Image of মো: ইমন গাজী

নাম: মো: ইমন গাজী

জন্ম তারিখ: ৪ মে, ১৯৮৫

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: চট্টগ্রাম

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : হোটেল ব্যবসায়ী, শাহাদাতের স্থান : যাত্রাবাড়ী থানা

শহীদের জীবনী

১৯৮৫ সালের ৪ মে চাঁদপুর জেলার সদর উপজেলার বাখরপুর গ্রামের গাজী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন মো: ইমন গাজী। ফিরোজা বেগম ও হাজিল গাজীর প্রথম সন্তান তিনি। সংসার জুড়ে টানাপড়েন থাকায় খুব বেশিদুর লেখাপড়া করা হয়নি তাঁর। পরিবারের হাল ধরতে রাজধানী শহরে আসেন। একটি দোকান ভাড়া নিয়ে ক্ষুদ্র পরিসরে হোটেল ব্যবসা শুরু করেন। পরিবারে ধীরেধীরে হাসি ফুটতে শুরু করে। কিছুদিন পর শান্তি বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সংসার পাতেন যাত্রাবাড়ী শহরের একটি ভাড়া বাসায়। একে একে তাঁদের ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় ইফাদ হোসেন গাজী (৯), ইশা আক্তার (১২)ও ইকরা আক্তার (৪) নামে তিন সন্তান। যেভাবে নিজেকে জাতির মুক্তির তরে সঁপে দিলেন ঘটনার দিন ৫ আগস্ট ২০২৪ সকাল ৯.৩০ এর দিকে মাতুয়াইল, যাত্রাবাড়ী বোনের বাসা থেকে বের হন ইমন। উদ্দেশ্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে যোগদান। কিছুক্ষণ পর ভেন্যুতে এসে উপস্থিত হন। লক্ষ্য করেন চারিদিকে খুনি হাসিনার পতনের দাবিতে গোটা যাত্রাবাড়ী তখন উত্তাল। স্লোগানে মুখরিত চারপাশ। ততক্ষণে মিছিল শুরু হয়েছে। মিছিলে নিজেকে যুক্ত করে স্বৈরাচার পতনের স্লোগান দিতে থাকেন তিনি। ক্রমান্বয়ে মিছিল সামনের দিকে অগ্রসর হয়। মিছিল রুখে দিতে শত্রুপক্ষ নরপিশাচ হাসিনার লেলিয়ে দেয়া ঘাতক পুলিশ বাহিনী ও রক্তখেকো আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী গণহারে গুলি চালায়। এলোপাথাড়ি সেই গুলিতে শত শত ছাত্র-জনতা সেদিন শাহাদাত বরণ করেন। একপর্যায়ে মিছিল যাত্রাবাড়ী থানার সামনে পোঁছায়। মুহূর্তে গুলির মাত্রা বেড়ে যায়। যেন থানার ভিতর-বাহির থেকে গুলি বৃষ্টি চালায় স্বৈরাচারের দোসররা। হঠাৎ একটি গুলি আচমকা ইমন গাজীর শরীরে এসে আঘাত হানে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মুহূর্তে জ্ঞান হারান তিনি। পুলিশের রোষানলে পড়ে ছত্র ভঙ্গ হয় ছাত্র-জনতা। আহত অবস্থায় ঘটনাস্থলে পড়ে থাকেন কয়েক ঘণ্টা। দীর্ঘক্ষণ পর পথচারীরা জখম নিথর দেহকে ধরাধরি করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসকেরা জানায় তিনি বেশ কিছুক্ষণ পূর্বে মহান আল্লাহর দরবারে পাড়ি জমিয়েছেন। শহীদের লাশ অজ্ঞাত ভাবে ফেলে রাখা হয়। হোটেল ব্যবসায়ি থাকায় অনেকেই তাঁকে চিনতো। একপর্যায়ে কয়েকজন তাঁকে চিনতে পারে। এমতাবস্থায় পরিবারকে খবর দেয়া হয়। ততক্ষণে সকাল, দুপুর, বিকাল গড়িয়ে গোধূলি লগ্ন। খবর পেয়ে ছুটে আসেন শহিদ স্ত্রী ও তাঁর সন্তানেরা। প্রিয় পাঠক, একটু চোখ বন্ধ করে উপলব্ধি করে দেখবেন কেমন ছিল সেই মর্মান্তিক মুহূর্তটি! কিভাবে শোকের মাতমে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হয়েছিল সেদিন। বিঁধবার আহাজারি, এতিম সন্তানদের আর্তনাদ, সন্তান হারা পিতা-মাতার তীব্র বুক ফাটা চিৎকারে চারপাশ যেন মৃত্যুপুরী হয়ে উঠেছিল সেদিন। ৫ আগস্ট ২০২৪, সামান্য হোটেল ব্যবসায়ি থেকে নিজের দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করে ইতিহাসের মহাবীর উপাধি লাভ করেছেন শহীদ ইমন হোসেন গাজী। বাবা-মা, স্ত্রী, ও অবুঝ সন্তানদেরকে রেখে নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে একটুও বিলম্ব করেননি তিনি। প্রিয় জীবনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে হলেও স্বৈরাচার পতনে অগ্রণী ভুমিকা রেখেছেন ইমন। রচনা করেছেন ইতিহাস। শাহাদতের শুধা পান করে চির নিদ্রায় শায়িত হয়েছেন তারই স্বাধীন করা প্রিয় বাংলাদেশে। যেন কবির ভাষায়- ‘এই দেশের জন্য যদি করতে হয় আমার জীবন দান, তবু দেবনা দেবনা লুটাতে ধুলায় আমার দেশের সম্মান।’ স্বাধীনতার অমিয় আন্দোলন ও তার প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে জনগণ নানান অন্যায়, শোষণ, নিপীড়ন ও জুলুমের নির্মম ভুক্তভোগী। এদেশের মুক্তিকামী জনতা সময়ের দাবিতে সাড়া দিয়ে এহেন অত্যাচারের বিরুদ্ধে বারংবার রুখে দাঁড়িয়েছে। বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী দুঃশাসন, ভোটচুরি, দুর্নীতি, লুণ্ঠন, রাহাজানি, ধর্ষণ, অন্যায়-অবিচার, জুলুম- নিপীড়ন, নির্যাতন, গ্রেফতার, গুম, খুন, অর্থ পাচার, বাক স্বাধীনতা হরণ, আইনের অপব্যবহার, করে জনমনে আতঙ্ক, ভয়-ভীতি তৈরি করেছিল। যে কারণে ছোট বড় সকল পর্যায়ের মানুষ বিরক্ত হয়ে দেশ ছেড়ে বিদেশে স্থায়ী হওয়ার চিন্তা করেছিল। স্বাধীন দেশে থাকলেও জনজীবন যেন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। একপর্যায়ে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ১ জুলাই ২০২৪ আন্দোলন শুরু করে দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অহিংস এই আন্দোলন ১৫ জুলাই থেকে সহিংস হয়ে ওঠে। নিরস্ত্র ছাত্র জনতার ওপর সশস্ত্র ঘাতক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও পুলিশ, র‌্যাব সদস্যরা হামলা চালাতে থাকে। ১৬ জুলাই রংপুরে আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করে ঘাতক পুলিশ বাহিনী। তারপর থেকে আন্দোলন গণমানুষের আন্দোলনে রূপ নেয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্রমেই জনসাধারণের আন্দোলনে পরিণত হয়। এটি বৈষম্যবিরধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন হিসেবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ধীরেধীরে ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী অভ্যুত্থানের দিকে ধাবিত হয়। পর্যায়ক্রমে এ আন্দোলন শুধু শিক্ষার্থীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে থাকে না; হয়ে উঠে দেশের আপামর জনতার এক বিশাল গণঅভ্যুত্থান। জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এ অভ্যুত্থানে একাত্মতা প্রকাশ করে রাজপথে নেমে আসেন। ক্ষুব্ধ জনতার বিপ্লবী তোপের মুখে পড়ে স্বৈরাচার সরকার প্রধান খুনি শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ২০২৪ পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কেমন আছে শহীদ পরিবার শহীদ ইমন হোসেন গাজী পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি ছিলেন। তার মৃত্যুতে পরিবারে সকল আয়ের পথ বন্ধ হয়েছে। শহীদের পৈতৃক বসতি বা আবাদি জমি নেই। সহোদরদের অবস্থাও তেমন সুবিধার নয়। এক ভাই রিক্সা চালিয়ে তার সংসারের হাল ধরেছেন। অপর ভাই স্বল্প পরিসরে ব্যবসা করেন। পর্যায়ক্রমে সন্তানদের কাছেই তাঁদের বসবাস। যে কারণে শহীদ পরিবারের পাশে এসে দাঁড়ানোর তাঁদেরও সাধ্য নেই। ইমনের স্ত্রী কিভাবে ছোট ছোট সন্তানদেরকে নিয়ে বাকি জীবন পাড়ি দেবেন জানেননা। এতিম ছেলেমেয়ে গুলোর ভবিষ্যত এই মুহূর্তে অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। কেমন ছিলেন শহীদ ইমন গাজী শহীদ সম্পর্কে প্রতিবেশী আব্বাস বলেন- ‘ইমন খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তাঁর আচার আচরণে যে কেউ মুগ্ধ হতো। তাঁর রেখে যাওয়া এতিম শিশুগুলোর জন্য আমার মন কাঁদছে। কিভাবে এই সন্তানেরা মানুষ হবে? পরিবারের পাশে এসে কে দাঁড়াবে? কেন ইমনকে হত্যা করা হলো। আমি এর বিচার চাই। এক নজরে শহীদ ইমন গাজী নাম : মো: ইমন গাজী পেশা : হোটেল ব্যবসায়ী জন্ম তারিখ ও বয়স : ৪ মে ১৯৮৫, ৩৯ বছর আহত ও শহীদ হওয়ার তারিখ : ০৫ আগস্ট ২০২৪, সোমবার, আনুমানিক সকাল ১০ টা শাহাদাত বরণের স্থান : যাত্রাবাড়ী থানা দাফন করা হয় : চন্দ্রা চৌরাস্তা, চাঁদপুর স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: : বাকুরপুর, থানা/উপজেলা: চান্দ্রা, জেলা: চাঁদপুর পিতা : হাজিল গাজী মাতা : ফিরোজা বেগম ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : কোনো সম্পদ নেই সন্তানের বিবরণ : ছোট ছোট দুইটি ছেলে ও দুইটি মেয়ে রয়েছে প্রস্তাবনা ১. শহীদের সন্তানদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয়া যেতে পারে ২. শহীদ স্ত্রীকে স্থায়ী বাসস্থান করে দেয়া যেতে পারে ৩. শহীদ পরিবারে মাসিক বা এককালীন সহযোগিতা করা যেতে পারে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: ইমন গাজী
Image of মো: ইমন গাজী
Image of মো: ইমন গাজী
Image of মো: ইমন গাজী
Image of মো: ইমন গাজী
Image of মো: ইমন গাজী
Image of মো: ইমন গাজী

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: ইমরান

মো:  সিয়াম সরদার (জিহাদ)

মো: হাসান (হাফেজ হাসান)

ছাইদুল ইসলাম

মো: সাজ্জাদ হোসাইন ( সাব্বির )

সোহাগ মিয়া

মো: ফয়সাল সরকার

মো: আরিফ বেপারী

মো: আরাফাত হোসেন আকাশ

মো: মাহিন

শহীদ জসীম উদ্দিন

মো: মাহমুদুল হাসান রিজভী

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo