জন্ম তারিখ: ২৩ অক্টোবর, ২০০১
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা : ছাত্র , শাহাদাতের স্থান : শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী
শহীদ আব্দুর রহমান, ডাকনাম পারভেজ, ছিলেন একজন শিক্ষিত ও সদাচারী তরুণ, যিনি তাঁর চরিত্র ও কর্মের মাধ্যমে সমাজে এক বিরল স্বাক্ষর রেখে গিয়েছেন। ৫ আগস্ট ২০২৪ তাঁর মৃত্যুতে একটি গভীর শোকের পাশাপাশি আমাদের সমাজের মূল্যবোধ ও দায়িত্ববোধের একটি প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এই প্রতিবেদন শহীদ আব্দুর রহমানের জীবন, কাজকর্ম, পরিবার ও মৃত্যু পরবর্তী পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে তাঁর ত্যাগের প্রকৃত মূল্যায়ন করতে চেষ্টা করবে। শহীদ আব্দুর রহমান নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজের বি.বি.এস তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তাঁর শিক্ষা জীবনের সাফল্য শুধু পড়াশোনার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তিনি খেলাধুলা এবং প্রাইভেট কার চালাতে পারদর্শী ছিলেন। ক্রীড়ার প্রতিভা তাকে একাধিক পুরস্কার এনে দিয়েছে। শহীদের শান্ত স্বভাব ও ধর্মীয় দায়িত্ববোধ তাঁকে সাধারণ মানুষের কাছে আলাদা করে তুলেছিল। শহীদের দূরদর্শিতা শহীদ আব্দুর রহমান ছোটবেলা থেকেই একটি আদর্শ জীবনযাপন করেছেন। তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন এবং ধর্মীয় দায়িত্ব পালনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতেন। তাবলিগের কাজে অংশ নিয়ে তিনি ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রচার করতেন। মসজিদে নিয়মিত যাতায়াত এবং সমাজের লোকদের ধর্মীয় দীক্ষাও দিতেন আব্দুর রহমান। ফুটবল খেলা এবং আরবি শেখার প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল। মাসনূন দোয়া পড়তে অন্যদের উৎসাহিত করা তাঁর অভ্যাস ছিল, যা তাঁর সৎ চরিত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা ৫ আগস্ট একটি হৃদয়বিদারক দিন হিসেবে শহীদ পরিবারের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ওইদিন, শহীদ আব্দুর রহমানের জীবন শেষ হয় একটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনায়। সেদিন আব্দুর রহমান আপুর বাসায় ছিলেন। সকাল ১০:৩০ টায় তিনি বাসা থেকে বের হন। দুপুরের পর থেকে ফোন বন্ধ থাকায় পরিবারের সদস্যরা পাগল হয়ে যায়। তাঁকে খুঁজতে যাত্রাবাড়ী চষে বেড়ায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর সন্ধ্যায় তাঁর লাশ পাওয়া যায়। জনৈক বন্ধু লাশ গণকবর দেয়ার সময় আইডি কার্ড দেখে চিহ্নিত করে। শহীদ পরিবারে খবর দেয়া হয়। ঘটনাস্থলে তাঁর পরিবার পৌছায়। ঘটনার স্থান ছিল শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী। আব্দুর রহমানের শরীরের পেট ভেদ করে গুলি বের হয়ে যায়। গুলির আঘাত দেখে বুঝা যায় অত্যাধুনিক চাইনিজ রাইফেলের অস্তিত্ব নির্দেশ করে। এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি শহীদের পরিবার ও সম্প্রদায়ের জন্য একটি বড় ক্ষতি ও শোক নিয়ে এসেছে। পরিবারের আর্থিক অবস্থা শহীদ আব্দুর রহমানের পরিবার বর্তমানে চরম আর্থিক সংকটে রয়েছে। তাঁর পিতা আব্দুল মালেক গাজী সৌদি আরব প্রবাসী, এবং তাঁর আয় অত্যন্ত সীমিত। দেশে জমি-জায়গাও কম, যা তাদের আরও কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলেছে। শহীদের বড় ভাই আব্দুল্লাহ বকলবাড়ি মাদ্রাসার ছাত্র, বড় বোন পান্না আক্তার বিবাহিতা। ছোট বোন জান্নাত আক্তার নূরানী মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী। এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে, শহীদ পরিবারের দৈনন্দিন জীবনযাপন ও শিক্ষার জন্য জরুরী সহায়তার অভাব রয়েছে। তাঁদের ভবিষ্যৎ স্বচ্ছলতা এবং মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা অত্যন্ত জরুরী। শহীদের সম্পর্কে আত্মীয় ও সহপাঠীদের বক্তব্য শহীদের চাচাত ভাই নাঈমুলীন জানান, "আমার ভাই আব্দুর রহমান ছিল শান্ত ও সৎ স্বভাবের। ছোটবেলা থেকেই অন্যায়কে প্রতিরোধ করতে সে কখনও চুপ থাকত না। তাবলিগের কাজে অংশগ্রহণ এবং মসজিদে নিয়মিত যাওয়া তার নিত্যদিনের অভ্যাস ছিল। তাঁর বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয় স্বজন এই গুণাবলীর জন্য গভীরভাবে সম্মান করত। শহীদের চলে যাওয়া আমাদের জন্য এক গভীর শোকের।’’ শহীদ আব্দুর রহমানের ত্যাগ এবং প্রেরণা শহীদ আব্দুর রহমানের জীবন আমাদের শেখায়- একজন মানুষ কিভাবে তাঁর নৈতিকতা, শান্তি ও ধর্মীয় দায়িত্ববোধের মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাঁর জীবন, কর্ম এবং ত্যাগ সমাজে এক নতুন উদাহরণ হিসেবে থেকে যাবে। তাঁর মৃত্যুর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, একজন মানুষের ত্যাগ ও কর্তব্যবোধ কিভাবে বৃহত্তর কল্যাণে অবদান রাখতে পারে। শহীদের জীবন ও ত্যাগ আমাদের জন্য একটি মহান প্রেরণা এবং আমাদের সমাজের মূল্যবোধ ও দায়িত্ববোধকে নতুন করে ভাবতে শেখায়। উপসংহার শহীদ আব্দুর রহমানের জীবন ও মৃত্যুর মাধ্যমে আমরা একটি শক্তিশালী বার্তা পাই। মানবতার জন্য ত্যাগ ও দায়িত্ববোধ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর পরিবার ও সম্প্রদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। শহীদের আত্মার শান্তি কামনায় এবং তাঁর পরিবারের সমর্থনে আমাদের একসাথে এগিয়ে আসা উচিত, যাতে তারা এই কঠিন সময়ে কিছুটা স্বস্তি ও সমর্থন পেতে পারে। এক নজরে শহীদ আব্দুর রহমান পূর্ণ নাম : আব্দুর রহমান (ডাকনাম: পারভেজ) শিক্ষাগত যোগ্যতা : তোলারাম কলেজ, নারায়ণগঞ্জ; বি.বি.এস তৃতীয় বর্ষ বয়স : ২৩-১০-২০০১ (২৩) জীবনযাপন : শান্ত স্বভাব, ধর্মীয় দায়িত্ববোধসম্পন্ন, খেলাধুলা ও ড্রাইভিংয়ে পারদর্শী কর্মকাণ্ড : তাবলিগে অংশগ্রহণ, মসজিদে নিয়মিত যাওয়া, ফুটবল খেলা, আরবি শিখার প্রতি আগ্রহ মৃত্যুর দিন : ৫ আগস্ট ২০২৪ মৃত্যুর কারণ : পুলিশি গুলিতে শহীদ ঘটনার স্থান : শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী পিতা : আব্দুল মালেক গাজী (সৌদি প্রবাসী) ভাই : আব্দুল্লাহ (নাহুমির জামাত, বকলবাড়ি মাদ্রাসা) বোন : পান্না আক্তার (বিবাহিত গৃহিণী), বোন : জান্নাত আক্তার (নূরানী মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী) বিশেষ গুণাবলী : অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী, ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়, মাসনূন দোয়া পড়তে আগ্রহী পরিবারের বর্তমান পরিস্থিতি : চরম আর্থিক সংকট, প্রবাসী পিতার সীমিত আয়, পরিবারকে মৌলিক সহায়তার প্রয়োজন প্রস্তাবনা-১ : শহীদ পরিবারের স্থায়ী বাসস্থান প্রয়োজন প্রস্তাবনা-২ : শহীদের ভাই-বোনদের লেখা-পড়ার খরচ যোগানে সহযোগিতা করা যেতে পারে