জন্ম তারিখ: ৫ মে, ১৯৭৬
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২১ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা : চাকরি, বিউটি পার্লার কেমিক্যাল কোম্পানি, ওমেনস ওয়ার্ল্ড গুলশান, ঢাকা শাহাদাতের স্থান : নর্দা আজিজ সড়ক ঢাকা
শহীদ পরিচিতি শহীদ মো: মিজানুর রহমান নদী বিধৌত চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলার পিংড়া গ্রামে ১৯৭৬ সালের ০৫ মে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মো: খলিল রহমান ও মায়ের নাম লজ্জতী বেগম। মা বাবা দুজনই পরলোক গমণ করেন বেশ কয়েক বছর আগেই। গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে একটি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন শহীদ মিজানুর রহমান। পরিবারের হাল ধরার জন্য তারপর পাড়ি জমান ঢাকা শহরে। তিনি শাহাদাত বরণকালীন সময় পর্যন্ত ঢাকা শহরের গুলশানে অবস্থিত ওমেন ওয়ার্ল্ড নামক একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। দাম্পত্য জীবনে ঝর্ণা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এখন থেকে বিশ বছর আগে। তাদের ঔরশে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে জন্ম গ্রহণ করেন। তারা দুজনই এখন পড়াশোনা করেন। শাহাদতের ঘটনা শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী শাসনের দ্রুত পতনটি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত অবিশ্বাস্য বলে মনে হয়েছিল। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা রাষ্ট্রপ্রধানের ঐতিহাসিক পতন মধ্যপ্রাচ্যে আরব বসন্তের প্রতিফলন, যা ২০১০ সালে শুরু হয়েছিল। যখন কর্তৃত্ব বিরোধী বিদ্রোহ এই অঞ্চলে একের পর এক কুখ্যাত স্বৈরশাসকের পতন ঘটায়। তার পদত্যাগের আগে, বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ছাত্র কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া যা কমপক্ষে ১০০০ জন নিহত হয়েছে। তিউনিসিয়ার বেন আলী, মিশরের হোসনি মোবারকের মতো ক্ষমতাচ্যুত আরব নেতাদের আগ্রাসী স্বৈরাচারী প্রবণতা এবং নৃশংস পদ্ধতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল। "এক দফা" স্টেপ ডাউন স্লোগান-এক দফা, এক দাবি-শনিবার, ৩ আগস্ট দেশব্যাপী বিক্ষোভে প্রতিধ্বনিত হয়েছিল, আরব বসন্তের স্লোগানকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল, "জনগণ শাসনের পতন ঘটাতে চায়," যেমন ছিল। গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য সংগ্রামরত জীবনের সর্বস্তরের মানুষের গণসমাবেশের আশা ও উচ্ছ্বাসের চিত্র। কিন্তু আলোকবিজ্ঞানের বাইরে, বাংলাদেশের ঐতিহাসিক আন্দোলন এবং আরব বসন্তের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সমান্তরাল হল তাদের চালিকা শক্তি; ব্যাপক অসমতা ও অবিচারের দিকে ব্যাপক জনগণ, যুবক, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের আর্থ-সামাজিক ক্ষোভ, দুর্নীতিগ্রস্ত, ভয়-ভীতি সৃষ্টিকারী একনায়কতন্ত্র দ্বারা লালিত। গণহত্যাকারী স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন হলো ঠিকই কিন্তু হাজার হাজার পরিবারকে ভেঙে চুরমার করে দিয়ে গেল। যেভাবে শহীদ হলেন ২১ জুলাই ২০২৪ শনিবার। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা তৃতীয় দিনের মত ‘কমপ্লিট শাট ডাউন’ কর্মসূচি চলছিল। সরকার আন্দোলন দমানোর জন্য ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট করার পাশাপাশি কার্ণিও ভারি করে আর সকল অফিস আদালত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। গুলশান ওমেন ওয়ার্ড নামে একটি কোম্পানির কর্মচারী শহীদ মিজানুর রহমান অফিস বন্ধ থাকায় তার নদী এলাকায় নিজ বাসায় অবস্থান করছিলেন। আসরের নামাজ পড়ার জন্য বের হয়ে নামাজ পড়ে বাসায় আসার পথে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের মাঝখানে পড়ে যান। পুলিশ তখন আন্দোলনকারীদের উপর এলোপাথাড়ি গুলি ছড়ে। এক পর্যায়ে একটি গুলি এসে শহীদ মিজানুর রহমানকে বিদ্ধ করে। পথচারীরা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত ঘোষণা করে। এভাবে জান্নাতের পথে পা বাড়ান সদ্য আসরের নামাজ সমাপ্তকারী শহীদ মিজানুর রহমান। পরিবারে শোকের মাতম পরিবারের একমাত্র অভিভাবকের তিরোধানে শোকের মাতম চলছে। একমাত্র ছেলে ও একমাত্র মেয়ে বাবার শোকে মুহ্যমান। তারা এখনো রক্তমাখা শহীদী বাবার কফিনকে ভুলতে পারছেনা। এদিকে পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই করুণ। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পুরো পরিবার এখন চোখে অন্ধকার দেখছে। অভাব অনটন চলছে প্রতিনিয়ত পরিবারের দুইজন সন্তান এখনো শিক্ষার্থী তাদের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তার পথে তাদের পড়াশোনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন শহীদের স্ত্রী। তিনি বলেন, "আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে গেলা এখন আমি কি করবো। এক টাকা আয় করার মত কেউ নাই আমার পরিবারে। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয় অনুভূতি মেয়ে ফারজানা আক্তার মাহি: আমার বাবা ছিলেন আমাদের একমাত্র অভিভাবক। আমরা আমাদের বাবাকে হারিয়ে পুরো দুনিয়াটাই হারিয়েছি। আমরা ওনাকে খুব মিস করছি। আমার বাবার কোন দোষ ছিলনা। কেন তাকে মারা হলো? আমরা এর জবাব চাই। আমরা খুনিদের ফাঁসি চাই। একনজরে শহীদ মো: মিজানুর রহমান শহীদের পূর্ণ নাম : মো: মিজানুর রহমান জন্ম তারিখ : ০৫-০৫-১৯৭৬ জন্মস্থান : পিংড়া ,মতলব দক্ষিণ, চাঁদপুর পেশা : বিউটি পার্লার কেমিক্যাল কোম্পানির চাকরি, ওমেনস ওয়ার্ল্ড গুলশান, বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: পিংড়া, ইউনিয়ন: ৬ নং উপাদি দক্ষিণ, থানা: মতলব দক্ষিণ, জেলা : চাঁদপুর স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: পিংড়া, ইউনিয়ন: ৬ নং উপাদি দক্ষিণ, থানা: মতলব দক্ষিণ, জেলা : চাঁদপুর পরিবার : পিতার নাম : মো: খলিল রহমান মাতার নাম : মৃত লজ্জতী বেগম স্ত্রী : ঝর্ণা বেগম, গৃহিণী ছেলে মেয়ে : ১. রবিউল আলম পিয়াশ(১৮) দ্বাদশ শ্রেণী পুরান বাজার ডিগ্রী কলেজ : ২. ফারজানা আক্তার মাহি (১৬) দশম শ্রেণী হযরত শাহজালাল উচ্চ বিদ্যালয় আঘাতকারী : আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসী পুলিশ আহত হওয়ায় ও স্থান সময় : নর্দা আজিজ সড়ক ঢাকা ২১-০৭-২০২৪ বিকাল ৫:৩০ টায় মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ২১-০৭-২০২৪, সন্ধ্যা ৭:৩০ টায়, বারিধারা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা জানাজা : ২২-০৭-২০২৪ সকাল ১০ টায় কবরস্থান : নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থান প্রস্তাবনা ১. নিয়মিত মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা ২. গরুর ফার্ম করে দেওয়া