবারটির জন্য চরম হতাশাজনক। মো: গুলজার হোসেনের মতে নাসির হোসেন একজন নম্র ভদ্র মানুষ। পিতার একজন যোগ্য সন্তান। তিনি তার ভাই বোনদের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজের ব্যক্তিগত জীবনের অনেক কিছুই বিসর্জন দিয়েছেন। তার জন্ম ১৯৮৫ সালে। তিনি এখনও অবিবাহিত। বোনদের মতে তাদের ভাই শুধু ভাই ছিলেন না, ছিলেন একজন বটবৃক্ষের মতো ছায়াদার অভিভাবক। তাদের ভাই ছিলেন তাদের জন্য আল্লাহর দেওয়া শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। আল্লাহ তাদেরকে একজন মহান হৃদয়ের ভাই দিয়েছিলেন। অথচ স্বৈরাচারের বুলেট তাকে হত্যা করল। তারা এই হত্যার বিচার দাবী করে। জিলানী ইসলাম শহীদের ছোট ভাই। তিনি জানান, শান্ত স্বভাবের নাসির এতোটা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশ নেবেন তা ভাবেননি। নাসিরের রক্তমাখা জামা তার মা এখনো স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়েছেন। নাসিরের মৃত্যুতে তাদের পরিবার হতবিহবল। নাসিরের স্মৃতিতে তারা বেদনায় ভারাক্রান্ত, তবে দেশের জন্য তার আত্মত্যাগে তারা গর্বিত। এক নজর তথ্যসমূহ শহীদ : মো: নাসির হোসেন জন্ম তারিখ : ০১-০২-১৯৮৫ সাল পিতা : মো: রফিকুল ইসলাম মা : নাজমা বেগম শহীদের ভাই বোন : তারা তিন ভাই, পাঁচ বোন স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: শায়েস্তা নগর, ইউনিয়ন: ১০ নং আশ্রাব নগর, থানা: রায়পুর, জেলা: লক্ষ্মীপুর বর্তমান ঠিকানা : বাসা: মাতুয়াইল, রায়েরবাগ, থানা: যাত্রাবাড়ি, ঢাকা পেশা : দর্জি শাহাদাতের চিত্র রায়েরবাগ বাজারে র‌্যাব/ বিজিবির গুলিতে ২০ জুলাই মাথায় ও মুখে গুলিবিদ্ধ হন। তখন সময় দুপুর ১২.৩০ পরবর্তীতে ২৩ জুলাই মুগদা হাসপাতালে সন্ধ্যা ৭.৩০ এ মৃত্যুবরণ করেন। মাতুয়াইল কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। প্রস্তাবনা ১. দুঃস্থ এ পরিবারটিকে স্বাবলম্বী করার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন এককালীন অনুদান ২. প্রয়োজন সুন্দর একটি বাসস্থান ৩. তার ভাইদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা ৪. বোনদের পড়ালেখার খরচ জোগান দেওয়া ৫. মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা ৬. চিকিৎসা ভাতা দেওয়া ৭. বোনদের বিবাহের জন্য এককালীন অর্থ প্রদান

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of নাসির হোসেন
Image of নাসির হোসেন
Image of নাসির হোসেন
Image of নাসির হোসেন
Image of নাসির হোসেন
Image of নাসির হোসেন
Image of নাসির হোসেন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: সবুজ

হাসিব আহসান

মোঃ নুরু বেপারী

মো: মাহাদী হাসান প্রান্ত

ওয়াসিম শেখ

মো: মনির হোসাইন

মো: আসিব মিয়া

মো: সায়েম হোসেন আলিফ

মো: সাইফুল ইসলাম

মো: আসলাম

অজ্ঞাত

মোঃ ইয়াকুব

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo