Image of মো: আজাদ সরকার

নাম: মো: আজাদ সরকার

জন্ম তারিখ: ১১ মার্চ, ১৯৬৫

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: চট্টগ্রাম

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : অবসর, শাহাদাতের স্থান : কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ

শহীদের জীবনী

চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ পৌরসভার টোরাগড় গ্রামের একজন সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন আজাদ সরকার। তিনি তার জীবনের শেষ বয়সে এসে শহিদের মর্যাদা লাভ করতে পেরেছেন। এই গ্রামের মরহুম আনু মিয়া সরকার ও মরহুম শাহিনা রানী এর সন্তান ছিলেন আজাদ সরকার। শিশুকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা খুব কাছ থেকে যেমন দেখেছেন, ২০২৪ এ এসেও সেই বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতায় তার স্মৃতি রেখে যেতে পেরেছেন। নিজ গ্রামে তিনি সামাজিক কাজ করে বেড়াতেন। নিজের পকেটের টাকা ব্যয় করে মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করে গিয়েছেন জীবনভর। গতানুগতিক ধারায় অল্প শিক্ষিত ছিলেন। শাহাদত বরণ করার পূর্বে বয়োবৃদ্ধ শহীদ আজাদ ৭ সদস্যের পরিবারের সাথে নিজ বাড়িতে একত্রে বসবাস করতেন। তাঁর বড় ছেলে রাজিব সরকার একজন কন্ট্রাক্টর। মেজ ছেলে মোস্তফা আহমেদ ও সেজ ছেলে আহমেদ কবির হিমেল দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। সর্ব কনিষ্ঠ সন্তান আহমেদ কবির সামির এখনও ছাত্র। মোটামোটি সচ্ছলতার সাথেই দিনাতিপাত করেন শহীদ পরিবার। ‘মিঠুকাজী ও তুষারকাজী নামে ২ জন চাপাতি দিয়ে আজাদ সরকারকে একেরপর কোপ দিতে থাকে’ শাহাদাতের প্রেক্ষাপট পিশাচ দেখেছেন? দেখেননি? দেখেছেন, বোধহয় লক্ষ করেননি। একজন জলজ্যান্ত মানুষকে কতগুলো মানুষরূপী দানব পিটিয়ে মেরে ফেলছে। পৈশাচিক উল্লাসে মাতছে। দেখেননি? মানুষের থেকে বড় কোন পরিচয় মানুষের থাকতে পারে না। একজন মানুষের নিজস্ব দর্শন থাকতে পারে। তা ভুল কি সঠিক সেটা আলাদা কথা। একজন ভয়ংকর খুনিও আইনের আশ্রয় পায়। নিম্ন আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট না হলে উচ্চ আদালতে আপিলের সুযোগ পায়। অসুস্থ হলে সরকার তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব গ্রহণ করে। অথচ সামান্য মতের অমিল হলে, ভিন্নমতাবলম্বী হলে, অভিযুক্ত মানুষটিকে সুযোগ পেলেই এই পিশাচগুলি পিটিয়ে মেরে ফেলে। ২০২৪ এর ছাত্র জনতার এই অভ্যূত্থানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরা বাংলাদেশে চলেছে নির্মম হত্যাকান্ড। নির্বিচারে মানুষ কে আহত নিহত করা সত্তে¦ও সর্বস্তরের মানুষ নিজ নিজ জায়গা থেকে এই আন্দোলন কে জিইয়ে রাখতে সাহায্য করেছে। তার একটি দৃষ্টান্ত নজির দেখিয়ে গেছেন আজাদ সরকার। নিজে বৃদ্ধ মানুষ হয়েও গত ০৪ আগষ্ট ২০২৪ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জন্য তিনি পানি দিতে গেলে নির্মম ভাবে আঘাত প্রাপ্ত হন। তারই প্রতিবেশী মিঠুকাজী ও তুষারকাজী নামে ২ জন চাপাতি দিয়ে আজাদ সরকারকে অনবরত কোপ দিতে থাকে। এক পর্যায়ে এলাকার মানুষ তাকে কুমিল্লা মেডিক্যালে নিয়ে গেলে পরের দিন ০৫ আগস্ট আজাদ সরকার মৃত্যু বরণ করেন। শহীদ আজাদ সাহেব কল্পনাও করতে পারেনি যে তার সন্তানতূল্য ছেলেরা তাকে এভাবে কুপিয়ে হত্যা করবে! এভাবেই নিজ প্রতিবেশীদের হাতে অসহায় ভাবে জখম হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বেন! ‘আজাদ সরকার নিজের পকেটের টাকা খরচ করে মানুষের উপকার করতেন’ শোকাহত এলাকাবাসী সবার প্রিয় আজাদ সরকার নিজ প্রতিবেশীদের হাতে এভাবে নির্মম, নিপীড়ন, নির্যাতিত জখম হয়ে শাহাদাত বরণ করবেন কেও যেন বিশ্বাস করতে পারেনা। সন্তানতূল্য ছিল হত্যাকারীরা, একসাথে চলাফেরা ও উঠা বসা করা সত্তে¦ও শুধু মাত্র স্বৈরশাসক এর গোলামীর জের ধরে তাঁকে শেষ বয়সে এসেও এমন করুণ ভাবে হত্যা করা হবে তা এলাকা বাসীর কল্পনাতেও ছিল না। সবসময় মানুষের পাশে থাকতে সাহায্য করতেন। তাঁকে হারিয়ে এলাকাবাসী ভীষন ভাবে শোকাহত। প্রতিবেশী শেখ ফরিদ মজুমদার বলেন ‘আজাদ সরকার অনেক জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। তিনি সুযোগ পেলে সামাজিক ভাবে বিভিন্ন কাজেকর্মে সহযোগিতা করতেন। এলাকার সবাই তাকে সন্মান করত। আজাদ সরকার নিজের পকেটের টাকা খরচ করে মানুষের উপকার করতেন। কখনও কারও সাথে ঝগড়া বিবাদে জড়াতেন না। গ্রামবাসীর যে কাউকে জিজ্ঞাসা করলে এক বাক্যে বলবে- ‘সর্বোপরি তিনি একজন ভালো মানুষ ছিলেন’ এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : আজাদ সরকার পেশা : অবসর জন্ম তারিখ ও বয়স : ১১ মার্চ ১৯৬৫, ৫৯ বছর আহত হওয়ার তারিখ : ০৪ আগস্ট ২০২৪, রবিবার, আনুমানিক দূপুর ১.৩০ টা শহীদ হওয়ার তারিখ : ০৫ আগস্ট ২০২৪, সোমবার, সন্ধ্যা ০৭.০০ টা শাহাদাত বরণের স্থান : কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ দাফন করা হয় : চাঁদপুর কবরের জিপিএস লোকেশন : ২৩ক্ক১৫'১৫.৩"ঘ ৯০ক্ক৫১'৫৩.৯“ঊ স্থায়ী ঠিকানা : সরকার বাড়ী, টোরাগড়, হাজীগঞ্জ পৌরসভা, চাঁদপুর পিতা : মৃত আনু মিয়া সরকার মাতা : শাহিনা রানী ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : গ্রামে ভিটাজমি আর একটি টিনের বাড়ি আছে সন্তানাদির বিবরণ : ০৪ ছেলে : ১. রাজিব সরকার, বয়স: ৩৪, পেশা: কন্ট্রাক্টর, সম্পর্ক: ছেলে : ২. মোস্তফা আহমেদ, বয়স: ৩৪, পেশা: দিনমজুর, সম্পর্ক: ছেলে : ৩. আহমেদ কবির হিমেল, বয়স: ২৪, পেশা: দিনমজুর, সম্পর্ক: ছেলে : ৪. আহমেদ কবির সামির, বয়স: ১৮, পেশা: ছাত্র, সম্পর্ক: ছেলে প্রস্তাবনা : ১. শহীদ সন্তানদের কর্মসংস্থান করে দেয়া যেতে পারে : ২. শহীদ স্ত্রীকে মাসিক বা এককালীন সাহায্য করা যেতে পারে : ৩. শহীদের ছোট ছেলের লেখা পড়ার দায়িত্ব নেয়া যেতে পারে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: আজাদ সরকার
Image of মো: আজাদ সরকার
Image of মো: আজাদ সরকার
Image of মো: আজাদ সরকার
Image of মো: আজাদ সরকার
Image of মো: আজাদ সরকার
Image of মো: আজাদ সরকার

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: মাহিন

মো: আরিফ বেপারী

মো: ইউসুফ

মো: রোহান আহমেদ খান

মোঃ মজিদ হোসেন

মো:  রিটন উদ্দীন

মো: ইমতিয়াজ হোসেন

ইশতিয়াক আহমেদ

মো: নিজাম উদ্দিন ইমন

শাহাদাত হোসেন শামীম

পারভেজ বেপারী

মো: তানজিল মাহমুদ সুজয়

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo