জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ১৯৮৩
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা :মাদরাসা শিক্ষক ও ইমাম। শাহাদাতের স্থান :বাড্ডা।
কুমিল্লা জেলার বরুড়া পৌরসভার অর্জুনতলা গ্রামে ১৯৮৩ সালের ০১ জানুয়ারী জন্ম গ্রহণ করেন শহীদ হাফেজ মাসুদুর রহমান। বাবার নাম মাওলানা মুহাম্মদ ওয়ালি উল্লাহ। তিনি এখন স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম। মায়ের নাম আনোয়ারা বেগম, তিনি বয়সের কারণে অবসরে আছেন। শহীদ হাফেজ মাসুদুর রহমান ছোট বেলা থেকে গ্রামে বড় হন। এলাকাবাসীর সাথে ছোট বেলা থেকেই তার ভাল সখ্যতা ছিল। মা বাবা অনেক কষ্টে পড়ালেখা করিয়েছেন মাদরাসায়; যেন বড় আলেম হয়ে মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দিতে পারেন। তিনি আলেম হয়েছিলেনও। মানুষকে দ্বীনের দাওয়াতও দিয়েছেন কিন্তু বেশিদিন বাঁচতে দেয়নি নরখাদক হায়েনার দল স্বৈরাচারী খুনি হাসিনার মদদপুষ্ট কলঙ্কিত প্রশাসন। তিনি ঢাকার কাঁঠালবাগানের একটি হিফজ মাদরাসা থেকে পবিত্র কুরআন হিফজ করণে এবং সর্বশেষ দাওরায়ে হাদিসের সমাপনী বর্ষে অধ্যয়নরত ছিলেন।যেভাবে শাহাদাত বরণ করেন ১৯ জুলাই ২০২৪, জুমাবার। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বর্বরতম দিন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে এদিন দ্বিতীয় দিনের মত ‘কম্প্লিট শাট ডাউন’ কর্মসূচি চলছিল। আওয়ামী সরকার আন্দোলন দমানোর জন্য ইন্টারনেট বন্ধ করে নৃশংস গণহত্যা চালায় সারাদেশে। এদিন জুমার নামাজের পর বাড্ডা এলাকায় তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলে ছাত্র জনতা। এতে যোগ দেয় সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। বাড্ডা এলাকা মাদরাসাতুর রহমানিয়ার শিক্ষক মাসুদুর রহমান আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে ছাত্র জনতার সাথে। পুলিশ এতে সরাসরি গুলি চালায়। গুলিতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় অনেকে। গুলিবিদ্ধ হন তরুণ আলেম মাসুদুর রহমানও। পথচারীরা তাকে ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এভাবে আল্লাহর জিম্মায় পাড়ি জমান তিন মেয়ের জনক শহীদ মাসুদুর রহমান। কুরআনের দায়ী ছিলেন হাফেজ মাসুদুর রহমান হাফেজ মাওলানা মাসুদুর রহমান ছিলেন কুরআনের একনিষ্ঠ দায়ী। তার সুললিত কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত সবাইকে মুগ্ধ করতো। তিনি ঢাকার একটি মসজিদের ইমাম ও ছিলেন। এলাকায় আসলে ছোট বড় সবাইকে নামাজের দাওয়াত দিতেন। কুরআনের কথা শোনাতেন। তাঁর আলোচনা ছিল খুবই তথ্য নির্ভর এবং প্রতিবাদী। জালিমের জুলমের সব সময় সোচ্চার ছিলেন তিনি। প্রতিবেশী ফরহাদ বলেন, এই তরুণ আলেম মুসলিম উম্মাহর একজন সম্পদ ছিলেন। আওয়ামী হায়েনারা তাকে বাঁচতে দিলনা। এখন উম্মাহ এই তরুণ দায়ীর অভাববোধ করবে। ক্ষতবিক্ষত পরিবার মাসুদুর রহমানকে হারিয়ে তার পরিবার দৈন্যদশায় পতিত হয়েছে। তার তিন মেয়ে এখনো ভুলতে পারছেনা বাবার রক্তাক্ত দেহের দৃশ্য। তাদের চোখে মুখে এখনো আতংকের ছাপ রয়েছে। বাবার কথা মনে পড়লে কাঁদেন তার বৃদ্ধ মা। বাবা হয়ে যান বাকরুদ্ধ। পরিবারের একমাত্র উপর্জনক্ষম ব্যক্তি শহীদ হওয়াতে পরিবারে চলছে অভাব অনটন। এখন সম্পূর্ণ পরনির্ভরশীল হয়ে পড়েছে পরিবারটি। তার স্ত্রী তাসমিন আক্তার বলেন, “আমার হাজবেন্ড একজন আলেম ছিলেন। তার কি অপরাধ ছিলো। কেন তাকে হত্যা করা হলো? আমি এখন তিনজন মেয়ে নিয়ে কোথায় যাবো? আপনারা সবাই তার জন্য দোয়া করবেন, আল্লাহ তায়ালা যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন।” তার মেঝো মেয়ে মাহবুবা বলেন, “আমার আব্বু আমাদেরকে অনেক ভালোবাসতেন। আমরা আব্বুকে মিস করি খুব। আব্বুকে খুব মনে পড়ে আমার। আজ কতদিন আব্বু আমাদের বাড়িতে আসেনা। আব্বুকে যারা মেরে ফেলেছে আমি তাদের ফাঁসি চাই। এক নজরে শহীদ মাসুদুর রহমান নাম : হাফেজ মাসুদুর রহমান পেশা : মাদরাসা শিক্ষক ও ইমাম জন্ম তারিখ ও বয়স : ০১-০১-১৯৮৩ আহত ও শহীদ হওয়ার তারিখ : ১৯ জুলাই ২০২৪, জুমাবার শাহাদাত বরণের স্থান : বাড্ডা দাফন করা হয় : নিজগ্রামে কবরের জিপিএস লোকেশন : বন্যার কারণে পাওয়া যায়নি স্থায়ী ঠিকানা : অর্জুনতলা, বরুড়া পৌরসভা, কুমিল্লা পিতা : মাওলানা ওয়ালি উল্লাহ মাতা : আনোয়ারা বেগম ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : একটি পাকা বাড়ি ও অল্প ভিটাজমি আছে সন্তানাদি ও ভাই বোনের বিবরণ : ভাই নাই। ৪ বোনের সবাই বিবাহিত। তিন মেয়ে এখন পড়াশোন না করে সম্ভাব্য প্রস্তাবনা ১. তিন মেয়ের পড়াশোনার খরচ বহন করা ২. নিয়মিত আয় আসার জন্য দুটি সিএনজি কিনে ভাড়া দেওয়া যেতে পারে