জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ১৯৯৮
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা :মার্কেটিং, শাহাদাতের স্থান :মিডফোর্ট হাসপাতাল।
মোঃ জহিরুল ইসলাম ১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি বাবা শাহ আলম ও মা মুশেদা বেগমের কোল আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন। কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বারে তার জন্ম ও বেড়ে উঠা। অভাবের সংসারে জীবিকার তাগিদে একটি দোকানের মার্কেটিং এর কাজ করতেন জহিরুল। আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে জনগণ নানান অন্যায়, শোষণ, নিপীড়ন ও জুলুমের নির্মম ভুক্তভোগী। এদেশের মুক্তিকামী জনতা সময়ের দাবিতে সাড়া দিয়ে এহেন অত্যাচারের বিরুদ্ধে বারংবার রুখে দাঁড়িয়েছে। সেই সাথে হুংকার দিয়ে সংগ্রামী জনতার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে ছাত্রবৃন্দ। উপরুন্তু গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সাক্ষী, দেশের ক্রান্তিকালে বরাবরই ছাত্রদের মাধ্যমে আন্দোলন সংগ্রামের সূত্রপাত ঘটে। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ১ জুলাই থেকে টানা আন্দোলন শুরু হয়েছিল। অহিংস এই আন্দোলন ১৫ জুলাই থেকে সহিংস হয়। আন্দোলনে নিরস্ত্র ছাত্র জনতার ওপর সশস্ত্র ঘাতক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ পুলিশ ও জঅই সদস্যরা হামলা চালাতে থাকে। রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের শাহাদাতের পর থেকেই আন্দোলন গণমানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্রমেই জনসাধারণের আন্দোলনে রূপ নেয়। এটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন হিসেবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে সাধারণ ছাত্রদের অহিংস আন্দোলন ধীরে ধীরে ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী অভ্যুত্থানের দিকে ধাবিত হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে এ আন্দোলন শুধু ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; হয়ে উঠে দেশের আপামর জনতার এক বিশাল গণঅভ্যুত্থান। জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এ অভ্যুত্থানে একাত্মতা প্রকাশ করে রাজপথে বেরিয়ে আসে। ক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে স্বৈরাচার সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। যেভাবে শহীদ হলেন মো: জহিরুল ইসলামের ঘটনাটি ৪ আগস্ট ২০২৪ তারিখে গুলিস্তান, শোরটুলি প্রাইমারী স্কুলের সামনে ঘটেছিলো। তিনি সকাল ১১ টায় বাসা থেকে বের হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিতে। আন্দোলন চলাকালীন পুলিশ এবং হেলমেট বাহিনী আক্রমণ করে, একজন পথচারী তার বাসায় ফোন করে জানান যে, মিডফোর্ট হাসপাতালে লাশ পাওয়া গেছে। পরে জানা যায়, মো: জহিরুল ইসলামের শরীরে একটি গুলি লেগেছে যা হাত দিয়ে প্রবেশ করে বগলের নিচ দিয়ে বের হয়েছে। এই ঘটনায় তার মৃত্যু নিশ্চিত হয়। ঘটনাটি ঘটেছে গুলিস্তান, শোঙ্গুলি প্রাইমারী স্কুলের সামনে। কেমন আছে জহিরুল ইসলামকে হারিয়ে তার পরিবার মো: জহিরুল ইসলামের পরিবারের বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত - নাজুক। পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী হিসেবে তার হঠাৎ হারিয়ে যাওয়ার পর, পরিবারটির জীবন খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। তার পরিবারে স্ত্রী এবং দুই বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। বর্তমানে, তাদের আর্থিক ও মানসিক অবস্থা সংকটাপন্ন, কারণ পরিবারের কোনো নিয়মিত আয় নেই এবং জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা পাওয়াও কঠিন হচ্ছে। শহীদ মো: জহিরুল ইসলামের পরিবার বর্তমানে একটি কঠিন অর্থনৈতিক অবস্থায় রয়েছে। পরিবারটি পুরুষশূন্য, অর্থাৎ পরিবারের কোনো উপার্জনক্ষম সদস্য নেই। বর্তমানে পরিবারে দুই বছরের একটি ছোট মেয়ে এবং তার মা রয়েছেন। তাদের ভিটাজমি আছে, তবে এটি আয়-উপার্জনের কোনো উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। অর্থাৎ, পরিবারের কোনো নিয়মিত আয় নেই। কেমন আছে জহিরুলকে হারিয়ে তার মা জহিরুল ইসলামের মা তার সন্তানের মৃত্যুতে অপ্রতিরোধ্য দুঃখ ও শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, "আমার ছেলে জহিরুল ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান অংশ। তার চলে যাওয়া আমার হৃদয়কে ভেঙে দিয়েছে এবং জীবনকে অন্ধকারে ডুবিয়ে দিয়েছে।" তার মা আরো জানান, "জহিরুল ছিল একজন নিষ্ঠাবান ও ভালো মানুষ,সে সবসময় তার পরিবারের এবং সমাজের জন্য ভালো কিছু করার চেষ্টা করতেন। তার হাসি, সহানুভূতি ও পরিশ্রম আমাদের সবার কাছে অনুপ্রেরণা ছিল। শহীদ সম্পর্কে প্রতিবেশী ও বন্ধুর বক্তব্য মো: জহিরুল ইসলাম সম্পর্কে প্রতিবেশী ও বন্ধুরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, তিনি ছিলেন অত্যন্ত সদালাপী এবং সমাজসেবায় মনোযোগী একজন ব্যক্তি। প্রতিবেশীরা জানান, তার মৃত্যু পুরো এলাকা এবং পরিবারকে স্তম্ভিত করেছে। শহীদের বন্ধু বলেন, "জহিরুল ইসলামের মধ্যে সততা ও মানবিকতার একটি বিশেষ গুণ ছিল।" সহপাঠীরা উল্লেখ করেন যে, তিনি শিক্ষাগত এবং সামাজিক কর্মসূচিতে সবসময় সক্রিয় ছিলেন এবং সহপাঠীদের জন্য প্রেরণা স্বরূপ ছিলেন। নিকটাত্মীয়রা শোক প্রকাশ করে জানান, তার মৃত্যু তাদের জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে এবং তাকে হারানোর কষ্ট তারা অল্প সময়ের মধ্যে মেটাতে পারবে না। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : মো: জহিরুল ইসলাম পেশা : মার্কেটিং জন্ম তারিখ ও বয়স : ০১ জানুয়ারি ১৯৯৮, ২৬ বছর আক্রমণকারী : স্বৈরাচারী সরকারের ঘাতক পুলিশ শহীদ হওয়ার তারিখ : ০৪ আগস্ট ২০২৪ শাহাদাত বরণের স্থান : মিডফোর্ট হাসপাতাল দাফন করা হয় : নিজ এলাকায় কবরের জিপিএস লোকেশন : ২৩ক্ক৩৯'৪৭.৭"ঘ ৯১ক্ক০১'০৭.৮"ঊ স্থায়ী ঠিকানা : দেবিদ্বার, কুমিলা পিতা : মৃত শাহ আলম মাতা : মুশেদা বেগম ভাইবোনের বিবরণ : দুই বোন প্রস্তাবনা ১. শহীদের পরিবারকে এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান করা ২. একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির বিয়োগান্তে পরিবারকে নিয়মিত মাসিক ভাতা প্রদান করা ৩.সন্তানের ভবিষ্যতের সব ধরণের খরচ বহনের ব্যবস্থা করা পাকা বাড়ি করার ব্যবস্থা করা