Image of মো:  সিয়াম সরদার (জিহাদ)

নাম: মো: সিয়াম সরদার (জিহাদ)

জন্ম তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০০৭

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৮ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: চট্টগ্রাম

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : হোটেল কর্মচারী, শাহাদাতের স্থান : মিরপুর ১০ নম্বর

শহীদের জীবনী

বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামী এক তরুণ চাঁদপুরের দ. হামানকদ্দি গ্রামের সিয়াম সরদার। ডাকনাম জিহাদ। তিনি ছিলেন এক সাদামাটা পরিবারের ছেলে। ২০০৭ সালের ৫ আগস্ট জন্ম নেয়া সিয়াম ছোটবেলা থেকেই আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে বড় হয়েছেন। শিক্ষাজীবন খুব বেশি দীর্ঘ হয়নি তাঁর। মাত্র ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে পরিবারের দায়িত্ব নিতে বাধ্য হন। অভাবের সংসারে একটু সহায়তা করার জন্য ২১ দিন আগে মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় অবস্থিত কারবানী রেস্টুরেন্টে হোটেল কর্মচারী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাঁর এই প্রচেষ্টা এবং স্বপ্ন থেমে যায় ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই রাতে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি মিছিলে অংশ নেওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে তার নির্মম মৃত্যু ঘটে।একজন শহীদ হিসেবে পরিচিতি সিয়াম সরদার সেইসব তরুণদের একজন, যারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান সুস্পষ্ট করেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যা ২০২৪ সালে ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবিতে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। সিয়ামের মতো হাজারো তরুণকে রাজপথে টেনে এনেছিল। এই আন্দোলনের মূল দাবি ছিল সমান সুযোগ। ন্যায্য শিক্ষা এবং বৈষম্য দূরীকরণ। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, বিশেষ করে ছাত্রসমাজ, একত্রিত হয়ে নিজেদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার হন। সিয়াম সেই আন্দোলনের একনিষ্ঠ অংশীদার ছিলেন। যেভাবে শহীদ হলেন ১৮ জুলাই ২০২৪ সালের সেই কালো রাতের কথা আজও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ভুলতে পারেনি। মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় কারবানী রেস্টুরেন্টে কাজ করার পর সিয়াম মিছিলে যোগ দেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন তখন দেশব্যাপী আলোড়ন তুলেছে, এবং ছাত্ররা নিজেদের অধিকার ও মর্যাদার জন্য প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে যায়। সেই মিছিলেই ঘটে যায় এক ভয়াবহ ঘটনা। সিয়ামকে লক্ষ্য করে পুলিশের গুলি ছোঁড়া হয়। বাম চোখে গুলিটি বিদ্ধ হয়ে মাথা ভেদ করে বেরিয়ে যায়। শহীদের আত্মত্যাগ সেই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকা শিক্ষার্থীদের মনে সাহস এবং শক্তি জোগায়, কিন্তু একইসঙ্গে সমাজের অবিচার ও বৈষম্যের করুণ পরিণতিও সামনে নিয়ে আসে। পরিবার ও আত্মীয়দের কথা সিয়াম সরদারের পরিবার একটি নিম্নবিত্ত কৃষক পরিবার। তাঁর বাবা সোহাগ সরদার একজন কৃষক, যিনি অন্যের জমিতে দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। মা, জেসমিন বেগম, একজন গৃহিণী। তাদের এই সংসারে সিয়াম ছিল সর্বকনিষ্ঠ সন্তান। বড় দুই বোন জান্নাত আক্তার (২৩) ও হাসি আক্তার (১৮) গৃহিণী হিসেবে সংসার চালাচ্ছেন। সিয়ামের মা বলেন, "আমার ছেলে ছিল আমাদের একমাত্র ভরসা। সে পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে চেষ্টা করছিল। আমরা খুব কষ্টে আছি, আর তার এই মৃত্যু আমাদের সব স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে।" সিয়ামের বাল্যবন্ধু আনাস সরদার বলেন, "আমরা ২য় শ্রেণি পর্যন্ত একসঙ্গে পড়াশোনা করেছিলাম। পরে সিয়াম পরিবারের জন্য কাজ করতে গিয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। সে ছিল খুবই ভালো মনের মানুষ। তার মধ্যে কোনো অহংকার ছিল না। নামাজ পড়তো নিয়মিত এবং মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতো। আমি তাকে খুব মিস করি।" তার বন্ধু ও প্রতিবেশীদের মতে, সিয়াম সবসময় মানুষের জন্য কিছু করতে চাইতো এবং তার এই ত্যাগের কারণে সবার মনে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। পরিবারের আর্থিক অবস্থা সিয়ামের পরিবার একটি নিম্নবিত্ত কৃষক পরিবার। তার বাবা সোহাগ সরদার জমির অভাবে অন্যের জমিতে দিনমজুরি করে পরিবারের খরচ চালান। পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস কৃষিকাজ। সিয়াম পরিবারের জন্য আয় করার দায়িত্ব নিয়ে হোটেলে কাজ শুরু করেছিলেন, কিন্তু তার এই স্বপ্ন খুব বেশি দিন স্থায়ী হলো না। তার মৃত্যুতে পরিবারটি আর্থিকভাবে আরও বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। সিয়ামের বাবা এবং বোনেরা এখন অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। শহীদ থেকে প্রেরণা সিয়াম সরদারের আত্মত্যাগ বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত শিক্ষার্থীদের জন্য এক অনন্য প্রেরণার উৎস। তাঁর সাহসিকতা, মানবিকতা, এবং নিজেকে উৎসর্গ করার মানসিকতা ভবিষ্যতের তরুণদের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সিয়ামের মতো শহীদদের আত্মত্যাগ গোটা সমাজকে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা দেয়। তরুণ সমাজের প্রতি তাঁর বার্তা ছিল- নিজেদের অধিকার আদায়ে পিছিয়ে না আসা এবং ন্যায্যতা ও সমতার জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়া। সিয়ামের জীবন ও আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে তরুণরা আজও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। শহীদ পরিবারের প্রয়োজনীয় সহায়তা সিয়ামের পরিবার বর্তমানে কঠিন অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাদের আয় এবং জীবিকা নির্বাহের জন্য একটি স্থায়ী আয়ের উৎসের প্রয়োজন। সিয়ামের বাবা দিনমজুর হিসেবে কাজ করলেও, তা দিয়ে পরিবারের খরচ চালানো সম্ভব নয়। পরিবারের বাকি সদস্যদের পড়াশোনা চালানোর জন্য এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য সরকারি সহায়তা ও সমাজের সহমর্মিতা প্রয়োজন। সিয়ামের পরিবারের জন্য একটি স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা, সরকারি অনুদান, এবং প্রয়োজনে সামাজিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সহায়তা প্রদান অত্যন্ত জরুরী। এক নজরে শহীদ সিয়াম সরদার পুরো নাম : সিয়াম সরদার (ডাকনাম: জিহাদ) জন্ম তারিখ : ৫ আগস্ট ২০০৭ জন্মস্থান : দ. হামানকদ্দি, চাঁদপুর পেশা : হোটেল কর্মচারী (কারবানী রেস্টুরেন্ট, মিরপুর ১০) শিক্ষা : ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত মৃত্যুর তারিখ : ১৮ জুলাই ২০২৪ মৃত্যুর কারণ : পুলিশের গুলিতে নিহত পরিবারের আর্থিক অবস্থা : নিম্নবিত্ত, কৃষিকাজ ও দিনমজুরি নির্ভর ভাইবোন : ২ জন বোন (জান্নাত আক্তার, হাসি আক্তার) বিবাহিতা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো:  সিয়াম সরদার (জিহাদ)
Image of মো:  সিয়াম সরদার (জিহাদ)
Image of মো:  সিয়াম সরদার (জিহাদ)
Image of মো:  সিয়াম সরদার (জিহাদ)
Image of মো:  সিয়াম সরদার (জিহাদ)
Image of মো:  সিয়াম সরদার (জিহাদ)

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

 মোহাম্মদ ওয়াসিম

মোহাম্মদ ইসমামুল হক

মো: রাব্বি আলম

মো: হৃদয়

নাছিমা আক্তার

হামিদুর রহমান

মো: সাহাদাত হোসেন

মো: আরিফ বেপারী

শাহিনুর বেগম

তানভীর হোসেন মাহমুদ

মো: সাজ্জাদ হোসাইন ( সাব্বির )

মো: রোহান আহমেদ খান

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo