Image of মো: হাছান হোসেন

নাম: মো: হাছান হোসেন

জন্ম তারিখ: ৩ জানুয়ারি, ২০০৬

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৮ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: চট্টগ্রাম

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা :দোকানে কর্মচারী, শাহাদাতের স্থান : ঢাকা মেডিকেল কলেজে

শহীদের জীবনী

"আমার ছেলে ছিল আমার গর্ব। অল্প বয়সে সে আমাদের পরিবারের জন্য অনেক কিছু করেছে’’ ‘সে ছিল আমার পরিবারের আশা-ভরসা’ চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার তুলাতলী গ্রামের এক প্রতিভাবান তরুণের নাম হাছান হোসেন। ২০০৬ সালের ৩ জানুয়ারি জনাব কবির হোসেন ও হালিমা বেগমের ঘর আলোকিত করে জন্ম নেন তিনি। নিজ গ্রামে প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার পর ভর্তি হন রহিমানগর শেখ মুজিবুর রহমান ডিগ্রি কলেজে। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিতে যুক্ত ছিলেন শহীদ হাছান। ক্রিকেট খেলায় তুখোড় পারদর্শী ছিলেন তিনি। পরিবারের করুণ অবস্থা শহীদ পরিবারের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটপূর্ণ। তাঁর বাবা কবির হোসেন পেশায় কৃষক ছিলেন। বর্তমানে পায়ের অপারেশনের কারণে কাজ করতে অক্ষম তিনি। যে কারণে পরিবারের প্রধান আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শহীদ পরিবারের নিজস্ব জমি বলতে শুধু ভিটেমাটি রয়েছে। ভিটার আধাপাকা বাড়িটি চাচার অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে। নিজের লেখাপড়া ও পিতার চিকিৎসার জন্য একটি দোকানে কর্মচারী হিসাবে কাজ করতেন শহীদ হাছান। ফলে তাঁর আয়ে পরিবার কিছুটা স্বস্তি পেত। কিন্তু হাসানের মৃত্যুর পর সেই আয়ের উৎসও বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে পরিবারটিতে চরম আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায়, পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তা যেমন বোনের শিক্ষার খরচ, বাবার চিকিৎসার খরচ এবং দৈনন্দিন জীবনের সংসারের খরচ যোগানে সহায়তা প্রয়োজন। "এই ছেলে আমার অহংকার। তাকে আমি দেশের জন্য দিয়েছি’’ আমার ছেলে আমার গর্ব শহীদ হাছান হোসেন ছিলেন একজন অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ এবং দায়িত্বশীল ছেলে। তাঁর পরিবার এবং পরিচিতজনরা তাঁকে একজন শান্ত ও পরিশ্রমী তরুণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি পরিবারের আর্থিক সমস্যার কথা মাথায় রেখে পড়াশোনার পাশাপাশি দোকানে কাজ করতেন। শহীদ জননী হালিমা বেগম শোকাহত কণ্ঠে বলেন, “আমার ছেলে ছিল আমার গর্ব। অল্প বয়সে সে আমাদের পরিবারের জন্য অনেক কিছু করেছে। আমি তাকে দেশের জন্য হারিয়েছি, আমার সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। “তার বাবা কবির হোসেনও ছেলের জন্য গর্বিত হয়েছেন। তিনি বলেন, “এই ছেলে আমার অহংকার। তাকে আমি দেশের জন্য দিয়েছি। সে ছিল আমার পরিবারের আশা-ভরসা। “হাছান হোসেনের এই আত্মত্যাগ তাঁর পরিবারের জন্য যেমন শোকের, তেমনি বীরত্বের। শুধু গ্রামবাসী নয় আজ শহীদ হাছান হোসেনকে গোটা বাংলাদেশবাসী সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করে। পরিবারের সবাই একমত যে হাছান ছিলেন সবার প্রিয়। তাঁর মৃত্যুতে শুধু পরিবার নয়, পুরো সমাজ এক অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ‘বেতন পাহাড় সম না হলেও স্বপ্ন দেখতেন গগন চুম্বী’ উপার্জনের যাপিত জীবন শহীদ হাছান হোসেন পরিবারের দায়িত্ব নিতে রাজধানী শহরে আসেন। উদ্দেশ একটাই তা হলো চাকরি। কয়েকদিন যেতে না যেতে সে সোনার হরিণ হাতে ধরা দেয়। বাড্ডা এলাকায় একটি ষ্টেশনারি দোকানে কর্মচারী পদে নিযুক্ত হন হাছান। বেতন পাহাড় সম না হলেও স্বপ্ন দেখতেন গগন চুম্বী। বাড়িতে তিন বোন, অসুস্থ বাবা এবং সংসারের দায় দায়িত্ব নিজের উপর বর্তালে পরিশ্রম বাড়িয়ে দেয় হাছান। নিয়মিত আট ঘণ্টার পাশাপাশি ওভার টাইম ডিউটি করতে হয় তাঁকে। যা দিয়ে সংসারের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয়তা মিটতে শুরু করে। এভাবে চলতে থাকে দিনের পর দিন। ধীরেধীরে পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী হয়ে ওঠেন দেশপ্রেমিক হাছান। হঠাৎ সারাদেশে ছাত্র-জনতা তৎকালীন স্বৈরাচারী শাসক খুনি হাসিনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা করে। যে কর্মসূচীতে যোগদান করেছিল শহীদ বীর তেজস্বী তরুণ হাছান হোসেন। ‘বাবার দিকে খেয়াল রাখিস। আমি এক সপ্তাহ পর টাকা পাঠাব।’ শাহাদাতের দিন ও রাতের অগ্রভাগ ১৮ জুলাই ২০২৪, ঢাকার রামপুরা এলাকায় তৎকালীন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন মো: হাছান হোসেন। সেই আন্দোলনে কানাডিয়ান এবং ব্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। যেখানে ছাত্র-জনতা এক হয়ে কোটাপদ্ধতি সংস্কারের জন্য শান্তিপূর্ণ দাবি দাওয়া পেশ করে। আন্দোলনকে রুখে দিতে অত্র এলাকার খুনি হাসিনার দোসর আওয়ামী যুবলীগের সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র হাতে নিয়ে মহড়া দিতে থাকে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সাথে মিশে যায়। পরিচয় গোপন করে হামলা চালিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। একধিক ছাত্র-জনতা অবস্থায় তাঁদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আন্দোলনকে দমন করতে হাসিনা দ্বিতীয় চাল চালে। র‌্যাবের মাধ্যমে একটি হেলিকপ্টার থেকে লাগাতার গুলি বর্ষণ করতে থাকে। হঠাৎ হাসানের মাথায় একটি গুলি এসে লাগে। রক্তাক্ত জখম হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। ঘটনাস্থল থেকে তাঁকে উদ্ধার করে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয় শহীদকে। ১৯ জুলাই দিন-রাত হাছানের পরিবার আইসিইউ এর বাইরে থেকে দুশ্চিন্তা করতে থাকে। তার মমতাময়ী মা বারবার ছেলের জখম অবস্থা দেখে পেরেশানিতে ছটপট করতে থাকেন। ধীরেধীরে অবস্থার অবনতি হতে থাকে। ওয়েটিং রুমে আত্মীয়-স্বজনের কান্নার শোরগোল পড়ে যায়। ২০ জুলাই ২০২৪, রাত ৯:২০ মিনিট। হঠাৎ নার্স দৌড়ে এসে জানায়- পেশেন্ট হাছানের আত্মীয় কে আছেন? শহীদ জননী কাঁদতে কাঁদতে জবাব দেন- আমি তাঁর হতভাগা মা। নার্স বলেন-‘আপনারা দোয়া দরুদ পড়তে থাকেন, রোগীর অবস্থা ভালো না।’ তাঁর কিছুক্ষণ পর মহান আল্লাহর দরবারে পাড়ি জমান মহাবীর হাছান হোসেন। মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে সেকেন্ডারি ব্রেইন ইনজুরি উল্লেখ করা হয়। শহীদের মৃত্যুতে পরিবারের ওপর শোকের ছায়া নেমে আসে। আহত হওয়ার আগে সর্বশেষ বোনের সাথে কথা বলেছিলেন হাছান। তাঁকে জনিয়েছিলেন ‘রাজধানীর অবস্থা সুবিধার না, যে কোন মুহূর্তে কি জানি কি হয়ে যায়।’ নিজের জন্য দোয়া করতে বলেছিলেন। আর বলেছিলেন- ‘বাবার দিকে খেয়াল রাখিস। আমি এক সপ্তাহ পর টাকা পাঠাব।’ বিশেষ মন্তব্য হাসানের এই বীরত্বপূর্ণ ত্যাগ পরিবার এবং সমাজের জন্য যেমন একটি বড় ক্ষতি, তেমনি তার সাহসিকতা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বড় উদাহরণ হয়ে থাকবে। একজনরে শহীদের তথ্যাবলি নাম : হাছান হোসেন জন্ম তারিখ : ৩ জানুয়ারি ২০০৬ বাড়ি : তুলাতলী, কচুয়া, চাঁদপুর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : রহিমানগর শেখ মুজিবুর রহমান ডিগ্রি কলেজ খেলাধুলা : দক্ষ ক্রিকেটার, বয়স: ১৮ শহীদ হওয়ার ঘটনা : ১৮ জুলাই ২০২৪, ঢাকার বাড্ডা এলাকায় আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে মাথায় আঘাত পায় হাছান ২০ জুলাই ২০২৪, ঢাকা মেডিকেল কলেজে মারা যান তিনি পরিবারের সদস্যরা বাবা : কবির হোসেন (কৃষক, পায়ে অপারেশন হয়েছে) মা : হালিমা বেগম ভাই-বোন : জান্নাতুল ফিরদাউস (২০, বিবাহিত) : লিমা আক্তার (১৮, শিক্ষার্থী) : তাসফিয়া আক্তার (১৪, শিক্ষার্থী ) প্রস্তাবনা ১. শহীদ পিতাকে যে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দিলে উপকার হবে। (মুদি দোকান) ২. ছোট বোনদের লেখা-পড়ার খরচ যোগানে সহযোগিতা করা যেতে পারে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: হাছান হোসেন
Image of মো: হাছান হোসেন
Image of মো: হাছান হোসেন
Image of মো: হাছান হোসেন
Image of মো: হাছান হোসেন
Image of মো: হাছান হোসেন
Image of মো: হাছান হোসেন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: রাসেল বকাউল

সৈকত চন্দ্র দে

মো: আশিক মিয়া

মো: আবদুর গনি

মো: আরিফ বেপারী

মো: পারভেজ

জাহিদ হোসেন রাব্বি

মো: আলাউদ্দিন

মো: নিজাম উদ্দিন ইমন

মো: হাসান (হাফেজ হাসান)

মো: নুর মোস্তফা

মো: আবু বকর ছিদ্দিক

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo