জন্ম তারিখ: ২৭ জানুয়ারি, ১৯৯৮
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা : ব্যবসা (ফেরিওয়ালা) শাহাদাতের স্থান: মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা
দিনমজুর পিতা জনাব আবুল কাশেম এবং মাতা মাকসুদা বেগম এর ২য় সন্তান শহীদ রাসেল মিয়া ২৭ জানুয়ারি ১৯৯৮ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। জীবিকার সন্ধানে তার পিতা সুদূর নোয়াখালী জেলা থেকে রাজধানী শহর ঢাকায় আসেন। তিন সন্তান এবং স্ত্রীকে নিয়ে কদমতলীর মেরাজনগর এলাকায় ভাড়া বাসায় ওঠেন। কিছুদিন পর শহীদ পিতা প্যারালাইজড হয়ে পড়েন। অল্প বয়সেই পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়ে রাসেল মিয়ার উপর। এ কারণে বেশি দূর লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারেননি তিনি। হর্কাস পেশায় যুক্ত হয়ে স্বল্প আয় দিয়েই অসুস্থ বাবা, মা ও পরিবারের ব্যয়ভার বহন করতে শুরু করেন শহীদ রাসেল। শহীদ সহোদর আহসান একটি মটর গ্যারেজে সহযোগী মেকার হিসেবে কাজ করেন। রক্তাক্ত জুলাই-আগস্ট তখন জুলাইয়ের শুরু। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রাজাকারের সঙ্গে তুলনা করে বক্তব্য দেন সাবেক সরকার প্রধান খুনি শেখ হাসিনা। তার এমন মন্তব্যে রাজপথে অভিনব প্রতিবাদ করেন শিক্ষার্থীরা। তখন শিক্ষার্থীদের আবেগ বুঝতে না পেরে উল্টো তাদের ওপর আক্রোশ মেটান স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার ও দলটির শীর্ষ পর্যায়। শুধু তাই নয়, তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিতর্কিত ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। পিটিয়ে রক্তাক্ত করে নারী শিক্ষার্থীদেরও। সেই হামলাই গণবিস্ফোরণের বীজ বপন করে দেয়। এরপর থেকেই এ আন্দোলনের গতি পাল্টে যায়। দাবি উঠে নগ্ন হামলার বিচারের। তখনও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নরখাদক আওয়ামী লীগ সরকার কঠোর মনোভাব আর দমন নীতি চালিয়ে যায়। নিপীড়ন আর গণ-গ্রেপ্তার উল্টো বুমেরাং হয়ে উঠে। বাড়তে থাকে শিক্ষার্থীদের দাবির তালিকা। তারা সাধারণ মানুষের সংহতিও পায়। এরপরও শিক্ষার্থীদের ঠেকাতে নরপিশাচ আওয়ামী লীগ সরকার একে একে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। অটল থাকে কঠোর নীতিতে। ঘাতক পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলি ও আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলায় প্রাণহানির ঘটনায় গণ-বিস্ফোরণ রূপ নেয়। এরপরই অভিনব সব কর্মসূচি দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সরকার হটানোর আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। শহীদ মিনার থেকে ঘোষণা করা হয় সরকার পতনের এক দফা দাবি। শুরু হয় ছাত্র-জনতার সর্বাত্মক অসহযোগ। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতের নয়াদিল্লিতে পালিয়ে যায় সাবেক স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। এরপর রাষ্ট্রপতি সরকার ভেঙে দিলে আওয়ামী লীগের টানা প্রায় ১৬ বছরের নেতিবাচক শাসনের অবসান হয়। এর ৩ দিন পর ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ শপথ গ্রহণ করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াসহ অন্তর্বর্তী সরকারের ১৭ জন উপদেষ্টা শপথ নেন। উপদেষ্টাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক হতে শুরু করে প্রশাসনিক কার্যক্রম। ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনে শিশু-কিশোর-যুবক নারীসহ অন্তত ১ হাজার জনের অধিক প্রাণহানি ও কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলা-নির্যাতনে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। নরপশু হাসিনা সরকারের দমন পীড়নের সামনে রাজপথে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। তরুণ যুবক, গৃহিণী ও অভিভাবক সবাই স্বৈরাচারের রাহুমুক্ত হতে একজোট হয়েছিলেন রাজপথে। এতে চোখের আলো নিভে গেছে প্রায় ৯০০ জনের। শরীরে বুলেটের ক্ষত নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন শত শত জনতা। শিশু, কিশোর, নারী থেকে শুরু করে বৃদ্ধের শরীর ভেদ করে বেরিয়ে গেছে গুলি। আন্দোলনে যোগদান ও সামগ্রিক ঘটনার বিবরণ ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই, কুতুবখালী বড় মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করে বের হন রাসেল মিয়া। রাজধানী তখন উত্তাল। চারিদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল যেন রণক্ষেত্র পরিণত হয় যাত্রাবাড়ী ও তার চারপাশ। শহীদ রাসেল বাসায় না ফিরে গিয়ে আন্দোলনে যোগদান করেন। স্বৈরাচারী সরকারের ঘাতক পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার বাহিনী আন্দোলন প্রতিহত করতে এক নাগাড়ে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে যায়। আকস্মিক একটি গুলি রাসেল মিয়ার শরীরে এসে বিদ্ধ হয়। ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় ছাত্র-জনতা। মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শহীদ সম্পর্কে প্রতিবেশীর অনুভূতি প্রতিবেশী মোসা: রাশেদা বেগম বলেন, “শহীদ রাসেল মিয়া একজন ধার্মিক, সহজ-সরল এবং নামাজী ব্যক্তি ছিলেন। তার আচরণে এলাকার সবাই সন্তুষ্ট ছিলো। আমি তাঁর হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”ওরা কি মানুষ? শহীদ রাসেল মিয়ার লাশ আনতে বাধে বিপত্তি। লাশ দেয়া যাবে না এই মর্মে তার বড় ভাইকে বারবার ফেরত পাঠানো হয়। এক পর্যায়ে শহীদের বড় ভাইকে বেপরোয়া আনসার বাহিনী এলোপাথাড়ি আঘাত করতে থাকে। রক্তাক্ত করে হাসপাতালের সামনে ফেলে রাখা হয়। শহীদের লাশকে গুম করার চেষ্টা করা হয়। বিক্ষিপ্ত জনতার রোষানলে পড়ে নিরুপায় হয়ে হাসিনার মদদপুষ্ট আনসার সদস্যরা লাশ ফেরত দিতে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে শহীদের লাশ জানাজা শেষে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। প্রস্তাবনা ১ : শহীদের বড় ভাই একজন মোটর গ্যারেজের সহকারী মেকার। তাকে এককালীন সহযোগিতা করে নিজস্ব মটর গ্যারেজের মালিকানার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ২ : শহীদের বাবা একজন বৃদ্ধ প্যারালাইজড রোগী। তার সুচিকিৎসা দরকার। ৩ : শহীদ পরিবারের ভরণপোষণে মাসিক সহায়তা করা যেতে পারে। শহীদের ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : রাসেল মিয়া পেশা : ব্যবসা (ফেরিওয়ালা) জন্ম তারিখ ও বয়স : ২৭ জানুয়ারি, ১৯৯৮ (২৬) আহত হওয়ার তারিখ : ১৯ জুলাই ২০২৪, জুম্মার নামাজের পর (আনুমানিক ২ টা) শহীদ হওয়ার তারিখ : ১৯ জুলাই ২০২৪ স্থান : কুতুবখালী বড় মসজিদের সামনে শাহাদাতের তারিখ : ১৯ জুলাই ২০২৪ স্থান : কুতুবখালী মসজিদের সামনে দাফনের স্থান : জুরাইন কবরস্থান স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : বাসা: ১১৮৫, গ্রাম: মোহাম্মদবাগ, ইউনিয়ন: মেরাজনগর, থানা: কদমতলী, জেলা: ঢাকা পিতা : আবুল কাশেম (বর্তমানে প্যারালাইজড) মাতা : মাকসুদা বেগম বাড়ী ঘর ও সম্পদের অবস্থা : জমিজমা ও বসত বাড়ি নেই ভাই-বোনের বিবরণ ১. আহসান বয়স : ৩২ পেশা: গাড়ির গ্যারেজের মেকার, সম্পর্ক: বড় ভাই ২. শিরীন আক্তার বয়স : ২৬, পেশা: গৃহিনী, সম্পর্ক: বোন