Image of মো: রোহান আহমেদ খান

নাম: মো: রোহান আহমেদ খান

জন্ম তারিখ: ২ মার্চ, ২০০৬

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: চট্টগ্রাম

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : কাজলা, কদমতলি এলাকায়

শহীদের জীবনী

শহীদ রোহানের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের সদর উপজেলার বালিয়া গ্রামে। ২ ভাইয়ের মধ্যে রোহান ছিল ছোট। রাজধানীর কদমতলীতে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন রোহান। রোহানের বাবা সুলতান আহমেদ মুদি দোকান ব্যবসায়ী, মা মনিরা বেগম আরবি টিউশান করেন। বড় ভাই রাহাত সায়েদাবাদ আরকে চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের অনার্স ৩য় বর্ষের অ্যাকাউন্টিং বিষয়ের শিক্ষার্থী। ২০০৬ সালের ২ মার্চ চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করেন শহীদ রোহান। তবে বেড়ে উঠেন ঢাকায়। ২০২২ সালে এ কে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন।এসএসসি পাশের পর রোহান দনিয়া সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ২০২৪ সালের এইচএসসি পরিক্ষার্থী ছিলেন শহীদ রোহান আহমেদ খান। ছোটবেলা থেকেই খুব শান্ত প্রকৃতির ছিলেন। নিয়মিত মসজিদে নামাজ পড়তেন। স্বপ্ন ছিলো একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মানের। যে কারণে বেছে নিয়েছিলেন রোভার স্কাউটকে। বাংলাদেশ রোভার স্কাউট দনিয়া রোভার দলের একজন অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। স্বপ্ন পুরণের পথের অদম্য এক স্বাপ্নিক ছিলেন শহীদ রোহান। কিন্ত ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে খুনি হাসিনার জিঘাংসার শিকার হন তিনি। যেভাবে শহীদ হলেন চব্বিশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকেই অনেক সক্রিয় ছিলেন শহীদ রোহান। নিয়মিত আন্দোলনে অংশ নিতেন। আন্দোলনকারীদের খাবার পানি দিয়ে সাহায্য করতেন। ১৯ জুলাই ২০২৪ বড় ভাইয়ের সাথে জুমার নামাজ পড়তে রোহান বাসা থেকে বের হন। বাসার পাশেই বাইতুস সালাম জামে মসজিদে নামাজ আদায় করেন দুই ভাই। নামাজ শেষে রাহাত বাসায় চলে আসে। রোহান বাসার নিচেই থেকে যান। সেদিন মায়ের কাছ থেকে ৩০০ টাকা নিয়ে বের হন রোহান। এই টাকা দিয়ে পানির কেস কিনে জুমার নামাজের পর মিছিলে অংশ গ্রহণকারী ছাত্রদেরকে পানি খাওয়াতে শনির আখড়া এলাকায় যান। পানি খাওয়ানোর সময় আন্দোলনরতদের উপর পুলিশ গুলি চালালে একটা বুলেট এসে বিদ্ধ হয় রোহানের বুকে। আশেপাশের ছাত্ররা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। রোহানের ফোনেই মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে কেউ একজন গুলি লাগার কথা জানান। রোহানের গলা থেকে নিচে বুকের মাঝবরাবর গুলি লেগেছিল। খবর পেয়ে তাঁর বড় ভাই রাহাত ও মা মিটফোর্ড হাসপাতালে যায়। সেখানে গিয়ে দেখেন কলাপসিবল গেটের ভেতরে রোহানের নিথর দেহ পড়ে আছে। নিথর প্রাণহীন দেহ দেখে সেখানেই মুর্ছা যান শহীদ জননী। লাশ আনতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইনি জটিলতা ও ময়নাতদন্তের কথা বলে বিলম্ব করেন। পরের দিন ২০ জুলাই লাশ পরিবারের মাঝে হস্তান্তর করা হয়। বিকালে বাসার পাশে বাইতুস সালাম মসজিদের কাছে জানাজা শেষে চাঁদপুরের গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। সন্তান হারানোর বেদনায় পাগলপ্রায় হয়েছেন শহীদ পিতা-মাতা। দনিয়া কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের এইচএসসি পরিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। আর পরীক্ষা দেয়া হল না মেধাবী এই শিক্ষার্থীর। রোভার রোহান আহমেদ খানের সেনাবাহিনীতে যোগদানের স্বপ্ন অসম্পন্নই রয়ে গেল। কেমন আছে রোহানের পরিবার শহীদ পিতা সুলতান আহমেদ মুদি দোকান ব্যবসায়ী, মা মনিরা বেগম আরবি টিউশান করেন। বড় ভাই রাহাত সায়েদাবাদ আরকে চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের অনার্স ৩য় বর্ষের অ্যাকাউন্টিং বিষয়ের শিক্ষার্থী। গ্রামে বসতি ভিটা ছাড়া তাঁর বাবার তেমন কোন জায়গা জমি নেই। শহীদের পরিবার প্রায় ত্রিশ বছর যাবৎ কদমতলী এলাকায় ভাঁড়া বাসায় বসবাস করে আসছেন। তাঁকে নিয়ে বাবা-মায়ের অনেক বড় স্বপ্ন ছিলো যে তিনি একদিন অনেক বড় অফিসার হবেন, বাবা মার মুখ উজ্জ্বল করবে। কিন্ত সে স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। নিকটাত্মীয়ের জবানে রোহান রোহান সম্পর্কে তার বড় ভাই রাহাত বলেন- “আমার ছোট ভাই ২০২৪ এর এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। ৬-৭ টা পরীক্ষা দেয়ার পর ২০২৪ এর জুলাই মাসে ছাত্রদের ডাক দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। আমার ছোট ভাই বৈষম্যবিরোধি ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ছিল। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে পানি ও শুকনো খাবার দিয়ে সাহায্য করত। শহীদ পিতা বলেন- “আল্লাহর কাছে চাই- আমার ছেলের রক্তের বিনিময়ে এদেশে শান্তি আসুক” শহীদ জননী বলেন- আমার রোহান কী সুন্দর, নম্র ও ভদ্র ছেলে ছিল। নামাজ পড়ত, লেখাপড়া করত, আজেবাজে কোনো আড্ডা দিত না। আমার ছেলে প্রায় আমাকে বলত- এইচএসসি পাশ করার পর সেনাবাহিনীর অফিসার হবে। দেশের সেবা করবে। শেষ পর্যন্ত নিজের জীবন দিয়ে দেশের সেবা করে গেল। শহীদ সম্পর্কে বড় ভাইয়ের অনুভূতি: আমার ছোটভাই এর ছোটবেলা থেকেই খুব ইচ্ছে ছিল ও একজন আর্মি অফিসার হয়ে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবে এবং স্কাউটিং এর প্রতি ওর খুবিই আগ্রহ ছিল। তো কলেজ ভর্তি হওয়ার পর ও রীতিমতো জেদ ধরে যে ও স্কাউটিং করবেই তো বাসা থেকে আমরা সবাই ওকে সম্মতি দেই স্কাউটিং করার জন্য। স্কাউটিং এ জড়িত হওয়ার পর বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রমে আমার ছোট ভাই দিনরাত সক্রিয় ছিল। এবং ওর কলেজ এর স্কাউটিং সিনিয়র যারা ছিল তারা সবাই ওর কাজকর্মে খুবই সন্তুষ্ট ছিল এবং সবার প্রিয়পাত্র ছিল। ব্লাডডোনেশন এ আমার ছোট ভাই খুব ই সক্রিয় ছিল, কারো জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে নিজে রক্ত দিয়ে অথবা রোগীর জন্য উপযুক্ত ব্লাড ডোনের খুঁজে দিয়ে যে সাহায্য করত। এলাকার সবার কাছেই সে ছিল পরিচিত একজন মুখ।এবং সবাই তাকে খুব ভালো জানত। এক নজরে শহীদ রোহান আহমেদ খান নাম : রোহান আহমেদ খান পেশা : ছাত্র জন্ম তারিখ ও বয়স : ২ মার্চ ২০০৬ , ১৮ বছর আহত ও শহীদ হওয়ার তারিখ : ১৯ জুলাই ২০২৪, শুক্রবার, আনুমানিক দুপুর ০৩ টা কিভাবে মারা যায় : কাজলা, কদমতলি এলাকায় পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে ঘটনাস্থলে তাঁর মৃত্যু হয় দাফন করা হয় : বালিয়া চাঁদপুর (পারিবারিক কবরস্থান) স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: কমলাপুর, থানা/উপজেলা: সদর, জেলা: চাঁদপুর পিতা : সুলতান আহম্মেদ খান মাতা : মনিরা বেগম ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : গ্রামে বাড়ি আছে ভাইবোনের বিবরণ : বড় ভাই আছে প্রস্তাবনা ১. শহীদ ভাইয়ের কর্মসংস্থান করে দেয়া যেতে পারে ২. বাবার ব্যবসাকে বড় করতে মাসিক সহযোগিতা করা যেতে পারে ৩. মায়ের চিকিৎসা ভাতা দেয়া যেতে পারে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: রোহান আহমেদ খান
Image of মো: রোহান আহমেদ খান
Image of মো: রোহান আহমেদ খান
Image of মো: রোহান আহমেদ খান
Image of মো: রোহান আহমেদ খান
Image of মো: রোহান আহমেদ খান
Image of মো: রোহান আহমেদ খান
Image of মো: রোহান আহমেদ খান
Image of মো: রোহান আহমেদ খান
Image of মো: রোহান আহমেদ খান
Image of মো: রোহান আহমেদ খান
Image of মো: রোহান আহমেদ খান

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

নাছিমা আক্তার

মো: আমিনুল ইসলাম সাব্বির

মো: ইফাত হাসান খন্দকার

আমির হোসেন

সাদ আল আফনান

মো: জিহাদ হাসান মাহিম

মো: রিপন

মো: সাইফুল ইসলাম আরিফ

 মোহাম্মদ ওয়াসিম

ওমর বিন নুরুল আবছার

মো: ফারুক

রবিন মিয়া মিঠু

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo